Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মাস্ক ব্যবহার করবেন, না কি করবেন না


১৯ এপ্রিল ২০২০ ১৩:০০

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে মাস্কের ব্যবহার নিয়ে কথা হচ্ছে বেশ। করোনার বিরুদ্ধে লড়াইয়ে শুরু থেকেই একেই ভাবা হচ্ছে বড় হাতিয়ার। অথচ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সাধারণ জনগণকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করেনি বরং তারা বলছে সুস্থদের মাস্ক ব্যবহারের কোন প্রয়োজন নেই, কোভিড-১৯ সন্দেহ হলেই কেবল ব্যবহার করবেন। মাস্ক মূলত চিকিৎসক, স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যারা কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগীদের সেবা দিবেন।

বিজ্ঞাপন

তবে মার্কিন সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি) জনসাধারণকে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করে একটি প্রোটোকল দিয়েছে। সিডিসি ইনফেকশাস ডিজিজ বা সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিশ্বের বড় গবেষণা ও গাইডলাইন নির্মাণকারী সংস্থা।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে- করোনা ঠেকাতে মাস্ক ব্যবহার নিয়ে এই দ্বিমত তৈরি হল কেন? বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রে এর প্রভাব কি? অথবা আমাদের কি করা উচিত?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা মূলত চিকিৎসা কর্মী ও সেবাদাতাদের জন্য মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে, মাস্ক ব্যবহারের নিয়ম সাধারণ মানুষ তেমন জানে না বললেই চলে। ফলে মাস্ক ব্যবহার করেও তার সুফল পাবে না তারা। মাস্কের ব্যবহার চিকিৎসা কর্মী ও সেবাদাতারাই ভালো জানেন। সঠিকভাবে হাত-মুখ সাবান বা স্যানিটাইজার দিয়ে পরিষ্কার করে মাস্ক ব্যবহার করতে হয়। ব্যবহার করার পর কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত মাস্ক খোলা যায় না, এসময় নাকে মুখে হাত দেয়া যায় না এবং সবশেষে মাস্ক সঠিকভাবে ডিজপোজ করতে হয়। এগুলো প্রশিক্ষিত লোক ছাড়া করা কঠিন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, একজন সাধারণ সুস্থ মানুষ মাস্ক ব্যবহার করবেন তখনই যখন তাকে কোন করোনা আক্রান্ত রোগীর সেবা করতে হয়। (তথ্যসূত্র- ১)

অপরদিকে সিডিসি বলছে, এমন অনেক মানুষ আছেন যারা এসিম্পটোম্যাটিক কিংবা প্রি-সিম্পটোম্যাটিক, ভাইরাসের বাহক- তারা কথা বলার সময় কফ-থুতু কিংবা সাধারণ হাঁচি-কাশির মাধ্যমে করোনাভাইরাস ছড়াতে পারেন। বিশেষ করে হাট-বাজার, ওষুধের দোকান ইত্যাদি লোক সমাগম হয় এমন স্থানে। তাদের জন্য কাপড়ের মাস্ক ব্যবহার করা করোনার কমিউনিটি ট্র্যান্সমিশন রোধে খুবই কার্যকর। (তথ্যসূত্র- ২)

বিজ্ঞাপন

এখন চিন্তার বিষয় হলো- উপরের দুটো বক্তব্যের মধ্যে পার্থক্য কোথায় এবং বাংলাদেশের মতো দেশে এর প্রভাব কি?

একটু লক্ষ্য করলেই বোঝা যাবে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে বিশেষায়িত মাস্ক (যেমন সার্জিকাল মাস্ক বা এন-৯৫ অথবা এফ এফ ১ মাস্ক) ব্যবহার নিয়ে। যার উদ্দেশ্য হলো, চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে ব্যবহারকারী নিজে যেন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না হন।

অপরদিকে সিডিসির উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য ভিন্ন। তাদের লক্ষ্য সাধারণ মানুষ। এখানে কার্যকারিতা হচ্ছে মাস্ক ব্যবহারকারী নিজে যেন ভাইরাস ছড়াতে না পারেন। তারা তাদের বক্তব্যে মাস্ক শব্দটি ব্যবহার করে নাই (কারণ চিকিৎসা বিজ্ঞানে মাস্ক শব্দের সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা ও বিবরণ দেয়া আছে)। তারা বলেছে, ক্লথ ফেস কভারিং বা কাপড়ের মুখবন্ধনী। বাংলাদেশ বা বাংলাদেশের মতো আর্থ-সামাজিক অবস্থার দেশে এর গুরুত্ব রয়েছে।

এই দুইটি গাইডলাইন তৈরিতে দুই সংস্থার চিন্তাধারা ও দর্শন বিবেচনার বিষয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তার গাইডলাইন তৈরির সময় ধরেই নিয়েছিল, রোগী বা আক্রান্তরা সহজেই শনাক্ত হবেন। কোন রোগলক্ষণ প্রকাশ না করে তারা রোগের বাহক হবেন অথবা প্রকাশ করার পরেও শনাক্ত না হয়ে সহজেই ঘুরে বেড়াতে পারবেন তা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাথায় আসে নি। কিন্তু ঠিক সেই ঘটনাই এখন চলছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেও চলছে, বাংলাদেশেও চলছে। এদের এসিম্পটোম্যাটিক বা প্রি-সিম্পটোম্যাটিক (রোগ-লক্ষণ প্রকাশ পায়নি কিন্তু পাবে) বলে। এদের জন্য কাপড়ের মাস্ক খুবই কার্যকর।

কেন সার্জিকাল বা অন্য কোন মাস্ক নয়? তার কারণ এই মুহূর্তে প্রাপ্য বেশীরভাগ মাস্কই সঠিক মাস্ক নয়। এদের দেখতে সার্জিকাল বা এন-৯৫ মাস্ক মনে হলেও আসলে তা নয়, এগুলো নকল। দীর্ঘ সময় এই মাস্ক ব্যবহারে নিঃশ্বাসের সাথে প্লাস্টিক পার্টিকেল শ্বাস-তন্ত্রে চলে যায়, যা হবে ক্ষতির কারণ।

সার্জিকাল বা এন-৯৫ মাস্কও বারবার ব্যবহার করা যায় না। অপরদিকে কাপড়ের মাস্ক ঠিকভাবে মুখ ও নাক ঢেকে পড়লে তা সহজেই হাঁচি-কাশি আটকে রাখতে পারে। করোনাভাইরাস যেহেতু হাঁচি-কাশির ড্রপলেটের সাথে ছড়ায় ফলে এভাবে এর বিস্তার রোধ সম্ভব। আর কাপড়ের মাস্ক ভালোভাবে ধুয়ে বারবার ব্যবহার করা সম্ভব। ফলে বাংলাদেশের মানুষের জন্য তা বিশেষ উপযোগী।

লেখক: পরিবেশ গবেষক

তথ্যসূত্র:

১. https://www.who.int/emergencies/diseases/novel-coronavirus-2019/advice-for-public/when-and-how-to-use-masks)

২. https://www.cdc.gov/coronavirus/2019-ncov/prevent-getting-sick/cloth-face-cover.html)

করোনা করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ টপ নিউজ মাস্ক

বিজ্ঞাপন

নামেই শুধু চসিকের হাসপাতাল!
২২ নভেম্বর ২০২৪ ২২:০৬

আরো

সম্পর্কিত খবর