করোনার র্যাপিড টেস্টে বদলে যাবে দৃশ্যপট
৩ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫০
কোভিড-১৯ বা করোনার আক্রমণে বিশ্ব এখন মহাদুর্যোগে। ভাইরাসের সংক্রমণ এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে একে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী বিশ্বের সবচেয়ে বিস্তৃত ও ভয়ংকর সংকট বলা হচ্ছে। করোনা মহামারির বিরুদ্ধে রণকৌশল ঘোষণা করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা। আর সেটা হলো- পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষা। অর্থাৎ কোভিড-১৯ হতে পারে এমন লোকজনকে যতো বেশি পরীক্ষার আওতায় আনা যাবে তত বেশি রোগী শনাক্ত হবে। অর্থাৎ জাল যতো বেশি জায়গা জুড়ে বড় করে ফেলা যাবে তত বেশি মাছ ধরা পড়বে।
কোভিড-১৯ এর রোগি শনাক্ত করার নির্ভরযোগ্য পরীক্ষাটির নাম হচ্ছে আরটি-পিসিআর। কিন্তু অসুবিধা হচ্ছে এই পরীক্ষাটি করতে সময় লাগে বেশি। একসাথে অনেক পরীক্ষা করা যায় না। এজন্য প্রশিক্ষিত দক্ষ জনশক্তি দরকার হয়। এই পরীক্ষার খরচও অনেক বেশি। এরজন্য উঁচুমানের জৈব নিরাপত্তাসমৃদ্ধ ল্যাবরেটরি প্রয়োজন। এর বিকল্প হিসেবে বিজ্ঞানীরা একটি স্বল্পব্যয়ী, সাধারণ ল্যাবেরটরিতে দ্রুত স্বল্প প্রশিক্ষিত টেকনোলজিস্ট দ্বারা সহজে করা যায় এমন একটা পরীক্ষার পদ্ধতি অনুসন্ধান করছিলেন। সেই ধারাবাহিকতায় তৈরি হয়েছে ‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট’। এর খরচ অনেক কম। এটি সাধারণ এমনকি ফিল্ড হাসপাতালেও করা যায়। পরীক্ষাটির ফলাফল কয়েক মিনিটেই জানা যায়।
এই ‘র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টে’ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে এমন ব্যক্তির রক্ত পরীক্ষা করা হয়। এ পরীক্ষার মাধ্যমে সাধারণভাবে নিশ্চিত হওয়া যায় কোন ব্যক্তির দেহে কোভিড-১৯ প্রবেশ করেছে বা আছে কি না। কারো দেহে কোভিড-১৯ এর উপস্থিতির প্রমাণ পেলে তার নমুনা থেকে আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করে রোগ নিশ্চিত করা হয়। এজন্য বাছাই বা স্ক্রিনিংয়ের জন্য র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট অত্যন্ত দরকারি। ইতোমধ্যে যুক্তরাজ্যে ৩৫ লাখ মানুষকে এই পরীক্ষার মাধ্যমে স্ক্রিনিং করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়া সরকার ১৫ লাখ র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট কিটের ক্রয়াদেশ দিয়েছে। আমেরিকার এফডিএ এই পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। অনেক অঙ্গরাজ্যে এরই মধ্যে পরীক্ষাটি শুরু হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী করোনা যুদ্ধে র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টকে বলা হচ্ছে ‘গেম চেঞ্জার’। কারণ এই পরীক্ষার দ্বারা কোভিড-১৯ মুক্ত মানুষকে সম্ভাব্য রোগি হতে আলাদা করা যায়। বাংলাদেশকেও অতি দ্রুত কোভিড-১৯ মোকাবিলায় র্যাপিড টেস্টের পথে হাঁটা উচিত। কিছু আলোচনা-সমালোচনা থাকলেও বড় পরিসরে এই পরীক্ষায় করোনা যুদ্ধে আমাদেরকে এগিয়ে রাখবে বলে আমার বিশ্বাস।
লেখক: চিকিৎসক, প্রিভেন্টিভ মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
আরটি-পিসিআর পরীক্ষা করোনা যুদ্ধ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ র্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট