মুক্তি সংগ্রামের কিংবদন্তী ‘ক্র্যাক’ যোদ্ধাদের স্মরণে
২৯ আগস্ট ২০২০ ২২:৫৮
২৪ আগস্ট ১৯৭১। ধানমন্ডির ২৮ নম্বর হাইড আউট বাড়িতে মিটিংয়ে বসেছে শাচৌ (শাহাদাত চৌধুরী) আলম, বদি, কাজীসহ আরও কয়েকজন। মিটিংয়ের উদ্দেশ্য, গেরিলাদের এই দলটাকে দুই নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার খালেদ মোশারফ ঢাকায় পাঠিয়েছেন একটা বিশেষ এসাইনমেন্ট দিয়ে। যার জন্য প্রয়োজনীয় স্পেশাল ট্রেনিংও দেওয়া হয়েছে। এই দলটার প্রধান মিশন হচ্ছে সিদ্বিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনটাকে উড়িয়ে দেওয়া। যেন পুরো ঢাকা শহর অন্ধকারে ছেয়ে যায়। এ জন্য তাদের দেওয়া হয়েছে প্রচুর ভারী অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কিন্তু ঢাকা এসেই গেরিলারা বুঝতে পারল এই পাওয়ার স্টেশন এত কম লোক দিয়ে উড়ানো যাবে না। এটা যেন কোনো পাওয়ার স্টেশন নয়, যেন একটা বাঙ্কার। দুই ইঞ্চি মর্টারের গোলায় এর কিছুই হবে না। আরও ভারী অস্ত্র চাই। ঠিক হল শাচৌ আর আলম আবার মেলাঘরে যাবে নতুন অস্ত্রের জন্য। কিন্তু এই সময়টা তো আর বসে কাটানো যায় না বিচ্ছু ছেলেগুলোর। বদিই সবচেয়ে বেশি উত্তেজিত হয়ে ছিল। হঠাৎ সেই প্রস্তাবনা রাখলো, ‘এর মাঝে চল কিছু একটা করি।’ সাথে সাথে কাজী কামাল সায় দিয়ে বলে যায়, ‘এতো প্যাচাল না পাইড়া চলো একটা একশন করে আসি। বসে থাকতে থাকতে তো হাতে পায়ে জং ধইরা গেল।’ টিম লিডার শাচৌও তাতে সায় দেয়।
ঠিক হল পরদিন ২৫ আগস্ট। পাঁচ মাস আগে এই দিনেই পাকিস্তানিরা বর্বর হামলা চালিয়েছিল। তাই কাল ক্র্যাক প্লাটুন সামরিক সরকারকে একটা বড়সড় নাড়া দিতে একসঙ্গে কয়েকটা অপারেশন করবে। প্রস্তাবনা উঠতে না উঠতে দল তৈরি হতে সময় লাগে না। দুটো দল তৈরি হয়। একটার নেতৃত্বে থাকে আলম এবং অন্যটার নেতৃত্বে জিয়া। গেরিলা হাবিবুল আলমের দলে আলম, বদি, স্বপন, রুমী, কাজী কামাল আর সেলিম। অপর দিকে জিয়া গ্রুপে জিয়া, হ্যারিস, আনু, মোকতার, চুল্লু আর আজাদ।
২৫ আগস্ট ১৯৭১। দুপুরের মধ্যে বদি, রুমী পিরুলিয়া গ্রামের হাইড আউট থেকে সকল প্রয়োজনীয় অস্ত্র নিয়ে এল রাতের অপারেশনের জন্য। রাত আটটার দিকে হ্যারিস আর মুকতার আর ঐদিকে বদি আর আলম বের হয়ে গেল গাড়ি খুঁজতে। বদি আর আলম হাইজ্যাক করে নিয়ে এল একটা সাদা মাজদা তারপরেই তারা বের হয়ে গেল। অন্যদিকে হ্যারিস নিয়ে এল একটি ফিয়াট ৬০০। হ্যারিসদের একটু ফিরতে দেরি হল বলে আলমরা আগেই বের হয়ে যায়। তবে প্ল্যান মোতাবেক বলে গেল হ্যারিসরা সরাসরি চলে যাবে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আর আলমরা ধানমন্ডি ঘুরে একসঙ্গে যোগ হয়ে অপারেশন চালাবে।
জিয়াদের গাড়িটা চালাচ্ছিল হ্যারিস। হ্যারিস রাজারবাগ পুলিশ লাইনে দুই চক্কর দেয়। হ্যারিস জিয়াকে বলে, ‘বসে থেকে কী করব? গাড়িতো গরম হয়ে যাচ্ছে। রেডিয়েটারে মনে হয় পানি নাই।’ জিয়া জিজ্ঞাসা করে, যেকোনো যায়গা থেকে পানি নিলে হবে কিনা। হ্যারিস জানায়, হবে। এবার মুকতার বলে, ‘শাহজাহানপুর চলেন, আমার পরিচিত এক পান দোকানদার আছে তার থেকে পানি নেওয়া যাবে। কোনো সমস্যা হবে না।’ হ্যারিসরা শাহজাহানপুর চলে যায়। ছয়জন মিলে ছোট এক গাড়িতে গাদাগাদি করে বসা। পানের দোকান দেখে আজাদ পান খাওয়ার জন্য গাড়ি থেকে নামে। নিজের অজান্তেই হাতের স্টেনটাও সাথে রয়ে যায়। মূহুর্তের মধ্যেই মুক্তি মুক্তি বলে শাহজাহানপুর পুরা ফাঁকা হয়ে যায়। গাড়ির পানি নিয়ে হ্যারিসরা আবার ফিরে আসে রাজারবাগ। আবার দুই চক্কর দেয়। আলমদের দেরি দেখে বিরক্ত হয়ে জিয়া বলে, ‘চল আমরা নিজেরাই একটা একশন করি। চল দারুল কাবাবের দিকে যাই। সেখানে সবসময়ই অনেক আর্মি কাবাব খেতে আসে।’ গাড়ি কাকরাইল মোড়ে আসতেই কিছু বাঙালি পুলিশ ‘হল্ট’ বলে ওঠে। জিয়া ঠিক করে সে বাঙালি পুলিশ মারবে না। আর সে কারণে বলে ‘সরেন তো সামনে থেকে। বাঙালি পুলিশ মারি না।’ দারুল কাবাবে এসে একটা আর্মি জিপ দেখতে পাওয়া যায়। আজাদ তার স্টেনগানটা পজিশনে নিয়ে নেয়। কিন্তু জিয়া আরেকটু সুবিধার জন্য বলে, ‘আমরা যদি গাড়িটা ঘুরিয়ে আনি তাহলে অপারেশনের পর আমাদের পালিয়ে যেতে সুবিধা হবে।’ বলেই একটু দূর থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে আনতে আনতে দেখে আর্মি জিপটা আর নেই। তাই তারা আবার রাজারবাগ ফিরে আসে। কিন্তু রাজারবাগে এসে দেখে আলমরা তখনও পৌঁছেনি। অপারেশনে বের হয়ে অপারেশন না করতে পেরে হতাশ হয়ে আর আলমদের উপর রাগ করে ফিরে আসে ২৮ নাম্বার হাইডআউটে।
অপরদিকে আলম আর বদি কয়েকদিন ধরেই ঠিক করে রেখেছে ধানমন্ডি ২০ নম্বরে চাইনিজ অ্যামবেসির এক কর্মকর্তা থাকে সেখানে প্রায় সাত-আটজন মিলিটারি পাহারা দেয়। আবার ১৮ নাম্বারেও এক ব্রিগেডিয়ারের বাড়ির সামনেও সাত-আটজন থাকে। এখানে একদিন অপারেশন করবে। তাই তারা ঠিক করে রাজারবাগ যাওয়ার আগে ১৮ আর ২০ নম্বর অপারেশনটা শেষ করবে। কিন্তু ২০ নম্বরে এসে দেখে এদিকটা পুরো খালি, কোন মিলিটারি নেই। আবার চলে যায় ১৮ নম্বরে ব্রিগেডিয়ারের বাড়িতে। সেখানে দেখতে পায় সাত-আটজন জন গল্প করছে। আলম বলে, ‘ব্রিগেডিয়ার খুব সম্ভবত বাড়িতে নেই বলেই এরা গল্প করছে। ওকে গাইজ উই হ্যাভ থ্রি মিনিটস। বদি, কাজী, সেলিম আর আমি গাড়ি ঘুরিয়ে এনে ফায়ার বললে ফায়ার করবে, রুমী আর স্বপন অন্যদিক থেকে কেউ আক্রমণ করছে কিনা তা দেখবে।’ আলম তাই গাড়ি ঘুরিয়ে এনে ফায়ার বলতেই বদি, কাজী আর সেলিম ফায়ার করে। বদি পেটের লেভেলে, কাজী ডান বুকে আর সেলিম বাম বুক লেভেলে গুলি করে। নিখুঁত নিশানা। ত্রিশ সেকেন্ডের মধ্যেই যেন সব শেষ। বদির মন এতেও ভরে না। তাই তারা আবারো ফিরে এল ২০ নাম্বারে। তখনও বাড়িটা খালি।
আলম এবার ধানমন্ডির বিভিন্ন রাস্তা দিয়ে ঘুরে সাত নম্বর হয়ে মিরপুর রোডে এসে ডানে ঘুরে নিউমার্কেট মুখে যেতে গিয়ে দেখে রাস্তায় ব্যারিকেড দেওয়া। তার মানে ১৮ নাম্বারের কথা এতক্ষণে সবাই জেনে গেছে। আলমদের গাড়িটা কাছে আসতেই থামতে বলা হয়। আলম গাড়ি থামায় না। আলমকে একটা ধমক দিয়ে পাকিস্তানি সৈন্য আবার থামতে বলে। এসময় রুমী আর বদি চিৎকার করে বলে ‘এলএমজি নিয়া দুইটা শুইয়া আছে।’ বদির কথা শেষ হবার আগেই এবার কাজী আর বদির স্টেনগান কথা বলা শুরু করে দেয়। রুমী এবারও উল্টো দিকে নজর রাখে কেউ আসে নাকি দেখতে। পাকিস্তানি সৈন্যগুলো সাথে সাথেই মারা যায়। আলমরা ভেবে পায় না আর কেউ ছিল নাকি। আর থাকলেও হয়তো ঘটনার আকস্মিকতায় কিছু বুঝে উঠতে পারেনি কী করবে।
তারপর আলম গাড়িটাকে পাঁচ নম্বরে নিয়ে যায়। পাঁচ নম্বরের এই রাস্তাটা গ্রিন রোডে গিয়ে মিলেছে। গ্রিন রোডের কাছাকাছি আসলে রুমী বলে, ‘লুক লুক এ জিপ ইজ ফলোয়িং আস।’ বলেই নিজের স্টেনগানের বাট দিয়ে পিছনের কাচ ভেঙে ফায়ার করা শুরু করে। রুমী ছিল মাঝখানে, তখন আবার দুইপাশ থেকে বদি আর স্বপনও ফায়ার করতে শুরু করে। কতজন মারা গেছে কেউ জানেনা। তবে রুমীর প্রথম গুলি যে ড্রাইভারের গায়ে লেগেছে তা বোঝা যায়। কারণ, তারপরই জিপটা ব্যালেন্স হারিয়ে গাছের সাথে ধাক্কা খেয়ে উলটে যায়। এবার আলম বামের ইন্ডিকেটর জ্বালিয়ে দ্রুতগতিতে ডানে গিয়ে আবার নিউ মার্কেটমুখি হয়ে পেট্রোল পাম্পের উল্টো পাশ দিয়ে নিউ এলিফেন্ট রোডের দিকে চলে যায়। যেমনটা ভেবেছিলো ঠিক তেমনটাই হয়েছে। দুটি মিলিটারি ট্রাক তখন গ্রিন রোডের দিকে যাচ্ছে।
গাড়িটা আলম ভুতের গলির একটি বাড়ির খোলা পার্কিং লটে পার্ক করল। বৃষ্টি ছিল বলে কেউ দেখতে পায়নি তাদের গাড়িটা। তারপর রিকশা না পেয়ে হাতিরপুল পর্যন্ত হেঁটে এবং পরে রিকশায় করে রুমীদের এলিফেন্ট রোডের বাড়িতে।
২৫ তারিখের গল্প কোনভাবেই শেষ হয় না। ২৫ তারিখ ঢাকাকে সত্যিকারেই নাড়িয়ে দিয়েছিলো বিচ্ছুগুলা। নানাজনের মুখে ২৫ তারিখের নানা রকম গল্প। রুমী, বদীরা সেই গল্প শুনে মুখ টিপে হাসে। কিন্তু কাউকে বলতে পারে না আসলে কী হয়েছিল। এদিকে আবার পাকিস্তান সেনাবাহিনী গেরিলাদের ধরতে তারপর থেকেই উঠে পড়ে লেগেছে। তাই এবার সবাইকে কিছুদিনের জন্য নীরবে থাকতে হয়েছে। অপরদিকে শাহাদাত চৌধুরী আর আলম চলে গিয়েছে মেলাঘরে, পাওয়ার হাউজ উড়িয়ে দিতে নতুন অস্ত্র আনতে।
আজাদের মগবাজারের বাড়িতে প্রায় রাতেই গেরিলাদের আড্ডা বসে। পূর্ব পাকিস্তানের সেরা বাস্কেটবল খেলোয়াড় গেরিলা কাজী কামাল উদ্দিন ছিল আজাদের পুরনো বন্ধু। আজাদের বাড়িটাই হয়ে ওঠে তাদের মিনি হাইড আউট। ২৯ আগস্ট ১৯৭১ সালে রাতে আজাদের বাড়িতে কাজী কামাল উদ্দিন আর জুয়েল আসে। বুলেটের আঘাতে হাতের তিনটা আঙ্গুল থেঁতলে যাওয়ার পর থেকেই জুয়েলের ঠিকানা ছিল আলমের বাসা। আলমের তিন বোন তাকে দেখাশোনা করতো। কিন্তু একা একা আর কত সময় কাটানো যায়। আর তার উপর একটু সিগারেট খাওয়া আর তাস খেলার নেশায় চলে আসা আজাদের বাসায়। জুয়েলের আঙ্গুলের আঘাত পাওয়ার ঘটনাটাও বীরত্বের।
১৯ আগস্ট ১৯৭১। সেদিন আলম, জুয়েল, বদি, রুমী, আজাদরা দুটো নৌকা করে সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার স্টেশনটা রেকি করতে যাচ্ছিলো। নৌকায় বসা অবস্থায় বদি তার মেশিনিগানটা কোলে তুলে রখে। আলম কয়েকবার মেশিনগানটাকে নৌকার পাটাতনে লুকিয়ে রাখতে বললেও বদি বিন্দুমাত্র পাত্তা দেয় না। নিজের মন মতো কোলেই তুলে রাখে। যাত্রাপথে কিছুটা দূরে আরেকটা নৌকা দেখে জিয়া হাঁক দেয়, ‘কে যায়’ বলে। কিন্তু কোন জবাব আসে না। সে নৌকাটা কাছে আসামাত্রই দেখে রাজাকারসহ পাকিস্তানি সৈন্য সেখানে। একারণেই কোন জবাব দেয় নি। কিছু বুঝে ওঠার আগেই বদি তার কোলের মেশিনগানটা দিয়ে গুলি ছোড়া শুরু করে। সাথে সাথে নৌকাটা উলটে যায়। হয়তো প্রতিপক্ষের সবাই মারাও যায়। কিন্তু এত তাড়াহুড়ায় সবকিছু হয়ে গেছে যে, সে খবর জানা যায় না। বদি যখন পাকিস্তানি সৈন্যদের দিকে গুলি ছুড়ে তখন পাকিস্তানি সৈন্যটাও গুলি ছোড়ে। যদিও বদির ক্ষিপ্রগতির কাছে হার মানতে হয়। বদির কারণে সেদিন সবাই বেঁচে ফিরলেও পারে এসে দেখে জুয়েলের হাতে গুলি লেগেছে। পুরো পাকিস্তানের সেরা ব্যাটিং প্রতিভার হয়তো আর ক্রিকেট খেলা হবে না।
২৯ আগস্ট ১৯৭১। রাত ৯ টার দিকে আজাদের করাচী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ের বন্ধু বাশার অফিস থেকে ফিরে আসে। বাসায় তখন আড্ডা জমে আছে। বাশারকে দেখেই জুয়েল বলে ‘মিয়া বাশার তোমার মর্নিং নিউজ তো ফিউজ হয়ে গেছে। সত্য করে বলো তো এত মিথ্যা কথা ছাপো কিভাবে? জবাবে বাশারও চুপ থাকে না। উত্তরে বলে ওঠে পিঠে বেয়োনেটের খোঁচা খাইলে বুঝবা কেমনে ছাপি। জুয়েল আবার বলে ‘কোনদিন তোমাগোরে পাইন আপেল খাওয়াইলে বুঝবা পেন ইজ মাইটার দ্যান সোর্ড বাট মাচ উইকার দ্যান এ গান। এবার পারলে বলো পাইন আপেল মানে কি?’ বাশার জবাব দেয় তোমাদের পাইন আপেল যে নিরীহ আনারস হবে না ততখানি ঠিকই বুঝি। এভাবেই আড্ডায় মজা চলছিল। রাত বাড়তে থাকে। আজাদের রুমের আড্ডা রাতের ডাইনিং টেবিলে পৌঁছায়। সেখানেও জুয়েল আজাদের বিয়ে নিয়ে, মেয়ে দেখা নিয়ে মজা করতে থাকে। মজার ছলে আজাদের মা সোফিয়া বেগমকেও বলেন ছেলের জন্য যৌতুক চায় তারা। সোফিয়া বেগম বলেন ‘এত কষ্ট করে আমি ছেলে বড় করছি এখন কারো কাছে বেচতে পারবো না। আমার যৌতুক লাগবে না।’ মুখের কথা কেড়ে নিয়েই আবার জুয়েল বলে ‘খালাম্মা আপনার দাবি না-ই থাকতে পারে কিন্তু এই যুদ্ধের বাজারে আমাদের দাবি আছে। আমাদের দরকার ভারী ভারী অস্ত্র। এগুলাই চাই আমরা আজাদের শশুর বাড়ি থেকে।’
রাতের খাবার শেষে বাশার আজাদকে নিয়ে বের হয় বাকি রাতের আড্ডার সিগারেটের জন্য। সেখানেই বাশার আজাদকে জানায় আজাদের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের প্রেমিকা মিলি বাংলাদেশে এসেছে। আজাদ জানতো মিলির বিয়ে হয়ে গেছে। সেদিন বাশারই তাকে জানায় মিলির বিয়ে হয়নি। আজাদ যেন মিলির থেকে দূরে চলে যায় তাই মিলির পরিবার আজাদকে জানিয়েছে মিলির বিয়ে হয়েছে। দুই বন্ধু মিলে ঠিক করে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই মিলিকে খুঁজে বের করবে তারা।
সেদিন মাঝরাতে আজাদের মগবাজারের বাড়িতে পাকিস্তানি সৈন্যরা হামলা চালায়। পাকিস্তানি সৈন্যদের সাথে ধস্তাধস্তি করে একটা অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে কাজি কামাল উদ্দিন পালিয়ে যেতে পারলেও আজাদ আর জুয়েল ধরা পড়ে। একই রকমভাবে স্কুলজীবনের বাল্যবন্ধুর বাসা থেকে ধরা পড়ে বদি, রুমীর বাসা থেকে ধরা পরে রুমী, আলতাফ মাহমুদের বাসা থেকে ধরা হয় আলতাফ মাহমুদ এবং আলভীসহ বাকি সকলকে। পরবর্তীতে আলভীকে দুইদিন পর ছেড়েও দেওয়া হয় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন হলে মেজর হায়দার উদ্ধার করে চুল্লু এবং সামাদকেও। কিন্তু হদিস পাওয়া যায়না বদি, রুমী, জুয়েল, বকর আর আলতাফ মাহমুদের। কথিত আছে ৪ সেপ্টেম্বর যেদিন পাকিস্তান জান্তা সরকার আন্তর্জাতিক মাধ্যমকে দেখানোর জন্য সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা করেছে সেদিনই দেশের এই সূর্য সন্তানদের হত্যা করা হয়। এখনও এদেশের কোন মাটির নীচে নীরবে ঘুমিয়ে আছে বদি, জুয়েল, রুমীরা।