Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১২তম কারামুক্তি দিবস


১১ জুন ২০২০ ১৩:৪০

আজ ১১ জুন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ১২তম কারামুক্তি দিবস। দীর্ঘ ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের এই দিনে জাতীয় সংসদ ভবন চত্বরে স্থাপিত বিশেষ কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি।

সেনাসমর্থিত তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই গ্রেফতার হন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একপর্যায়ে কারাগারে শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়ার দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে।

আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সহযোগী সংগঠনের ক্রমাগত চাপ, জনগণের আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। মুক্তি পেয়েই তিনি চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যান। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায়ই তার অস্থায়ী জামিনের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়। ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দেশে ফিরলে স্থায়ী জামিন দেওয়া হয় তাকে।

এবার একটু পিছন ফিরে দেখা যাক। ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা অসুস্থ পুত্রবধূকে দেখতে ব্যক্তিগত সফরে যুক্তরাষ্ট্র যান। তারপর থেকে দেশের ভিতরে উচ্চাভিলাষী চক্র তাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়। প্রথমে জনৈক ঠিকাদারকে বাগে এনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেওয়া হয় চাঁদাবাজি মামলা। এফআইআর এ নাম না থাকা সত্বেও ঘাতক জামাত শিবিরের দায়ের করা একটি হত্যা মামলায় তার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়।

চাঁদাবাজির সাজানো মামলাটি দায়ের করা হয় ৯ এপ্রিল। মিথ্যা মামলাটি আইনগতভাবে মোকাবেলার জন্যে তিনি তার সফর সংক্ষিপ্ত করে ১৪ এপ্রিলের মধ্যে দেশে ফিরে আসার প্রস্তুতি নেন। তখনকার সরকারের যোগাযোগ উপদেষ্টা মেজর জেনারেল আব্দুল মতিন (অব.) শেখ হাসিনাকে ফোন করে জানিয়েছিলেন, তাড়াহুড়ো করে দেশে ফেরার প্রয়োজন নেই। বলা হয়, তিনি যেন তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা শেষ করে নির্ধারিত সময়ে দেশে ফেরেন। পরে যোগাযোগ উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, শেখ হাসিনার মর্যাদা ও সম্মানহানির কোনও কিছুই সেসময়কার সরকার করবে না। এমনকি প্রেসনোট জারির আগের দিন ১৭ এপ্রিলও সেই উপদেষ্টা বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার কোনও সিদ্ধান্ত তার জানা নেই। আবার প্রেসনোট জারির পর সাংবাদিকরা তার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তিনি বলেন, প্রেসনোটের এ প্রসঙ্গে তার কোন বক্তব্য নেই।

সবচেয়ে বিস্ময়কর বক্তব্য দিয়েছিলেন আইন ও তথ্য উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নিষেধাজ্ঞা জারি করে প্রেসনোট ইস্যু করার পর শেখ হাসিনা বিভিন্ন দেশের মিডিয়ায় সাক্ষাৎকার দেন। সেদিন রাতে তার বক্তব্য প্রকাশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। ফলে দেশের কোনও টিভি চ্যানেল বা পত্রিকায় শেখ হাসিনার প্রতিক্রিয়া প্রকাশিত হয়নি। সরকার তার ওপর নিষেধাজ্ঞার খবরটি বাংলাদেশে ফ্লাইট পরিচালনাকারী সকল এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দেয়। বিমান ও স্থল বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়।

এদিকে শেখ হাসিনা দেশে ফেরার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ঘোষণা করার পর যোগাযোগ উপদেষ্টা জেনারেল মতিন সাংবাদিকদের বলেন, সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্বেও দেশে ফিরলে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

২২ এপ্রিল (২০০৭) বিশ্বের ৪১ দেশের ১৫১টি শীর্ষস্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে না দেওয়া সম্পর্কিত রিপোর্ট ছাপা হয়েছিল। ২৫ এপ্রিল (২০০৭) ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ শেখ হাসিনাকে বোর্ডিং পাস না দেওয়ার জন্যে দুঃখপ্রকাশ করেছিল। তারা জানিয়েছিল, বাংলাদেশ এভিয়েশন অথরিটির এক লিখিত নোটিশের কারণেই এই ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছিল। ২০০৭ সালের ৩ মে আর্ন্তজাতিক খ্যাতিসম্পন্ন পত্রিকা ‘আউট লুক’ এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা স্পষ্ট করে তার সংগ্রামের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ব্যক্ত করেছিলেন।

“আপনি বাংলাদেশে ফিরে যান এটা তারা চায় না কেন?

তারা আমার জনপ্রিয়তা সহ্য করতে পারছে না। এই দেশে আমার বাবাকে হত্যা করা হয়েছে, মাকে হত্যা করা হয়েছে, আমার ভাইদের ও পরিবারের বেশ কিছু সদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। তা স্বত্ত্বেও আমি আমার দেশে ছিলাম, জনগণের অধিকারের জন্যে সংগ্রাম করেছি।

আমি ৫ বছর ক্ষমতায় ছিলাম, আমার সরকার ছিল খুবই সফল। আমরা বেশ কিছু সমস্যার সমাধান করেছি। গঙ্গার পানি বন্টন নিয়ে দীর্ঘদিনের সমস্যা ছিল; কিন্তু আমার সময়ে ভারতের সঙ্গে ৩০ বছরের পানি বন্টন চুক্তি সই হয়। আমাদের সময় খাদ্য উদ্বৃত্ত ছিল, জিডিপি বেড়েছিল, মুদ্রাস্ফীতি কমেছিল।”

অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন,

“আমাদের যে তত্ত্ববধায়ক সরকার আছে তার দায়িত্ব হলো জাতীয় নির্বাচন করা। কিন্তু তারা ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হতে চায়। বাংলাদেশের সংবিধানের ৫৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ৯০ দিনের মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠান করা উচিত।”

আমরাতো জানি ১৯৮১ সালের ১৭ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছয় বছর নির্বাসিত জীবন শেষে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী হিসেবে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেছিলেন। ১৯৮১ সালের ৫ মে বিশ্বখ্যাত নিউজইউক পত্রিকার এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছিলেন, ঝুঁকি নিতে না জানলে জীবন মহত্ত্ব থেকে বঞ্চিত হয়। সেটাই শেখ হাসিনার ক্ষেত্রে দেখা গেছে। ২০০৭ সালেও আমরা লক্ষ্য করেছি। যুক্তরাষ্ট থেকে লন্ডনে ফিরে শেখ হাসিনা ২১ এপ্রিল বিবিসির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছিলেন। এমনকি এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণের সম্ভবনাও উড়িয়ে দেন। জামায়াতের দায়ের করা হত্যা মামলায় সিএমএম কোর্ট ২২ এপ্রিল দুপুরে শেখ হাসিনাকে পলাতক দেখিয়ে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে। সরকারের লিখিত নিষেধাজ্ঞার কারনে বিট্রিশ এয়ারওয়েজ তাকে বোডিং পাস দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এ সময় ব্রিটিশ এমপি এমিলি থর্নবেরিও তার সঙ্গে ছিলেন।

এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ জানায়, নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শেখ হাসিনাকে নিয়ে গেলে সরকার তাদের ঢাকায় অবতরণের অনুমতি দেবে না। ফলে শেখ হাসিনা দেশের উদ্দেশে যাত্রা করতে পারেননি। কিন্তু সে সময় হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে বের হয়ে সাংবাদিকদের বলেছিলেন, যত বাধা আসুক না কেন, আমি দেশে ফিরবোই। শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরতে না দেওয়ার ঘটনায় দেশে-বিদেশে বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে শেখ হাসিনার বক্তব্যসহ রিপোর্ট প্রকাশ করে।

তাই স্পষ্ট করে বলা যায়, আত্মসমর্পণ যে ধ্বংসের নামান্তর, শেখ হাসিনার জীবন সাধনার মধ্যে এই বাণী নিরন্তর উচ্চারিত হতে থাকবে। কেননা তিনি পথ দেখান এবং আশা দেন, ভরসা দেন। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ইয়াজউদ্দিন, ফখরুদ্দীন, মইনউদ্দিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের পূর্ব মুহূর্তে জাতির উদ্দেশ্যে তিনি একটি চিঠি লিখে যান; যা পরদিন জাতীয় দৈনিকগুলো ফলাও করে প্রকাশ করে। গ্রেফতারের পূর্বে লেখা শেখ হাসিনার চিঠি আাগামী প্রজন্মের লড়াকু মানুষদের সব সময় অনুপ্রাণিত করবে। সেদিনে শেখ হাসিনা নির্ভীক চিত্তে জাতির উদ্দেশ্যে অবিস্মরণীয় উক্তি করেছিলেন।

“অন্যায়ের প্রতিবাদ করবেন। যে যেভাবে আছেন অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবেন। মাথা নত করবেন না। সত্যের জয় হবেই। আমি আছি আপনাদের সঙ্গে, আমৃত্যু থাকব। আমার ভাগ্যে যা-ই ঘটুক না কেন আপনারা বাংলার জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য সংগ্রাম চালিয়ে যান।”

আজ থেকে প্রায় চার দশক আগে শেখ হাসিনা মাতৃভূমিতে ফিরে এসেছিলেন কেবল একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জীবন-যাপনের উদ্দেশ্যে নয়, জাতীয় রাজনীতির হাল ধরতে,, সেনাশাসনের কবল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের বাংলাদেশকে ফিরিয়ে আনতে। দেশের মাটিতে পা রাখার দিন থেকেই শুরু হয় তার নিরবচ্ছিন্ন সংগ্রামী জীবন, প্রায় চার দশক সময় ধরে যা বিস্তৃত। শেখ হাসিনা রাষ্ট্র, সমাজ, দেশ, বিশ্ব সম্পর্কে চিন্তাধারার উত্তরাধিকার আমাদের জন্যে প্রতি মুহুর্তে রেখে চলেছেন। শেখ হাসিনা ১৯৮১ সালের ১৭ মে স্বদেশে ফিরে না আসলে ক্ষমতার মদমত্ততার ও আত্মম্ভরিতার অবসান হত না। এ কথা মোটেই বাড়িয়ে বলা হবে না, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের নির্মীয়মান ইতিহাসে শেখ হাসিনা নিজের জায়গা নিজে করে নিয়েছেন। শেখ হাসিনা জেনে গিয়েছিলেন, চলার পথে অনেক বাঁক থাকে, চোরাস্রোত থাকে, অনির্দিষ্ট আর অলক্ষ্য অনেক উপাদানে জড়িয়ে থাকে ইতিহাসের অনির্ধারিত গতিপথে। অথচ শেখ হাসিনা স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের চার দশক অতিক্রমের পর প্রশ্ন থেকে যায় রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা তার যথাযথ মূল্যায়ন কি করেছেন?

বাংলাদেশের জন্যে শেখ হাসিনা জরুরি ছিলেন, জরুরি থাকবেন। ইয়াজউদ্দিন, ফকরুদ্দিন, মঈনউদ্দিন সরকার শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করে ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই। আর বেগম খালেদা জিয়াকে গ্রেফতার করা হয় ৫৮ দিন পরে ৩ সেপ্টেম্বর তারিখে। অথচ জামাত বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে দেশের সর্বস্তরের মানুষের তখনও ঐক্যবদ্ধ অবস্থান ছিল। মেজর জেনারেল সৈয়দ ইব্রাহিম (অব:) ওই সময় বলেছিলেন, ‘হাওয়া ভবন দূর্নীতির ওয়ান স্টপ সার্ভিস।’ সেই সরকারের প্রধানকে আগে গ্রেফতার না করে শেখ হাসিনাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ৫৮ দিন পরে খালেদা জিয়াকে বাধ্য হয়ে গ্রেফতার করেছিল; কারণ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে সমাজের সর্বস্তরের মানুষ একট্টা হয়ে গিয়েছিল। ঢাকা শহরের ২৫ লাখ মানুষ শেখ হাসিনার মুক্তির দাবীতে গণস্বাক্ষর করেছিল।

২০০৭ সালের ২৪ এপ্রিল বিবিসি’র সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আমি আমার দেশের মানুষের কাছে ফিরে যেতে চাই। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, তিনি সরকারি নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে আগামীকাল (২৫ এপ্রিল ২০০৭ ) ঢাকার উদ্দেশে লন্ডন ত্যাগ করবেন। বিবিসির সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে শেখ হাসিনা আরও বলেন, বিদেশে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। তার সঙ্গে আলাপকালে প্রথমেই ঢাকায় তার না ফেরার ব্যাপারে আজ যে খবর প্রকাশিত হয়েছে সে সম্পর্কে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়। জবাবে শেখ হাসিনা বলেন,

“এই সংবাদ কে দিল? এ ধরনের কোনও সিদ্ধান্ত নেইনি। আমি তো কালকে রওনা হচ্ছি। আমি যাচ্ছি ঢাকায়। আমি ঢাকা যাব।”

“বিবিসি: আপনি এখনো সেই সিদ্ধান্তে অটল?

শেখ হাসিনা: আমার সিদ্ধান্তে আমি অটল। আমি আমার দেশের মানুষের কাছে যাব। আমি জাতির জনকের কন্যা। আমি আমার দেশের মানুষকে ছেড়ে বেশি দিন থাকতে পারি না। আমার মানুষের কাছে আমাকে যেতে হবে।”

“বিবিসি: আর একটি কথা রটেছে। আপনি ব্রিটেন বা আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করতে পারেন।

শেখ হাসিনা: প্রশ্নই ওঠে না। এখন রাজনৈতিক আশ্রয় নেব কেন? তবে দুর্ভাগ্য, আমার সঙ্গে এ ধরনের আচরণ করবে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার এটা আমি ভাবতেই পারি না। এটা আমার কল্পনার বাইরে। আমি এসেছিলাম এক মাসের জন্য। উপদেষ্টাদের অনেকের সঙ্গে আমার কথাও হয়েছিল। তারা ভালো করেই জানেন, আমি আমার অসুস্থ পুত্রবধূকে দেখতে এসেছি। আমার মেয়েকে দেখতে এসেছি। কারণ আমার মেয়ের বাচ্চা হবে আগামী জুলাইর প্রথম সপ্তাহে। আমাকে আবার আসতে হবে। হঠাৎ আমি শুনলাম, আমাকে যেতে দেওয়া হবে না। আমি যখন ওয়াশিংটনে আমার টিকিট চেকিং করতে গেলাম তখন ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ থেকে আমাকে জানানো হলো, আপনি কি জানেন আপনার ওপর এ ধরনের এম্বারগো আছে? বললাম, হ্যাঁ, আমি শুনেছি। যাই হোক আমি লন্ডন পর্যন্ত এসে পৌঁছলাম। কালকে শুনেছি। কালকে আমি যাব এয়ারপোর্টে। আমি আশা করব আমাদের সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। এই এম্বারগো তারা তুলে নেবে। আমাকে বাধা দেবে না দেশে যেতে। যদি বাধা দেয় তবে যেভাবে হোক আমাকে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনও দেশে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ার সিদ্ধান্ত দূরের কথা, আমি এরকম কোনও চিন্তাই করি না।”

শেখ হাসিনা আল জাজিরা টেলিভিশনে সাক্ষাৎকারকালে জানিয়েছিলেন,

“এটা অনৈতিক, অগণতান্ত্রিক ও বেআইনি। আমার দেশে আমি ফিরব, তারা আটকাবে কেন? তারা মামলায় জড়িয়েছে, আমি মোকাবেলা করব। তারা জেলে ভরবে আমি জেলে যাব। কী করবে আমাকে? মেরে ফেলবে? বুলেট খরচ করবে? গ্রেনেড হামলা চালাবে? আল্লাহর ইচ্ছে থাকলে বেঁচে থাকব, না হলে চলে যাব। কিন্তু আমি দেশে ফিরব না কেন?”

আশ্চর্যজনকভাবে স্পর্শকাতর সময়ে বিশ্বখ্যাত সাংবাদিক ডেভিট ফ্রস্টের আবির্ভাব ঘটে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের সেই বিখ্যাত সাক্ষাৎকারের কথা অনেকের মনে থাকবে হয়তো। বঙ্গবন্ধুকে ডেভিট ফ্রস্ট জিজ্ঞেস করেছিলেন, “মি. মুজিব আপনার যোগ্যতা কি?” বঙ্গবন্ধুর তাৎক্ষণিক উত্তর, “আমি আমার জনগণকে ভালোবাসি।” পাল্টা প্রশ্ন করেছিলেন ফ্রস্ট, “আপনার অযোগ্যতা কি?” বঙ্গবন্ধুর সাবলীল উত্তর, “আমি আমার জনগণকে বেশি ভালোবাসি।”

চার দশক পর শেখ হাসিনার সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন সেই ডেভিড ফ্রস্ট। শেখ হাসিনাকে ডেভিড ফ্রস্ট প্রশ্ন করলেন, “আপনি কি আবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চান?”

শেখ হাসিনার উত্তর,

“এটা জনগণের ওপর নির্ভর করবে। আমাদের জনগণ যদি চায়, তবেই হতে পারি। এটা জনগণই ঠিক করতে পারে। আমি কীভাবে বলতে পারি।এটা ঠিক, আমি জনগণের সেবা করতে চাই। আর আপনি জানেন, জনগণের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করেছি। কারণ আমাদের জনগণ খুবই গরিব, তারা সমস্যায় জর্জরিত। এ মুহূর্তে তাদের রাজনৈতিক অধিকার নেই। তাদের কথা বলার অধিকার নেই। তারা অর্থনৈতিক সমস্যায় ভুগছে। তাই আমি তাদের পাশে দাঁড়াতে চাই। কারণ আপনি জানেন, আমার পিতার একটা স্বপ্ন ছিল; তিনি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চেয়েছিলেন। আমার আদর্শ একই রকম এবং আমার বাবাকে অনুসরণ করতে চাই। কারণ বাংলাদেশের মানুষ এজন্য লড়ছে। তারা গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মৌলিক অধিকারের জন্য লড়ছে।”

করোনাভাইরাস মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিখ্যাত বিজনেস ম্যাগাজিন ফোর্বস। পত্রিকাটির সফল নেত্রীদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পত্রিকাটিতে প্রকাশিত এক নিবন্ধে বলা হয়েছে, ‘কোভিড-১৯ মোকাবিলায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হাসিনাসহ বিশ্বের আট নেত্রীর অবদান বিশ্বজুড়ে স্বীকৃতি পাওয়ার যোগ্য’। শেখ হাসিনা তার দেশের করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তড়িৎ সিদ্ধান্ত নেওয়ার যে ক্ষমতা দেখিয়েছেন তা প্রশংসনীয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্ব দেওয়া ১৬ কোটিরও বেশি মানুষের দেশ বাংলাদেশ বিভিন্ন সঙ্কট মোকাবিলার ক্ষেত্রে এক পরিচিত নাম বলেও নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়। সেখানে আরও বলা হয়, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনাভাইরাস সংক্রমণের শুরুতে বাংলাদেশ যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তা এখনও কার্যকর করতে পারেনি ব্রিটেন। এর আগে করোনা মোকাবিলায় নারী নেতৃত্বে সফলতা বেশি আসছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় ফোর্বস ম্যাগাজিন। তখনও করোনার সংক্রমণ বাংলাদেশে সেভাবে দেখা যায়নি। সেসময় ৬ জন নেত্রীর কথা উল্লেখ করা হয়। কিন্তু এই প্রতিবেদনের দ্বিতীয় পর্বে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়া করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন দেশের কার্যক্রম পর্যালোচনা করে নতুন করে ৮ নেত্রীর নাম ঘোষণা করা হয় যেখানে রয়েছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নামও।

শুধু করোনা মোকাবিলায় নয়, করোনাকালে দেশের অর্থনীতিকে ভালো রাখতেও শেখ হাসিনার পদক্ষেপ এখন বিশ্বব্যাপী প্রশংসা কুড়াচ্ছে। দ্যা ইকোনোমিস্ট বলছে, করোনাভাইরাসের ভয়াবহতাও ভারত-চীন কিংবা সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো দেশের চেয়েও তুলনায় নিরাপদ বাংলাদেশের অর্থনীতি। অনেক পেছনে রয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বখ্যাত এই পত্রিকাটি করোনাভাইরাসের মহামারি পরিস্থিতিতে ৬৬টি উদীয়মান সবল অর্থনীতির দেশের মধ্যে বাংলাদেশকে ৯ম শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে।

রাজনীতির কবি বঙ্গবন্ধুর প্রধান শক্তি ছিল জনগণ। যে বলে তিনি বলেছিলেন, ‘সাড়ে ৭ কোটি মানুষেরে দাবায়ে রাখতে পারবা না।’ সেই বাংলাদেশে আজ বঙ্গবন্ধুকন্যার শক্তি সাড়ে ১৬ কোটি মানুষ। আর এ কারণে তিনিও বলছেন, ‘ঝড়-ঝঞ্ছা-মহামারি আসবে। সেগুলো মোকবিলা করেই আমাদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সঙ্কট যত গভীরই হোক জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে তা উৎড়ানো কোন কঠিন কাজ নয়।’

বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, অদম্য গতিতে আরো এগুবো। বলার অবকাশ রাখে না, এর পেছনের পুরো কৃতিত্বটাই সাহসী পথযাত্রী আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার।

লেখক: রাজনৈতিক বিশ্লেষক

শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর