Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রোহিঙ্গাদের ‘পালিয়ে আসা’র ৩ বছর: ভাসানচরে স্থানান্তরে দায়মুক্তি?


২৬ আগস্ট ২০২০ ১৪:৪২

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনা নিপীড়নের মুখে রোহিঙ্গাদের প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশের সীমান্ত সংলগ্ন কক্সবাজার জেলার (উখিয়া-টেকনাফ) অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নেওয়ার তিন বছর পূর্ণ হলো। এমন সময়ে সরকারিভাবে বলা হচ্ছে— যেহেতু রাখাইনের পরিবেশ নিয়ে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা শঙ্কামুক্ত নন এবং সে পরিবেশ উন্নয়নে মিয়ানমারেরও সদিচ্ছা নেই, তাই আপাতত দেশি-বিদেশি মান নিয়ন্ত্রণ সার্টিফিকেট নিয়ে তারা রোহিঙ্গাদের ধাপে ধাপে ভাসানচরে স্থানান্তর করে দায় সারতে চান।

বিজ্ঞাপন

এদিকে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ক্ষমতাসীন এবং ক্ষমতাহীন উভয় ধরনের রাজনৈতিক দলগুলোতে রোহিঙ্গাদের মুসলিম আইডেন্টিটি ব্যবহার করে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল পর্বও শেষ হয়ে গেছে বলেই অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে।

সব মিলিয়ে ১১ লাখ পালিয়ে আসা রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের ভূখণ্ডে থাকতে থাকতে যেন সামাজিক নেতিবাচকতার ধ্রুবকেও পরিণত হচ্ছে। খোদ রাজধানী ঢাকাতেও গালি হিসেবে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটির ব্যাপক ব্যবহার চালু আছে।

তো, এই যে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে তারা যে তাদের গোত্রীয় রেপুটেশনের বারোটা বাজালেন, এখন ধাপে ধাপে তাদেরকে ভাসানচরে স্থানান্তর করেই কি এই সামাজিক বোঝাপড়াকে চ্যালেঞ্জ করা যাবে?

আবার আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের মেইনস্ট্রিম নেগোসিয়েশনে রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী সুবিধা করে উঠতে না পারলেও, সাইড লাইনের আন্তর্জাতিক আদালতে গাম্বিয়ার থ্রুতে রোহিঙ্গা ইস্যু আলোচনায় এসেছে। জাতিসংঘ আনুষ্ঠানিকভাবে রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে সে ব্যাপারে ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনসহ কয়েকটি স্বতন্ত্র তদন্ত প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

তারপরও, আইনি যুক্তি তর্কের আনুষ্ঠানিকতায় মিয়ানমার সেসব অভিযোগ প্রত্যাখান করেছে। এবং কেবল বলার জন্যই বলেছে— রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ফিরে যাওয়ার যথাযথ পরিবেশ সৃষ্টি করা হয়েছে। আদতে তার কিছুই করা হয়নি। বিবিসি, রয়টার্সসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো পর্যন্ত রাখাইন ঘুরে এসে বলেছেন, রোহিঙ্গাদের ছেড়ে আসা জমিতে সেনা অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।

আদালতে শুনানির এক পর্যায়ে মিয়ানমার বলতে বাধ্য হয়েছে, রাখাইনে জাতিগত নির্মূল অভিযান চললেও চলতে পারে, কিন্তু গণহত্যার ঘটনা ঘটেনি। গাম্বিয়ার পক্ষ থেকে আদালতকে বলা হয়েছে, এই মামলা চলাকালীন যেন রাখাইনে আর কোনো ধরনের সামরিক পদক্ষেপ মিয়ানমার না নিতে পারে, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিতে। আন্তর্জাতিক আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও রাখাইন থেকে এখনও গোলাবর্ষণ, হামলা, নীপিড়ন এবং হত্যার মতো অভিযোগও আসছে।

বিজ্ঞাপন

সেক্ষেত্রে, আরাকান আর্মির (এএ) সঙ্গে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর লড়াইকে আড়াল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, মানবিক ভূমিকা পালনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তিম দুর্দশা ব্যবহার করে বাংলাদেশ যে অর্থনৈতিকভাবে ‘লাভবান’ হয়নি, সে কথা বলা যাচ্ছে না। কারণ, জরুরি সাড়াদান কার্যক্রমে লক্ষাধিক বাংলাদেশির কর্মসংস্থান এবং গেস্ট ফ্যামিলিগুলোর সঙ্গে সঙ্গে হোস্ট ফ্যামিলিগুলোর ও সামাজিক মানোন্নয়ন কর্মসূচিগুলোর ব্যাপারে ততটা ফলাও করে জানানো হয়নি।

আবার, রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলো যে স্থানগুলোতে প্রশাসনিক নির্দেশে স্থাপন বা বর্ধিতকরণ করা হয়েছে সেই অঞ্চল গুলোর অধিকাংশই পাহাড়ী অভয়ারণ্যের অন্তর্গত হওয়ায় সেখানকার ইকোসিস্টেমে যে ভয়ংকর প্রভাব পড়ছে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। সেদিক থেকেও রোহিঙ্গা আবাসন ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগটিকে পরিবেশগতভাবে যৌক্তিক ধরে নেওয়া যায়।

কিন্তু, কেবলমাত্র ভাসানচরে স্থানান্তরের উদ্যোগই কি যথেষ্ট? রোহিঙ্গাদের শিক্ষা-দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলার নতুন পথ তৈরি হয় কি না, সে ব্যাপারেও সংশ্লিষ্টদের ভাবার সময় এসেছে।

লেখক: গণমাধ্যমকর্মী, নিউজরুম এডিটর, সারাবাংলা ডটনেট

আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) উখিয়া কক্সবাজার গাম্বিয়া জাতিসংঘ টেকনাফ বাংলাদেশ ভাসানচর মিয়ানমার রাখাইন রোহিঙ্গা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর