আপনাকে ধন্যবাদ
১২ অক্টোবর ২০২০ ১৩:৩৩
কানাডা এবং আমেরিকায় ‘থ্যাংকস গিভিং ডে’ বেশ হৈ চৈ করে পালন করা হয়। তবে দুই দেশে পালন করা হয় ভিন্ন সময়ে। কানাডায় পালন করা হয় অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সোমবারে এবং আমেরিকায় নভেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে। থ্যাংকস গিভিং ডে’র প্রচলন পনের শতকে প্রথম দেখা যায়। তবে কানাডায় আঠার শতকের শেষের দিকে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদযাপন শুরু হয়। দক্ষিণ আমেরিকায় নানা চিত্তাকর্ষক এবং কৌতূহলোদ্দীপক উৎসবের সমাগম, তার মধ্যে এই থ্যাংকস গিভিং ডে আমার ব্যক্তিগত পছন্দের শীর্ষে।
অনেকে মনে করেন থ্যাংকস গিভিং ডে বোধহয় ধর্মীয় উৎসব এবং মুসলমানদের জন্য পালন নিষিদ্ধ। ব্যাপারটি তেমন নয়। অনেকে থ্যাংকস গিভিং ডে’র সাথে বাইবেলের যোগসূত্র দেখানোর চেষ্টা করেও সেটা খুব শক্তভাবে পারেননি। তবে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্যই মূলত এই দিবসটি পালনের সূত্রপাত। পনের শতকের দিকে বিগত বছরে উৎপন্ন ফসলের জন্য স্রষ্টাকে ধন্যবাদ দিয়ে এই দিবসটি উদযাপন করা শুরু হয়। আমাদের দেশের নবান্নের উৎসবের সাথে হয়ত এর কিছুটা তুলনা করা যেতে পারে।
ব্যাপারটার শুরু কৃষি এবং চাষাবাদ থেকে হলেও, এখন এটি ছড়িয়ে পড়েছে অনেক দূর। আগের মতো কৃষিকাজের সঙ্গে জড়িত মানুষ কই? কিন্তু তাই বলে কিন্তু এর উদযাপন থেমে থাকেনি। এটি একটি সরকারি ছুটি হিসেবে পালন করা হয় কানাডায়। ক্রিসমাসের বাইরে থ্যাংকস গিভিং ডে’র দিন দেখেছি কানাডিয়ানরা পরিবারের সঙ্গে মিলিত হবার চেষ্টা করে। যারা পরিবারের সঙ্গে একসাথে উদযাপন করতে পারে না, তারা অনেকে বন্ধু-স্বজন কিংবা প্রতিবেশীর সঙ্গেও উদযাপন করে। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের কাছের সদস্যরা মিলে একসাথে সান্ধ্যকালীন ভোজে মিলিত হওয়ার রেওয়াজ এখানে। সবাই মিলে ভালো-মন্দ খাওয়া, এবং বিগত বছরের যা কিছু ভালো তার জন্য সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ জানানো।
সময়ের সাথে সাথে সৃষ্টিকর্তার পাশাপাশি থ্যাংকস গিভিং ডে’তে একে অন্যকে ধন্যবাদ জানানোর প্রচলনও শুরু হয়েছে। যেমন, গত শুক্রবার (শুক্রবার কানাডায় কর্মদিবস), অর্থাৎ সপ্তাহের শেষদিনে, আমার পার্ট-টাইম কাজের যে বস, তিনি বললেন চলো আজকে সবাই সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। শুক্রবার আমরা প্রায় ৩৫ জন দুই ঘণ্টার জন্য মাইক্রোসফট টিমে মিটিং করি, সেখানে সাপ্তাহিক কাজের আপডেট দিতে হয়। প্রতি টিমকে আগামী সপ্তাহ বা পরবর্তী দিনগুলোর কাজের পরিকল্পনা ‘পিচ’ করতে হয় অন্যদের কাছে। সেখান থেকে সমালোচনা আসে, প্রশংসা আসে, আলোচনা, তর্ক-বিতর্ক হয়। এই শুক্রবার শুরুতেই পিচ থামিয়ে সবাইকে বলা হলো কোনো একজন সহকর্মীর প্রশংসা করে তাকে ধন্যবাদ জানাতে। কেন ধন্যবাদ দেওয়া সেটাও বলতে বলা হলো।
সেদিন সকালে আমিও আমার টিউটোরিয়াল ক্লাসের শিক্ষার্থীদের একই কথা বললাম। তাদের এই অনলাইনের ক্লাস, টিউটোরিয়াল, অ্যাসাইনমেন্ট, গ্রুপ ওয়ার্ক ইত্যাদিতে কে কাকে কীভাবে সহযোগিতা করেছে, ইত্যাদি সবাই শেয়ার করে একে অপরকে ধন্যবাদ দিল। আমিও তাদেরকে ধন্যবাদ দিলাম করোনার এই সময়ে পৃথিবীর নানাপ্রান্ত থেকে রাত-দিন নানা সময়ে ক্লাসে এসে ঠিক সময়ে এসাইনমেন্ট করে জমা দেয়াতে। তারাও আমাকে তাদের মতো করে ধন্যবাদ জানালো।
এই যে পরস্পরকে ধন্যবাদ দেবার চল, সংস্কৃতি— এটা আমার বেশ লাগে। শুক্রবার সবাই সবাইকে ধন্যবাদ দিতে দিতে বিদায় নিলাম পরবর্তী তিন দিনের লং উইকেন্ডের ছুটির জন্য। এই ব্যাপারটা, এই যে প্রশংসা করার চর্চা, ধন্যবাদ দেবার চর্চা আমার কাছে মনে হয় এটা কানাডিয়ানদের শিক্ষা ও সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ। শৈশব থেকেই এটা শিখে বড় হয় বলে এদের অধিকাংশ হয় ধৈর্যবান ও পরস্পরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।
আমার শুরুর দিকে মনে হতো, যে ধন্যবাদ পাওনা তাকে ধন্যবাদ দিতে হবে, যার গালি পাওনা তাকে গালি দিতে হবে। তবে এই ধন্যবাদ আর গালির মার্জিনটা যে যোজন যোজন দূরে, সেটা এখানে এসে দেখেছি। কানাডিয়ানরা আমেরিকানদের চাইতে কিছুটা লেইড-ব্যাক বলে আমার মনে হয়। একটা বড় কারণ সম্ভবত আবহাওয়া। দ্বিতীয়, আমেরিকানদের জীবনে লক্ষ্য যেখানে ‘প্রাপ্তি’ ও ‘অর্জন’, কানাডিয়ানদের জীবনের লক্ষ্য আমার কাছে মনে হয়েছে সুখী হওয়া। এরা ঝামেলা এড়িয়ে সুখী হতে চায়। যেভাবেই হোক জিততে হবে, এই ব্যাপারটা ওদের মধ্যে তেমন দেখি না।
কয়েকটা উদাহরণ দেই। আমি যখন প্রথম আসলাম, কয়েকদিন খেয়াল করে দেখলাম, এখানে ৪-৫ জন পরিচিতের দেখা হলে, তারা ফুটপাথের উপরে দাঁড়িয়ে সমানে গল্প করে যাচ্ছে। তাদের জন্য যে অন্য মানুষের ফুটপাথে চলাচল বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, এটা তারা খেয়াল করছে না। আমার খুব মেজাজ খারাপ হতো, মনে হতো কানের কাছে গিয়ে চেঁচিয়ে বলি যে, “রাস্তা থেকে নাম আহাম্মকের দল, দেখিস না এটা হাঁটার জায়গা, তোদের বাপের রাস্তা না।” কিন্তু অবাক হয়ে দেখলাম কেউ কিছু বলে না। সবাই হন হন করে হাঁটতে হাঁটতেই শরীর একদম দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দেয়াল ঘেঁষে, অথবা কেউ কেউ ফুটপাথ থেকে নেমে রাস্তা দিয়ে হেঁটে ওই জায়গাটুকু পার হয়ে আবার ফুটপাথে উঠে হেঁটে যাচ্ছে, কেউ কোনো অভিযোগ করছে না। এমন যে শুধু ফুটপাথে তা নয়, দেখেছি এলিভেটরের মুখে, লিফটের গোঁড়ায়। কিন্তু কেউ কিছু বলে না।
আবার কাউকে কাউকে দেখলাম গাড়ি চালাতে গিয়ে বিভ্রান্ত হয়ে সিগনালের সামনে মোবাইলে লোকেশন দেখছে, এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে, ওদিকে সিগনাল লাল থেকে সবুজ, আবার সবুজ থেকে লাল হয়ে গেছে, পেছনের গাড়ির ড্রাইভার ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে আছে, একটা হর্নও দিচ্ছে না। প্রথম বছর যখন আসলাম কানাডায়, নববর্ষ উদযাপনে ন্যাথান ফিলিপ স্কয়ারের আশেপাশের এলাকায় সম্ভবত হাজার হাজার মানুষ হয়েছে। ওখান থেকে নড়তে চড়তে বিরাট ঝক্কি। ৪০ মিনিট ধরে এক ইঞ্চি করে এগুতে হলো। এর মধ্যে অনেকের পায়ে ভুলে জুতো মাড়িয়ে দিয়েছি, কিন্তু গালি দেওয়া তো দুরের কথা, উল্টো যার পা মাড়িয়েছি, তিনিই পেছন ফিরে প্রথমে সরি বলেছেন। এমন অবস্থা যে লজ্জায় নিজের মাথা হেঁট। করোনার সময় নানা গ্রোসারিতে লাইন ধরে সবাই ঢোকে, কাউকে লাইন ভেঙে কৌশলে লাইনের সামনে যেতে দেখিনি, এমনকি বয়স্ক বা প্রতিবন্ধী কোনো ব্যক্তিকে আগে যেতে দিতে চাইলেও তারা সেই সুযোগ নিতে চান না, ধৈর্য ধরে নিজের সময়ের জন্য অপেক্ষা করেন।
আর কানাডিয়ানদের দরজা খুলে দাঁড়িয়ে থাকা নিয়ে তো ইউটিউবে হাজার হাজার ভিডিও পাওয়া যায়। শপিং কমপ্লেক্সে, এপার্টমেন্টে, অফিসে, দোকানে কোনো একজন ক্যানাডিয়ান কখনও শুধুমাত্র নিজের জন্য দরজা খুলে ভেতরে ঢোকে না। সে প্রথমে দরজা খুলবে, যে বের হবে, তাকে বের হতে দেবে, এরপর নিজের আশেপাশে যারা আছে তাদের ঢুকতে দেবে, তারপর নিজে ঢুকবে। অনেক সময় দেখা যায় আপনার ৩০ ফুট দূরে কেউ দরজা খুলে ঢুকে আপনাকে দূর থেকে আসতে দেখে নিজে না যেয়ে দরজা খুলে ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে আপনার ঢোকার অপেক্ষায়। এরা কখনও আপনার কাছ থেকে আগ থেকে সময় না নিয়ে আপনার বাসার দরজায় উপস্থিত হবে না, এমনকি আপনাকে ফোন করার জন্য দু’দিন আগে এপয়েন্টমেন্ট নেবে, এবং ঠিক সেই সময়েই ফোন দেবে। ফোন দিয়ে দু’মিনিট ধরে বলবে যে আপনি আসলেই ফ্রি আছেন কিনা এবং আপনার সাথে পাঁচ মিনিট কথা বলা যাবে কিনা।
এই হচ্ছে কানাডিয়ানদের ভদ্রতার মাত্রা। তবে এর ব্যতিক্রম যে নেই তা তো নয়। রাশভারী, রেসিস্ট ক্যানাডিয়ানও আছে, আছে হাজার হাজার ইমিগ্রেন্ট কানাডিয়ান যাদের মধ্যে এসব ভদ্রতার লেশমাত্র নেই। কিন্তু এখনও বেশিরভাগ কানাডিয়ানদের মধ্যে এই ভদ্রতার ছোঁয়া দেখতে পাওয়া যায়। ‘সরি’, ‘থ্যাংক ইউ’ এই দুটো কথাকে তারা ডাল-ভাত বানিয়ে ফেলেছে। এবং সত্য কথা কী, এগুলো বলতে বলতে তাদের আচার-আচরণে এই ব্যাপারগুলোর পজিটিভ প্রভাব পড়েছে। কিছু ভালো জিনিস যে আসলে অভ্যাস করতে হয়, সেটা আমার কানাডিয়ানদের দেখে শেখা।
আমরা ছোটকাল থেকেই আমাদের সংস্কৃতিতে দেখে এসেছি সবাইকে বলতে, “আরে বন্ধুদের মধ্যে আবার সরি, থ্যাংক ইউ কীসের!” আমার কিছু পরিচিতজন আমার উপর বিরক্ত হয় আমি বেশি বেশি ‘সরি’, ‘থ্যাংক ইউ’ ইত্যাদি বলি বলে। কেউ কেউ বলেছে, ভাই তোমার সাথে কথা বললে বেশি ফরমাল লাগে। মিশতে পারি না। আসলে আমরা এমনভাবে বড় হয়েছি যে ‘সরি’ বলা মানে আমাদের সংস্কৃতিতে অপরাধ, ‘থ্যাংক ইউ’ বলা আভিজাত্য। ‘সরি’, ‘থ্যাংক ইউ’ এগুলা আমাদের সংস্কৃতিতে খানিকটা দুর্বলতারও লক্ষণ। আমরা কেন যেন শিখেছি আমাদের সবকিছুতে জিততে হবে। আমরা নিজের ভুলে কারও পা মাড়িয়ে দিলে চিৎকার করব কেন সে ওই জায়গায় পা রাখল। নিজের ভুলে গ্লাস-প্লেট ভাঙলেও পরিবারের অন্যের সাথে চেঁচামেচি করব কেন সে ওই জায়গায় সেই গ্লাস-প্লেট রাখল। আমরা যদি কোনো ভুল করে সেটা বুঝিও, তবু তা স্বীকার করি না, কারণ ভুল স্বীকার করা আমাদের সংস্কৃতিতে বিরাট অপরাধ। সরি বলা অপরাধ। ধন্যবাদ বলা অপরাধ। অন্যের প্রশংসা করা অপরাধ। অথচ ভুল করা এবং সেটা উল্লেখ করা যে একটা চমৎকার সৌজন্যতা– এটি আমাদের কল্পনারও বাইরে।
আমরা যখন আমাদের আশেপাশে ঘটে চলা নানা সমস্যার ব্যবচ্ছেদ করি তখন গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি না, উপরের দিকে দু’চারটা সমস্যা নির্ধারণ করে তার সমাধান করে ফেলার চেষ্টা করি। ইউনিসেফের এক সাবেক সহকর্মী আমাকে একবার এক মিটিং এ চায়ের ফাঁকে বলেছিলেন, “আমাদের দেশে (বিদেশি ভদ্রমহিলা) বাচ্চারা ৪-৫ বছর বয়সে স্কুলে শিখে ফেলে যে হাত না ধুয়ে খাওয়া যায় না। হাত ধুয়েই তবে খেতে হয়। আর তোমাদের দেশে আমাদের হাজার হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নামাতে হয় মানুষকে হাত ধোয়া শেখানোর জন্য।”
এখানকার বাচ্চারা দেখি ক্লাস সেভেন-এইটে উঠেও গণিত, বিজ্ঞানের পাশাপাশি সামাজিক আচরণ, সঙ্গীত, চিত্রকলা, শিষ্ঠতা ইত্যাদি শিখতে থাকে। আমরা বাচ্চাদের ক্লাস ফোর থেকে আইনস্টাইন বানিয়ে ফেলতে চাই। অথচ এখানকার বাচ্চারা ভদ্রতা, বিনয়, সহানুভূতি, সহমর্মিতা এত ভালো করে শেখে যে পরবর্তী জীবনে এইসব নিয়ে তাদের কিছু বলতে হয় না।
আমার মনে হয় আমাদেরও শিকড়ে ফিরে যাওয়া দরকার। রাস্তা কীভাবে সিগনাল দেখে পার হতে হয়, গাড়িতে যখন তখন হর্ন দিতে হয় না, রান্নাঘরের জানালা দিয়ে পাশের গলিতে ময়লা ফেলতে হয় না, এসি গাড়ির জানালা হালকা নামিয়ে চিপসের প্যাকেট ফেলা নিষেধ— এই জিনিসগুলো স্কুলে ও বাসায় বেশি করে শেখানো দরকার, এমনকি বীজগণিত, পাটিগণিতের চাইতেও বেশি করে। আমাদের নিয়ম করে মানুষকে ধন্যবাদ দেওয়া, বার বার ধন্যবাদ দেওয়া, একে অন্যের প্রশংসা করা, বার বার প্রশংসা করা, কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা, বার বার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা– এগুলোও শেখানো দরকার খুব বেশি করে।
সব কিছুতে সব তর্কে জিততে হবে– এটি যে একটা খুব বাজে শিক্ষা, সেটাও মনে করিয়ে দেয়া জরুরি। আমি দেখেছি, এখানে সবাই নরম স্বরে ভদ্রভাবে নিজের যুক্তি উত্থাপনের সুযোগ পায়। একজন কথা বলার সময় অন্যজন তাতে অযাচিতভাবে বাধা দেয় না, একজনের কথা শেষ হলেই কেবল অন্যজন কথা বলে। যুক্তি দিয়ে হয়ত দ্বিমতও পোষণ করে, কিন্তু তারপরও যদি দু’জন ভিন্নমত পোষণ করে, তাহলে দু’জনই চুপ হয়ে যায়। আমরা তর্ক করার সময় এত জোরে চেঁচিয়ে উঠি মনে হয় যুদ্ধ করছি। এখানে আমার প্রথম কয়েক মাসে ওদের আমার কথার শব্দের ব্যাপকতায় চমকে উঠতেও দেখেছি। পরে লজ্জিত হয়ে গলার স্বর নিচু করেছি।
অনেকে বলতে পারেন ভাই এতদিন পর আজ কানাডিয়ানদের এত প্রশংসা কেন? কারণটা খুব সহজ। কানাডিয়ানদের থ্যাংকস গিভিং ডে আমাকে প্রভাবিত করেছে। অনেক কানাডিয়ানদের আচরণ আমাকে মুগ্ধ করেছে। দলাদলি, গুটিবাজি, বর্ণবাদ, রাজনীতি– এসব কিছু এদের মাঝেও আছে, এমনকি আমাদের চাইতে বেশিই আছে হয়ত কিন্তু সাথে আছে ভদ্রতা। আপনার সাথে দ্বিমত হলেই কেউ আপনার মাথায় চেয়ার ভাঙতে আসবে না। সুন্দর করে নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়বে। আপনার সাথে তর্কাতর্কি করে এরা এদের ছুটির দিন নষ্ট করবে না। ঠিকই ছুটির দিন সুন্দর করে পরিবারের সাথে ঘুরতে যাবে, একসাথে খাবে, অথবা রেস্ট নেবে।
কানাডার থ্যাংকস গিভিং ডে’তে আমি আজ কানাডাকে ধন্যবাদ জানাই। আমি আমার দেশকে অসম্ভব মিস করি, কিন্তু আমি জানি কানাডা ছাড়া পৃথিবীর অন্য যেকোনো দেশে গেলে হয়ত এতদিন থাকাও আমার পক্ষে সম্ভব হতো না। এই দেশের সরকারের বৃত্তিতে পড়ালেখা করে জীবনের খুব ভালো কিছু জিনিস উপলব্ধি করেছি, এই জন্য কানাডা সরকার ও কানাডার জনগণকেও ধন্যবাদ জানাই। কানাডার কাছে আমি শিখেছি পৃথিবীর সবাইকে ভালোবাসার দরকার নেই, সবার সাথে প্রেম প্রেম ভাব করার দরকারও নেই কিন্তু সবাইকেই ন্যূনতম ভদ্রতার সাথে হাসিমুখে সদালাপ করার কায়দা জানাটা বড্ড জরুরি। সবাইকে তাদের যার যার ভূমিকার জন্য ধন্যবাদ জানানোও কানাডিয়ানদের কাছে শিখেছি। শিখেছি কারও আচরণে বিরক্ত হলে বা কারও ব্যবহারে আশাহত হলে বিবাদে না জড়িয়ে হাসিমুখে দূরত্ব বজায় রেখে চলা যায় সহজে।
শিখেছি ধন্যবাদ দিতে। শিখেছি প্রশংসা করতে। শিখেছি বিবাদ না করে এড়িয়ে যাবার কৌশল। আজ থ্যাংকস গিভিং ডে’তে যারা নিয়মিত আমার লেখা পড়েন, তাদের সকলকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনাদের ধন্যবাদ। আপনাদের ধন্যবাদ। আপনাদের ধন্যবাদ।