Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রইজ উদ্দিনকে স্বাধীনতা পদক দিলো কারা!


১৩ মার্চ ২০২০ ২৩:১৫

২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও অনেকের মতো আমিও এস এম রইজ উদ্দিন আহাম্মদ নামে কোনো সাহিত্যিককে চিনতাম না। সত্যি বলতে কী, রইস উদ্দিন নামের দুয়েকজনকে চিনলেও রইজ উদ্দিন নামটাই কখনো শুনিনি। আমি বাংলাদেশের সব শিল্পী-সাহিত্যিককে চিনবই— অত বোদ্ধা আমি নই, জ্ঞানগম্যিও অত নেই। কিন্তু আমি নাম জানি না, কোনো লেখা পড়িনি— এমন কেউ সাহিত্যে সর্বোচ্চ বেসামরিক পদক পেয়ে যাবেন, অতটা মূর্খও নই। তবে ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০ সালের স্বাধীনতা পদকের জন্য ৯ ব্যক্তি ও এক প্রতিষ্ঠানের নাম ঘোষণার পর আমারও খটকা লেগেছিল। কিন্তু লজ্জায় ও ভয়ে মুখ বন্ধ করে ছিলাম।

বিজ্ঞাপন

ইদানীং ফেসবুক বেশি পড়ার কারণে ‘বুক’ কম পড়া হয়। হয়তো এই সময়ে এস এম রইজ উদ্দিন অসাধারণ কিছু কাজ করেছেন, যা আমার চোখ এড়িয়ে গেছে। হতে পারে অন্য অনেকে তার লেখা পড়েছেন, আমি পড়িনি। হতে পারে এস এম রইজ উদ্দিন তার সার্টিফিকেট নাম, হয়তো লেখালেখি করেন অন্য নামে। রইজ উদ্দিনের মতো মোহাম্মদ শহীদুল হক নামেও একজন আমলা ছিলেন, যিনি লেখালেখি করতেন শহীদুল জহির নামে। মোহাম্মদ শহীদুল হক যদি কখনো মরণোত্তর স্বাধীনতা পদক পান, আমি যদি না চিনি, সেটা আমার ব্যর্থতা হবে। রইজ উদ্দিনের ক্ষেত্রেও তেমনই ভেবেছি। মুখ খুললেই মূর্খতা ফাঁস হয়ে যাবে ভেবে চুপ করে ছিলাম। কিন্তু পরে দেখি ফেসবুকে আমার মতো মূর্খের সংখ্যাই বেশি। আমার পরিচিত কেউই রউজউদ্দিন নামে কোনো সাহিত্যিককে চেনে না, তার কোনো লেখক নামও জানা গেল না।

বিজ্ঞাপন

আমার মূর্খতার মুখোশ খুলে দিলেন বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। ২১ ফেব্রুয়ারি তিনি ফেসবুকে লিখলেন, ‘এবার সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পেলেন রইজ উদ্দীন, ইনি কে? চিনি না তো। কালীপদ দাসই বা কে! হায়! স্বাধীনতা পুরস্কার!’ শামসুজ্জামান খানের স্ট্যাসটি আসলে সবার চোখ খুলে দিলো। বাংলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালকই যাকে চেনেন না, তিনি কী করে সাহিত্যে স্বাধীনতা পদক পান! শামসুজ্জামান খান না চিনলেই কাউকে সাহিত্যে পদক দেওয়া যাবে না, তেমনটাও আমি মনে করি না। কিন্তু ব্যাপক খোঁজাখুঁজি করে যা জানা গেল, বিভিন্ন বিষয়ে গোটা ত্রিশেক বই লিখেছেন বটে, কিন্তু আসলেই এস এম রইজ উদ্দিন স্বাধীনতা পদক পাওয়ার মানের সাহিত্যিক নন।

এখন কেউ যদি বলেন, এই মানদণ্ড ঠিক করার আপনি কে? আর মানদণ্ডটাই বা কী? এই কুতর্কের জবাব হলো— শামসুর রাহমান বড় কবি না আল মাহমুদ, তা নিয়ে তর্ক হতে পারে; শহীদুল জহির বড় না হরিশংকর জলদাস, এ নিয়েও তর্ক হতে পারে; কিন্তু যিনি আসলে সাহিত্যিকই নন, তাকে একেবারে সাহিত্যের সর্বোচ্চ পদক দিয়ে দেওয়াটা কোনোভাবেই মেলে না।

আরও পড়ুন- স্বাধীনতা পুরস্কারে ভূষিত গোলাম দস্তগীর গাজী বীর প্রতীক

যথারীতি  বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল ফেসবুকে সমালোচনার সুনামি বয়ে গেল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ঢেউ পড়ল গণমাধ্যমেও। অন্য অনেক ঘটনার মতো সরকার এবারও জনমতের প্রতি সম্মান দেখাল। নাম ঘোষণার ২২ দিন পর এস এম রইজ উদ্দিনের নাম প্রত্যাহার করে নেওয়া হলো। এখানেই আমার আপত্তি।

এস এম রইজ উদ্দিনকে আমি দোষ দেবো না। যারা লেখালেখি করেন, তাদের কাছে নিজের লেখাটাই সেরা মনে হয়। তারা পুরস্কার পেতে চাইবেন। পুরস্কারের জন্য অনেকে চেষ্টা-তদ্বিরও করেন। রইজ উদ্দিনও নিশ্চয়ই চেষ্টা করেছেন, তদ্বির করেছেন। তার চেষ্টা সফল হয়েছে, তিনি স্বাধীনতা পদক পেয়েছেন। ধরে নিলাম তিনি কোনো চেষ্টাই করেননি। কিন্তু সরকার যদি তাকে পদক দেয়, তিনি তো নিশ্চয়ই ফিরিয়ে দেবেন না। বাংলাদেশের কে আছেন, যাকে পদক দিলে তিনি নিজেকে অযোগ্য দাবি করে পদক ফিরিয়ে দেবেন! এখানে রইজ উদ্দিনের দোষটা কোথায়? কেন একবার পদক দিয়ে, আরেকবার ফিরিয়ে নিয়ে তাকে এভাবে অপদস্থ করা হলো? ভাবুন একবার, স্বাধীনতা পদক ঘোষণার পর সারাদেশের মানুষ তাকে চিনেছে। তার আত্মীয়-স্বজনরা জেনেছে। নিশ্চয়ই অনেকে তাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। মিষ্টি খাওয়াও নিশ্চয়ই কম হয়নি। পদক দিয়ে তাকে যতটা সম্মানিত করা হয়েছিল, ফিরিয়ে নিয়ে তার হাজার গুণ অপমান করা হলো না কি? ৬৯ বছর বয়সী একজন মানুষের এই অপমানটা আমার হৃদয়ে খুব লাগছে। তিনি নিশ্চয়ই এখন ভাবছেন, ধরণী দ্বিধা হও।

স্বাধীনতা পদক কেলেঙ্কারিতে রইজ উদ্দিনের প্রতি আমার কোনো বিদ্বেষ নেই, এখন বরং সহানুভূতি তৈরি হয়েছে। আমার সব ঘৃণা পর্দার আড়ালে থাকা সেইসব কুশীলবদের প্রতি, যারা সুকৌশলে স্বাধীনতা পদককেই হাস্যকর করে তুলতে পেরেছেন, যারা রইজ উদ্দিনকে পদক দিয়ে স্বাধীনতা পদককেই কলঙ্কিত করেছেন। আমি দাবি জানাচ্ছি, যারা রইজ উদ্দিনকে পদক দিয়েছেন, তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। শাস্তি তো রইজ উদ্দিনের নয়, যারা তাকে পদক দিয়েছে তাদের প্রাপ্য।

স্বাধীনতা পদক কেলেঙ্কারি নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রিপোর্ট হয়েছে। জানা যাচ্ছে, রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের নাম চূড়ান্ত করে জাতীয় পুরস্কার সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এই কমিটির আহ্বায়ক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। তিনি ছাড়াও মন্ত্রিসভার আরও ১২ জন সদস্য আছেন কমিটিতে। এছাড়া সহায়তাকারী হিসেবে আছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবসহ ১০ সচিব। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের নাম প্রস্তাবের ভিত্তিতে এই কমিটি মনোনীতদের নাম চূড়ান্ত করে। এস এম রইজ উদ্দিনের নামটি প্রস্তাব করেছিল ভূমি মন্ত্রণালয়।

আলোচিত রইজ উদ্দিন ভূমি সংস্কার বোর্ডে চাকরি করতেন। গত ১৫ জানুয়ারির আগে খুলনা বিভাগীয় উপভূমি সংস্কার কমিশনার ছিলেন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের এই কর্মকর্তা। পুরস্কারের জন্য তিনি আবেদন করেছিলেন। ভূমি সংস্কার বোর্ড আবেদনটি ভূমি আপিল বোর্ডে পাঠিয়ে দেয়। ভূমি আপিল বোর্ড সেটি পাঠায় ভূমি মন্ত্রণালয়ে। আর মন্ত্রণালয় সেটি পাঠায় কমিটির কাছে। কমিটিও কোনো যাচাই-বাছাই ছাড়াই রইজ উদ্দিনকে পদক দিয়ে দেয়।

প্রক্রিয়াটি জেনে আমার বিস্মিত হওয়ার ক্ষমতাও ফুরিয়ে গেছে। স্বাধীনতা পদক পাওয়া এত সহজ! আবেদন করবেন, মন্ত্রণালয় কমিটির কাছে পাঠাবে, কমিটি আপনার নাম ঘোষণা করে দেবে। ব্যাস! কমিটির কারও কি একবারও রইজ উদ্দিনের ব্যাপারে একটুও কৌতূহল হলো না? এখন দুঃখপ্রকাশ করছেন, বলছেন— ভুল হয়ে গেছে। কিন্তু সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদকে এত বড় ভুল, এত বড় খামখেয়ালি কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আমি অবশ্যই এই পদক কেলেঙ্কারির তদন্ত চাই, দায়ীদের শাস্তি চাই। অবশ্য জানি লাভ হবে না। এর আগে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মুক্তিযুদ্ধে অবদানের জন্য দেওয়া ক্রেস্টের সোনা কেলেঙ্কারি, রাজাকারের তালিকা কেলেঙ্কারিরও কোনো সুরাহা হয়নি।

বাংলাদেশে পদক-পুরস্কার নিয়ে কেলেঙ্কারি অবশ্য এই প্রথম নয়। এ বছরের একুশে পদক নিয়েও আপত্তি আছে অনেকের। স্বাধীনতা পদক তালিকায় রইজ উদ্দিনের পাশাপাশি কালীপদ দাসের নাম নিয়েও প্রশ্ন উঠেছিল। প্রতিবারই বাংলা একাডেমি পদক, একুশে পদক, স্বাধীনতা পদক নিয়ে বিতর্ক হয়। স্বাধীনতা পদকের সবচেয়ে বড় কলঙ্ক তো শর্ষীনার পীর। সরাসরি স্বাধীনতার বিরোধিতাকারী শর্ষীনার পীরকে দুই বার স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়েছে। দাবি জানাচ্ছি, দেরিতে হলেও শর্ষীনার পীরের স্বাধীনতা পদক প্রত্যাহার করা হোক। স্বাধীনতা পদকের তালিকায় যেন কোনো স্বাধীনতাবিরোধীর নাম না থাকে।

বাংলাদেশে পদক-পুরস্কারের প্রক্রিয়া নিয়েও আমার প্রশ্ন আছে। প্রতিটি পুরস্কারের জন্যই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে আবেদন করতে হয়। তাহলে তো নিভৃতচারী নির্মোহ লেখক কখনোই পুরস্কার পাবে না। রাষ্ট্র বা প্রতিষ্ঠান নিজে থেকে খুঁজে যোগ্য লোককে পুরস্কার দেবে। কেউ পুরস্কারের জন্য আবেদন করেছে, এটা শোনার সঙ্গে সঙ্গেই তো আমার কাছে তাকে অযোগ্য মনে হয়। আমি দাবি জানাচ্ছি, নিজ থেকে আবেদন করার পদ্ধতিটি এখনই বাতিল করা হোক। সত্যিকারের যোগ্য কোনো লেখক কখনোই আবেদন করে পুরস্কার নেবেন না। কারণ আত্মসম্মানটাও লেখক-সাহিত্যিকের একটা বড় যোগ্যতা।

এস এম রইজ উদ্দিনকে নিয়ে ফেসবুকে দেওয়া আমার এক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে ওয়াশিংটনে কর্মরত মোহাম্মদ শফিউল আলম। রইজ উদ্দিন প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন, ‘তাকে যেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে তিনি তত খারাপ লোক নন। তিনি একজন নিভৃতচারী, সৎ, নিষ্ঠাবান, জ্ঞানী কর্মকর্তা। ভূমি ও তার ইতিহাসের বিষয়ে তার পাণ্ডিত্য অসাধারণ। তিনি আমার সঙ্গেও ভূমি মন্ত্রকে ছিলেন। তার অনেক ভালো মানের প্রকাশনা আছে, পরিচিতি কম। প্রকাশনার মান যাচাই করে কমিটি তার পুরস্কারের সুপারিশ করতেই পারে। সরকার ওই সুপারিশ নাও রাখতে পারে। এটাই নিয়ম। তাকে না চেনার কারণে তার গ্রহণযোগ্যতা বা ক্রেডিবিলিটি নষ্ট হয়েছে— এমনটি মনে করা সঙ্গত নয়।‘

আমার মতো ছাপোষা সাংবাদিকের স্ট্যাটাস তার নজরে পড়েছে, তিনি মন্তব্য করেছেন; আমি কৃতজ্ঞ। আমি তার মন্তব্যের সঙ্গে অনেকটাই একমত। বিনয়ের সঙ্গে একটু দ্বিমতও পোষণ করছি। রইজ উদ্দিন ‘সৎ, নিষ্ঠাবান, জ্ঞানী কর্মকর্তা’ হতে পারেন। ভূমি ও ভূমির ইতিহাস বিষয়ে তার অসাধারণ পাণ্ডিত্য থাকতে পারে। তবে না চেনার কারণেই তার গ্রহণযোগ্যতা নষ্ট হয়েছে— এমনটাও আমি মনে করি না। লেখা মানসম্পন্ন হলে চেনা না চেনায় কিছু যায় আসে না। আসল জীবনানন্দ দাসকে তো মানুষ চিনেছে তার মৃত্যুর পর। আমার সবচেয়ে বড় আপত্তি ‘নিভৃতচারী’ বিশেষণ নিয়ে। স্বাধীনতা পদক ফিরিয়ে নেওয়ার পর এস এম রইজ উদ্দিনের প্রতি সহানুভূতি তৈরি হলেও তার সস্পর্কে যতটা জানছি, তাকে ঠিক সহজ-সরল-নিভৃতচারী মনে হয়নি।

২০ ফেব্রুয়ারি ঘোষিত স্বাধীনতা পদকের তালিকায় রইজ উদ্দিনের নামের পাশে লেখা ছিল ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’। তার জন্ম ১৯৬০ সালে। তার মানে একাত্তর সালে তার বয়স ছিল ১১ বছর। মাত্র ১১ বছর বয়সে তিনি ৮ নম্বর সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, এই তথ্যটির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে তদন্ত করলে স্বাধীনতা পদকের মতো তার ‘বীর মুক্তিযোদ্ধা’ পরিচয়ও টিকবে বলে মনে হয় না। আর স্বাধীনতা পদক কিন্তু এই ‘নিভৃতচারী’ লেখকের প্রথম পুরস্কার নয়। তার আরও আটটি পদক বা পুরস্কারের কথা জানা যায়। ২০০৮ সালে তিনি সাউথ এশিয়ান কালচারাল সোসাইটির ‘আন্তর্জাতিক মাদার তেরেসা স্বর্ণপদক’ পেয়েছেন। ২০০৭ সালে পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন স্বর্ণপদক, ২০০৮ সালে পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন শ্রেষ্ঠ ইতিহাস গবেষক সম্মাননা, ২০১০ সালে পেয়েছেন বীরশ্রেষ্ঠ মতিউর রহমান স্বাধীনতা পদক, ২০০৯ সালে

পেয়েছেন কথাসাহিত্যিক কাশেম রেজা স্মৃতি গাঙচিল সাহিত্য পদক, ২০১২ সালে পেয়েছেন বিশ্ব বাঙালি সম্মাননা, ২০১৫ সালে পেয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের একটি মাসিক সাহিত্য পত্রিকা থেকে সম্মাননা। তার মানে তিনি মোটেই নিভৃতচারী নন। বরং তার পুরস্কারের লোভ আন্তর্জতিক পরিসরেও ছড়িয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের কোনো সাহিত্য পত্রিকা নিশ্চয়ই তার লেখা পড়ে তাকে সাহিত্য বিষয়ে সম্মাননা দেয়নি।

এইসব পদক-পুরস্কার কীভাবে পাওয়া, তা কম বেশি সবাই জানেন। আর ইন্টারনেটে দেখলাম চাকরিতে থাকার সময় তিনি বিভিন্ন সময়ে সাহিত্য বিষয়ক নানা অনুষ্ঠানে গেছেন। কিন্তু কোথাও আসলে ঠাঁই পাননি। সেই না পাওয়াটা নিছক মানের কারণে। আমলা ছিলেন বলে তো কেউ শহীদুল জহিরের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলে না। শহীদুল জহির বরং নিভৃতচারী ছিলেন।

পদক বিতর্কের সময় বিবিসির প্রশ্নের জবাবে রইজ উদ্দিন দাবি করেছিলেন, ‘আমি প্রচারবিমুখ, আমার প্রচারের জন্য গাঙচিল আন্তর্জাতিক সাহিত্য সংস্কৃতি পরিষদ আছে। এর শাখা দেশের সব জেলাতে আছে, বিদেশে আছে। আমি এটার কেন্দ্রীয় সভাপতি। হাজার হাজার তৃণমূল পর্যায়ের কবি আমাকে ভালো জানে, আমিও তাদের জানি।‘ এবার বুঝুন! এই নিভৃতচারী সাহিত্যিক নিজের প্রচারের জন্য একটি আন্তর্জাতিক সংগঠন বানিয়েছেন। সেই সংগঠন তাকে অন্তত ছয়টি পুরস্কার এনে দিয়েছে। বেশি লোভ করতে গিয়ে আসলে রইজ উদ্দিন ধরা খেয়ে গেছেন।

তারপরও আমি রইজ উদ্দিনকে দায়ী করছি না। পদক-পুরস্কারের লোভ অনেকেরই আছে। সেটা পাওয়ার জন্য অনেকে চেষ্টা-তদ্বিরও করেন। রইজ উদ্দিন সে চেষ্টায় সফল হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সম্মান অর্জনের চেয়ে ধরে রাখা কঠিন। একটাই চাওয়া— রইজ উদ্দিন বিতর্কই হোক আমাদের রাষ্ট্রীয় পদক নিয়ে শেষ বিতর্ক। এরপর থেকে যেন যোগ্য লোকের হাতেই ওঠে সব পদক-পুরস্কার।

এস এম রইজ উদ্দিন আহম্মদ প্রভাষ আমিন রইজ উদ্দিন স্বাধীনতা পুরস্কার স্বাধীনতা পুরস্কার ২০২০

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর