কচুরিপানা, সাংবাদিকতা ও টু এডুকেট প্রসঙ্গ
১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ১২:৫৮
বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকালবেলা বাড়ির মূল ফটকে একজন বিদগ্ধ পাঠকের সঙ্গে কথপোকথন:
(কুশল বিনিময় শেষে)
– আপনাদের সারাবাংলা পড়ি, কিন্তু এটা তো তেমন ভালো করছে না। কী হয়েছে বলুন তো?
– ভালো করতে পারছি না বলেই ভালো হচ্ছে না।
– আরে না, আপনাদের কনটেন্ট তো ভালো, কিন্তু পাঠকের কাছে যাচ্ছে না। আপনাদের কি প্রচার কম? আর তাছাড়া আপনারা কোনো নিউজে টুইস্ট করেন না, সে কারণেই বেশি চলে না।
– টুইস্ট কেন করব?
– সেটা না করলে কি আর চলবে? এই যে দেখেন কচুরিপানা নিয়ে কত কী হয়ে গেল। কই আপনারা তো নিউজটা সেভাবে দিলেন না। যারা টুইস্ট করেছে তারা কত রিডার পেয়ে গেল। একটু সুড়সুড়ি না দিলে মানুষ কী পড়বে?
– সুড়সুড়ির কনটেন্টের বিরুদ্ধেই তো আমি লেখালেখি করি, গুগলে সার্চ দিয়ে দেখবেন, অনেক লিখেছি। এখন আমরা নিজেরা কিভাবে সুড়সুড়ির কনটেন্ট দেই!
– সুড়সুড়ি দেবেন না, কনটেন্ট টুইস্ট করবেন না, গসিপ লিখবেন না— তাহলে কি পাঠক আপনাদেরটা নেবে? পাঠক ভালো কিছু খুব একটা পছন্দ করে না।
– দেখি ভাই, আমরা গুড জার্নালিজম (ইতিবাচক সাংবাদিকতা) দিয়েই টিকে থাকতে চাই।
– পারবেন না। দেশের ১ শতাংশ পাঠকও ওই ধরনের কনটেন্টে আগ্রহী না। সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করেন, সরকারকে প্যাঁচে ফেলেন কনটেন্ট দিয়ে, তাহলে হয়তো কিছু পাঠক আপনারা পাবেন।
– না ভাই, প্যাঁচে ফেলানো তো সাংবাদিকের কাজ নয়। আর তাছাড়া সরকারের সমালোচনা, সরকারের কোনো ভুল কিছু হলে তা নিয়ে তো আমরা রিপোর্ট করি। দুর্নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান পরিষ্কার। দুর্নীতির খবর আমরা যেখানে যেটাই পাই, তা প্রকাশ করি।
– হ্যাঁ, তা করেন দেখতে পাই। কিন্তু তার মধ্যেও একটু টুইস্ট করতে হবে। সাদামাটা দুর্নীতির খবরও পাঠক নেয় না। তারা সেটার মধ্যে গন্ধ খুঁজতে চায়।
– তো পাঠক তার মতো গন্ধ খুঁজে নিক, আমাদের কাজ তো শুধু ইনফর্ম করা (মানে জানানো)। খবরের ভেতরে যদি গন্ধদায়ক কিছু থাকে, তা পাঠকই খুঁজে নেবে।
– আরে না, পাঠক সরাসরি দুর্গন্ধটা পেতে চায়। তারা দুর্গন্ধময় কিছু পেলেই তাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে।
– সেটা বোধ হয় সারাবাংলার পক্ষে সম্ভব না।
– এমন হলে তো আপনারা পিছিয়ে পড়বেন?
– না ভাই পিছিয়ে পড়ব না, পাঠক যেমন দুর্গন্ধ চায়, ভালো কিছুও চায়। আমরা ভালোটা দিচ্ছি।
– তাতে আর কতটুকু পাঠকই পাবেন? আচ্ছা এইরকম সাংবাদিকতা করে কোনো মিডিয়া কি কখনো ভালো করতে পেরেছে?
গুটি কয়েক বিদেশি আর এক-দু’টো দেশি সংবাদমাধ্যমের নাম করে বললাম, কেন, এরা তো ভালো সাংবাদিকতাই করছে। তাদের তো নাম হয়েছে। সুনাম অর্থে।
– হ্যাঁ নাম হয়েছে, কিন্তু হাল আমলে কিন্তু এমনটা আর বোধহয় সম্ভব না।
– আপনি বিদগ্ধ পাঠক। আপনি এমনটা বললে চিন্তারই কথা। কিন্তু আমার মনে হয়, কিছুটা হলেও সম্ভব। তা না হলে সারাবাংলার পাঠক দিন দিন বাড়ত না। প্রতিদিনই তো কিছু না কিছু নতুন পাঠক আসছে। আর আমরা গ্রাফটা দেখছি ধীরে ধীরে ওপরের দিকে যাচ্ছে। তা বোধহয় আমাদের এই গুড জার্নালিজমের জন্যই।
– কী জানি, হতে পারে! তবে আমার মনে হয়, আপনাদের জন্য টিকে থাকা কষ্টকর হবে।
– কষ্টকর যে হচ্ছে, তা আমরা এখনই টের পাচ্ছি। তবে হাল ছাড়ছি না। দেখিই না চেষ্টা করে।
– হ্যাঁ, তা দেখতে পারেন। সফল হলে সারাবাংলা উদাহরণ হিসেবে তৈরি হবে পাঠকের কাছে।
– সেটা কতটা হবে তা জানি না। তবে আপনি যে কেবল পাঠককে দুষছেন, তা কিন্তু সঠিক নয়। পাঠক ভালো কিছু পেলেও পড়ে। কিন্তু আমরা যখন কনটেন্টের নামে গার্বেজ তৈরি করি, বাজারে ছাড়ি, তখন তো পাঠকের মন সেদিকে যাবেই।
– তা ঠিক বলেছেন।
– হ্যাঁ, পাঠকের রুচি তৈরি করাও কিন্তু মিডিয়ার কাজ। এই যে বললেন, পাঠক যা চায়, তা দিতে হবে। তা যদি মিডিয়া করে, তাহলে মিডিয়া হিসেবে তার দায়িত্বপালন হয় না। বরং মিডিয়ারও দায়িত্ব হচ্ছে পাঠকের মধ্যে রুচিকর কনটেন্টে আগ্রহ গড়ে তোলা। তো আমরা যদি ক্লিক আর জনপ্রিয়তার জন্য সেইসব কনটেন্টেই জোর দেই, তাহলে পাঠকের রুচি কখনোই পাল্টাবে না।
আরও একটি কথা। সাংবাদিকতার টু ইনফরম (জানানো) ছাড়াও আরেকটি কাজ আছে— টু এডুকেট (শেখানো)। আমরা একটি ভালোমানের সাংবাদিকতা দিয়ে পাঠককে শেখাতেও পারব। ফলে ভালো পাঠকও তৈরি হবে।
– হ্যাঁ, হতে পারে।
– এই যে আপনি সাংবাদিকতা নিয়ে এত ভাবছেন, মিডিয়া নিয়ে ভাবছেন, আপনি তো সাংবাদিক নন। তো এমন পাঠকও রয়েছেন। আপনাদের মতো অনেক পাঠকই আছেন, আর সে সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। আপনি দেখি নিয়মিত সারাবাংলার বিভিন্ন পোস্ট নিজের ফেসবুক ওয়ালে শেয়ার করেন। আপনার মতো পাঠক যত বাড়বে, সারাবাংলার ভিত ততই মজবুত হবে।
– আপনাদের জন্য শুভকামনা।
– আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।