Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সারাদেশের ২৭৫টি যক্ষা সনাক্তকরণের যন্ত্রে করোনা পরীক্ষা সম্ভব


২০ জুন ২০২০ ১৪:৪৩

দেশে করোনা রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন পরীক্ষা করা ব্যক্তিদের মধ্যে ২০-২৩ শতাংশই কোভিড-১৯ পজিটিভ শনাক্ত হচ্ছে যা অন্য অনেক দেশের চেয়ে বেশী। ফলে সহজেই ধরে নেয়া যায় বাস্তবে কোভিড-১৯ পজিটিভ ব্যক্তির সংখ্যা অনেক বেশী, পরীক্ষার অভাবে এরা শনাক্ত হচ্ছেন না।

বিশেষজ্ঞরা বারবার বলছেন, `টেস্ট, ট্রেস, ট্রিটমেন্ট’। অর্থাৎ পরীক্ষা করে শনাক্ত করা, তার সংস্পর্শে কে কে এসেছেন তাদের খুঁজে বের করা এবং রোগীর চিকিৎসা- এই তিন হচ্ছে কোভিড-১৯ মহামারি ঠেকানোর উপায়। তার মানে পরীক্ষার সংখ্যা বাড়াতে হবে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে প্রক্রিয়ায় (আরটি-পিসিআর) বর্তমানে পরীক্ষা হচ্ছে, তা কোভিড-১৯ শনাক্তের জন্য সবচেয়ে কার্যকর প্রমাণিত হলেও, পরীক্ষা প্রক্রিয়া যথেষ্ট জটিল। এতে যেমন নানা কারিগরি প্রযুক্তির দরকার হয় তেমনি দরকার হয় প্রশিক্ষণ ও দক্ষ কর্মীর। যা সহজে তৈরি করা সম্ভব নয়। ফলে আমাদের বিকল্প নিয়ে চিন্তা করতেই হবে। এ লেখায় আমি প্রচলিত আরটি-পিসিআর এর যে বিকল্পগুলো আছে তা নিয়ে বিশেষ করে একটি নিয়ে আলোচনা করতে চাই যার নাম জিন এক্সপার্ট।

বিজ্ঞাপন

জিন এক্সপার্ট একটি বিশেষায়িত পিসিআর ব্যবস্থা। মূলত টিবি বা যক্ষ্মা শনাক্তকরনের জন্য জিন এক্সপার্ট মেশিন তৈরি করা হয়েছিল। সাধারণত যক্ষ্মা শনাক্তকরণে স্পুটাম (কফ) টেস্ট বা এক্সরে করা হয়। কিন্তু এই দুই পরীক্ষায় যক্ষ্মার ধরন বিশেষ করে এটা সাধারণ যক্ষ্মা নাকি ওষুধ প্রতিরোধী যক্ষ্মা (মাল্টি ড্রাগ রেজিস্টান্ট টিবি) তা বোঝার উপায় থাকে না। সেদিক থেকে জিন এক্সপার্ট পিসিআর কার্যকর। তবে কোভিড-১৯ মহামারি শুরুর দিকেই এর উদ্ভাবক প্রতিষ্ঠান চেষ্টা করছিল, এই মেশিনকে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে প্রস্তুত করতে। তারা এ জন্য আলাদা কাট্রিজ তৈরি করে। অর্থাৎ জিন এক্সপার্ট মেশিনকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার উপযোগী করে তুলেছে। এজন্য নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান সেফিড, মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এফডিএ’র সাময়িক অনুমোদন (মহামারীর সময়ে ব্যবহারের অনুমোদন) পেয়ে গেছে। ইতোমধ্যেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রত্যন্ত অঞ্চলে এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এতো কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই ব্যবস্থা বাংলাদেশে কার্যকরের জন্য বিশেষ উপযোগী। কেন তা ব্যাখ্যা করছি। বাংলাদেশে জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীর অংশ হিসাবে এই মেশিন কেনা হয়েছে। শুধু কেনা নয়, কার্যকরভাবে যক্ষ্মা শনাক্তে ব্যবহার হচ্ছে। ২৭৫টি এরকম মেশিন বাংলাদেশ কার্যকর রয়েছে। এদের স্থাপন করা হয়েছে দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায়। এই মেশিনগুলোকে কোভিড-১৯ শনাক্তকরণে ব্যবহার করলে তিন দিক থেকে সুফল পাওয়া যাবে। এক, যন্ত্রগুলো ইতোমধ্যেই দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে। ফলে উপজেলা পর্যন্ত শনাক্তকরণ সেবা পৌঁছে দেয়া যাবে। এখন পর্যন্ত এ সেবা বিভাগীয় শহর এবং অল্প কিছু জেলা শহরে সীমাবদ্ধ।

দুই, এ সেবায় শনাক্তকরণে সময় লাগে মাত্র ৪৫ মিনিট যা আরটি-পিসিআর এর চেয়ে অনেক কম। ইতোমধ্যেই এ কাজের জন্য প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনগণ আছে, ফলে কাট্রিজ সংগ্রহ করাই যথেষ্ট, অন্য কিছুর প্রয়োজন হবে না। তাছাড়া জাতীয় যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচীতে ব্র্যাক সরকারের অংশীদার। তারা কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহে কাজ করছে। ফলে এ কাজেও তারা সহজেই সহায়তা করতে পারে। জিন এক্সপার্ট যখন এফডিএ’র সাময়িক অনুমোদন পেল তখন দেশের ২/১ জন বিশেষজ্ঞ এ নিয়ে কথা বলেছিলেন। তারপর তা আর আলোচনায় আসেনি। অথচ এ প্রক্রিয়ায় সহজেই দিনে ৫-৭ হাজার পরীক্ষা করা সম্ভব।

দেশে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট নিয়ে ব্যাপক আলোচনা ও বিতর্ক হয়েছে। আমরা একে একটি কিট মনে করলেও তারা দুটি কিটের কথা বলেছে। এন্টিজেন কিট ও এন্টিবডি কিট। এন্টিজেন কিট মূলত একজন ব্যক্তির কোভিড-১৯ পজিটিভ কিনা তা বোঝার জন্য ব্যবহৃত হয়। মূলত স্যাম্পল সংগ্রহের কৌশল সংশ্লিষ্ট জটিলতায় এর পরীক্ষা শেষ করা যায় না। অপরদিকে এন্টিবডি টেস্ট মূলত একজন ব্যক্তি কোভিড-১৯ থেকে সেরে উঠেছেন কিনা তা শনাক্তে ব্যবহার হয়।

একজন ব্যক্তি কোভিড-১৯ দ্বারা সংক্রমিত হবার ২ সপ্তায় পরে পরীক্ষা করলে এন্টিবডি পরীক্ষায় ভালো ফল আসে। সেই অর্থে এই কিট ব্যর্থ নয়। কারা কারা সেরে উঠেছেন তা পরীক্ষায় এ কিট ব্যবহার করা চলে। একে ‘সেরোপ্রিভালেন্স’ যাচাই বলে। কিন্তু প্রথমে যেমনটা বলেছি, আমাদের আগে দরকার সংক্রমিত ব্যক্তিকে শনাক্ত করা। সে কাজে এন্টিজেন টেস্ট বেশী কার্যকর। তবে সারা বিশ্বেই সফল এন্টিজেন টেস্ট কিটের সংখ্যা খুব কম। মাত্র ২/১ টি প্রতিষ্ঠান কার্যকর এন্টিজেন কিট বাজারে আনতে পেরেছে (কাইজেন এর মধ্যে একটি)। ফলে গণস্বাস্থ্য তাদের এন্টিজেন কিটকে আরও কার্যকর করতে পারে কিনা সেদিকে যেমন আমাদের লক্ষ্য রাখতে হবে তেমনি কাইজেন এর মতো ২/১ টি কিটকেও পরীক্ষামূলকভাবে চালু করে ফলাফল বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। যেহেতু এসব উপায় বাংলাদেশে নতুন, ফলে সম্পূর্ণ কিট যেমন আমদানি করতে হবে তেমনি প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে। সে তুলনায় জিন এক্সপার্ট মেশিনের সাথে আমরা অনেক বেশী পরিচিত। উপজেলায় ছড়িয়ে আছে বিধায় এর এক্সেসিবিলিটি বা সুগম্যতাও বেশী। ফলে অনতিবিলম্বে এর কার্ট্রিজ এনে পরীক্ষামূলকভাবে এর কার্যকারিতা দেখা যেতে পারে।

লেখক: গবেষক, আইআরসি ওয়াশে কর্মরত

করোনাভাইরাস যক্ষ্মা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর