Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সময়ের দাবী; পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইন ক্লাস


৩ মে ২০২০ ১৫:৩২

করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে তছনছ হয়ে গেছে বিশ্ব। গৃহবন্দি হয়ে কর্মহীন হয়ে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ। বাংলাদেশও এর মরণ ছোবলে আক্রান্ত। অফিস-আদালত, ব্যবসা-বাণিজ্য সবকিছুই বন্ধ থাকবে আগামী ৫ মে পর্যন্ত। চলমান বন্ধ আরও দীর্ঘ হয় কিনা জানা নেই কারো।

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো ঈদুল ফিতর পর্যন্ত বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতির উন্নতি না হলে এই বন্ধ আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হতে পারে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

প্রকৃতপক্ষে মানুষের জীবন রক্ষা করাই এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আগে জীবন রক্ষা করা-তারপরে অন্য কিছু। সেদিকেই শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি এবং এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর, বছরের প্রায় অর্ধেক সময়ই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সম্ভাবনা আছে। এরই মধ্যে এসএসসি রেজাল্ট স্থগিত হয়ে গেছে। এইচএসসি পরীক্ষার দিনক্ষণ ঠিক করা যাচ্ছে না। যদিও মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা উপমন্ত্রী এবং মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তারা প্রতিনিয়তই মিটিং করছেন এবং একটি সুন্দর সমাধানের পথ খুঁজেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে লেখাপড়া কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরে সংসদ টেলিভিশনের মাধ্যমে “আমার ঘরে- আমার স্কুল” কার্যক্রম চলছে। স্কুল পড়ুয়া কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জন্য এটি চমৎকার সুযোগ এবং ব্যবস্থাপনা। লকডাউনের এই দুর্দিনে সরকারের এই উদ্যোগ সকলের কাছে প্রশংসিত হয়েছ। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বন্ধ রাখা হয়েছে মহামারীর শুরু থেকেই। তবে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু বিভাগ নিজ দায়িত্বে বিচ্ছিন্নভাবে অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন। অধিকাংশ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে এবং পরীক্ষা ব্যতীত যাবতীয় কাজকর্ম অনলাইনেই করে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) এ ব্যাপারে একটি জরিপ করেছে এবং সেই জরিপে দেখা গেছে বর্তমানে ৬৩টি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। এর মধ্যে ৫৬টি বেসরকারি ও বাকি সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থী অংশগ্রহণের হার ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ। সম্মানিত শিক্ষক মণ্ডলীর এই উদ্যোগ এবং প্রচেষ্টা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

মাত্র সাতটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন ক্লাস নিচ্ছে। স্বভাবতই প্রশ্ন উঠছে, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার সক্ষমতা কি নেই? আসলে বিষয়টা তা নয়। বিষয়টা হলো, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশই গ্রামে থেকে আসা। বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অধিকাংশ শিক্ষার্থী এখন গ্রামে। সেখানে নেই ইন্টারনেট সংযোগ। ফলে তাদেরকে অনলাইন পাঠচক্রে আনা সম্ভব হচ্ছে না।

এদিকে দীর্ঘদিন লকডাউন থাকায় সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ব্যবসা-বাণিজ্যে ধস নেমেছে। একমাত্র ইন্টারনেট ব্যবসাই ব্যতিক্রম যেখানে কোন ধস নামেনি। বলা যায় ইন্টারনেটের কারণে মানুষ ঘরে বসেও কিছুটা ব্যস্ত। কাজেই ইন্টারনেটের এই সুযোগটি শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিতে পারলে তারাও ব্যস্ত থাকবে, ব্যস্ত থাকবে তাদের লেখাপড়া নিয়ে। ফ্রিল্যান্সিং কিংবা আউটসোর্সিং করে আয় করার সুযোগ পাবে তারা। তাই বর্তমান এবং আগামীর জন্য ইন্টারনেট অবকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া খুবই জরুরী। কিন্তু সেটা কিভাবে সম্ভব?

সমাধানের জন্য প্রথমেই আলোচনা করতে হবে দেশের ইন্টারনেট সংস্থাগুলোর সাথে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়, আইসিটি মন্ত্রণালয় এবং গ্রামীনফোন, বাংলালিংক, রবিসহ অন্যান্য সব ধরনের ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর সাথে আলোচনা করে সমাধানের পথ খুঁজতে হবে। লকডাউনের এই সংকটময় মুহূর্তে ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কল-কারখানা সবকিছু বন্ধ থাকা সত্ত্বেও সকলেই যার যার অবস্থান থেকে সরকারকে তাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে দুর্যোগ মোকাবিলা করার জন্য। কিন্তু ইন্টারনেট কোম্পানিগুলোর ব্যবসা সম্পূর্ণ সচল থাকা সত্ত্বেও সরকারকে কিংবা গরীব জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করার তেমন কোন পদক্ষেপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

গ্রামীণফোন দেশের সবচেয়ে বড় ইন্টারনেট সেবাদাতা সংস্থা। যারা একাই পারে এই সমস্যার সমাধান করতে। রাষ্ট্র গ্রামীণফোনের কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা পায়। আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে মামলা-মোকদ্দমা করে মাত্র এক হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করেছে। বিশাল অংকের টাকা এখনও বাকি। সরকার এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় এই ইস্যুতে গ্রামীণফোনের সাথে আলোচনা করতে পারে এবং সমঝোতায় আসতে পারে। অন্যান্য টেলিকম ও সেবাদাতা

প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়ও কম নয়। তারাও পারে তাদের অবস্থান থেকে এ ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে। পৌঁছে দিতে পারে গ্রামেগঞ্জে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে কিংবা সহজ শর্তে ইন্টারনেট ব্যবহারের সুযোগ।

এরপর দরকার একটি স্মার্ট মোবাইল ফোন, ল্যাপটপ কিংবা অন্য কোন স্মার্ট ডিভাইস। এ ব্যাপারে বিনা সুদে ব্যাংক থেকে শিক্ষার্থীদের জন্য লোনের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। মেধা ও দারিদ্র্যতার ভিত্তিতেও একটি করে ল্যাপটপ শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে দেয়া যেতে পারে। বিশ্বের অনেক দেশে এ ধরনের ব্যবস্থা আছে। আমাদের দেশেও অনেক প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তির সময় শিক্ষার্থীদেরকে একটি করে ল্যাপটপ দেওয়ার নজির আছে। এভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে যদি ইন্টারনেট, ল্যাপটপ দেয়া যায় তাহলে আমাদের এগুতে বাধা থাকবে না।

সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে খুব সহজেই। ব্যবস্থা করা যেতে পারে অনলাইনে ক্লাস পরিচালনার। সমস্যা সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, শিক্ষাবিদ, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বাংলাদেশ ব্যাংক, অন্যান্য ব্যাংক সহ সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা একান্ত কাম্য।

লেখক: পরিচালক (আইআইটি), জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়

করোনাভাইরাস

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর