ইরান, চীন ও রাশিয়ার সামরিক মহড়া: আসল গুরুত্ব কোথায়?
১ জানুয়ারি ২০২০ ২০:৫১
ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরান, রাশিয়া এবং চীন গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে ৩০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরে যৌথ নৌমহড়া চালিয়েছে। এ মহড়া নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা হয়েছে; আলোচনা হয়েছে খোদ আমেরিকাতেও।
মহড়া শুরুর আগের দিন মার্কিন সেনা সদর দফতর বা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পেন্টাগনের মুখপাত্র সিন রবার্টসন বলেছিলেন, আমেরিকা এই মহড়ার ওপর গভীরভাবে নজর রাখছে, তারা মহড়া পর্যবেক্ষণ করছেন। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই যে আলোচনা কিংবা আমেরিকার পক্ষ থেকে গভীরভাবে মহড়াকে পর্যবেক্ষণ করা- এর কারণ কি? এর কারণ হচ্ছে- এই মহড়ার যেমন আঞ্চলিক গুরুত্ব রয়েছে তেমনি তা আমেরিকার জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যৌথ মহড়া এই বার্তা দিয়েছে যে, আমেরিকা চাইলেই ইরানের বিরুদ্ধে যা খুশি তাই করতে পারবে না; আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরান একাও নয়।
এবছরের অক্টোবরের দিকে ইরানের ওপর থেকে জাতিসংঘের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা উঠে যাবে। জাতিসংঘকে ব্যবহার করে নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে আমেরিকা যেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে দিতে না পারে সম্ভবত সে বার্তাও দিয়ে দিয়েছে চীন ও রাশিয়া। সন্দেহ নেই, মহড়ার মধ্যদিয়ে ইরানের প্রতি রাশিয়া ও চীনের বিরাট সমর্থন প্রকাশ পেয়েছে।
প্রকৃতপক্ষে- রাশিয়া, ইরান এবং চীন হচ্ছে আমেরিকার অভিন্ন শত্রু। এই তিনদেশই আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার শিকার। ইরান তো সেই ১৯৭৯ সালে ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর থেকেই আমেরিকার এক নম্বর শত্রুতে পরিণত হয়েছে। ফলে এই তিনটি দেশ যখন ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি পয়েন্টে সামরিক মহড়া চালায় তখন তার গুরুত্ব আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অত্যন্ত বেশি।
রাশিয়া, চীন এবং ইরান আমেরিকার অভিন্ন শত্রু হলেও ইরানের সঙ্গে আমেরিকার শত্রুতার মাত্রাটা একটু ভিন্ন রকমের। ইরানের সঙ্গে আমেরিকার শত্রুতার ভিন্ন মাত্রাটা মূলত আদর্শিক জায়গায়। ইরানের ইসলামি বিপ্লব ও সেখানকার ইসলামি সরকার এই আদর্শিক দ্বন্দ্বের আসল কারণ। পাশাপাশি আমেরিকা এবং তাদের পশ্চিমা মিত্ররা মনে করে, রেজা শাহের আমলে ইরান থেকে যেভাবে স্বার্থ হাতিয়ে নেওয়া যাচ্ছিল ইসলামি বিপ্লব সফল হওয়ার পর ইরান থেকে সেই স্বার্থ উদ্ধার করা সম্ভব নয়।
শুধু তাই নয়, পশ্চিমারা শঙ্কিত এই ভেবে যে, ইরানি বিপ্লবের প্রভাব পুরো মধ্যপ্রাচ্যসহ আশপাশের অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়বে যার প্রেক্ষাপটে এ অঞ্চলের অনেক দেশ ইরানি বিপ্লবের ভাবধারায় চলে যেতে পারে। এসব দেশের জনগণ মার্কিন তথা পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের লুটপাটের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারে। এসব শঙ্কা থেকে তারা শুরু থেকেই ইরানের বিপ্লব নস্যাৎ করার চেষ্টা করেছে এবং সে প্রচেষ্টা এখনো জারি রয়েছে। আমেরিকা জীবন-প্রাণ দিয়ে ইরানের ইসলামি সরকারকে উৎখাত করতে চায়।
একইভাবে চীন এবং রাশিয়াকে আমেরিকা প্রচণ্ড রকমের প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করে। চীন প্রতিদিন অর্থনীতিতে উন্নতি লাভ করছে এবং সময়ের ব্যবধানে চীনের অর্থনীতি এতটা শক্তিশালী হয়েছে যে, এখন তারা আমেরিকাকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করছে। চীন এখন কার্যত বিশ্বের সবচেয়ে বড় অর্থনীতির দেশ এবং চীনের পুঁজি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের অনেক দেশই তাদের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে।
এটি অবশ্য চীনের জন্য লাভজনক কারণ চীনা পণ্যের গুরুত্বপূর্ণ ভোক্তা হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। তাদের অর্থনীতি যদি দুর্বল হয় তাহলে চীনা পণ্যের বাজার সংকুচিত হবে। সেক্ষেত্রে পশ্চিমাদেরকে পুঁজি দিয়ে, ঋণ দিয়ে নিজের স্বার্থেই বাঁচিয়ে রাখতে চায় চীন। কিন্তু মার্কিন সরকারের অনুসৃত নীতির আলোকে চীনকে তারা ঠিকই শত্রু হিসেবে গণ্য করে আসছে এবং তার বিরুদ্ধে বাণিজ্যযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। মাঝেমধ্যে নানা অজুহাতে নিষেধাজ্ঞা দিচ্ছে।
আমেরিকার এই শত্রুতা চীন বোঝে না- তা নয়। চীন তার নিজের স্বার্থ এবং অর্থনীতিকে সচল রাখতে ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকে তেল নিয়ে থাকে। চীন হচ্ছে ইরানি তেলের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেও তারা ইরান থেকে তেল নেয়। চীনের এই ভূমিকায় মার্কিন সরকার ক্ষিপ্ত; তারা মাঝেমধ্যে চীনের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। মার্কিন নিষেধাজ্ঞাকে চীন শুধু শত্রুতা হিসেবে দেখে না, বড় রকমের অপমান হিসেবেও গণ্য করে।
সমরশক্তিতে এখনকার যুগে আমেরিকার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে রাশিয়া। স্নায়ুযুদ্ধের অবসান এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর আমেরিকা যেভাবে এককেন্দ্রিক বিশ্ব-ব্যবস্থা গড়ে তোলার দিকে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছিল, কেজিবির সাবেক প্রধান ভ্লাদিমির পুতিন রাশিয়ার ক্ষমতায় এসে সেই গতিতে বাধ সাধেন।
পুতিন শুধুমাত্র রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ক্ষমতায় আসেননি বরং এটা বিশ্বাস করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে যে, তিনি অনেক বড় মিশন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের অধীনে এককেন্দ্রিক বিশ্ব-ব্যবস্থা গড়ে ওঠার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। সেই ব্যবস্থা অনেকটা ভেঙে দিতে সক্ষম হয়েছেন পুতিন। তিনি রাশিয়াকে আবার ক্ষমতাবান করে তুলেছেন এবং আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী নীতি গুটিয়ে নিতে তিনি ওয়াশিংটনকে বাধ্য করবেন -এমন একটি নীতি কৌশলের আলোকে রাশিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। এরইমধ্যে পুতিনের নেতৃত্বে রাশিয়ার অর্থনীতি পুনরুজ্জীবিত হয়েছে; রাশিয়া আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে আবার প্রভাবশালী হয়ে উঠেছে। প্রেসিডেন্ট পুতিন কার্যত এখন আন্তর্জাতিক অঙ্গনের প্রধান ‘মাতব্বর’। পুতিন এবং রাশিয়ার এই উত্থান আমেরিকার কাছে ভালো লাগে না। ফলে রাশিয়াকে তারা দুর্বল করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
যেকোনো দেশের অর্থনীতি হচ্ছে রাজনীতি ও সমরশক্তির প্রাণবায়ু। অর্থনীতি শক্তিশালী হলে রাজনীতি এবং সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা কোনো ব্যাপারই না। এর বিপরীত কথা হচ্ছে- অর্থনীতি দুর্বল হলে রাজনীতি এবং সমরশক্তি দুর্বল হয়। আমেরিকা বিষয়টি খুব ভালো করেই জানে এবং তারা রাশিয়ার অর্থনীতিকে দুর্বল করতে চায়। এজন্যই আমরা দেখতে পাচ্ছি- রাশিয়া যখন জার্মানির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করছে এবং রাশিয়া থেকে গ্যাস পাইপলাইনের মাধ্যমে জার্মানি, পূর্ব ইউরোপ ও মধ্য ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে গ্যাস সরবরাহ করতে চাইছে তখন সেই গ্যাস পাইপলাইন প্রকল্পকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হয়েছে। এছাড়া ইউক্রেন ও ক্রিমিয়া ইস্যুতে ধাপে ধাপে রাশিয়ার বিরুদ্ধে মার্কিন সরকার অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
ইরান, রাশিয়া এবং চীনের বিরুদ্ধে আমেরিকার এই যে অবস্থান এবং অভিন্ন শত্রুতা- এগুলোই তিনটি রাষ্ট্রকে আমেরিকার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হতে যথেষ্ট সাহায্য করেছে। এরই ফল হিসেবে আমরা দেখতে পাচ্ছি ইরান, রাশিয়া ও চীন ঐক্যবদ্ধভাবে ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরের বিশাল জলরাশির ১৭ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকায় নৌমহড়া চালিয়েছে। এই নৌমহড়া তিন দেশের জন্য যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তা বিস্তর প্রভাব ফেলবে। এ মহড়ার মাধ্যমে মূলত ইরান, রাশিয়া ও চীন ঐক্যবদ্ধভাবে আমেরিকাকে এই বার্তা দিল যে, তারা আমেরিকার বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ রয়েছে এবং ভবিষ্যতে প্রয়োজন হলে তারা ঐক্যবদ্ধভাবে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। এই ঐক্য শুধুমাত্র অর্থনীতি কিংবা রাজনীতিকেন্দ্রিক নয় বরং এই ঐক্য সামরিক ও কূটনীতির ক্ষেত্রেও সমানভাবে প্রযোজ্য।
আমার একটু পেছন ফিরে তাকালে দেখব- ২০১৮ সালের মে মাসে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তার দেশকে পরমাণু সমঝোতা থেকে বের করে নিয়ে গেছেন। শুধু তাই নয়, তিনি ইরানের বিরুদ্ধে কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন এবং মার্কিন সরকার ঘোষণা দিয়েছে যে, ইরানের তেল বিক্রি শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা হবে। পাশাপাশি যেসব দেশ ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য করবে তাদের বিরুদ্ধে একই ধরনের শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেবে। এখান থেকেই ইরান এবং আমেরিকার ভেতরে নতুন করে প্রচণ্ড রকমের সামরিক ও রাজনৈতিক উত্তেজনা দেখা দিয়েছে। আমেরিকা চুক্তি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার এক বছরের মাথায় এসে ইরানও চুক্তির বেশকিছু ধারা বাস্তবায়ন করা স্থগিত রেখেছে।
গত জুন মাসে পারস্য উপসাগরের ইরানি আকাশসীমা থেকে আমেরিকার একটি অত্যাধুনিক ড্রোন ভূপাতিত করে ইরানের সামরিক বাহিনী। সেটি ছিল আমেরিকার জন্য বিরাট আঘাত। এর আগে ওমান সাগরে অন্তত চারটি জাহাজে সন্দেহভাজন হামলা হয়। হামলার পরপরই আমেরিকা এবং সৌদি আরব ইরানকে দায়ী করে বিবৃতি দেয় কিন্তু ইউরোপের বেশিরভাগ দেশ, জাপান, চীন এবং রাশিয়া কেউই আমেরিকার অভিযোগ বিশ্বাস করেনি। শুধু তাই নয়, যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বন্দরে জাহাজগুলোর ওপর হামলা হয়েছে সেই সংযুক্ত আরব আমিরাত নিজেও আমেরিকার অভিযোগ বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করেছিল।
এরপরও আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে একটি নৌ সামরিক জোট গঠন করার চেষ্টা করে যে সামরিক জোট পারস্য উপসাগর এবং ওমান সাগর এলাকায় ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। বুঝতে পারা যায়- ভেতরে ভেতরে আমেরিকার লক্ষ্য ছিল নৌ সামরিক জোট গঠন করে নানা অজুহাতে ইরানের ওপর তারা হামলা চালাবে। কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে- আমেরিকা সেই জোট গঠন করতে সক্ষম হয়নি; তার পশ্চিমা মিত্ররা এবং রাশিয়া, জাপান, চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক দেশ এতে সাড়া দেয় নি। ফলে আমেরিকার এই সামরিক জোট গঠনের চিন্তা মাঠে মারা গেছে।
আমেরিকা এবং সৌদি আরব যখন এই জোট গঠন করতে ব্যর্থ হয়েছে ঠিক তখনই সেই ব্যর্থতার ওপর দাঁড়িয়ে রাশিয়া এবং চীনের মতো দুই বৃহৎ শক্তিকে সাথে নিয়ে ইরান ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরে চার দিনব্যাপী সামরিক মহড়া চালাল। এই মহড়া দিয়ে ইরান একথাই প্রমাণ করে দিল যে, আমেরিকার বিরুদ্ধে ইরান, রাশিয়া এবং চীন ঐক্যবদ্ধ রয়েছে।
যে এলাকায় মহড়া চালানো হয়েছে তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই এলাকা দিয়ে বিশ্বের শতকরা ৩০ থেকে ৪০ ভাগ তেল পরিবহন করা হয়। জাপান তার শতকরা ৯০ ভাগ তেল এই অঞ্চল দিয়ে আমদানি করে। চীনের সিংহভাগ তেল আমদানি হয় এ অঞ্চল দিয়েই। ফলে এই অঞ্চলের জাহাজ চলাচল এবং সমুদ্রপথের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব শুধু আমেরিকার নয়। এই অঞ্চলে এতদিন আমেরিকা যে মোড়লিপনা করে আসছিল তাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েই মূলত তিনদেশ নৌমহড়া চালিয়েছে। তারা জানিয়ে দিয়েছে- আমেরিকার কথাই শেষ কথা নয়। ভারত মহাসাগর ও ওমান সাগরের এই গুরুত্বপূর্ণ নৌরুটের নিরাপত্তা বিধানের দায়িত্ব চীন, রাশিয়া, ইরান সবার কাঁধে এবং তারাই এ অঞ্চলে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম।
চার দিনব্যাপী মহড়ার মধ্যদিয়ে ইরান, রাশিয়া এবং চীন যেমন তথ্য ও অভিজ্ঞতা বিনিময়ের সুযোগ পেয়েছে, তেমনি তাদের সামরিক বন্ধন আরও বেশি জোরাল হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে সিরিয়ায় সহিংসতা শুরুর পর ইরান, রাশিয়া, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক মিলে একটা মার্কিন-বিরোধী বলয় গঠনের চেষ্টা করছিল। ভারত মহাসাগর এবং ওমান সাগরের এই মহড়া সে প্রচেষ্টাকে অনেকটা জোরদার করবে বলে ধারণা করা যায়।
গত জুন মাসে পারস্য উপসাগরের ইরানি আকাশসীমা থেকে মার্কিন অত্যাধুনিক গ্লোবাল হক ড্রোন ভূপাতিত করার পর ইরান সম্পর্কে আমেরিকার হিসাব-নিকাশে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এ অঞ্চলে ইরান-বিরোধী লড়াইয়ে আমেরিকা আর ততটা নিরাপদ বোধ করছে না। এজন্য তার সঙ্গী দরকার কিন্তু মিত্ররা আগের মতো আর সাড়া দিচ্ছে না। এর বিপরীতে ইরান তার শক্তিশালী মিত্রদের নিয়ে মহড়া চালাল।
আসলে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকা নিজের জন্যই বহু শত্রু তৈরি করেছে এবং নিজেই যুদ্ধের বহু ফ্রন্ট খুলেছে। পরিস্থিতি এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, আমেরিকা এখন কাকে রেখে কার বিরুদ্ধে লড়বে! এর মধ্যেই ইরান প্রতিদিন সমর শক্তিতে বলিয়ান হয়ে উঠছে এবং পুরো মধ্যপ্রাচ্য ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। এর ধারাবাহিকতায় চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে নৌ মহড়া অনুষ্ঠিত হলো। এতে মার্কিন সরকারের কপালে ভাজ পড়েছে বড্ড বেশি। এ মহড়া মার্কিন সরকারের জন্য ভবিষ্যতের অনেক বার্তা দিয়ে গেল বটে।
লেখক: সিরাজুল ইসলাম, রেডিও তেহরানের সাংবাদিক