Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নচারী শেখ কামাল ও তার স্বপ্নের বাংলাদেশ


৫ আগস্ট ২০২০ ১৩:৪৬

মানিক লাল ঘোষ

বাঙালি জাতির স্থপতি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান হওয়া সত্ত্বেও যার মধ্যে ছিল না কোনো অহমিকাবোধ। মাত্র ২৬ বছরের জীবন ছিল তার। অবাধ বিচরণ ছিল প্রতিভার দশ দিগন্তে। পড়ালেখার পাশাপাশি সংগীত চর্চা, অভিনয়, বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, খেলাধুলাসহ কোন ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন না তিনি! এমন প্রশ্ন বারবার ঘুরপাক খায় সেই যুবকের কর্মময় জীবনের উপর আলোচনা এবং জাতীয় পর্যায়ের রাজনৈতিক লেখনীতে। আলোচনায় উঠে আসে তারুণ্যের অহংকার সেই যুবকের বিরুদ্ধে কুচক্রী মহলের নানা ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা অপপ্রচারের কল্পকাহিনী। বহুমুখী সেই যুবকের নাম শেখ কামাল।

বিজ্ঞাপন

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের জেষ্ঠ্যপুত্র শেখ কামাল ১৯৪৯ সালের ৫ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। পাঁচ ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয় ছিলেন তিনি। ঢাকা শাহীন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, ঢাকা কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞান বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রী অর্জন করেন।

ছাত্রলীগের একনিষ্ঠ কর্মী এবং সংগঠক হিসেবে ছাত্রদের কাছে প্রিয়পাত্র ছিলেন শেখ কামাল। ৬ দফা ও ১১ দফা আন্দোলন এবং ৬৯’র গণঅভ্যুত্থানে শেখ কামালের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাত্রসমাজকে উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করতো। বাংলার ছাত্রসমাজ সেদিন শেখ কামালের মধ্যে খুঁজে পেতো বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি।

মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক হিসেবে ছাত্রসমাজকে সুসংগঠিত করে দেশমাতার মুক্তির যুদ্ধে হাতিয়ার তুলে নিয়েছিলেন তিনি। দায়িত্বে ছিলেন মুক্তিবাহিনীর প্রধান সেনাপতি জেনারেল ওসমানীর এডিসি হিসেবে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলার ফুটবল দলকে সুসংগঠিত করেন শেখ কামাল। তিনি স্বপ্ন দেখতেন দেশ স্বাধীন হলে পাল্টে যাবে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের চিত্র এবং ক্রীড়াক্ষেত্রে অনন্য উচ্চতায় বহির্বিশ্বে আসীন হবে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

স্বাধীনতা অর্জনের পর ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়া দেশ পুনর্গঠনে তার অসামান্য মেধাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করেন শেখ কামাল। মুক্তিযুদ্ধের পর সেনাবাহিনীর দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নেন, ফিরে যান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, মন দেন পাঠ্যবইয়ে এবং সম্পন্ন করেন সমাজবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রী।

স্বাধীন বাংলাদেশের ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে সেই সময়কার এক জনপ্রিয় নাম শেখ কামাল। অধ্যয়নের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডলে তার পদচারণ ছিল মুখর। তিনি ছায়ানট থেকে নেন সেতার শেখার তালিম। বন্ধুদের সহযোগিতায় গড়ে তোলেন নাট্যদল (ঢাকা থিয়েটার) এবং আধুনিক সংগীত সংগঠন স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী।

দেশের জনপ্রিয় ক্রীড়া সংগঠন আবাহনী ক্রীড়াচক্র প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ক্রীড়াঙ্গনে স্মরণীয় হয়ে আছেন শেখ কামাল। ১৯৭২ সালে আবাহনী সমাজকল্যাণ সংস্থা প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। সেই সংস্থার নামে সুসংগঠিত করেন ফুটবল দল ইকবাল স্পোর্টিং আর ক্রিকেট ও হকির দল ইস্পাহানী স্পোর্টিং। সেসব দলের সমন্বয়ে নবউদ্যমে যাত্রা শুরু হয় আবাহনী ক্রীড়াচক্রের।

শেখ কামালের সহধর্মিণী সুলতানা খুকু ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে যার পরিচিতি ছিল প্রতিভাবান অ্যাথলেট হিসেবে। শেখ কামালের স্বপ্ন ছিলো ফুটবল, ক্রিকেট, হকি খেলার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরার। স্বপ্ন বাস্তবায়নের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল তার। ফুটবলের উন্নতির জন্য ১৯৭৩ সালে আবাহনীতে নিয়ে এসেছিলেন বিল হার্টকে। শুধু ক্রীড়াঙ্গন নয়, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির মাধ্যমে বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে সমৃদ্ধ করার স্বপ্ন দেখতেন তিনি।

শেখ কামালের স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় স্বাধীনতাবিরোধী ও একটি কুচক্রীমহল। নানামুখী ষড়যন্ত্র ও অপপ্রচারের মাধ্যমে শেখ কামালের জনপ্রিয়তার লাগাম টেনে ধরা ও তার উদ্যমতাকে দমিয়ে রাখার ষড়যন্ত্র করে ঐ কুচক্রীমহলটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট মা ও বাবাসহ পরিবারের ১৮ জন সদস্যদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকদের নির্মম বুলেটে মৃত্যুর শিকার হন তিনি। কীর্তিমানের মৃত্যু নেই। যারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিলেন জাতির সূর্যসন্তান শেখ কামালের বিরুদ্ধে, রটিয়েছিলেন নানামুখী কুৎসা, তারা আজ ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত।

বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের আজকের সাফল্য শেখ কামালের স্বপ্নের প্রতিফলন। ক্রীড়াক্ষেত্রে বহির্বিশ্বে এই দেশকে তুলে ধরার যে স্বপ্ন দেখতেন শেখ কামাল, সেই স্বপ্নের সফল বাস্তবায়নে কাজ করছেন তার বড় বোন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বপ্নের মৃত্যু নেই। স্বপ্নচারী শেখ কামাল বেঁচে থাকুক তরুণ সমাজের অহংকার হয়ে।

লেখক: সাংবাদিক, কলামিস্ট ও সাবেক ছাত্রনেতা

সারাবাংলা/এসবিডিই

আবাহনী ক্রীড়াচক্র জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শেখ কামাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর