সারাবাংলার ৩ বছর— একটি মূল্যায়ন
১০ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৩৭
আধুনিক গণমাধ্যম হিসেবে এখন অনলাইন পোর্টাল খুবই জনপ্রিয়। মানুষ এতটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে যে— তারা তাৎক্ষনিক সব খবর জানতে চায়। এ কারণেই বিশ্ব এখন অনলাইন গণমাধ্যমের দিকেই ঝুঁকছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ফলে যে কোনো সংবাদ এখন খুবই দ্রুত মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে।
দ্রুত সংবাদ পেতে যেমন অনলাইন পোর্টাল খু্বই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে, তেমন আবার গুজব ছাড়াতেও ভূমিকা রাখছে। এ ক্ষেত্রে অনলাইন পোর্টালগুলো পাঠকের আস্থা হারাচ্ছে। কত দ্রুত সংবাদ পাঠকের নিকট পৌঁছে দেওয়া যায়— সেই প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে সংবাদের সত্যতাও যাচাই করছে না তারা।
প্রতিযোগিতার এই সময়ে সারাবাংলা ৩ বছর পূর্তি করলো। ৩ বছর খুব বেশি সময় নয়। বলা যেতে পারে— একেবারেই শৈশব কাল। তবুও বলবো— এই অল্প শৈশব কালেও সারাবাংলাকে এখনও সেই ভুলটি আক্রান্ত করতে পারেনি। সারাবাংলার স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট সাথী আসাদ জামানের কারণেই সারাবাংলার প্রতিষ্ঠার দিন থেকে আমি এর পাঠকদের একজন। ইদানীং কিছু লেখালেখিও করছি। তারা আমার কিছু লেখা প্রকাশ করে কৃতার্থ করেছেন। নিজে একসময় একজন সংবাদকর্মী ছিলাম। তাই অভ্যাসগত কারণেই কেউ ভুল তথ্য প্রকাশ করলে তা সংশোধন করার চেষ্টা করি। সারাবাংলাও মনে হয় আমার এই খুত খুত স্বভাব থেকে মুক্তি পায়নি।
দেশে এখন কমবেশি ১০ হাজার অনলাইন পত্রিকা রয়েছে বলে শোনা যায়। সংখ্যাটি হয়তো কেউ গুনে বের করেনি, বা তথ্য মন্ত্রণালয়েও এর কোনো সঠিক তথ্য আছে বলে জানা নেই। তবে, এটা সত্য— উপজেলা থেকে রাজধানী পর্যন্ত এসব পত্রিকার ছড়াছড়ি। ফলে যেটা হয়েছে— সাংবাদিকতার চেয়ে অপসাংবাদিকতাই বৃদ্ধি পেয়েছে। চারদিকে সাংবাদিক আর গলায় প্রেসকার্ড। মফস্বলগুলোতে নাকি এই কার্ডধারীরা আতঙ্ক হিসেবে পরিচিত। রাজধানীও এর থেকে মুক্ত আছে বলে মনে করি না।
এর ভিড়ে নিজের অবস্থান পাঠকের নিকট উপস্থাপন ও প্রকাশিত সংবাদের প্রতি পাঠকের আস্থা অর্জন করতে যে কয়টি অনলাইন পোর্টাল সক্ষম হয়েছে সারাবাংলা তার অন্যতম। অল্প সময়ের মধ্যেই এই অনলাইন পোর্টালটি বাংলাদেশের গণমাধ্যম জগতে শুদ্ধ সাংবাদিকতার প্রতীক হয়ে উঠেছে যা অবশ্যই অনেক বড় অর্জন।
আমাদের মুক্তিযুদ্ধের মৌলিক আদর্শের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত সারাবাংলার একজন পাঠক ও একজন রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে কিছু প্রত্যাশা তো থাকতেই পারে। আমি নিজে যখন একজন গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে কাজ করতাম তখন শিখেছিলাম কে বলছে সেটা না ভেবে, কী বলেছে সেটা ভাবো। সেটা দেশ-জাতি-সমাজের কল্যাণে হলে তাই সংবাদ। কিন্তু, দুঃখজনক হলেও সত্য— এখন কী বলেছে এটা কেউ শুনতে চায় না। সবাই শুনতে চায় কে বলেছে। ফলে যেটি হয়ে থাকে— অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হারিয়ে যায়, প্রকাশিত হয় না। অনেক ক্ষুদ্র রাজনৈতিক দল ও কর্মী অনেক গুরুত্বপূর্ণ কথা বলেন, কাজ করেন। সেই বিষয়গুলো প্রকাশে সারাবাংলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। যা অনলাইন নিউজ পোর্টালের জগতে নতুন বিপ্লব ঘটাতে পারে। উদার, অসাম্প্রদায়িক ও মানবিক নীতিমালা ঠিক রেখেই তারা এটা করতে পারেন কিনা ভেবে দেখলে কৃতার্থ থাকবো।
নির্ভীক ও আপসহীন সাংবাদিকতার জগতে সারাবাংলাকে নিজের অবস্থান আরও বেশি সুদৃঢ় করতে হবে। মনে রাখতে হবে প্রতিযোগিতার এই সময়ে প্রতিটি মুহূর্তই গুরুত্বপূর্ণ। আধুনিক সমাজে রাষ্ট্র ও সমাজের মধ্যে সক্রিয় প্রতিষ্ঠানগুলোর অন্যতম হলো গণমাধ্যম। তথ্য-যুক্তির বিন্যাসে সমাজের পক্ষে দাঁড়িয়ে মানুষের হয়ে রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনই গণমাধ্যমের প্রাথমিক কাজ। আর সেই কাজটি সারাবাংলা যত বেশি করবে ততই জনমনে তার অবস্থান হয়ে উঠবে শক্ত।
একজন পাঠক হিসেবে প্রত্যাশা করি— সারাবাংলা এভাবেই পাঠকের আস্থা ধরে রেখে পার করুক যুগের পর যুগ। অবিশ্বাস্যের ভিড়ে নিজেকে টিকিয়ে রাখুক পাঠকের আস্থার জায়গায়। ৩ বছর পূর্তিতে জানাই অনেক অনেক শুভেচ্ছা। সারাবাংলার উদ্যোক্তা, সাংবাদিক ও সব স্তরের কর্মীদের প্রতি রইলো অভিনন্দন।
লেখক: মহাসচিব, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-বাংলাদেশ ন্যাপ ও আহ্বায়ক, জাতীয় কৃষক-শ্রমিক মুক্তি আন্দোলন