Saturday 12 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি— কী বলে ইসলাম?


৪ জুন ২০২০ ১৯:৪১
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

করোনাভাইরাস আতঙ্ক কাটছে না এখনও। কিছু কিছু দেশে স্বস্তির দেখা মিললেও বাংলাদেশের অবস্থা তেমন একটা ভালো নয়। দিন দিন বেড়েই চলেছে আক্রান্তের সংখ্যা। বিশ্বের বাঘা বাঘা চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা এখন পর্যন্ত এ ভাইরাসের কার্যকরী কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার করতে সক্ষম হননি। তাই বলে একেবারে থেমেও নেই কারোনার চিকিৎসা। বহু দেশের মতো বাংলাদেশের চিকিৎসকরাও নতুন-পুরাতন বিভিন্ন ঔষুধের কার্যকরিতা নিয়ে গবেষণা করছেন। বিভিন্ন রোগীর ওপর পরীক্ষামূলকভাবে কিছু ঔষুধ প্রয়োগে ও চিকিৎসা পদ্ধতিতে সফলতাও মিলছে কমবেশি।

করোনা চিকিৎসায় যেসব ওষুধ বা চিকিৎসাপদ্ধতি সফলভাবে কাজ করছে বা আলোচিত তার অন্যতম হলো— প্লাজমা থেরাপি পদ্ধতি। করোনা আক্রান্ত রোগী সুস্থ হলে তার রক্তে করোনার অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। রক্তের হলুদাভ জলীয় অংশে থাকে তা। আর এটাকেই বলা হয়— প্লাজমা। করোনায় আক্রান্ত রোগী সুস্থ হওয়ার পর তার রক্ত থেকে এই প্লাজমা নিয়ে আক্রান্ত অন্য কারও শরীরে প্রবেশ করালে তার শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে এবং সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে পায়।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দাবি চীনসহ বিশ্বের আরও অনেক দেশে এই পদ্ধতিতে চিকিৎসা করে ৮০ ভাগ সফলতা পাওয়া গেছে। বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশের পাশাপাশি সীমিত আকারে হলেও করোনা চিকিৎসায় বাংলাদেশেও প্লাজমা থেরাপি পদ্ধতি শুরু হয়েছে। গোটা প্রক্রিয়াটি অনেকটা রক্ত দান করার মতোই। একজন মানুষের রক্তের ৫৫ ভাগই প্লাজমা। সুতরাং এটি দেওয়ায় শারীরিক কোনো ঝুঁকি নেই বলেও জানিয়েছেন চিকিৎকরা।

প্লাজমা দান প্রসঙ্গে ইসলামী শরীয়তের বিধান কী? রক্তের প্লাজমা দান বিষয়ে কী বলে ইসলাম? একজনের শরীরের প্লাজমা অন্য কাউকে দেওয়া কি বৈধ নাকি হারাম?

ইসলাম একটি কল্যাণকামী ধর্ম। মানবতাবাদী জীবনবিধান। যা কিছু ভালো এবং যা কিছু কল্যাণকর তার সঙ্গে ইসলামের সম্পর্ক গভীর। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘কল্যাণকামিতা মানে ইসলাম। ইসলাম মানেই কল্যাণকামিতা।’

প্লাজমা দান করা রক্ত দান করা মতো একটি বিষয়। পরোপকারী ইস্যু। কল্যানকামী ভাবনা। সুতরাং সাধারণভাবে প্লাজমা দান করা ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বৈধ বা জায়েজ। তবে প্লাজমা নিয়ে কোনো প্রকার ব্যবসায়িক লেনদেন করা যাবে না। প্লাজমার ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে রক্ত কেনাবেচা হারাম। কোনো রক্তদাতা যদি বিনামূল্যে রক্ত দিতে না চায়; তখন জরুরি পরিস্থিতিতে রক্ত কেনা বৈধ হবে কিন্তু বিক্রেতা পাপী হিসেবে গণ্য হবেন। (জাওয়াহিরুল ফিকহ, মুফতি মুহাম্মদ শফি, খণ্ড- ২, পৃষ্ঠা- ৩৮)

একই নীতিমালা অনুযায়ী, প্লাজমার ক্রয়-বিক্রয় করা বা প্লাজমাকেন্দ্রিয় ব্যবসায়িক দেনদরবার কোনোভাবেই বৈধ হবে না। কারণ ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষ তার শরীরের কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বা শরীরের অভ্যন্তরীণ কোনো বিষয়-বস্তুর মালিক নয়। আর যে জিনিসের মালিক মানুষ নন, সে জিনিস বিক্রির অধিকারও তার নেই। তবে কারও কল্যাণার্থে বা কারও জীবন বাঁচানোর উদ্দেশ্যে নিজের শরীর বা জীবনের কোনো ক্ষতি সাধিত না হলে; এসব কিছু দান করার অনুমতি ইসলামে রয়েছে। সুতরাং কারও উপকারার্থে বা জীবন বাঁচানোর কল্যাণার্থে কারোনা থেকে সুস্থ হওয়া কোনো ব্যক্তি করোনা আক্রান্ত কাউকে ফ্রি প্লাজমা দিতে পারবেন এবং চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যে কেউ যে কাউকে প্লাজমা দিতে বা যে কেউ যে কারো থেকে প্লাজমা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের কোনো বাধা নেই। যেকোনো নারী যেকোনো পুরুষকে বা যেকোনো পুরুষ যেকোনো নারীকে, কোনো অমুসলিমের কাছ থেকে প্লাজমা গ্রহণ করাতেও ইসলামী বিধানগত কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই।

এক্ষেত্রে একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, কোনো প্লাজমা গ্রহীতা খুশি হয়ে প্লাজমা দাতাকে যে কোনো উপহার প্রদান করতে পারবেন। এভাবে উপহার প্রদানে কোনো বাধা নেই বরং প্লাজমাদাতাকে উপহার দেওয়াকে ভালো বলেছেন ইসলামী স্কলারগণ।

একটি প্রশ্ন থেকে যায়, আর তা হলো— যে ডাক্তার বা যে প্রতিষ্ঠান প্লাজমা কালেকশন করবেন এবং রোগীর শরীরে প্রবেশ করানোর প্রযুক্তিরগত সহযোগিতা প্রদান করবেন, তারা কোনো পারিশ্রমিক নিতে পারবেন কিনা? এটা তো পরিষ্কার যে, প্লাজমা ক্রয়-বিক্রয় করা যাবে না। যিনি প্লাজমা দিচ্ছেন সরাসরি তিনি প্লাজমার কোনো বিনিময় নিতে পারবেন না। কিন্তু যে ডাক্তার বা প্রতিষ্ঠান প্লাজমা কালেকশন ও রোগীর শরীরে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করছেন তারা তো তাদের সেবা বা চিকিৎসা সহযোগিতা প্রদানের জন্য পারিশ্রমিক নিচ্ছেন— এটা তারা অবশ্যই নিবেন এবং এজন্য পারিশ্রমিক নেওয়া ডাক্তার-নার্স বা প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্পূর্ণ বৈধ।

করোনা মহামরির এই ক্রান্তিলগ্নে প্লাজমা দান করা শুধু জায়েজ বা বৈধই নয় বরং অত্যন্ত সাওয়াবের কাজ হিসেবে পরিগণিত হবে। কারণ মানুষের জীবন বাঁচানোর স্বার্থে এগিয়ে আসাকে খুবই কল্যাণকর কাজ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে ইসলাম। পবিত্র কোরআনুল কারীমে আল্লাহ মহান ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একজন ব্যক্তির জীবন বাঁচালো, সে যেন সমগ্র মানবজাতিকে রক্ষা করলো। (সুরা মায়িদা, আয়াত— ৩২)। জীবন বাঁচানোর মালিক একমাত্র আল্লাহ মহান। কারো জীবন বাঁচানো বা রক্ষা করার কোনো ক্ষমতা কোনো মানুষের নেই। উল্লেখিত আয়াতে জীবন বাঁচানো মানে হলো— কারো জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা। প্লাজমা দানের মাধ্যমেও কারো জীবন বাঁচানোয় সহযোগিতা করা সম্ভব এবং এই সহযোগিতায় কোনো জীবন যদি বেঁচেই যায়; তাহলে গোটা মানবজাতিকে রক্ষার অশেষ সাওয়াব অর্জিত হবে, ইনশা আল্লাহ।

লেখক: সম্পাদক, ইসলাম প্রতিদিন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর