কোভিড-১৯ টেস্টে নেগেটিভ মানেই বিপদমুক্ত নয়
১৭ এপ্রিল ২০২০ ১৪:০৪
ধরুন আপনার শরীরে কোভিড-১৯ এর উপসর্গ বিদ্যমান। টেস্ট করালেন। রিপোর্ট হাতে পেয়ে দেখলেন রিপোর্ট নেগেটিভ। নিঃসন্দেহে খুশি হবেন। খুশিতে বাড়ি ফিরে নির্দ্বিধায় জড়িয়ে ধরলেন প্রিয়জনদের।
দূরত্ব বজায় রেখে চলার প্রয়োজন বোধ করলেন না। দিনকয়েকের মধ্যেই আপনার প্রিয়জনদের উপসর্গ দেখা দিল এবং তাদের টেস্ট রেজাল্ট পজিটিভ আসলো। শুনে অবাক হচ্ছেন কি?
আপনি আসলে করোনা আক্রান্ত হবার পরেও রেজাল্ট নেগেটিভ এসেছিল, এটাকেই বলা হয় ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট। করোনা টেস্টে পজিটিভ আসার চেয়েও ভয়াবহ হলো ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট।
আসুন জানার চেষ্টা করি কেন এবং কীভাবে এটি ঘটতে পারে-
১. আপনার নমুনাটি ঠিকভাবে সংগ্রহ করা হয়নি। সঠিক মিডিয়ায় নমুনাটি রাখা হয়নি।
২. আপনার স্যাম্পল থেকে ভাইরাল RNA ঠিকভাবে বের করে আনা (Extraction) হয়নি। অথবা RNA নষ্ট হয়ে গেছে।
৩. Real Time Quantitative Reverse Transcription Polymerase Chain Reaction সংক্ষেপে Real Time qRT-PCR বা rRT-PCR ঠিকভাবে হয়নি।
উপরের উল্লেখিত ২ এবং ৩ নাম্বার সমস্যা সমাধানের জন্য এক্সট্রাকশন কন্ট্রোল, পজিটিভ কন্ট্রোল, নেগেটিভ কন্ট্রোল, ইন্টার্নাল কন্ট্রোল প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের কন্ট্রোলের ব্যবহার করা হয়। যাতে কোন একটা স্টেপে সমস্যা হলে তা ধরা যায়।
এবার আসুন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টটিতে। ধরুন উপরের সবকিছুই সঠিকভাবে হয়েছে এবং খুবই অভিজ্ঞ এবং দক্ষ কেউ আপনার টেস্ট করেছে। তারপরেও আপনি ফলস নেগেটিভ রেজাল্ট পেতে পারেন। কারন?
নমুনা হিসেবে upper and lower respiratory specimens (such as nasopharyngeal and oropharyngeal swabs, sputum, bronchoalveolar lavage etc) গুলোই মূলত ব্যবহার করা যায়। আমাদের দেশে নাকের ভেতরের দিক থেকে nasopharyngeal অথবা গলার ভেতরের দিক থেকে oropharyngeal swabই সংগ্রহ করা হয়। rRT-PCR নিঃসন্দেহে গোল্ড স্ট্যান্ডার্ড টেস্ট।
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এই দুটো সোয়াবে ভাইরাসের উপস্থিতি rRT-PCT দ্বারা শতভাগ ক্ষেত্রে সনাক্ত করা যায় না। কিছু ক্ষেত্রে তা ৭০ শতাংশেরও নীচে বলে দাবী করা হয়েছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে আক্রান্ত হওয়ার ০-৭ দিন সবচেয়ে কার্যকর হলেও দিন বৃদ্ধির সাথে সাথে এসকল নমুনা থেকে সনাক্ত করার হার কমে গেছে। তবে ফুসফুসীয় তরল এবং Sputum এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো ফলাফল প্রদান করেছে দাবী করা হয়।
এক্ষেত্রে, বেশ কয়েকধরণের নমুনা একত্র করে পরীক্ষা করা যেতে পারে। পাশাপাশি বুকের সিটি স্ক্যানও কোভিড ডিটেকশনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারে বলে কিছু গবেষক দাবী করেন।
তাই, উপসর্গ থাকলে টেস্টে নেগেটিভ আসলেও অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ মেনে নিজ উদ্যোগে আইসোলেশনে (বাকিদের থেকে আলাদা) থাকা উচিত।
এবার র্যাপিড সেরোলজিক্যাল টেস্টের ব্যাপারে বলছি। কোন জীবাণু আমাদের শরীরে প্রবেশ করলে আমাদের শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এন্টিবডি উৎপাদন শুরু করে। এন্টিবডিগুলো আসলে প্রোটিন। র্যাপিড টেস্টে আসলে রক্তে এই এন্টিবডি প্রস্তুত হয়েছে কি না সেটা পরীক্ষা করে। এটি সহজ, সস্তা এবং তুলনামূলক অনেক কম দক্ষতার প্রয়োজন হয়।
সমস্যা হচ্ছে এন্টিবডি তৈরি হতে একটা নির্দিষ্ট সময় প্রয়োজন হয়। গবেষকদের দাবী, আক্রান্ত হবার ৭ দিন পরেও মাত্র ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রে এন্টিবডি তৈরি হয়। ১৪তম দিনে ১০০ শতাংশ ক্ষেত্রে এন্টিবডি পাওয়া যায়। ব্যাপারটা ধরতে পারছেন? আক্রান্ত হবার ০-৭ দিনের মধ্যে যদি কেউ এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা করে তার ফলস নেগেটিভ আসার সম্ভাবনা অনেক বেশি প্রায় ৫০ শতাংশ।
প্রথমে বর্ণিত ঘটনার মত এই ক্ষেত্রেও আক্রান্ত হয়নি ভেবে বহু মানুষকে আক্রান্ত করার সম্ভাবনা দেখা দিতে পারে। তাই এ ধরণের টেস্ট অনুমোদন দেওয়ার আগে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন কঠোরভাবে মানা উচিৎ।
উল্লেখ্য, কানাডাসহ বিশ্বের অনেক দেশেই এই ধরণের র্যাপিড টেস্ট কিট অনুমোদন করেনি।
তথ্যসূত্রঃ
১। https://jamanetwork.com/journals/jama/article-abstract/2762997
৪। https://pubs.rsna.org/doi/10.1148/radiol.2020200642
৫। https://synapse.koreamed.org/DOIx.php?id=10.3348/kjr.2020.0146
৬। https://www.fda.gov/media/136151/download
লেখকঃ গবেষক, চাইল্ড হেলথ রিসার্চ ফাউন্ডেশন