সমালোচনা নয়, সম্ভাবনার কথা বলুন
১৫ এপ্রিল ২০২০ ১৮:২১
বাংলাদেশে করোনা রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলছে। আক্রান্তের সংখ্যা ইতোমধ্যে হাজার ছাড়িয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে, এখন পর্যন্ত সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরার সংখ্যা আর মৃত্যুর হার প্রায় সমান। তাই করোনাভাইরাস নিয়ে চিন্তাটা বেড়েই যাচ্ছে।
এই ভাইরাসের কারণে পৃথিবীর প্রায় সকল দেশ এখন হুমকির সম্মুখিন। চীনের উহান থেকে যাত্রা শুরু হওয়া ভাইরাস এখন বিশ্বজুড়ে তান্ডব চালাচ্ছে।
এটা সবাই জানি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা করোনাভাইরাসকে মহামারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। এই ভাইরাসের প্রতিষেধক এখনও আবিষ্কৃত হয়নি। যদিও জাপান এবং যুক্তরাষ্ট্র প্রতিষেধক আবিষ্কারের কথা বলছে, তবে সেগুলো এখনও পরীক্ষাধীন।
করোনাভাইরা যেন মহামারী আকারে ছড়াতে না পারে তার জন্য বিশ্বের প্রায় সব দেশের সরকার সবাইকে ভিড় এড়িয়ে চলতে লোক সমাগম হয় এমন জায়গা পরিহার করতে বলেছে। মুখে মাস্ক ব্যবহার করতে ও পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে বলা হয়েছে। বার বার হাত-মুখ পরিষ্কার পানি অথবা সাবান দিয়ে ধুতে বলা হচ্ছে। যদিও এর সবকিছু মেনে চলা আমাদের মত উন্নয়নশীল এবং বহুল জনসংখ্যার দেশের জন্য কতটুকু সম্ভব তা বর্তমানে পত্র পত্রিকার পাতা খুললেই বোঝা যায়।
এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের ডাক্তার, নার্স, সেবাকর্মী, পুলিশ, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সবাই যে যার অবস্থান থেকে কাজ করছেন। দুঃখজনক হলেও সত্য যে, দেশের সাধারণ মানুষ বিশেষ করে যারা গ্রামে থাকেন তাদের মধ্যে এখনও সচেতনতা তৈরি হয়নি। করোনাভাইরাস থেকে রক্ষার জন্য যে সকল নিয়ম নীতিমালা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকার থেকে বলা হয়েছে তা তারা মানছেন না সঠিকভাবে।
নানা অজুহাতে অসচেতন মানুষ বাইরে বের হচ্ছে। বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদেরকে নিয়োজিত রাখছে এসব অসচেতন মানুষ। ফলে দেশের পরিস্থিতি আরো খারাপের দিকে যাচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি গ্রাম পর্যায়ে আরো ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং দেশের গণমাধ্যমগুলোয় দেখা যাচ্ছে, শিক্ষিত মানুষদের মধ্যেও প্রয়োজনীয় সচেতনতা নেই। কিংবা সচেতনতা থাকলেও তারা সেগুলো সঠিকভাবে পালন করছেন না। অনেকেই আবার বিভিন্ন মাধ্যমে উসকানিমূলক’ বক্তব্য দিচ্ছেন, সমালোচনা করছেন এবং পরিস্থিতিকে ঘোলা করার চেষ্টা করছেন। যা মোটেই আশাব্যঞ্জক নয়।
অতীতেও বহুবার দেখা গেছে, বাংলাদেশ যখনই কোন বিপর্যয়ের মুখোমুখি হয় তখনই শুরু হয়ে যায় একশ্রেণীর মানুষের সমালোচনা। তারা বিভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করে দেশ ঠিক পথে যাচ্ছে না। অন্যদিকে আরেক শ্রেণীর মানুষ বোঝানোর চেষ্টা করে সব ঠিক আছে। ফলে বৈপরীত্যের মধ্যে পড়ে যায় সাধারণ মানুষ। তারা বুঝতে পারে না সময়ের সঠিক পদক্ষেপ, ফলে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।
এই মুহূর্তে বাংলাদেশে সামনের সারির যোদ্ধা বলতে ডাক্তার, পুলিশ, নার্স, সেবাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা। বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য তারা যে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে এক কথায় সেটি সম্মানের। কিন্তু এর মধ্যে বিভিন্নভাবে বিভিন্ন দিক থেকে তাদেরকে হেয় প্রতিপন্ন করার চেষ্টা চলছে। ফলে তৈরি হচ্ছে গোলযোগ, বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভুল বোঝাবুঝি। সমালোচনায় পড়তে হচ্ছে সরকারকে।
ডাক্তার, পুলিশ, নার্স, সেবাকর্মী এবং জনপ্রতিনিধিরা ঠিকঠাক চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন কিনা সে বিষয়ে কথা বলার আগে একবার ভাবুন, তাদেরও পরিবার-পরিজন, সন্তান আছে। চিকিৎসা সেবা তারা অবশ্যই দেবেন এই অঙ্গীকার নিয়েই তারা এই পেশায় এসেছেন। কিন্তু আপনারা যেখানে ছুটি কাটাচ্ছেন নিজেদেরকে করোনা থেকে দূরে রাখতে, সেখানে তারা করোনা আক্রান্তদের সুস্থ করার জন্য সেবা করছে। একবার ভাবুন, তাদের কী জীবনের মায়া নেই? চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য তাদেরকে সুরক্ষিত রাখা জরুরী না?
গ্রাম পর্যায়ে একজন ডাক্তার, পুলিশ, নার্স, সেবাকর্মীরা সঠিক পরিধেয় বস্ত্র এবং জীবন সুরক্ষাকারী উপাদানসমূহ সঠিকভাবে পাচ্ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। নতুবা তারা সঠিক সময়ে তাদের সঠিক দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না।
এখন রাষ্ট্রের প্রথম এবং প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত দেশের প্রত্যেকটি জেলা-উপজেলার সকল পর্যায়ের হাসপাতালের সেবাকর্মীদের, ডাক্তারদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা। এটি নিশ্চিত না হলে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরো বাড়বে।
গ্রামের বাজারগুলো নিরাপদ না, প্রয়োজন ছাড়াই বহু মানুষ সেখানে ঘোড়াঘুরি করছে। যতো দ্রুত সম্ভব গ্রামের বাজারগুলো প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নিতে হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনাবেচা করা নিশ্চিত করতে হবে। নতুবা সংক্রমণ বাড়বে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উদারতার অভাব নেই। তিনি দূরদর্শী সম্পন্ন। তার চিন্তার গভীরতা অনেক। তিনি সুদূরপ্রসারী। দেশের জনগণের জন্য ত্যাগ স্বীকার করা তার রক্তের মধ্যে মিশে আছে, যার উদাহরণ আমরা সব সময় দেখতে পেয়েছি। তার চিন্তার সুফল আমরা সেই সময়ে সঠিকভাবে পাব যখন তার চারপাশের নীতিনির্ধারকেরা সুস্থ মন মানসিকতা আর সুপরিকল্পনা নিয়ে চেষ্টা করবেন এবং তার বাস্তবায়ন করবেন সাধারণ জনগণের কল্যাণের লক্ষ্যে।
শুধু লোক দেখানো মতপ্রকাশ, একে অন্যকে দোষারোপ, অমার্জিত বক্তব্য কখনো দেশের সুফল বয়ে আনবে না। সময় উপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত এবং তার সঠিক বাস্তবায়ন হবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে উন্নত দেশের সারিতে।
প্রধানমন্ত্রী যেভাবে প্রতিনিয়ত জেলা-উপজেলা পর্যায়ের সকলের সাথে বৈঠক করছেন, বিভিন্ন প্রতিনিধির সাথে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলাপ আলোচনা করছেন তা সত্যই আশার সঞ্চার করে। সাহস যোগায়। শেখ হাসিনার এমন পদক্ষেপে দেশের প্রতিটি প্রান্তের সাধারণ নাগরিক খুব সহজেই জানতে পারছেন যে তার এলাকায় কেমন সাহায্য সহযোগিতা সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া হচ্ছে। নিঃসন্দেহে এটা প্রশংসার। দুর্যোগপূর্ণ সময়ে এ ধরনের কার্যক্রম সাধারন মানুষের মনোবল এবং সাহস ধরে রাখতে সাহায্য করবে।
দুঃখজনক হলেও সত্য, কিছু সুবিধাবাদী লোক সরকারের ভাবমূর্তিকে বিভিন্নভাবে নষ্ট করার পাঁয়তারা করছে। যা বর্তমান সরকারের অনেক সুগঠিত কার্যক্রমের ভাবমূর্তিকে সমালোচনায় ফেলে দিচ্ছে, আলোচনায় নিয়ে আসছে। এদিকে অবশ্যই দৃষ্টি রাখা প্রয়োজন। বিপদে যারা সুযোগ নেবে, নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য যারা মাঠে থাকবে তাদের বিষয়ে সরকারের কঠিন পদক্ষেপ নেয়া জরুরী।
সজল চৌধুরী- শিক্ষক ও পিএইচডি গবেষক, স্থাপত্য ও পরিকল্পনা অনুষদ, মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়, অস্ট্রেলিয়া
[email protected]