Sunday 29 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লকডাউন না মানার হেতু


২৪ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫১

গলির মুখে দাঁড়িয়ে করোনাভাইরাসের খবর নিয়ে আলাপে ব্যস্ত কয়েকজন। কথা শুনে থেমে গেলাম, কান পাতলাম, কথা শুনে বোঝা গেল, কোভিড-১৯ থেকে বাঁচার সব উপায় জানা তাদের। কিন্তু ঘরে থাকতে মন চায় না তাদের। চুপচাপ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে জানতে ইচ্ছে হলো, কেন ঘরে থাকতে চায় না তারা। প্রশ্ন করলাম- আপনারা কেন ঘরে থাকতে চান না?

একজন খুব তাচ্ছিল্য করে বলল, ‘এসব বড় লোকের। গরীবের হবে না।’ আরেকজন বলল, ‘হাত পা ধুই। এক রুমের ঘরে ৭/৮ জন মানুষ কতক্ষন একসাথে থাকা যায়! আগে সারাদিন কাজে থাকতাম, এখন তো কাজ নাই। তাই ঘরের বাইরে এসে বসে-দাঁড়িয়ে সময় কাটাই।’

বিজ্ঞাপন

তাদের কথার রেশ টেনে পাশে দাঁড়িযে থাকা একজন নারী বলল, ‘ঘরে বসে থাকলে খাবার দেবে কে? রাস্তায় এলে তো অন্তত জানতে পারবে কোন নেতা কোথায় খাবার দিচ্ছে।’

এতো একটা ঘটনা মাত্র। এমন ঘটনা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘটছে প্রতিনিয়ত। সমাজের দু’ধরনের মানুষ লকডাউন মানতে পারছেন না। উঠতি যুবক আর নিত্যদিনের খাদ্য সামগ্রী ক্রেতা-বিক্রেতা। এ চিত্র বিশেষ কোন এলাকার নয়, সারা বাংলাদেশের।

পুলিশ বাহিনী ও প্রশাসনের সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টার পরেও মানুষকে ঘরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না। স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এই মুহুর্তে ঘরে থাকার বিকল্প কোন উপায় নেই। তা জানা সত্ত্বেও মানুষ নিয়ম মানছে না, ঘরে থাকছে না। এমন অবস্থা কম বেশি বিশ্বের সব দেশেই। ইউরোপ, আমেরিকাতে বিক্ষোভ সমাবেশ হচ্ছে লকডাউনের বিপক্ষে।

লকডাউন মেনে না চললে মানব জীবনে ভয়াবহতা নেমে আসবে তা অবধারিত। উন্নত বিশ্ব যেখানে কোভিড-১৯ এর সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে। সেখানে বাংলাদেশের দূর্বল চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় ফলাফল প্রত্যাশিত হবে না এটাই সত্য। মানুষ লকডাউনকে নীতিগতভাবে সমর্থন করলেও তা পালন করতে পারছে না। এমনকি অতিমাত্রার সচেতন ব্যক্তিদের পক্ষেও লকডাউন মেনে চলা কঠিন হয়ে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

এর অন্তরালের কারণগুলোর মধ্যে একটি হলো- মানুষের নিত্যজীবনের চাহিদা। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী মজুদ করার মতো সার্মথ্য সবার নাই। স্বল্প আয়ের মানুষ সর্বোচ্চ কয়েকদিনের বাজার একত্রে কিনে রাখতে পারে। যাদের আয় একদমই কম তাদের অবস্থা আরো খারাপ। দিন এনে দিন খেতে হয় তাদের।
বাজার হলো জনগণের অবাধ বিচরনের জায়গা। করোনাভাইরাস বিস্তারের আশঙ্কা বাজারেই সবচেয়ে বেশি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে কেনা-বেচা করার পরামর্শ দিলেও তা মানছে কেউ। সরকার বাজারগুলোকে খোলা মাঠে বসানোর ব্যবস্থা নিয়েছে। তাতে যে সব সমস্যার সমাধান হচ্ছে তা কিন্তু নয়। গ্রামাঞ্চলে অসচেতনাকে সংক্রমণের কারন হিসাবে ধরা হয়। কিন্তু শহরে মানুষের জনসমাগম অনেকটাই জেনে শুনে বাধ্য হয়ে।

জনবহুল বাংলাদেশে লকডাউন শতভাগ সফল করা কষ্টসাধ্য। কারণ নিম্ন মধ্যবিত্তরা ইতিমধ্যেই দিশেহারা। এ অবস্থায় মানুষের ঘরে খাবার নিশ্চিত করতে না পারলে লকডাউন সফল করা সম্ভব হবে না।

জনগনকে করোনা মহামারি থেকে বাঁচাতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে যাবেন না। কিন্তু কেউ কেউ হয়তো তা মানতে পারছেন, কেউ কেউ না। প্রতি পরিবারের একজন সদস্যও যদি বাজার করতে বের হয়, তাহলে খোদ ঢাকা শহরেই লকডাউন বিফল হওয়া স্বাভাবিক। কেননা প্রায় দুই কোটি লোকের বাস এ শহরে।

আবার নিম্নবিত্ত যারা দিন আনে দিন খায় তাদের পক্ষে ঘরে থাকা অসম্ভব। তারা প্রতিদিনই রোজগারের আশায় ঘরের বাইরে যাচ্ছে। কারণ তাদের কাছে খাবার আর আনুষঙ্গিক খরচের চিন্তাটাই বেশি, করোনাভাইরাস তাদের চিন্তার বিষয় না।

এদিকে দোকান খোলার সময়সীমা বেঁধে দিয়েছে সরকার। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা। কোথাও কোথাও তার চেয়েও কম। কিন্তু মানতে নারাজ জনগন। কোথাও কোথাও চলে পুলিশ-জনগন গোল্লাছুট খেলা।

কাল থেকে শুরু হচ্ছে রোজা। বাজারে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। যাদের হাতে টাকা আছে রোজার কেনাকাটা করতে বাজার যাচ্ছে তারা। সারা মাসের বাজার করে রাখছে। ফলে একদিনে বাড়ছে পন্যের দাম, অন্যদিকে মানুষের ভিড়। সব মিলিয়ে একটা হযবরল অবস্থা।

অর্থনীতিকে সচল করতে লকডাউন শিথিল করতে মরিয়া কয়েকটি দেশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ‘এটা আগুন নিয়ে খেলার সামিল। লকডাউন তুলে নিলে অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে।’

করোনাভাইরাসের হাত থেকে বাঁচতে হলে লড়াই করতে হবে সম্মিলিত ভাবে। কিছু ছোট ছোট পদক্ষেপ বড় ধরনের সংক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতে পারে। এই মূহুর্তে আমাদের করনীয়- নিম্নবিত্তদের জন্য বরাদ্দকৃত সরকারি-বেসরকারি ত্রাণ অবশ্যই বাড়ি বাড়ি গিয়ে পৌঁছে দিতে হবে। আর্থিক সহায়তাগুলো ব্যাংক, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রদান করতে হবে। জনসমাগম করে কোন ধরনের যাকাত, ইফতার বা খাবার দেয়া যাবে না। সরকার ঘোষিত রেশন কার্ড বিতরনে স্বচ্ছতা ও নিয়ম মানতে হবে। আর্থিক ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের বাজার বা সুপার শপে যাওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। বাসায় বসে কেনাকাটা করতে হবে।

লকডাউন সাময়িক সময়ের জন্য। নিয়ম মেনে তা পালন করলে সুফল আসবে। লকডাউন না মানার কারনগুলো সমাধানে নিয়ে আসা অসম্ভব কিছু নয়। তার জন্য দরকার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। করোনার বিস্তার ঠেকাতে লকডাউন মানতে ব্যর্থ হলে করোনা সংক্রমণ হবে প্রতি ঘরে। লাশের সারি হবে ঘরে ঘরে। আর লকডাউন মানলেই আসবে সুদিন। আপাতত এর কোন বিকল্প পথ খোলা নেই।

লেখক: সংবাদকর্মী

করোনাভাইরাস লকডাউন

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

বিপদসীমার ওপরে পানি, ৪৪ জলকপাট খোলা
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৫:০৬

তৃতীয় দিনের খেলাও পরিত্যক্ত
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৫৪

সিটিকে সরিয়ে শীর্ষে লিভারপুল
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:২০

পদ্মায় কমেছে পানি, থামছে না ভাঙন
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৩:১৯

সম্পর্কিত খবর