Saturday 21 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কুকুরের ভাদ্র-আশ্বিনে মানুষের পশুত্ব


২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৫৬ | আপডেট: ২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৫৭
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ঢাকা মহানগর বা পুণ্যভূমি সিলেট, পার্বত্য এলাকার আদিবাসী হলেও ধর্ষণ আর ধর্ষণে থাকছে না। আলোচনা-ভাবনার বাঁক চলে যাচ্ছে অন্যদিকে। বোঝাপড়া, বিনিময় বা ঠকবাজিতে জৈবিক ক্রিয়াকর্ম ধর্ষণের মধ্যে পড়ে কি-না?-এ প্রশ্নও সামনে নিয়ে আসা  হয়েছে। তা এমনি-এমনিতেই? না-কি বিশেষ কোনো উদ্দেশ্যে? যেন ধর্ষণ মূল বিষয় নয়। অথবা এটা কোনো ঘটনাই নয়। বাছবিচারও নেই। তা জাতে-উপজাতে, শিশুতে -প্রতিবন্ধীতে সবখানেই। পাহাড়ে-সমতলে, কলেজে-স্কুলে। মক্তব-মসজিদেও।

এর মাঝে আবার সিলেটে গণধর্ষণ মামলায় কোনো আইনজীবী আসামীদের পক্ষে দাঁড়াননি-এটাকেও বিষয় করা হচ্ছে। এতে উচ্ছ্বসিত হওয়ার কী আছে? সিলেটে আইনজীবীদের এমসি কলেজের ধর্ষকদের বয়কট একটা ইতিবাচক বোধ বা মানসিকতা থাকতে পারে। কিন্তু, তা সাময়িক। মোটেই স্থায়ী নয়। সিলেটের যে ‘গ্রুপ ক্যাপ্টেনদের’ রাজনীতি এদের ধর্ষক হতে সাহসী করেছে তাদের বয়কটের নমুনা কি আছে? পেশাদারিত্ব বিবেচনায় একজন আইনজীবী মামলার যে কোনো পক্ষেই কৌসুলি হতে পারেন। আবার যেকোনো অপরাধীরই আইনগত সহায়তা পাওয়ার অধিকার আছে। তা ধর্ষক এমন কী খুনিরও।

বিজ্ঞাপন

ঘৃণাবোধ থেকে কোনো আইনজীবী কোনো আসামীর পক্ষে নাও যেতে পারেন। এটা তার ব্যক্তিগত অভিরুচি, অনুভূতি এবং সিদ্ধান্তের বিষয়। মূল বিষয় সঠিক বিচার। বিচার শেষে ফাঁসি হলেও যেন অপরাধী সঠিক বিচারটা বুঝতে পারে। বিচারক, বাদী, বিবাদী, সাক্ষীসহ অন্তত চারটি পক্ষের এখানে অধিকারের বিষয় রয়েছে। নইলে একটা অসম্পূর্ণতা থেকে যায়। কোনো বিচার-আচার না করে ধর্ষণে অভিযুক্তকে ক্রসফায়ারে খরচ করে দেওয়ার গরম প্রস্তাবও ঘুরছে বাজারে। বিচারবহির্ভূত এমন ভাবনার পাশাপাশি চোরেরও চোর দৌড়ানোর মতো বায়োস্কোপ চলমান। ধর্ষণে অভিযুক্তরাও ধর্ষণের বিচারের দাবিতে মিছিল-মিটিংয়ে ফার্স্ট হয়ে যাচ্ছে। রীতিমতো সার্কাস। ধর্ষকের রাজনৈতিক পরিচয় নিয়ে রাজনীতি, দলীয় অস্বীকার-বহিষ্কারের মতো ঘটনা সার্কাসটাকে আরও বর্ণময় করছে।

সাম্প্রতিক সিরিজ ধর্ষণের প্রেক্ষিতে আনুষঙ্গিক কিছু প্রশ্ন উহ্য থেকে যাচ্ছে। গণমাধ্যমেও তা খাপছাড়া। দায়সারা। গা ছাড়া। এমসি কলেজের ধর্ষিত নারীর স্বামীর কাছ ছাত্রলীগের ধর্ষকরা ২০ হাজার টাকা চাঁদা চেয়েছিল বলে যে প্রচারণা রয়েছে সেটার তলানিতে গেছে গণমাধ্যম? কোনো খবরে বলা হয়েছে, চাঁদা চেয়ে তারা হুমকি দিয়েছিল ২০ হাজার টাকা দিতে না পারলে স্বামী-স্ত্রীর ক্ষতি হবে। ২০ হাজার টাকা যোগাড় করতে না পেরে মাত্র ২ হাজার টাকা যোগাড় করে স্বামী-স্ত্রী দুইজনেই তা দিতে গিয়েছিল। এরপরের ঘটনা কারো জানার বাকি নেই। স্বামী-স্ত্রীর উভয়ের পরিচয়ই সঙ্গত কারণে উহ্য। কিন্তু, আসামী ছাত্রলীগ নেতারা কিসের জন্যে স্বামীর কাছে চাঁদা চেয়েছিল?-এ প্রশ্নের উত্তর আসেনি। ধর্ষকদের কাছে চাঁদা নিয়ে যেতে সাথে স্ত্রীকেও নিতে হবে কেন? স্বামী- স্ত্রী কি আসামীদের পূর্ব পরিচিত?  প্রশ্ন আরও আছে। দেশের সব কলেজ-ইউনিভার্সিটি করোনার কারণে বন্ধ। এমসি কলেজের হোস্টেল খোলা থাকলো কি করে? দেশের আর কোন হোস্টেল কি খোলা আছে?  সেগুলোতেও কি এ ধাঁচের কায়কারবার চলে?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কি ডাকাতদের গ্রাম?- একবার কাব্যিক এ প্রশ্ন করে বহু আগে চরম ঝুঁকিতে পড়েছিলেন কবি আল মাহমুদ। রাজনীতিকরা বটেই, কবি, সাহিত্যিক, সাংস্কৃতিক কর্মীরাও তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেছিলেন। আল মাহমুদ বেঁচে থাকলে হয় তো সিলেটের এমসি কলেজ কি ’ধর্ষকদের গ্রাম’ বলে প্রশ্ন ছুঁড়ে বসতেন। কারো বা গুটিকতকের জন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা শোভন নয়। একইভাবে ধর্ষণের জন্য কেবল ধর্ষকদের দায়ী করলেও তা কিছুটা একতরফা হয়ে যায়। এ পরিবেশটা কেন হলো? তাও করোনা মহামারির মতো এ কঠিন সময়ে। কোথায় বল-ভরসা তাদের? ওরা এক দিনে সৃষ্টি হয়নি। ওদের বিচার যে একদম হচ্ছে না, তা-ও বলা যাবে না। আবার দিব্যি অধরা থাকার ঘটনাও অনেক। যা ধর্ষণ, খুন, চাঁদাবাজিতে ভয়ের বদলে চেতনায় শান যোগাচ্ছে। মনুষ্যত্ব হারিয়ে পশুর চেয়েও হয়ে উঠছে জঘন্য। দল এদের সাইনবোর্ড। রক্ষা কবচ।

বাংলা ঋতুচক্রে ভাদ্র শেষে চলতি পথে আশ্বিন। করোনার মতো অতিমারির মধ্যেও মাসটিতে তেঁতে উঠেছে ধর্ষকরা। প্রাণিবিদরা বলে থাকে, পশুদের জগতে প্রজননের বিশেষ ঋতু রয়েছে। সৃষ্টির ‘অন্যতম নিকৃষ্ট কুকুরের’ সেই মৌসুমটা ভাদ্র-আশ্বিন মাস। এই সময়টাতে কুকুরের জৈবিক পাগলামি সীমা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু, সৃষ্টির সেরা জীব ঋতুনিরপেক্ষ মানুষও কেন মেতেছে কুকুরের মৌসুমে?

এ মৌসুমে মাদি কুকুর দেখলেই হামলে পড়ে মর্দ কুকুর। এ সময়টায় কুকুরের কামড়ের বিষও বেশি। সচেতন মানুষ তাই নিজ গরজেই সতর্ক থাকে কুকুর থেকে। বাঁচার রাস্তা থাকে মাদি কুকুরেরও। সে অসুস্থতা বা অন্য কোনো ওজর দেখালে মর্দ কুকুরটা শরমে লেজ গুটিয়ে সাইড কেটে চলে যায়। কিন্তু মানুষ মর্দগুলো শরমিন্দা হয় না। থামছেও না। যুবতী, তরুণী, শিশু, প্রতিবন্ধী কাউকে রেহাই দিচ্ছে না তারা। ধর্ষকরা গড়পড়তা সবাই কোনো না কোনোভাবে প্রভাবশালী। দু-একটা নিজে অক্ষম হলেও প্রভাবশালীর দোয়া বা দয়া হাসিল করতে সক্ষম। ধর্ষিত, তার পরিবার ও মামলাকে আয়ত্তে এনে সমঝোতার ঠকবাজিতে সফল হয় এরা। অন্যদিকে, মামলা দায়ের থেকে শুরু করে প্রতিটি জায়গায় নারীকেই প্রমাণ দিতে হয় যে তিনি ধর্ষণের শিকার। এ প্রমাণ দিতে গিয়ে ওই বেচারিকে দফায় দফায় ‘ধর্ষিত’ই হতে হয়। কখনো কখনো ধর্ষণের অভিযোগ তুলে নিয়ে নিজেকেই আসামি হতে হয়। পেনাল্টির মতো তখন গোলটা দেয় ভাদ্র-আশ্বিনের বিমারিগ্রস্ত ধর্ষকরাই। অথচ এরা আশরাফুল মাখলুকাতের (সৃষ্টির সেরা জীব) হকদার। আর সৃষ্টির অন্যতম নিকৃষ্ট জীব কুকুর কখনো গণধর্ষন করে না। এই অপকর্মটি জগতে করে কেবল মানুষ নামের জীবেরাই।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

এমসি কলেজ টপ নিউজ ধর্ষণ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর