নতুন বিশ্ব দেখবে মানুষ
২৩ মে ২০২০ ১৮:২৫
মানুষ নামের প্রাণীদের কিছুটা বিশ্রাম দরকার ছিলো। এই প্রাণীকুল দিনে দিনে যন্ত্রে রূপ নিচ্ছিলো। প্রকৃতি থামিয়ে দিয়েছে। নিজেই বিশ্রাম পাঠিয়েছে, ঘরে ঢুকিয়েছে করোনাভাইরাস দিয়ে। প্রকৃতি নিজেকেও মেরামত করে আবার শান্ত হচ্ছে। যেখানে রাস্তায় মানুষ মরে পড়ে থাকতো, সেখানে আবার প্রাণ ফিরে পাচ্ছে। দেশে দেশে ধীরে ধীরে লকডাউন উঠে যাচ্ছে। আবার মাঠে গড়িয়েছে জার্মান ফুটবল লীগ বুন্দেসলিগা। জুনে মাঠে ফিরতে পারে ইংলিশ প্রিমিয়ার লীগ। স্প্যানিশ লীগের প্র্যাকটিস শুরু হয়ে গেছে। খুলতে শুরু করেছে শপিং মল, রেস্টুরেন্ট, বার ও ক্লাব। আকাশে ডানা মেলেছে প্লেন।
করোনার ভ্যাকসিন এখনো আসেনি, আসবে দ্রুত। তবে অ্যান্টিবডি তৈরিতে চমক দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ। যুক্তরাষ্ট্রের বায়োটেক কোম্পানি মডার্নার প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা টাল জ্যাকস জানিয়েছেন , যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ) তাদের আবিষ্কৃত করোনা ভ্যাকসিন দ্বিতীয় ধাপে পরীক্ষার অনুমোদন দিয়েছে। যদি এতে ফল ভালো হয়, তাহলে এ বছরের শেষে বা ২০২১ সালের শুরুতেই এটি বাজারজাত হবে। তারা বলছে, প্রথম দফার ফলাফলে প্রমাণিত— তাদের উৎপাদিত ভ্যাকসিন মানব শরীরে নিরাপদ।
পিছিয়ে নেই যুক্তরাজ্যও। ভ্যাকসিন তৈরিতে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষা ভালোভাবে হচ্ছে, জানিয়েছেন অক্সফোর্ড ভ্যাকসিন গ্রুপের প্রধান অ্যান্ড্রু পোলার্ড। দুই থেকে ছয় মাসের মধ্যে জানা যাবে গবেষণার ফল।
এদিকে, করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে কাজ করছে রাশিয়া ও চীন। ইতিমধ্যে ভাইরাসের জেনোম রাশিয়ার বিজ্ঞানীদের কাছে হস্তান্তর করেছে চীন। তাদের আশা, দ্রুতই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন উদ্ভাবন সম্ভব হবে। রাশিয়ার নোভোসিবির্স্কের ভাইরোলোজি ও বায়োটেকনোলোজি গবেষণা প্রতিষ্ঠান ভেক্টর ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা চীনের বিজ্ঞানীদের নিয়ে যৌথভাবে এই কাজ করছেন।
ভিয়েতনাম তো এই করোনাযুদ্ধে জয়ের পতাকা উড়িয়েছে সবার আগে। এমন জয়ের উদাহরণ আছে আরও অনেক দেশে। আমার বিশ্বাস, খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে বিশ্ব। মানুষই তা করবে। শুরু হয়েছে। এই করোনাযুদ্ধের পর হয়তো আমরা এক নতুন বিশ্ব দেখবো। যে বিশ্বের স্বপ্ন দেখতাম এতকাল। আমি এখনো একটি মানবিক বিশ্বের স্বপ্ন দেখি।
এই মানবিক বিশ্বে মোড়লরা সমরাস্ত্র নয়, এই গ্রহে টিকে থাকার লড়াইয়ে বাজেট বাড়াবে। যুদ্ধের চেয়ে গুরুত্ব পাবে মানব স্বাস্থ্য। এই খাত ঢেলে সাজাবে। পারমানবিক বোমা আর অত্যাধুনিক সমরাস্ত্র নয়, গবেষণা হবে নতুন নতুন ভাইরাস নিয়ে, ভ্যাকসিন নিয়ে, বেঁচে থাকা নিয়ে। প্রকৃতির প্রতিকুলে টিকে থাকার লড়াই চলবে।
মানবের টিকে থাকার লড়াই শুরু হলো। তবে এই লড়াইয়েও দেশে দেশে প্রতিযোগিতা বাড়বে। আর এনিয়ে বাড়বে বাণিজ্য। স্বাস্থ্যখাত নিয়ে নতুন বাণিজ্যিক লড়াই। মানব স্বাস্থ্য উন্নত করার লড়াই।
লেখক: প্রধান বার্তা সম্পাদক, জিটিভি