শুভ জন্মাষ্টমী; শান্তিময় বিশ্বের প্রত্যাশা
১১ আগস্ট ২০২০ ১৩:৪৯
জন্মাষ্টমী পরমাবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ আবির্ভাব তিথি। বিশ্বব্যাপী সনাতন ধর্মে বিশ্বাসীদের কাছে এই তিথির গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম।
প্রভুত্ববাদ আর অন্যের ওপর খবরদারি করার অপচেষ্টায় দিন দিন কলুষিত হচ্ছে মানব সমাজ। বিরূপ পরিবেশে কলুষিত হচ্ছে মন, বিকৃত হচ্ছে মানসিকতা। জগতের কলুষিত বন্ধন যখন জীবসত্ত্বাকে বিপথগামী করে তখন পৃথিবীতে ছেয়ে যায় অনাচার আর পাপকর্মে। ন্যায় আর সত্য তখন ঢাকা পড়ে যায় পাপের ছায়ায়। সাধু-সন্ন্যাসীদের ঐশ্বরিক শক্তিও তখন হার মেনে যায় অপশক্তির কূটচালে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন সময় এসেছে অনেকবার।
আর যুগে যুগে এমন প্রতিকূল সময়ে মানবসভ্যতা রক্ষায় স্রষ্টা কর্তৃক প্রেরিত শক্তি বিভিন্ন রূপে আবির্ভূত হয়েছে পৃথিবীতে। ন্যায় ও সত্য প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ধ্বংস করেছে অপশক্তিকে। প্রচার করেছে শান্তি, সাম্য ও সুন্দরের জয়গান।
ন্যায়ের পক্ষে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্ম প্রতিষ্ঠা করে মানুষকে শিক্ষা দেয়ার জন্য কর্ম করেছেন অনেক। দিয়ে গেছেন ভবিষ্যতের সত্য, সুন্দর ও আলোর পথে চলার নির্দেশনা।
সনাতন ধর্মে এ আবির্ভাব প্রক্রিয়া নিয়ে রয়েছে নানান মত। শাস্ত্রমতে, যুগে যুগে পথভ্রষ্ট ও বিপথগামী মানুষকে সত্য ও আলোর পথে ফিরিয়ে আনার, অপশক্তিকে ধ্বংস এবং সজ্জনকে রক্ষা করে সত্য ও শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভগবান বিভিন্ন রূপে এই পৃথিবীতে আবির্ভূত হন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এই আবির্ভাবের জন্যই তিনি মহাবতার বলে পরিচিত হন। সনাতন ধর্মশাস্ত্রে বর্ণিত চারটি যুগের মধ্যে সত্য ও ত্রেতা যুগের মতো দ্বাপর যুগেও ভগবান পৃথিবীতে অবতরণ করেন।
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ লোকশিক্ষার জন্য অর্জুনের মাধ্যমে মূলত মানব সমাজকে শিক্ষা দিয়েছেন। জীব হিসেবে আমরা অণুচেতনার অধিকারী হলেও কলুষিত পরিবেশে নিজেদেরকে হারিয়ে ফেলেছি। ব্যক্তিগত চাওয়া পাওয়া, ভোগ বিলাস, জাগতিক মোহ, যশ আর খ্যাতি ও অর্থবিত্তের লোভে মায়াচ্ছন্ন হয়ে আমরা ভুলে যাই সৃষ্টিকর্তা সম্পর্কে আমাদের করণীয় বিষয়গুলো।
অন্যায়, অসত্য ও পাপের দ্বারা পরিচালিত ও প্ররোচিত হয়ে জ্ঞান শূন্যতার অহমিকায় ভুগছি আমরা। আত্মঅহংকারে ভুলে যাচ্ছি মহান সৃষ্টিকর্তাকে। পার্থিব সুখে ভুলে যাই মহা অবতার ভগবানের সঙ্গে আমাদের চিন্ময় সম্পর্ককে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের মাধ্যমে পবিত্র শ্রীমদভগবত গীতায় যে জ্ঞান দান করেছেন তাও যদি আমরা গ্রহণ করতে সক্ষম হতাম এবং যথাযথভাবে পালন করতাম তবে কোনো প্রকার অন্যায় ও অসত্য আমাদের ঈশ্বর চেতনাকে স্পর্শ করতে পারতো না।
মহাঅবতার পরম চেতনার অধিকারী ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মুখানিসৃতঃ গীতার জ্ঞান যুগ যুগ ধরে মানব জীবনের পথ চলায় আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে যাচ্ছে। এই জ্ঞানের আলোকিত জগতে নেই কোনো শঠতা, অন্যায় আর অসত্যের স্থান। ঠাঁই নেই কোন অপশক্তির। বরং প্রতিনিয়ত সব রকমের ভীরুতা দূর করে অন্যায়কে প্রতিহত করার শিক্ষা পবিত্র গীতা আমাদেরকে দান করেছে।
পাপাচারে আচ্ছন্ন পরিবেশের বহিঃশক্তি ও অন্তঃশত্রুর হাত থেকে জীবসত্ত্বাকে রক্ষা করে ভগবানের আনন্দ বিধানের জন্য করণীয় সম্পর্কে জ্ঞান ও উপদেশ গীতার মাধ্যমেই আমরা পেতে পারি।
বিশ্বের বিপথগামী মানুষকে আলোর পথে, সততার পথে ফিরিয়ে আনা ও বিশ্বব্যাপী বিরাজমান অশান্তি নিরসনে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে হিংসা-বিদ্বেষ ভুলে গিয়ে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হোক এই পৃথিবী। আলোকিত হোক মানব সমাজ। শ্রীমদভগবতগীতা হোক এই আলোর পথের পথ নির্দেশক।
মহা অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কংস বধের নামে যেভাবে আবির্ভূত হয়েছিলেন পৃথিবীতে, তেমনিভাবে অন্যায় আর অসত্যের বিরুদ্ধে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যুগে যুগে তার স্পর্শে পূর্ণতা পাক ভক্তের মন। পৃথিবী হোক শোষণমুক্ত, শান্তির সুবাতাস ছড়িয়ে পড়ুক পৃথিবীময়। শুধু অসত্যের বিরুদ্ধে লড়াই নয় ,করোনা সংকট, বন্যাসহ সকল প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাক মানবকুল- ভগবান শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মতিথিতে এমন প্রত্যাশা সকলের।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবং সহ তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ কেন্দ্রীয় কমিটি