বঙ্গবন্ধুর প্রথম নির্বাচন পরবর্তী ষড়যন্ত্র ও অন্যান্য
১৩ আগস্ট ২০২০ ২১:১৪
প্রথম পর্বের পর
নির্বাচনে জয়ের পর পরই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকায় ফিরে এলেন। রেল স্টেশনে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা বিশাল অভ্যর্থনা দিয়ে আওয়ামী লীগ অফিসে নিয়ে আসে বঙ্গবন্ধুকে। হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কিছুটা চিন্তায় ছিলেন। যদিও গোপালগঞ্জে সভাতে গিয়ে একান্তে বঙ্গবন্ধুকে বলে এসেছিলেন, ‘তোমার চিন্তার কোনো কারণ নেই। আমি যা দেখে আসলাম তাতে তোমার জয় সুনিশ্চিত’।
তাড়াতাড়ি করে নির্বাচিত সকল সদস্যদের নিয়ে যুক্তফ্রন্টের সভা ডাকা হলো। কারণ ততক্ষণে আওয়ামী লীগের কানে আসতে শুরে করেছে যে মুসলিম লীগের মোহাম্মদ আলী বগুড়া হক সাহেবের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন। নির্বাচনের আগে আগে যেসব মুসলিম লীগ বিতাড়িত কৃষক প্রজা পার্টিতে এসেছে তারাই এ ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। তারা যুক্তফ্রন্টে আসলেও মনে প্রাণে যে মুসলিম লীগই ছিল। একই দিন সকালে আওয়ামী লীগও তাদের নির্বাচিত সদস্যদের নিয়ে সভা ডাকলো নিজেদের পার্টি অফিসে। সভায় আওয়ামী লীগের নেতা খয়রাত হোসেন বলেন, জনাব এ.কে ফজলুল হক সাহেবকে নেতা নির্বাচন করার পূর্বে তার শহীদ সাহেব এবং মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে যুক্তি-পরামর্শ করা উচিৎ। কারণ তার দলে অনেক পাকা খেলোয়াড় আছে যে একবার উনি নেতা নির্বাচিত হয়ে গেলে তারা তাদের চক্রান্তের জাল বুনতে শুরু করে দেবে। এবং ডেপুটি লিডার আওয়ামী লীগ থেকে হতে হবে কারণ যুক্তফ্রন্টে আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠ দল।
খয়রাত সাহেবের বক্তব্যে বঙ্গবন্ধু এক মত হলেও শহীদ সাহেব বলেন, ‘এ.কে ফজলুল হক নিশ্চয়ই আমাদের সাথে সবকিছুর ব্যপারে পরামর্শ করবেন। বৃদ্ধ মানুষ এখন আর উনাকে বিরক্ত না করি এ বিষয়ে’। মাওলানা ভাসানী শহীদ সাহেবের সাথে একমত হলে বঙ্গবন্ধু আর তার প্রতিবাদ করেননি। সভার এক পর্যায়ে শহীদ সাহেব আড়ালে বঙ্গবন্ধুকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞেস করেন, ‘তুমি কি মন্ত্রিত্ব নিবা’? জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি মন্ত্রিত্ব চাই না। পার্টির অনেক কাজ পড়ে আছে। দলের আরও অনেক নেতা আছে। আপনি মাওলানা সাহেবকে নিয়ে যাদের যোগ্য মনে করেন তাদের মন্ত্রিত্ব দিয়ে দিন’।
বিকেলের যুক্তফ্রন্টের সভায় শহীদ সাহেব ও মাওলানা ভাসানীর উপস্থিতিতে তা ভালোভাবেই হয়ে যায়। পূর্ব বাংলার গভর্নর দ্রুত সরকার গঠন করতে বললে দ্রুত গঠনের আশ্বাস দিয়ে হক সাহেব বাড়ি ফিরে যান।
মন্ত্রীসভায় চক্রান্তের শুরু
সেদিন সন্ধ্যার পর শহীদ সাহেব এবং মাওলানা ভাসানী বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হক সাহেবের বাড়িতে যান। বঙ্গবন্ধুকে বাইরে বসিয়ে রেখে তারা ভেতরে অনেকক্ষণ আলোচনা করেন। বঙ্গবন্ধু বাইরে বসেই যেন ষড়যন্ত্রের গন্ধ পেতে থাকেন।
হক সাহেবের সঙ্গে মিটিং শেষ করেই মাওলানা ভাসানী ও শহীদ সাহেব আওয়ামী লীগ নেতা ইয়ার মোহাম্মদের বাড়িতে আসেন। সেখানেই মিটিং এর কথা খোলাসা হয়। হক সাহেব এই মূহূর্তে পূর্নাঙ্গ মন্ত্রীসভা করতে চাননি। মাত্র পাঁচজনকে নিয়ে শুরু করবেন তিনি। তার মধ্যে একজন নান্না মিয়া যার পরিচয় মূলত হক সাহেবের ভাগ্নে। আওয়ামী লীগের মাত্র একজন আতাউর রহমান আছেন সে মন্ত্রীসভায়। আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল নান্না মিয়াকে নিয়ে। শহীদ সাহেব হক সাহেবকে বলেছিলো নান্না মিয়া রাজনীতিতে পরিচিত না এতটা, সুতরাং তাকে এখনই নেওয়া কেন? পূর্নাঙ্গ মন্ত্রীসভাতেই নাহয় নেওয়া হোক। কিন্তু হক সাহেবের তাকেই চাই। আবার এদিকে হক সাহেব বলেছেন, মুজিবকে তিনি তার মন্ত্রীসভায় নেবেন না। এখানেও আওয়ামী লীগের আপত্তি ছিল। তাই আওয়ামী লীগ সে আলোচনায় বলে এসেছিলো আওয়ামী লীগের কেউই এভাবে ভেঙ্গে ভেঙ্গে মন্ত্রীসভায় যাবে না, যখন পূর্নাঙ্গ মন্ত্রীসভা হবে তখনই একসাথে যোগ দেবে। তবে সরকার গঠনে আওয়ামী লীগের সমর্থন রয়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেখানে বলেন, তাকে মন্ত্রীসভায় না নিলেও কোন সমস্যা নেই। তবুও যদি যুক্তফ্রন্ট টিকে যায় আর দ্রুত জনগণের কাজ শুরু করা যায় তবে যেন তাকে বাদ দেওয়াই হয়।
কিছুদিনের মধ্যেই মন্ত্রীসভার শপথ হয়ে যায়। সেদিন বাইরে অনেক লোক জড়ো হয়ে ‘কোঠা চলবে না’ এরকম যুক্তফ্রন্টের বিরুদ্ধে অনেক স্লোগান দিতে থাকে। কৃষক প্রজা পার্টি বলে বেড়ায় এটি ছিল মুজিবের কাজ। অথচ বঙ্গবন্ধু তার কিছুই জানতেন না। তিনি জেনেছেন পরদিন পত্রিকা পড়ে। আসলে লোকে যুক্তফ্রন্টকে অভিবাদন দিতেই সেদিন এসেছিলো। কিন্তু মন্ত্রিত্ব নিয়ে চক্রান্ত শুরু দেখে তারাই বিক্ষুব্ধ হয়ে স্লোগান দিতে থাকে।
বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রীসভায় যোগদান
শহীদ সাহেব শারীরিক অসুস্থতার কারণে করাচী ফিরে যান। নির্বাচনের পরিশ্রমে তার শরীর অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিলো। এদিকে হক সাহেবও পাকিস্তান যান সেসময়। করাচীতে মোহাম্মদ আলী বগুড়া ও মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক হয়। সেখানে তাকে জানানো হয় তাদের রাগ মূলত আওয়ামী লীগের উপর। তারা হক সাহেবকে পূর্ণ সমর্থন দিবেন শুধু আওয়ামী লীগকে দূরে সরিয়ে রাখতে হবে। পাকিস্তান থেকে ফেরার পথে হক সাহেব দু’দিন কলকাতায় থাকেন। সেখানের এক পত্রিকা হক সাহেবের বক্তৃতা বলে কিছু কথিত সংবাদ ছাপে আর তা নিয়ে মোহাম্মদ আলী বগুড়া নতুন ষড়যন্ত্র শুরু করেন যুক্তফ্রন্ট ভাঙ্গার।
সেসময় বঙ্গবন্ধু মাওলানা ভাসানীকে নিয়ে পার্টির কাজে মফস্বলে মফস্বলে সভায় বের হয়ে যান। সেবার তাদের সভা ছিল টাঙ্গাইলে। পার্টি অফিস সে কথা জানতো। সভার দিন রেডিওগ্রাম আসে বঙ্গবন্ধুকে জরুরি ভিত্তিতে ঢাকায় যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু এ ব্যাপারে মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে পরামর্শ করেন। মাওলানা বলেন দরকার হলে তাকে মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে হবে।
ঢাকায় ফিরে বঙ্গবন্ধু দেখেন ঢাকায় রেনু (বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা) বাচ্চাদের নিয়ে ঢাকায় চলে এসেছেন। তিনি এখন থেকে ঢাকায়ই থাকবেন। বাচ্চাদের পড়াশোনা এখানেই হবে এখন থেকে। বঙ্গবন্ধু সেখান থেকে তাড়াতাড়ি চলে যান হক সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে। হক সাহেব তাকে বলেন মন্ত্রীসভায় যোগ দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু যেন রাগ করে তাতে না না বলেন। বঙ্গবন্ধু তার জবাবে বলেন আমাদের তো আপত্তি নেই তবে দলের সাথে আলোচনা প্রয়োজন।
হক সাহেবের সাথে আলোচনা করেই ফিরে আসেন ইত্তেফাক অফিসে। সেখানে মানিক মিয়া, আতাউর রহমানসহ আর অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেন এ নিয়ে। ফোনে যোগাযোগ করা হয় শহীদ সাহেবের সঙ্গে। উনি কথা বলার মতো অবস্থায় ছিলেন না। তবে উনার জামাতা জানান উনার আপত্তি নেই এতে। সে রাতেই একটি জিপ নিয়ে আবার যাওয়া হয় টাঙ্গাইল। ভোরে টাঙ্গাইল পৌঁছে আলোচনা করা হয় মাওলানা ভাসানীর সঙ্গে। সব শেষে আলোচনায় ঠিক হয় হক সাহেব ছাড়াও মোট ১২ জন মন্ত্রী হবেন। যদিও রাতে সেটা বদলে ১৯-এ পরিণত হয়।
মন্ত্রীসভার শপথ গ্রহণ, দাঙ্গা এবং ষড়যন্ত্রের শেষ বীজ
১৯৫৪ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন। মন্ত্রীসভার যখন শপথ গ্রহণ চলছিল তখনই জানা গেল নারায়ণগঞ্জের আদমজী জুট মিলে বাঙ্গালী অবাঙ্গালীদের মধ্যে দাঙ্গা হয়েছে। মন্ত্রীসভার শপথের সময়েই দাঙ্গাও যে ষড়যন্ত্র তা বুঝতে আর বাকি থাকে না। সেদিন শপথ গ্রহণের পরপরই সবাই চলে যায় নারায়ণগঞ্জে। বঙ্গবন্ধুর যেতে একটু দেরী হয়ে যায়। আসলে সেদিন বিভিন্ন নেতা-কর্মীসহ সাধারণ জনতা তাকে মন্ত্রী হবার অভ্যর্থনা দিতে চায়। তাদের অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে তবেই নারায়ণগঞ্জ যেতে হয়। সেখানে গিয়ে দেখেন হক সাহেব তার জন্য অপেক্ষা করে করে শেষে ঢাকা ফিরে গেছেন।
আশে পাশের অবস্থা যা দেখলেন তা ছিল ভয়াবহ। আসলে হয়েছিলো কী কিছুদিন আগে এক অবাঙ্গালি দারোয়ানের সঙ্গে এক বাঙ্গালি শ্রমিকের কথা কাটাকাটি থেকে মারামারি হয়। সে মারামারিতে বাঙ্গালি শ্রমিকের আঘাতে দারোয়ান মারা যায়। তবে আজকে বেতন দেওয়ার নাম করে সবাইকে কারখানায় আসতে বলা হয়। আর কারখানায় বাঙ্গালি শ্রমিকরা আসলেই ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা অবাঙ্গালি শ্রমিকেরা এই দাঙ্গা শুরু করে।
বঙ্গবন্ধু আশেপাশে যত আহত দেখলেন তাদের পানি দিয়ে বা অন্যান্য সাহায্য করতে লাগলেন। ঢাকা থেকে অ্যাম্বুলেন্স আনার আদেশও দিলেন। সেদিন নিজে গুনে গুনে পাঁচশোর বেশি লাশ দেখেছেন ডোবা নালায়। ধারনা করেছেন আরও শ’দুয়েক রয়ে যাবার কথা। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এই দাঙ্গা অঞ্চলেই ছিলেন তিনি। পরিস্থিতি যেভাবে শান্ত করা যায় সেভাবে করার চেষ্টা করে গেছেন। সন্ধ্যায় জানতে পারলেন কারখানা সেনা নিয়ন্ত্রণে দিয়ে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় পুলিশরা এ নিয়ে মনঃক্ষুণ্ণ হলে তাদের বলেন, ‘আপনারা পুলিশ ইপিআর নিজেদের কাজটা না করতে পারলে আর্মির হাতে না দিয়ে আর উপায় কী’।
রাতে ঢাকা ফিরে মুখ্যমন্ত্রীর অফিসে গেলেন। গিয়ে দেখেন হক সাহেব সবার সঙ্গে রাগারাগি করছেন বঙ্গবন্ধুকে একা ফেলে সবাই চলে আসায়। বঙ্গবন্ধুকে দেখে খুশি হলেন। তাকে বললেন, রাতে ক্যাবিনেট মিটিং আছে এখানেই, তুমি আবার চলে যেও না। ক্যাবিনেট মিটিং শেষ হতে হতে রাত একটা বেজে যায়। বের হয়েই দেখেন কতগুলো অবাঙ্গালী পুরনো রাজনৈতিক কর্মী বঙ্গবন্ধুর অপেক্ষায় রয়েছে। তাকে দেখেই তারা বলতে লাগলো এখনই বেরিয়ে পড়তে হবে। লোকজনকে বুঝাতে না পারলে দাঙ্গা ঢাকায়ও লেগে যাবে। তাই বঙ্গবন্ধু আবারও ঢাকায় বের হয়ে গেলেন। বিভিন্ন পাড়ায় মহল্লায় ঘুরে ঘুরে সবাইকে বুঝিয়ে সুঝিয়ে রাত চারটায় বাড়ি ফিরে গেলেন।
তার পরদিন সকলের দফতর ভাগ করা হলো। বঙ্গবন্ধুকে দেওয়া হলো কো-অপারেটিভ এবং এগ্রিকালচারাল ডেভেলপমেন্ট।
এর কয়েকদিন বাদেই হক সাহেব একদিন বঙ্গবন্ধুকে ডেকে বললেন, কেন্দ্রীয় সরকার তাদের করাচীতে ডেকেছে বঙ্গবন্ধুকেও যেতে হবে। বঙ্গবন্ধু তৈরিই ছিলেন। এমনিতেও শহীদ সাহেবকে দেখতে পাকিস্তান যাবার কথা ছিল।
পাকিস্তান গিয়ে দেখলেন এখানে সবাই মনে করে দাঙ্গা লাগিয়েছে যুক্তফ্রন্ট নিজেরাই— এরকম করেই প্রচার করেছে পশ্চিম পাকিস্তানের সংবাদ পত্রগুলো। একদিন তো প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মিটিংয়ে ঝগড়াই বেধে গেলো বঙ্গবন্ধুর। প্রধানমন্ত্রী তাকে বললেন, ‘কী মুজিবর তোমার সব ফাইল কিন্তু আমার কাছে আছে’। এর জবাবে বঙ্গবন্ধুও বলে বসলেন, ফাইল তো থাকবেই আপনার কারণে কতবার জেল খেটেছি। তবে আপনার একটা ফাইলও আমার কাছে আছে । ১৯৪৭ সালে খাজা নাজিমুদ্দিন আপনাকে তার মন্ত্রীসভায় নিলো না আর আপনিও বাংলা ভাষার আন্দোলনে আমাদের ২০০ টাকা চাঁদা দিয়েছিলেন।
এরকম গরমাগরমির মধ্যেই আলোচনা শেষ হয়। পাকিস্তান বসেই খবর পান মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে দিতে পারে। আর তাই হক সাহেবের কাছে বললেন তারা বাংলাদেশ ফিরে যেতে চান। হক সাহেবও রাজি হলেন। ২৯ মে বাংলাদেশে ফেরার বিমান ধরেন বঙ্গবন্ধু। তাদের সাথে সেবার আইজিপি দোহা সাহেবও ছিলেন। দোহা সাহেব তাদের বুঝচ্ছিলেন— পূর্ব বাংলায় মিলিটারি নেমে গেছে এখন যাওয়া নিরাপদ না, যেন ভারতে থেকে যান। কিন্তু বঙ্গবন্ধু তাতে রাজি হলেন না। কলকাতায় বিমান থামলে সাংবাদিকরা হক সাহেবকে ঘিরে ধরলে তিনি মুখে আঙ্গুল দিয়ে বঙ্গবন্ধুকে দেখিয়ে দেন। আর বঙ্গবন্ধু বলেন যা কথা বলার সব ঢাকায় বলা হবে।
ঢাকা পৌঁছে দেখেন তাদের জন্য বিরাট অভ্যর্থনার আয়োজন করা হয়েছে। সব শেষ করে বাড়ি ফিরে দেখেন রেনু তখনও সংসার গুছিয়ে উঠতে পারেননি। তাকে বলেন আর গুছিয়েও লাভ নেই। মন্ত্রীসভা মনে হয় ভেঙ্গে দেবে। ভেবেছিলাম এখানে ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনা করাবো। কিছুই হলো না। বাড়ি ফিরে যেতে হবে তোমাদের। মাঝখান থেকে তোমার হাতের জমানো টাকাগুলো নষ্ট করে ফেললে।
বিকেল তিনটার দিকে ফোন পেলেন যে মন্ত্রীসভা ভেঙ্গে গভর্নরের হাতে ক্ষমতা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এটা দেখেই বাকি নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে বের হয়ে যান। সকলের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী করণীয় বলে বাড়ি ফিরে আসেন। এসেই পুলিশকে ফোন দিয়ে বলেন আপনারা মনে হয় আমাকে খুঁজতে এসেছিলেন। এখন আসুন আমি তৈরি হয়ে থাকবো। তার পরই পুলিশ এসে তাকে ধরে নিয়ে যায়। যাবার সময় রাজনৈতিক সহকর্মী বন্ধু ইয়ার মোহাম্মদকে বলে যান তদের ভাবী যদি বাড়ি যেতে না চায় তবে তাকে একটা ভাড়া বাসার ব্যবস্থা করে দিও। পুলিশের গাড়িতে উঠার সময় দেখেন একজন কাঁদছে তাকে গিয়ে বলেন, কাঁদিস কেন? এইতো আমার পথ। আমি একদিন তো বের হবোই। তোর ভাবীকে দেখে রাখিস।
এভাবেই শেষ হয় বঙ্গবন্ধু প্রথম নির্বাচিত হওয়ার ইতিহাস। যার স্থায়িত্বকাল ছিল মাত্র আড়াই মাস। আর মন্ত্রী হয়েছিলেন মে মাসের ১৫ তারিখ। মে মাসের ৩০ তারিখ জেলে যাবার মাধ্যমে যবনিকা টানে সেটারও।
বঙ্গবন্ধু সেবার যখন নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন তখন তার বয়স ছিল ৩৪ বছর। তিনি ছিলেন পূর্ব এবং পশ্চিম দুই পাকিস্তানের ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ মন্ত্রী। যদি পাকিস্তানের কথা বলি তবে ২০১১ সালে হিনা রাব্বানী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হলে সে রেকর্ড ভেঙ্গে যায়। আর ২০১৪ সালে বাংলাদেশের বর্তমান আইসিটি মন্ত্রী
জুনায়েদ আহমেদ পলক মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে বঙ্গবন্ধুর এই রেকর্ডটা নিজের করে নেন।
আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যুক্তফ্রন্ট