Monday 25 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ: ৭১ বছরের সংগ্রাম ও অর্জন


২৫ জুন ২০২০ ১৩:৫৬

২৩ জুন ১৭৫৭ সালে পলাশীর আম্রকাননে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা যুদ্ধে পরাজিত হয় ব্রিটিশ বেনিয়াদের কাছে। বেঈমান মীর জাফরের ষড়যন্ত্রে বাংলার স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল সেই দিন। বাংলার শেষ নবাবের পরাজয়ের পর ২০০ বছর ব্রিটিশদের গোলামির জিঞ্জিরে বন্দী হয় বাংলা বা বঙ্গভূমি।

২৩ জুন ১৯৪৯ সালে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ১৭ এপ্রিল ১৯৭১, কুষ্টিয়া জেলার মেহেরপুর মহকুমার আম্রকাননে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার শপথ গ্রহণের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলার প্রথম সূর্য উদিত হয় আবারও সেই আম্রকাননে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার গঠিত হয়েছিল ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল জনগণের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দ্বারা। যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর। স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি ছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সৈয়দ নজরুল ইসলাম উপ-রাষ্ট্রপতি,তাজউদ্দীন আহমদ প্রধানমন্ত্রী এবং অন্যান্য মন্ত্রীর দ্বারা এ সরকার গঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা হয়েছিল ২৩ জুন হারানো স্বাধীনতাকে ফিরে পাওয়ার জন্য। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাঙালি জাতিকে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র উপহার দিয়েছে, মর্যাদা দিয়েছে স্বাধীন সত্তা নিয়ে পথ চলার, পরিচয় দিয়েছে বাংলা ভাষাভিত্তিক একটি জাতি হিসেবে। প্রতিষ্ঠার ৭১ বছর ধরে আওয়ামী লীগ বাংলার মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। বাংলার মানুষকে সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই বাংলাদেশের শোষিত, বঞ্চিত ও দরিদ্র মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করে যাচ্ছে। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার কেএম দাস লেনে অবস্থিত ‘রোজ গার্ডেন’ নামে একটি বাড়িতে প্রতিষ্ঠা লাভ করে আওয়ামী লীগ। মওলানা ভাসানী সভাপতি, শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক এবং শেখ মুজিবুর রহমান যুগ্ম সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান।

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রভাষা বাংলাকে প্রতিষ্ঠা করার যে আন্দোলন শেখ মুজিব ১৯৪৮ সালের ১১ মার্চ শুরু করেছিলেন, সেই অপরাধে তাকে বারবার কারাবরণ করতে হয়েছিল। যখন এই সংগঠনটি ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করে তখন তিনি কারাগারে বন্দী ছিলেন। বাংলাদেশের জনগণ তখন ছিল আর্থ-সামাজিকভাবে সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত। শতকরা ৮০-৯০ ভাগ মানুষই দরিদ্র।

সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলার এই ভূখণ্ডকে ‘পূর্ব পাকিস্তান’ নামকরণ করেছিল পাকিস্তানের শাসকবর্গ। এই পূর্ব পাকিস্তান তখন হাজার মাইলের ব্যবধানে অবস্থিত; শুধুমাত্র ধর্মের নাম নিয়ে যে রাষ্ট্রটি প্রতিষ্ঠা পেয়েছিল সেই পাকিস্তান রাষ্ট্রের একটি প্রদেশ হিসেবে বিবেচিত ছিল। পশ্চিম পাকিস্তান অংশ ৪টি প্রদেশ নিয়ে গঠিত মরুভূমি, সেখানে তেমন কিছুই উৎপাদন হতো না। যা কিছু অর্থ পূর্ব পাকিস্তান অর্জন করত, তার সিংহভাগ পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য ব্যয় করা হতো। পূর্ব পাকিস্তানে যা কিছু উৎপাদন হতো এবং আমাদের দেশের পাট, চাসহ অন্যান্য পণ্য রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা হতো, সেই অর্থ নিয়ে যেত পশ্চিম পাকিস্তান। পাকিস্তান ও ভারত যখন ভাগ হয় সেসময় ভাগের অংশে যে সকল মূল্যবান সামগ্রী ও অর্থ পাওয়া গিয়েছিল, তাও এই ভূখণ্ডের উপার্জিত সম্পদ বা অর্থ; কিন্তু সে সকল অর্থ-সম্পদও নিয়ে যাওয়া হয় পাকিস্তানের পশ্চিমাংশে।

এখানেই শেষ নয়, সর্বপ্রথম আঘাত আসে আমাদের মাতৃভাষার ওপর। বাংলা ভাষাকে বাদ দিয়ে উর্দু ভাষা চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা; সেটাও করা হয়েছিল ধর্মের নাম নিয়ে। এই বঙ্গভূমির মানুষ নিজস্ব ভাষা, সংস্কৃতি, সাহিত্য; সর্বক্ষেত্রেই অগ্রগামী ছিল। কাজেই আমরা যদি সেদিন বাংলা ভাষা ত্যাগ করতাম, তাহলে আমাদের অস্তিত্বই শেষ হয়ে যেত। এক কথায় বলতে গেলে, শুধু অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করা নয়; ভাষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য সবই ধ্বংস করতে চেয়েছিল পাকিস্তানি শাসকবর্গ।

পাকিস্তান নামে যে দেশটা সৃষ্টি হয়েছিল সে দেশের শাসক তখন মুসলিম লীগ, তারা মনগড়া নানা সিদ্ধান্ত দেশের মানুষের ওপর চাপিয়ে দিয়েছিল এবং তাদের দুঃশাসনের প্রতিবাদ করে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করার অঙ্গীকার নিয়েই আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আওয়ামী লীগকে একটি অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য ১৯৫৫ সালের জাতীয় কনফারেন্সে নামের সংশোধন করে ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’কে আওয়ামী লীগ নামকরণ করা হয়।

পাকিস্তানে মুসলিম লীগ যতো দিন ক্ষমতায় ছিল ততো দিন তারা পাকিস্তানের জন্য একটা শাসনতন্ত্র রচনা করতে ব্যর্থ হয়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট ১৯৫৪ সালে সরকার গঠন করে; কিন্তু সে সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। এমার্জেন্সি ঘোষণা ৯২(ক) দিয়ে সে সরকারের পতন ঘটানো হয়। এরপর ১৯৫৫ সালে নির্বাচিত হয়ে ১৯৫৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করে এবং হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৫৬ সালে পাকিস্তানের প্রথম শাসনতন্ত্র রচিত হয়। সে সরকারও বেশি দিন ক্ষমতায় থাকতে পারে নাই। দুর্ভাগ্যের বিষয় যে ১৯৫৭ সালে আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী আওয়ামী লীগ ভেঙে ‘ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি’ নামে নতুন দল গঠন করেন। তখন আওয়ামী লীগকে সংগঠিত করার জন্য মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করে শেখ মুজিবুর রহমান দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব নিয়ে সমগ্র বাংলার এই ভূখণ্ড আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে শুরু করেন।

১৯৫৮ সালের ৭ অক্টোবর পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আইয়ুব খান মার্শাল ল’ জারি করে নিজেকে একাধারে সেনাপ্রধান ও পাকিস্তানের রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। সকল রাজনৈতিক দল নিষিদ্ধ করে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দদের গ্রেফতার করে। ১৯৪৮ সাল থেকে শেখ মুজিবসহ নেতৃবৃন্দ কখনও গ্রেফতার হচ্ছেন, কখনও মুক্তি পাচ্ছেন এবং আবার বন্দী হচ্ছেন। ১৯৪৯ থেকে ১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শেখ মুজিব একটানা কারাগারে বন্দী ছিলেন। এরপর ১৯৫৪ সালের ২০ মে আবার বন্দী হন এবং ২৩ ডিসেম্বর মুক্তি পান। ১৯৫৮ সালে ১২ অক্টোবর বন্দী হন, ১৭ ডিসেম্বর ১৯৬০ সালে মুক্তি পান। ১৯৬৫ সালে গ্রেফতার হন পরে হাইকোর্টে রিট করে মুক্তি পান। ১৯৫৮ থেকে ১৯৬০ সালের ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত বন্দিখানায় বিভিন্ন মিথ্যা মামলা দিয়ে শেখ মুজিবকে নাজেহাল করা হয়, এমন কী রাজনীতি করাও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ঢাকার বাইরে গেলেও শেখ মুজিবকে থানায় খবর দিয়ে যেতে হতো।

১৯৬৪ সালে রাজনৈতিক দল করার সুযোগ আসে এবং আওয়ামী লীগ পুনরায় যাত্রা শুরু করে। ২৫ জানুয়ারি ১৯৬৪ সালে আওয়ামী লীগকে পুনর্গঠন করা হয় মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামের লক্ষ্য নিয়ে। শেখ মুজিব ১৯৬৬ সালে ৬ দফা দাবি পেশ করেন, যা বাংলাদেশের মানুষ ‘মুক্তির সনদ’ হিসেবে গ্রহণ করে। আবারও শেখ মুজিবুর রহমানসহ দলের নেতৃবৃন্দকে বন্দী করা হয়। একের পর এক মামলার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর নেমে আসে অতীতের মতোই অত্যাচার-নির্যাতন, জেল-জুলুম।

বন্দী থাকা অবস্থায় ১৯৬৮ সালের ১৮ জানুয়ারি ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে শেখ মুজিবকে ঢাকা কুর্মিটোলা ক্যান্টনমেন্টে নিয়ে যাওয়া হয় এবং আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা দিয়ে আরও ৩৪ জন সামরিক-অসামরিক অফিসারসহ সকলকে বন্দী করে রাখা হয়। শত নির্যাতনের মুখেও আওয়ামী লীগ সংগ্রাম চালিয়ে যায়। ১৯৬৪ সালে দলের পুনঃসংগঠনের সময় কিছু নেতারা যেমন বাধা দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি যখন ৬ দফা দেওয়া হলো তখনও কিছু নেতা নেমে পড়লেন দলের ভিতর ভাঙন ধরিয়ে ৮ দফা নামের একটি কোটারি তৈরি করতে।

বলাবাহুল্য, এই ষড়যন্ত্র পাকিস্তানের শাসকদের দ্বারা প্ররোচিত ছিল। তবে এক্ষেত্রে কিছু নেতা দ্রুত নগদ কিছু পাওয়ার লোভে নিজেদের বিকিয়ে দিলেও তৃণমূলের নেতাকর্মী এবং নিবেদিত প্রাণ নেতারা সব সময় দলের মূল শক্তি হিসেবে ৬ দফার পক্ষে অবস্থান নেন। আর এই রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে আমার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। ছাত্রলীগের নেতৃত্বে অন্যান্য ছাত্র সংগঠন ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের মাধ্যমে ছাত্রদের কিছু দাবিসহ ৬ দফা দাবি নিয়ে ১১ দফার আন্দোলন গড়ে তোলে। যে আন্দোলনে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা প্রত্যাহার ও শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিটি মুখ্য হয়ে বাংলার গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে পড়ে। গণঅভ্যুত্থান সৃষ্টি হয়, শিশু ছাত্র মতিউর এবং ছাত্র-শিক্ষক নেতাকর্মীরা এ আন্দোলনে জীবন দেয়।

প্রবল গণআন্দোলনের মুখে আইয়ুব খান ২১ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করে এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ১৯৬৯ সালে শেখ মুজিবসহ সকল বন্দীকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু জীবন নিয়ে ফিরে আসতে পারেন নাই সার্জেন্ট জহুরুল হক। ১৫ ফেব্রুয়ারি তাকে বন্দী অবস্থায় হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৬৯ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি ছাত্র-জনতার ঐতিহাসিক সমাবেশে ‘বঙ্গবন্ধু’ হিসেবে ভূষিত হন শেখ মুজিব।

আইয়ুব খান সরকারের পতন হয় আর মিলিটারি শাসক ইয়াহিয়া ক্ষমতা দখল করে। জেনারেল ইয়াহিয়া ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর নির্বাচন দেয়। যে নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মুসলিম লীগের নেতৃত্বে ২০ দলীয় ঐক্যজোট নির্বাচন করে। সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রাদেশিক পরিষদ ও সমগ্র পাকিস্তানের ন্যাশনাল এসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন লাভ করে। পাকিস্তানিরা বাঙালি বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে ক্ষমতা দিতে প্রস্তুত ছিল না। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আগেই এটা ধারণা করেছিলেন, তাই আওয়ামী লীগ সংগঠনকে সেভাবেই তিনি তৈরি করেছিলেন। নির্বাচনে জয়ী হবেন, ক্ষমতা হস্তান্তর না করলে মুক্তিযুদ্ধ করতে হবে এবং বাংলাদেশ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পাবে; এ পরিকল্পনা তিনি পূর্বেই করেছিলেন। জনগণের রায়কে উপেক্ষা করায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ডাকে সমগ্র জাতি ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ১ মার্চ থেকে শুরু হয় অসহযোগ আন্দোলন।

৭ মার্চ ১৯৭১ সালে রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে) লক্ষ লক্ষ মানুষ হাতে বাঁশের লাঠি আর নৌকার বৈঠা নিয়ে মুখে স্বাধীনতার শ্লোগান দিতে দিতে হাজির হয় বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ শোনার জন্য। কানায় কানায় পূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বঙ্গবন্ধু ঘোষণা দেন “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম”। বঙ্গবন্ধুর এই ঐতিহাসিক ভাষণ উজ্জীবিত করে বাংলার মানুষকে।

স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা, জাতীয় সংগীতসহ সবই তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন পূর্বেই। আওয়ামী লীগের গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত নেতারা প্রস্তুত হন এবং সাধারণ জনগণকে উদ্বুদ্ধ করেন মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণের জন্য। ২৫ মার্চ যে মুহূর্তে হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়, পূর্ব পরিকল্পনানুযায়ী বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা ইপিআর ওয়ারলেসের মাধ্যমে সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। আওয়ামী লীগের জেলা ও মহকুমার নেতারা প্রস্তুত ছিলেন। কেউ থানা থেকে পুলিশের কাছে অথবা ইপিআর (বর্তমানে বিজিবি) এর ওয়ারলেসের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণা সংগ্রহ করে টেলিগ্রাম, টেলিপ্রিন্টারের মাধ্যমে রাতের মধ্যে এই সংবাদ প্রচার করতে থাকে। আওয়ামী লীগের নেতারা রিকশায় করে, মাইকে স্বাধীনতার ঘোষণা ঘুরে ঘুরে প্রচার করেন। আওয়ামী লীগ সংগঠন অত্যন্ত সুসংগঠিত ছিল বলেই এত দ্রুত জনগণকে প্রস্তুত করতে পেরেছিলেন। ঐ দিন রাতেই বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে মিত্রবাহিনীর কাছে। হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর মূল টার্গেট ছিল আওয়ামী লীগ ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। সমগ্র বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়ি আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। সাধারণ মানুষ পর্যন্ত রেহাই পায় নাই। গুটিকয়েক পাকিস্তানি দালাল, রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনী গঠন করে হানাদার বাহিনীকে গ্রামের পর গ্রাম পথ দেখিয়ে নিয়ে যায়, মুক্তিযোদ্ধাদের বাড়ি-ঘর চিনিয়ে দেয়। বাঙালি মা-বোনদের ধরে নিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের কাছে ভেট হিসেবে তুলে দেয়। বুদ্ধিজীবীদের ধরে নিয়ে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে পাকিস্তানে বন্দী করে রাষ্ট্রদ্রোহী মামলায় ফাঁসির হুকুম দিয়ে যায় পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান। ফাঁসির আদেশ কার্যকর করার মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে এক ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে কারাগার থেকে বের করে তার গোপন স্থানে রেখে দেন। মুক্তিযুদ্ধে পরাজয়ের পর ইয়াহিয়ার পতন ঘটে। ইয়াহিয়ার পতনের পর জুলফিকার আলী ভুট্টো রাষ্ট্রপতি হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে তার সাথে সাক্ষাতের জন্য নিয়ে আসে। ৯৬ হাজার পাকিস্তানি সৈন্য ভারতীয় সেনাদের হাতে বন্দী। ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের মুক্তির দাবিতে বিশ্ব জনমত সৃষ্টি করেন। অন্যান্য মিত্র দেশও এই দাবিতে সোচ্চার হন। বিশ্ব জনমত সৃষ্টির কারণে পাকিস্তানি শাসক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়।

৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মুক্তি পান। ১০ জানুয়ারি তিনি ফিরে আসেন তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন বাংলাদেশে। প্রথমেই যান তাঁর বাংলার মানুষের কাছে রেসকোর্স ময়দানে। আমার মা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী ছিলেন। বিজয়ের পর অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় ছিলেন তাঁর প্রিয়জনকে কাছে পাওয়ার। সেই ক্ষণটি অবশেষে এলো। সেই মুহূর্তের বর্ণনা আমি ভবিষ্যতে কোনো একদিন লিখবো। এই স্বাধীনতা অর্জনে কত হারানো বেদনা, অশ্রু হারিয়ে ফিরে পাওয়ার আনন্দ, ঘরে ঘরে কান্না ও হাসির বেদনাভরা অনুভূতি কখনও ভাষায় বর্ণনা করে বোঝানো সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের জীবনে যে আরও কান্না লেখা আছে, তা সেদিন বুঝতে পারিনি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বাধীন বাংলাদেশে মাত্র সাড়ে তিন বছর সময় পেয়েছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়তে যেন কেউ সময় দিতে চায় না। ছাত্রলীগ ভেঙে জাসদ হলো, মিত্র রাজনৈতিক দলগুলো সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠলো। সকল দায়িত্ব কি একটা মানুষের ওপর ছিল? কোনো কোনো মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বন্ধুপ্রতীম দল ডাকসুতে আজীবন সদস্যপদ দিয়ে আবার তা ছিঁড়ে ফেলে ক্ষোভ প্রকাশ করলো। পরিকল্পিতভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার শুরু করে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরাবার ষড়যন্ত্র শুরু করলো।

নিজেদের দলীয় পত্রিকা হিসেবে পরিচিত পত্রিকাও সমালোচনা শুরু করলো। এ রকম হাজার ঘটনা ঘটতে দেখেছি। নগদ অর্থে ক্রয় করা খাদ্য সময়মতো দেশে আসতে না দিয়ে চক্রান্ত করে কৃত্রিম দুর্ভিক্ষ ঘটানো হলো। যদিও তখন অনেক দেশেই দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিল। কারণ বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা ছিল। তাই সতর্ক থাকার জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব পূর্বে খাদ্য ক্রয় করেছিলেন। তা নিয়েও ষড়যন্ত্র করা হলো, মানুষের জীবন নিয়ে খেলা হলো। তখনকার খাদ্য সচিব পরবর্তীতে খুনি জিয়া সরকারের মন্ত্রিত্ব পেয়েছিল তার পুরস্কার হিসেবে।

এই নানা প্রকার ষড়যন্ত্র সত্ত্বেও বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হতে শুরু করলো, খাদ্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলো, প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশে উন্নীত হলো, দেশের মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করলো। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার শক্তিশালী করে গণতান্ত্রিক অধিকার মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে শুরু করলো। জাতীয় ঐক্য গড়ে উঠলো। এই অবস্থায় মানুষ যখন সুন্দর জীবনের স্বপ্ন দেখতে আগ্রহী হলো, তখনই চরম আঘাত এলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করল। আমি ও রেহানা হারালাম পিতা, মাতা, ভাই, ভ্রাতৃবধূসহ পুরো পরিবারকে।

আমরা আপনজন হারিয়েছি; কিন্তু বাংলাদেশ কি হারালো তা কি কেউ উপলব্ধি করতে পেরেছে? কিন্তু কেন এ অস্থিরতা সৃষ্টি হলো? কে ছিল এসবের পিছনে? কী ছিল তাদের উদ্দেশ্য?

যারা তখন মুক্তিযুদ্ধ করেছে তারা কি এটা উপলব্ধি করতে পারে নাই যে বাংলাদেশ নামে এই ভূখণ্ড ছিল তখন সম্পূর্ণ যুদ্ধবিধ্বস্ত একটা দেশ। যেখানে পরাজিত শক্তির দালালরা সক্রিয় ছিল। ২৪ বছর পাকিস্তানি শাসক দ্বারা শোষিত, বঞ্চিত, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, অগ্নিসংযোগে ধ্বংসপ্রাপ্ত একটা দেশে যেখানে পাকিস্তানি প্রেমিকরা তৎপর ছিল, সেখানে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অর্জিত বিজয়কে সুসংহত করা, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গড়ে তোলা, লাখো শহিদ পরিবার, নির্যাতিত মা-বোন, আহত পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা ও সাধারণ জনগণ তাদের চিকিৎসা, গৃহ নির্মাণ, পুনর্বাসন কত বড় প্রয়োজন? সে বিষয়ে চিন্তা না করে কেউ কেউ সমাজতন্ত্র ও বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের কথা বলল। আলবদর-রাজাকারের দল ভোল পাল্টে আন্ডারগ্রাউন্ড কমিউনিস্ট পার্টি বা সর্বহারা দলে যোগ দিয়ে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলো। পাটের গুদামে আগুন, থানা লুটপাট, আওয়ামী লীগের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একের পর এক হত্যা করা, নানা ধরনের কর্মকাণ্ডে যুক্ত হয়ে একটা অস্থিরতা সৃষ্টি করতে শুরু করল। ন’টা মাস পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর নির্যাতনের ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই এই অস্থিরতা সৃষ্টি কেন করা হয়েছিল সেদিন?

একদল নেমে গেল তাদের কলমের জোর দেখাতে। তাদের সেসব লেখনী বাংলাদেশের সদ্য পাওয়া স্বাধীনতাকে যে বিপন্ন করতে পারে সে চিন্তা যেন তাদের ছিলই না। সমালোচনা করতে পারলেই যে বিরাট কিছু অর্জন করে ফেলবেন, এমনই এক ধরনের ভাবনায় বিভোর ছিলেন তারা। এই পাকিস্তানি হানাদারদের হাতে যে বুদ্ধিজীবী হত্যা হয়েছিল সে কথাও যেন তারা ভুলে গেলেন। তাদের লেখনী যে পরাজিত শক্তিকেই মদদ দেবে সে কথা কি তারা উপলব্ধি করেছিলেন? একটা বৈরী পরিবেশ যে শুধু বাইরে হয়েছে তা নয়। আওয়ামী লীগের সরকারের অর্থমন্ত্রী বাজেট ঘোষণা দেবার পর নিজেই বললেন যে ‘এ বাজেট বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়’, তাহলে কি বার্তা তিনি জনগণের কাছে সেদিন পৌঁছালেন?

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নির্মম হত্যাকাণ্ড ও চক্রান্তের সাথে যারা জড়িত ছিল সেই খুনিরাই বিবিসি’তে ইন্টারভিউ দিয়ে বলেছে যে, অনেক কিছু করেও তারা শেখ মুজিবকে বাংলাদেশের মানুষের কাছ থেকে দূরে সরাতে পারে নাই। তিনি এতই জনপ্রিয় ছিলেন, যে কারণে তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। কর্নেল ফারুক ও কর্নেল রশিদ এ কথা যখন বলেছে তখনই তো সব স্পষ্ট হয়েছে। তারাই বলেছে, জিয়াউর রহমান তাদের সাথে ছিল। তাই মোশতাক নিজেকে অবৈধভাবে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়েই জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগ দেয়। খুনি মোশতাকের কত আস্থাভাজন ছিলো জিয়াউর রহমান, তা-ই প্রমাণ করে।

বঙ্গবন্ধুর খুনিদের মূল শক্তি ছিল জিয়াউর রহমান। ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার করা হয়। কিছু বেঈমান ছাড়া অধিকাংশ নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হন। এমনকি মোশতাক ‘ডেমোক্রেটিক লীগ’ নামে একটি দলও গঠন করে আওয়ামী লীগ ভাঙার চেষ্টা চালায়। জাতীয় চার নেতাকে জেলে হত্যা করেছিল জিয়া ও মোশতাক মিলে। মোশতাকের পতন হয়। একের পর এক আর্মিতে ক্যু হতে থাকে, ১৮-১৯ বার ক্যু হয়। সেনাবাহিনীর হাজার হাজার অফিসার ও সেনাদের হত্যা করা হয়। বিনা বিচারে ফাঁসি দেওয়া, হত্যা করা; এটা জিয়াউর রহমানের যেন একটা নেশা ছিল। মোশতাকের পতনের পর সাবেক প্রধান বিচারপতি সায়েম রাষ্ট্রপতি হন। জিয়াউর রহমান অস্ত্রের জোরে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে সংবিধান ও সেনা আইন লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করে। শুরু হয় বাংলাদেশে রাজনীতিতে দল ভাঙাগড়ার খেলা।

আবার আওয়ামী লীগের ওপর হামলা হয়, মিজান চৌধুরীর নেতৃত্বে আর একটা আওয়ামী লীগ গঠিত হয়। ১৯৭৯ সালে যখন রাজনীতি উন্মুক্ত করা হয় তখনই এ খেলা শুরু। যদিও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর থেকে দেশে রাতে কার্ফু জারি করা হতো এবং তা বছরের পর বছর চলতে থাকে। প্রহসনের হ্যাঁ-না ভোটের অভিনব এক খেলা বাঙালি জাতি প্রত্যক্ষ করে এবং পরবর্তীতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের জন্য সেনা আইন লঙ্ঘন করে সেনাপ্রধান ও রাষ্ট্রপতি জিয়া নিজেই সেই নির্বাচনে প্রার্থী হয়। এরপর জিয়াউর রহমান নিজের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য তথাকথিত রাজনৈতিক দল গঠন ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজন করে। ভোটারবিহীন ও পূর্ব নির্ধারিত ফলাফল ঘোষণার এ নির্বাচনে অবৈধ ক্ষমতা দখলকারী খুনি জিয়াউর রহমানের ডাকে অনেকেই সাড়া দিয়ে হাত মিলায়। জিয়া তার অবৈধভাবে দখল করা ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য সংসদে দুই-তৃতীয়াংশ সিট দখল করে। ১৯৮১ সালে সেনা অভ্যুত্থানের দ্বারা জিয়া নিহত হয়। ভাইস প্রেসিডেন্ট সাত্তার আর এক প্রহসনমূলক নির্বাচনে জয়ী হয়।

এ সময় ১৯৮১ আওয়ামী লীগের ওপর আবারও আঘাত আসে। ১৯৮১ সালে আমাকে সভাপতি করে আনা হয়। প্রাণপণে চেষ্টা করি দ্বিখণ্ডিত আওয়ামী লীগকে ঐক্যবদ্ধ রাখতে। কিন্তু দুই গ্রুপের টানাটানিতে পড়ে যাই। যেহেতু ছাত্র রাজনীতি করেই এসেছি, তাই কোনো গ্রুপে যেতে রাজি হইনি আমি। কিন্তু শেষ রক্ষা করতে পারলাম না। দলের সাধারণ সম্পাদক নতুন দল গঠন করলেন ‘বাকশাল’ নাম দিয়ে। আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগসহ সকল সহযোগী সংগঠনে ফাটল ধরল।

আমি যখন প্রবাসে ছিলাম তখন যারা আমার সঙ্গে যোগাযোগ রাখত, আমি তাদের দলের সাধারণ সম্পাদক রাজ্জাক সাহেবের সাথে কাজ করতে বলতাম। তাছাড়া দল চালাতে আমি নিয়মিত আর্থিক সহায়তার ব্যবস্থাও করে দিয়েছিলাম। কিন্তু আমার দুঃখ হলো, দল ভেঙে চলে গিয়ে দলের ক্ষতি কেন করতে চাইল?

এর মধ্যে মার্শাল ল’ জারি করে জেনারেল এরশাদ ক্ষমতা দখল করলো। আওয়ামী লীগের ওপর আবারও আঘাত আসে। আবারও দল ভাঙার ষড়যন্ত্র হয়। কিন্তু একটা বিষয় যদি ভেবে দেখা যায়, তা হলো আওয়ামী লীগ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এ আঘাত দেশের রাজনীতির ওপরও আসে। এ বাস্তবতা একটু বিশ্লেষণ করলেই বুঝতে পারা যায়। আওয়ামী লীগ যেন ক্ষমতায় আসতে না পারে এ প্রচেষ্টা সব সময়ই ছিল। অথচ জনগণের সমর্থন আওয়ামী লীগের প্রতি সবসময় ছিল। যখন আওয়ামী লীগের মতো একটি রাজনৈতিক দলের ভিতরে কোনো সমস্যা দেখা দেয়, তখন দেশের সাধারণ মানুষের মাঝেও তার প্রভাব পড়ে। এটা সকলের বোঝা উচিত। শত প্রতিকূল অবস্থায় ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ টিকে আছে। ১৯৯১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশের জনগণ চেয়েছিল আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক; কিন্তু তখনকার সরকারি, সামরিক বা অসামরিক এবং বিভিন্ন সংস্থা কখনও চায়নি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসুক।

আমরা জোট বেঁধে নির্বাচন করে সিট ভাগ করে দেয়ার পরও দেখলাম আমাদের শরিক দলের অনেকে প্রার্থী বিশেষ করে রাজ্জাক সাহেব দুই সিট নিজে নিল নৌকা মার্কায় নির্বাচন করার জন্য, অন্যান্য জায়গায় বাকশালের প্রার্থীরা কাস্তে মার্কা নিয়ে দাঁড়িয়ে গেল। উদ্দেশ্য কী ছিল? সেই নির্বাচনে কোনো দল একক সরকার গঠন করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পায় নাই। প্রেসিডেন্ট সাহাবুদ্দিন সাহেব আমাকে ডেকে নিয়ে বললেন, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও জামাত এক হয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ হয় এবং আমরা সরকার গঠন করতে পারি। আমি রাজি হইনি। এরপর বিএনপি ও জামাত জোট বেঁধে সরকার গঠন করে। শুধু ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য আমার রাজনীতি নয়, দেশ ও মানুষের জন্য কাজ করাই আমার রাজনীতি। যেনতেনভাবে প্রধানমন্ত্রী হতে চাইনি, কাজ করার সুযোগ থাকে না। মানুষের জন্য কাজ করতে চাই। তাই আমি বিরোধী দলেই থাকলাম।

১৯৯১ সালে আমাদের অর্থনৈতিক নীতিমালায় কিছু পরিবর্তন আনলাম, সে নীতিমালার বিরোধিতা করে ড. কামাল হোসেন দল থেকে বের হয়ে নতুন দল গঠন করল। তবে তিনি তেমন কোনো নেতাকর্মীকে নিতে পারে নাই। অন্তত এরপর থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে গড়ে উঠেছে। ১৯৯৩ সালে রাজ্জাক সাহেব বাকশাল ত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেয়। ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একটা ভোটারবিহীন নির্বাচন করে ২ শতাংশ ভোটও পায় নাই। জনগণ সে নির্বাচন মেনে নিতে পারে নাই। তুমুল গণআন্দোলনের মুখে খালেদা জিয়া ৩০ মার্চ ১৯৯৬ তারিখে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ১২ জুনের নির্বাচনে জয়ী হয়। সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেলেও একটা আসনের প্রয়োজন হয় সরকার গঠনের ক্ষেত্রে, সেক্ষেত্রে পাথরঘাটা থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার হিরু আমাকে সমর্থন দিয়ে চিঠি দেয়। জাসদের রব সমর্থন দেয়। জাতীয় পার্টির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু সমর্থন দেয় এবং জেলখানা থেকে এরশাদের সমর্থনও তিনি নিয়ে আসেন। সকল দলকে নিয়েই সরকার গঠন করি। তবে প্রতিবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করেছিল, মানুষ তা কাটিয়ে উঠেছে। এখন আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা-বিশ্বাস অর্জন করেছে। বিশেষ করে মহিলা ও যুবকদের ভোট বৃদ্ধি পেয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকেই দেশের ক্রমাগত উন্নতি হচ্ছে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল মেয়াদে ক্ষমতায় থেকে জনগণের কল্যাণে ব্যাপক কাজ করার ফলে আওয়ামী লীগ সম্পর্কে মানুষের মনে আস্থার সৃষ্টি হয়। “সরকার জনগণের সেবক”; এ ঘোষণা দিয়ে আমরা আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করেছি। জনগণ সুফল পেতে শুরু করে।

২০০১ সালের নির্বাচনে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের চক্রান্তে নির্বাচনে ভোট বেশি পেয়েও সিট কম হওয়ায় আমরা ক্ষমতায় যেতে পারি নাই। সেসময় নির্বাচনের শুরু থেকেই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন শুরু হয়। নির্বাচন প্রচারণার কাজেও বাধা সৃষ্টি করা হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরপরই এ নির্যাতন শুরু হয়েছিল। ১ অক্টোবর ২০০১ সালের নির্বাচনে জামাত-বিএনপি জোট ক্ষমতায় আসে। এর পরপরই নিপীড়ন-নির্যাতন শুরু হয়।

অপারেশন ক্লিন হার্ট-এর মাধ্যমে সেনাবাহিনী নামিয়ে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বহু নেতা-কর্মীকে অকাতরে নির্যাতন ও হত্যা করা হয়। বিএনপি ও জামাত জোট ক্ষমতায় আসা মাত্র সমগ্র দেশ যেন সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের অভয়ারণ্য হয়ে গেল। সংসদের দু’জন সংসদ সদস্য এসএম কিবরিয়া এমপি ও আহসানউল্লাহ মাস্টার এমপিকে নির্মমভাবে হত্যা করল।

২০০৪ সালে ২১ আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় নিহত হলো আইভি রহমানসহ ২২ জন নেতাকর্মী। এ ঘটনায় অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করে এবং হাজার খানেক নেতাকর্মী আহত হয়। একের পর এক বোমা ও গ্রেনেড হামলা চলতে থাকল সারাদেশে। ঢাকার বাইরে জেলা-উপজেলায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের ঘর-বাড়ি ছাড়া করা হয়। ১৯৭১ সালের মতোই নারী ধর্ষণ, সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণ সমানভাবে চলতে থাকে। তার ওপর বিএনপি-জামাত জোট সরকারের সীমাহীন দুর্নীতি ও হাওয়া ভবন সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যাপক অরাজকতার ফলে দেশে এমার্জেন্সি ঘোষণা করা হয়। ক্ষমতায় ছিল বিএনপি ও জামাত জোট সরকার আর খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী। তাদের প্রথমে কিছু বলা হলো না বিরোধী দলে থাকা সত্ত্বেও সর্বপ্রথম আঘাত এলো আওয়ামী লীগের ওপর। আমাকে গ্রেফতার করে নির্জন সাবজেলে বন্দী করে রাখা হলো এবং সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ওপরে নিপীড়ন-নির্যাতন নেমে এলো।

সেই পাকিস্তান আমল থেকেই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম পর্যন্ত পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু ছিল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। স্বাধীন বাংলাদেশেও ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে শুরু করে বারবার যত সরকার এসেছে, সকলেরই লক্ষ্য ছিল আওয়ামী লীগ দলটাকে ধ্বংস করা, তাই বারবার নির্যাতন নেমে এসেছে। তবে জনগণের কল্যাণের মহান আদর্শ নিয়ে যেদল সৃষ্টি হয় সে দলকে এতো সহজে ধ্বংস করা যায় না। ৭১ বছরের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বারবার তাই প্রমাণ করেছে।

২০০৭ সালের জুলাই মাসে আমাকে গ্রেফতার করার মাত্র ১৫ দিনের মধ্যে ২৫ লক্ষ মানুষের সাক্ষর সংগ্রহ করে আমার মুক্তি দাবিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে স্মারকলিপি প্রেরণ করে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য সহযোগী সংগঠন। এটাই প্রমাণ করেছে, আওয়ামী লীগ কতো বড় শক্তিশালী সংগঠন, যার শিকড় বাংলার মাটিতে অনেক গভীরে প্রোথিত।

এমন কী এর পূর্বে ২০০৭ সালের মে মাসে আমার দেশে ফেরার পথে যখন বাধা দেয়া হয়, তখনও আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রচণ্ড সাহসী ভূমিকা রেখেছে। দেশে ও প্রবাসে যেখানেই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা আছে দেশের ক্রান্তিলগ্নে, তারা সর্বদা বাংলাদেশের জনগণের পাশে থেকেছেন। দেশের মানুষের কল্যাণে কাজ করে গেছেন, এখনও করে যাচ্ছেন।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ আওয়ামী লীগের পক্ষে ভোট দেয়। সেই নির্বাচনে ৮৪ শতাংশ ভোট পড়ে। বিএনপি মাত্র ২৯টা সিট পায়। আওয়ামী লীগ দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়লাভ করে। মহাজোট হিসেবে বাকি সিটগুলো পেয়ে জোটের সকল দলকে নিয়ে আমরা সরকার গঠন করি। শুরু হয় গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা। জনগণের সমর্থন নিয়ে একটানা পরপর দু’বার ক্ষমতায় থেকে এখন আমরা টানা তৃতীয়বার সরকার গঠন করেছি। আওয়ামী লীগ জনগণের কল্যাণের কথা চিন্তা করে। ভবিষ্যতে উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলে আমরা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নপূরণ করবো; এটাই আমাদের অঙ্গীকার। বাংলাদেশের জনগণ যেন তাদের মৌলিক চাহিদা অর্থাৎ অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও উন্নত জীবন পায় সেটাই আওয়ামী লীগের একমাত্র লক্ষ্য।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটানা ১১ বছর দেশ পরিচালনা করে বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত রাষ্ট্র থেকে উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত করেছে। দেশে আজ দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে, মানুষের মনে আস্থা-বিশ্বাস ফিরে এসেছে, ভবিষ্যতে সুন্দর উন্নত জীবনের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশের জনগণ। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারে পারদর্শিতা অর্জন করছে। সকলের হাতে মোবাইল ফোন, যার মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় সেবা পাচ্ছে। নিরক্ষরতা দূর হয়েছে।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে থাকা অবস্থায় ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রূপরেখা প্রণয়ন করে। দেশের অর্থনৈতিক নীতিমালাও প্রতি ১০ বছর পরপর আমরা সময়োপযোগী করে প্রস্তুত করে থাকি। সরকারি কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সাংগঠনিক কাঠামোর মধ্যে সংগঠনের বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকদের কর্মসম্পাদনের জন্য উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্যদের নেতৃত্বে বিষয়ভিত্তিক উপকমিটি গঠন করে যেমন; অর্থ, স্বাস্থ্য, শিক্ষা, কৃষি, শিল্প, পররাষ্ট্রসহ বিভিন্ন বিষয়ে নিয়মিত সভা-সেমিনার আয়োজন করে। প্রতিটি কাউন্সিলের সময় আওয়ামী লীগের সারাদেশের কাউন্সিলদের মতামত নিয়ে আমরা দলের ঘোষণাপত্র অর্থাৎ নীতিমালা যুগোপযোগী করে থাকি। আজ যথাসময়ে আওয়ামী লীগের নিয়মিত কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তৃণমূল পর্যায় থেকে অর্থাৎ ইউনিয়ন, ওয়ার্ড, উপজেলা, জেলা, মহানগর, পৌরসভা, শহর, থানাসহ বিভিন্ন কমিটিগুলো নিয়মিতভাবে যাতে গঠন করা হয়, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নেতৃত্বের প্রতিটি পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও সংগঠনের অভ্যন্তরেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। সারাদেশের ৮টি বিভাগের জন্য দলের আটজন সাংগঠনিক সম্পাদক দায়িত্ব পালন করে।

এছাড়াও দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য, যুগ্ম সম্পাদক, কার্যকরি সংসদের সদস্য সমন্বয়ে ৮টি কমিটি গঠন করে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যন্ত সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড জোরদার করা হয়েছে। প্রতিটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলের প্রার্থী নির্ধারণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মতামতের ভিত্তিতে এবং সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে প্রার্থী চূড়ান্ত করে। যা দলের একটি নিয়মিত সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও অনুরূপ নির্বাচনী বোর্ড গঠন করা হয় এবং সেই বোর্ড থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও উপনির্বাচনের প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়।

দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে যতগুলো রাজনৈতিক দল আছে, তার মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি প্রবীণতম রাজনৈতিক দল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে রয়েছে নবীন ও প্রবীণের সমন্বয়ে গঠিত কেন্দ্রীয় কমিটি। দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব সৃষ্টির জন্য কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রবীণদের পাশাপাশি নবীনদের সুযোগ দেয়া হয়েছে, যাতে দলের ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব গড়ে ওঠে। দলের প্রতিটি পর্যায়ে এই নীতিমালা অনুসরণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জন করেছে মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে। জাতির পিতার নেতৃত্বে এই সংগঠন বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছে এবং বাংলার জনগণকে সংগঠিত করে মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জন করেছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে আওয়ামী লীগ বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছে। আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে দেশের উন্নতি হয়, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়, সাধারণ মানুষের জীবন-জীবিকার সুযোগ সৃষ্টি হয়।

তারুণ্যের শক্তি; বাংলাদেশের সমৃদ্ধি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম যাতে উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশে একটি শোষণহীন সমাজে বাস করতে পারে, সে কথা মনে রেখেই আওয়ামী লীগ মানুষের কল্যাণে রাজনীতি করে যাচ্ছে।

আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন করতে ২০২০ থেকে ২০২১ সাল আমরা ‘মুজিব বর্ষ’ ঘোষণা করেছি। বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ‘মুজিব বর্ষ’ উদযাপন করছে। কিন্তু জনগণের কল্যাণের কথা বিবেচনায় এনে জনস্বার্থে আমরা জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের জন্য ২০২০ সালে গৃহীত সকল কর্মসূচি স্থগিত করেছি; যেন জনসমাগ না হতে পারে। ডিজিটাল পদ্ধতিতে জন্মশতবার্ষিকীর উদ্বোধন অনুষ্ঠান করেছি। বিভিন্ন অনুষ্ঠান এ পদ্ধতিতেই করে যাচ্ছি। কারণ করোনাভাইরাস সমগ্র বিশ্বকে স্থবির করে দিয়েছে।

আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনায় জাতিসংঘ ঘোষিত ২০৩০ (এসডিজি) টেকসই উন্নয়ন, ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ, ২০৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শতবার্ষিকী অন্তর্ভুক্ত করেছি।

আগামী প্রজন্মের জন্য উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে ২১০০ সালের বাংলাদেশ যাতে জলবায়ু পরিবর্তনে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, নদীমাতৃক বাংলাদেশ যেন স্থায়ীভাবে সমৃদ্ধ হয়, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশকে উন্নত করতে ‘ব-দ্বীপ’ বা ডেল্টা পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নিয়েছি।

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের জনগণের উন্নত জীবন নিশ্চিত করতে অঙ্গীকারবদ্ধ। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৭১ বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আওয়ামী লীগের প্রয়াত সকল নেতা ও কর্মীদের প্রতি আমার শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। আওয়ামী লীগের সকল স্তরের নেতা-কর্মীদের আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন জ্ঞাপন করছি। তাদের পরিবারের সকলের জন্য আমার দোয়া ও আশীর্বাদ জানাচ্ছি।

জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক : প্রধানমন্ত্রী, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ও সভাপতি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

পুনর্মুদ্রণ: উত্তরণনিউজ ডট নেট

আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর