নাদানে বাদাম চেনে, তার বেশি না!
১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:৫৫
সম্প্রতি দেশে একটি আলোচিত দুর্নীতি মামলার রায় হয়েছে। এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কথা কম হচ্ছে না। হতেই পারে! পাশাপাশি চলছে আন্দোলন। তাতেও দোষের কিছু নেই! হতেই পারে! যতক্ষণ আন্দোলন নিয়ম আর গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া মেনে চলবে সমস্যা নেই তাতে কিছুই। এবারের আন্দোলন দেখে মনে হচ্ছে ২০১৩-১৪ ’র মত আগুন সন্ত্রাসে আগ্রহ সম্ভবত সাবেক বিরোধীদলীয় নেতা-কর্মীদের তেমন একটা নেই। যদিও আন্দোলন একেবারেই যে নিয়মতান্ত্রিক হচ্ছে, তা বলা যাবে না। কারণ প্রিজন ভ্যানে হামলা করে বন্দি ছিনিয়ে নেয়া, মটর সাইকেলে আগুন দেয়া আর পুলিশের সাথে ইটপাটকেল বিনিময়ের ছবিগুলো টিভির খবরে আমরা সবাই দেখেছি। তবে এখনো দেখিনি বাসে-ট্রেনে আগুন দেয়া কিংবা গরু-ছাগল-শিশু-বুড়ো পুড়িয়ে মারার মতন ঘটনাগুলোর পূনরাবৃত্তি। আর সে কারণেই এই আশাবাদ।
তবে এই বিচার নিয়ে অত্যন্ত ঘৃণ্য ঘটনা ঘটেছে অন্যত্র। হামলা হয়েছে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনে। কোন দেশে ভিনদেশি কোন দুতাবাস শুধুমাত্র ঐ দেশটির প্রতিনিধিত্বশীল কোন সরকারি দপ্তর নয়, বরং তা এক টুকরো ঐ দেশটিই। যার সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও ঐ দেশের সঙ্গে সম্পৃক্ত। তাই লন্ডনে বাংলাদেশ দুতাবাসের উপর এই হামলা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রটির উপর হামলারই শামিল।
দুতাবাসের উপর হামলাকে একটি রাষ্ট্র কতটা গুরুত্বের সাথে নেয় তার প্রমাণ দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নাইরোবি কিংবা বেনগাজীতে তাদের দুতাবাসে সন্ত্রাসী হামলার পর আকাশে শয়ে-শয়ে ক্রুজ মিসাইল উড়িয়ে।
আমাদের ক্রুজ মিসাইল নেই আর মিসাইলবাজির পররাষ্ট্রনীতিও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার অনুসরণ করে না। সাম্প্রতিক রোহিঙ্গা সংকটের সময় প্রতিবেশীর শত উস্কানিতেও অসীম ধৈর্য্যরে পরিচয় দিয়ে এই সরকার আরো একবার তার প্রমাণ দিয়েছে। আমার প্রশ্নটা অন্যখানে, লন্ডনে বাংলাদেশ দুতাবাসে হামলা যেমন আমাদের সার্বভৌমত্বের উপর হামলা, তেমনি জাতির জনকের অসম্মান আমাদের সংবিধানকে অস্বীকার করারই নামান্তর মাত্র। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান শুধুমাত্র আওয়ামী লীগের কিংবা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতিই নন, তিনি আমাদের জাতির পিতা। আমাদের মহান স্বাধীনতার স্থপতি। আমাদের সংবিধানের মুখবন্ধে এই বিষয়টি বাণীবদ্ধ আছে।
এখন প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধানকে লঙ্ঘনকারী কোন ব্যক্তি কিভাবে বাংলাদেশের নাগরিক হতে পারে? ব্রিটেনসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে অবস্থানকারী বাংলাদেশি বংশোদ্ভুতদের বাংলাদেশ সরকার দ্বৈত নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ দেয়। এতে করে তারা ভিনদেশে বসেও আর দশজন সাধারণ নাগরিকের মতই বাংলাদেশে সম্পত্তি কেনা-বেচা, সম্পত্তির উত্তরাধিকার, ব্যবসা-বাণিজ্য, ব্যাংকিংসহ যে কোন সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারেন। এটি কোন নতুন বিধান নয়। এটি দীর্ঘদিনের। বর্তমান সরকার আগ বাড়িয়ে যা করেছে, তা হলো এদের ভোটাধিকার দেয়ার বিষয়টিও সামনে নিয়ে এসছে।
এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব এবং সংবিধানকে অস্বীকারকারী এইসব তথাকথিত প্রবাসী বাংলাদেশিদের ব্যাপারে কঠোরতম সিদ্ধান্ত নেয়ার। আর তা করতে হবে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই। ভুলে গেলে চলবে না গণতন্ত্রের প্রবাদপুরুষ সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রপতি আব্রাহাম লিংকনও রাষ্ট্রদ্রোহীদের জন্য ‘হেবিয়াস কর্পাস’ স্থগিত করেছিলেন।
আমি এ কথা বলছি না, হামলাকারীরা সকল প্রবাসী বাংলাদেশির প্রতিনিধিত্ব করছেন। কিন্তু যারা এই অপকর্মে জড়িত ছিলেন তাদের রুখতে তো হবেই।
মনে রাখতে হবে লন্ডনের ঘটনাটি কোন আকস্মিক বিষয় ছিল না। স্মারকলিপি দেয়ার ছুতায় দুতাবাসে হামলার এই ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত। ঘটনাস্থল থেকে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া এক প্রবাসী কুলাঙ্গারের জবানবন্দির সূত্র ধরে ভারতের বহুল প্রচারিত দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে এর পিছনে বর্তমানে লন্ডনে অবস্থানকারী এদেশের একজন পলাতক রাজনৈতিক নেতার নির্দেশনা ছিল।
লন্ডন দুতাবাসে হামলাকারীদেও চিহ্নিত করা কোন কঠিন বিষয় না। সোশ্যাল মিডিয়াতে তাদের ভিডিও ও স্থির চিত্র ভাইরাল হয়েছে। আইনের শাসন সমুন্নত রাখা আর বিচারহীনতার সংষ্কৃতি থেকে বেরিয়ে আসার দীর্ঘ পথ পরক্রমায় বর্তমান সরকার বিচার করেছে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনীদের। আর ৭১’র মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের প্রক্রিয়া এখনো চলমান। এরই ধারাবাহিকতায় এইসব প্রবাসী বাংলাদেশি নামধারী জনাকয় দুষ্কৃতিকারীদের দ্বৈত নাগরিকত্ব বাতিল করা প্রয়োজন। আর ভোটধিকারের তো প্রশ্নই আসে না।
বাংলাদেশি বাবা-মায়ের ঔরসজাত হলেই এদেশীয় হওয়া যায় না। আর যখন তারা বিদেশি পাসপোর্ট হাতে নিয়ে দেশের বিরুদ্ধেই লিপ্ত হন নানা কর্মকা-ে তখন তাদেও বাংলাদেশ বিদ্বেষী বিদেশি বলা ছাড়া আর উপায়ই কী। এ অবস্থায় এদের সাংবিধানিক মর্যাদাও সেভাবেই নির্ধারণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পরম মমতায় তাদের কাছে আনতে চেয়েছেন, চেয়েছেন এদেশের যা কিছু ভাল, তার সাথে তাদের সম্পৃক্ত করতে। আর এরা একে মনে করেছে সরকারের দুর্বলতা।
“আপকো ম্যাঁয় দিল দিয়া নাদান সামাঝকার, আপনে উসে খা লিয়া বাদাম সামাঝকে” অর্থাৎ সোজা বাংলায় “আপনাকে আমি সরল বিশ্বাসে ভালবাসা দিয়েছিলাম আর আপনি কিনা তা বাদাম মনে করে খেয়ে ফেললেন,” হিন্দি এই শেরটি শুনেছি সম্প্রতি।
এই মানুষগুলোর কাছে প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা বড়জোর দশ টাকার ‘বাদাম’। এদের পাসপোর্টে ‘নো ভিসা রিকোয়ার্ড’ সিল বাংলাদেশের অপমান। এদের দ্বৈত নাগরিকত্ব তাই অবিলম্বে বাতিল করা প্রয়োজন। এরা ‘নাদান’ – এরা ভালবাসকে ‘বাদাম’ মনে করে খায়।
সারাবাংলা/এমএম
[এই কলামে তুলে ধরা সকল মতামত লেখকের নিজস্ব]