Sunday 24 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

মিথ্যার শোর বেশি আর সত্যের জোর বেশি


২৯ ডিসেম্বর ২০২০ ১৯:৫৬

সত্য চিরঞ্জীব জেনেও চলে আসছে সত্য-মিথ্যার দ্বন্দ্ব। তাই নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটলেই জন্ম নেয় খবর। অনিয়ম-অসঙ্গতিই হচ্ছে খবরের প্রধান উৎস। এক্ষেত্রে তথ্য খুঁজে বের করা এবং তা বস্তুনিষ্ঠ ও তির্যকভাবে প্রকাশ করার ঐতিহাসিক দায়িত্ব বর্তেছে সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ওপরই।

‘মক্কায়ও গাধা আছে’—একটি প্রচলিত প্রবাদ। এর সহজ-সরল অর্থ হচ্ছে, কোনো সমাজই একশভাগ অন্যায়-অবিচার, অনাচারমুক্ত নয়। সব সমাজেই ক্লেদ রয়েছে। সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকের দায়িত্ব হচ্ছে প্রতিকারের মানসে সেসব অসঙ্গতিগুলো রাষ্ট্র তথা সরকার বা সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং জনগণের সামনে একনিষ্ঠভাবে তুলে ধরা। এতে কোনোটির সমাধান হয়, কোনোটি চলে সমাধানের পথ ধরে।

বিজ্ঞাপন

সত্যে সমাদৃত তথ্য-সমুদ্র বাতিঘরের প্রয়োজন মেটায় সংবাদমাধ্যম। এ গুরুদায়িত্ব ঐতিহাসিকভাবে অর্পিত সাংবাদিকদের ওপর, তা জনগণের তথ্য ও সত্য জানার মৌলিক অধিকার থেকেই। মহাকবি জন মিল্টনের ভাষায়, ‘জনগণই সার্বভৌম ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্র পরিচালনায় তাদের ইচ্ছাই চূড়ান্ত’। তিনি আরও ঘোষণা করেন, ‘জনগণের কণ্ঠস্বরই সৃষ্টিকর্তার কণ্ঠস্বর’।

‘জ্ঞানই শক্তি’- কথাটির পরিবর্তে আজ ‘তথ্যই শক্তি’ বিশ্ব-স্বীকৃত আপ্তবাক্য। ফলে সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে একবিংশ শতাব্দীর বিশ্ব ‘গ্লোবাল ভিলেজ’-এ পরিণত হয়ে গ্রামের গৃহবাসী নিরক্ষর মানুষও হালে হয়ে উঠেছে তথ্য-সচেতন।

‘ভালো কাজ করো, তা মানুষকে জানাও’— বাইবেলের এ বাণীটি সংবাদমাধ্যমও বহন করায় আধুনিক রাষ্ট্রে অবিমিশ্র উপকার কোনো বস্তুতেই নেই বলে যে কোনো সংবাদমাধ্যম ও সাংবাদিকরা বিশ্বজুড়ে আস্থার জায়গাটিতে সমাসীন। কিন্তু ভীষণ পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান গণতান্ত্রিক পরিবেশেও সাংবাদিকদের বসবাস করতে হচ্ছে পেশাগত নিদারুণ ঝুঁকির মধ্যে। ক্রমশ বিপজ্জনক পেশায় পরিণত হয়ে সাংবাদিকরা পরিগণিত মজলুম সম্প্রদায় হিসেবে।

বিজ্ঞাপন

এ ঝুঁকি দিন বদলের হাওয়ায় আঞ্চলিক বা মফস্বল সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে অধিক প্রকট। তারা আরও কঠিন বাস্তবতাকে মাড়িয়ে কর্তব্যে নিষ্ঠাবান থেকে বহুবিধ প্রতিকূলতাকে মোকাবিলা করে এবং এলাকার স্থায়ী নিজ ও পরিবারের বিধ্বংসী প্রতিপক্ষ তথা শত্রু তৈরি করে সংবাদ পাঠায় কেন্দ্রীয় পর্যায়ে। আবার কালের বিবর্তনে গড়ে ওঠা আঞ্চলিক পর্যায়ে অনেক সংবাদমাধ্যম হাতের নাগালে অবস্থান করায় খুব সহজেই শিকার হচ্ছে প্রভাব-বলশালীদের প্রহসন ও আগ্রাসনের। অথচ বাকস্বাধীনতা স্বাধীন দেশের মানুষের অর্জিত অধিকার। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, স্বার্থরক্ষা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা সংরক্ষণের জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংগঠন বা সংস্থা কাজ করলেও ঢাকার বাইরে নেই তাদের দৃষ্টি। যদিও আইজেএফ ও সিপিজে নামক সংস্থার শাখা রয়েছে, এখন সময় এসেছে ওইসব সংগঠনগুলোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে কাজ করার।

পরিপ্রেক্ষিতটা বুঝাতে অনেক দৃষ্টান্তের মধ্যে একটি আলোয় আনা যাক। গত ২ ডিসেম্বর কালের নতুন সংবাদ অনলাইন পত্রিকায় ‘তাড়াইলে প্রভাবশালীদের কাণ্ড: মিথ্যা বিয়ের কাবিনে দিশেহারা পরিবার’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশ করায় স্টাফ রিপোর্টার মো. সোহেল রানা এবং প্রকাশক ও সম্পাদক মো. খায়রুল ইসলামের বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করা হয়েছে। অন্যদিকে একই সংবাদ বিভিন্ন শিরোনামে পরদিন ৩ ডিসেম্বর প্রকাশ হয়েছে। ঢাকাস্থ দৈনিক নওরোজ ও দৈনিক নাগরিক ভাবনা সহ ৬টি এবং ময়মনসিংহের ২টি পত্রিকায় প্রকাশিত হলেও আঞ্চলিক অনলাইন সংবাদমাধ্যম বলে কালের নতুন সংবাদ এখন সংক্ষুব্ধ শক্তিমানদের স্কেপগোট বা বলিরপাঁঠা হয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে আদালতের কাঠগড়ায়। যদিও সংবাদমাধ্যমগুলো জবাবদিহিতার জায়গা থেকে প্রতিদিন পাঠকের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় বস্তুনিষ্ঠতার শুচিতে।

অবস্থানটি কিশোরগঞ্জ জেলা সদর থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকাটির গণ্ডির সীমাবদ্ধতায় নয়। সত্যি বলতে কী, গ্রামীণ সাংবাদিকতাকে রাষ্ট্রযন্ত্রসহ অনেকেই কেয়ার করেন না—নাক ছিটকান। এমনকি আমরা যারা জাতীয় পর্যায়ে সংবাদকর্মী বা সংবাদমাধ্যম চালাই এবং পেশা-সংশ্লিষ্ট সংগঠনসুদ্ধ রয়েছে উন্নাসিক দৃষ্টিভঙ্গি। অথচ গ্রামই প্রধান শক্তি—তা কেবল বাস্তবতা নয়, ইতিহাসপ্রসিদ্ধও।

গ্রামীণ সাংবাদিকতার এক প্রবাদপুরুষ কাঙাল হরিনাথ মজুমদার ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র (১৮৬৩) সম্পাদক, নির্ভীক কলম সৈনিক। কুষ্টিয়ার কুমারখালি থেকে প্রথম হাতে লিখে দ্বিমাসিক পত্রিকাটি প্রকাশনা শুরু করেন। নিঃস্ব-নিরক্ষর গ্রামবাসীদের অভাব-অভিযোগ, অন্যায়-অবিচার, অসঙ্গতি, দুঃখ-দুর্দশা নিরসনে এবং আমলাদের বর্বরোচিত নির্যাতন তৃণমূল থেকে উৎপাটনের কাহিনীর প্রতিবাদ ও প্রতিকারের অভিপ্রায়ের কথা তুলে ধরতেন তিনি। কায়েমি স্বার্থের সঙ্গে সেবাপরায়ণতার সম্পর্ক বজায় রাখতে না পারায় জটিলতর ও অসমাধেয় রূপ নিতো। ফলে প্রভূত ক্ষতি স্বীকার করেই পত্রিকা চালাতেন।

প্রশাসন যন্ত্রের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিবর্গের ত্রুটি-বিচ্যুতি ও নীতি-আদর্শ স্খলনের কঠোর সমালোচনাও করতেন। একবার পাবনা জেলার তদানীন্তন ইংরেজ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মফস্বল পরিদর্শনে এলে এক দরিদ্র বিধবার একটি দুগ্ধবতী গাভী জবরদস্তি করে নিয়ে যায়। এ সংবাদ সাংবাদিক-সম্পাদক হরিনাথের কর্ণগোচর হলে তিনি জেলার ম্যাজিস্ট্রেটের এ গর্হিত অন্যায় কাজের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে তার পত্রিকায় ফলাও করে ‘গরুচোর ম্যাজিস্ট্রেট’ শীর্ষক শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করেন। সংবাদটি রাষ্ট্র হলে সংক্ষুব্ধ ম্যাজিস্ট্রেট হরিনাথের প্রতি অতিশয় রুষ্ট হন এবং চেষ্টা করেন তাকে সময়োচিত শায়েস্তা করার। কিন্তু কাঙাল হরিনাথের সত্য সেবার অসামান্য জনপ্রিয়তা ও চারিত্রিক দৃঢ়তার কারণে ম্যাজিস্ট্রেটের পক্ষে হরিনাথের সত্যানুসন্ধিৎসা অভিযাত্রাকে রুদ্ধ করতে পারেননি। বরং পরবর্তীকালে সত্যনিষ্ঠ স্বাধীন মত প্রকাশের নির্ভীকতার জন্য উক্ত ম্যাজিস্ট্রেটের ভূয়সী প্রশংসা অর্জন করেন গ্রামীণ সাংবাদিক হরিনাথ। ম্যাজিস্ট্রেট লেখেন, ‘এডিটর আমি তোমাকে ভয় করি না বটে; কিন্তু তোমার নির্ভীক সত্য লেখনীর জন্য আমি অনেক কুকর্ম ত্যাগে বাধ্য হয়েছি’।

মানহানি আইন জারি করা হয়েছিল ব্রিটিশ আমলের শাসক ও শাসকগোষ্ঠীর স্বার্থরক্ষার জন্য। এখন এই আইনটি আরও অনেক বেশি ধারার সমন্বয়ে অত্যন্ত কঠোরভাবে প্রয়োগ করা হচ্ছে। ৫০০/৫০১/৫০২/৫০৩/৫০৪/৫০৫ ফৌজদারি কার্যবিধির ধারা অনুসারে অতি সাধারণ অভিযোগেও যে কোনো সম্পাদক ও সাংবাদিককে গ্রেফতার করে কোমরে দড়ি বেঁধে থানায় আটকে রাখতে পারে অথবা কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে পারে। কোনো সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে এখন আর এ ধরনের কালাকানুন বহাল নেই। কোথাও কোনো মিথ্যে সংবাদে কারও ব্যাপক ক্ষতি হলেও সাংবাদিকদের বিচার হয় দেওয়ানি আদালতে, ফৌজদারি আদালতে নয়।

এমনিভাবে ফৌজদারি দণ্ডবিধির ৫৪ ধারার বলে অহরহ সাংবাদিকদের হয়রানি করা হচ্ছে। ‘স্পেশাল পাওয়ার অ্যাক্ট’র একটি অংশ বাতিল করা হলেও এই আইন-কানুনগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে যত্রতত্র। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ছাড়াও সম্প্রচার নীতিমালা ও অনলাইন নীতিমালার মতো বিভিন্ন পথে স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশের সুযোগ সংকুচিত হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ তথ্য ও সাংবাদিকতার পাল্টা হিসেবে এগুলো বড় ধরনের হুমকি হয়ে উঠেছে। এছাড়া রয়েছে আদালত অবমাননার আইন। বিচারাধীন কোনো মামলা সম্পর্কে যেমন কোনো অভিমত প্রকাশ করা যাবে না, ঠিক তেমনি আদালতের দেওয়া রায় সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করা নিষিদ্ধ। কিন্তু সভ্য দেশগুলোতে এসব নিষেধাজ্ঞা আর নেই। আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা বলছে—মানুষের প্রয়োজনেই আইন প্রণয়ন, আইনের প্রয়োজনে মানুষ নয়।

স্বীকার করতেই হয়, বাংলাদেশে সফল যে কয়েকটি সেক্টর দিন দিন বিকশিত হচ্ছে এর অন্যতম হলো সংবাদপত্র তথা সংবাদ বা গণমাধ্যম। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে সামরিক শাসক জেনারেল এরশাদের পতনের পর গণতান্ত্রিক সরকারের আমল থেকে এদেশের সংবাদপত্র এক নতুন মাত্রা পেয়েছে। বিশেষ করে ১৯৯১ সালে প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহম্মদের নেতৃত্বে গঠিত তত্ত্বাবধারক সরকার ‘প্রেস ও পাবলিকেশন’ সংক্রান্ত বিধি অনেকটা পরিবর্তন করা হলে সংবাদপত্রে লেখা হয় স্বাধীনভাবে। পরবর্তীকালে একের পর এক গণমাধ্যম আত্মপ্রকাশ করতে শুরু করে।

সেনা-সমর্থিত ড. ফখর উদ্দিনের তত্ত্বাবধারক সরকার বিগত ২০ সেপ্টেম্বর উপদেষ্টা বৈঠকে ‘তথ্য অধিকার অধ্যাদেশ ২০০৮’ চূড়ান্ত অনুমোদন দেয়। আইনটি কার্যকর করা হয় ১ জুলাই ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জোট সরকার ক্ষমতায় এলে। একই তারিখে গঠন করা হয় তিন সদস্যবিশিষ্ট তথ্য কমিশনও। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন— ‘দেশের সরকারি, বেসরকারি ও আধাসরকারি প্রতিষ্ঠান এখন বাধ্য তথ্য প্রকাশ করতে’।

এক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইনের সাফল্য অনেকাংশে নির্ভর করে তথ্য কমিশনের ওপর। কিন্তু তথ্য কমিশন আইনটির ২৯ ধারায় এমন একটি মৌলিক ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে যে, তথ্য প্রদান বিষয়ে তাদের কোনো রায়ের বৈধতা নিয়ে মামলা করা যাবে না আদালতে। এ ব্যাখ্যা আইনটির অন্তর্নিহিত নৈতিকতা ও অভিপ্রায়ের পরিপন্থী—এ অভিমত বোদ্ধাজন ও আইন বিশেষজ্ঞদের।

ভুলের ঊর্ধ্বে কেউ নন। সংবাদ পরিবেশনায় ভুল গোচরীভূত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কর্তব্য হবে তা স্বীকার করে যথাস্থানে সংশোধনী ছাপা এবং ভুল তথ্য প্রকাশের অভিযোগ উঠলে এর প্রতিবাদ ছাপা। এরপরও সাংবাদিকদের বিচারে আমাদের দেশে ‘প্রেস কাউনসিল’ গঠন করা হয়েছে বহু আগেই। কিন্তু স্বেচ্ছাচারী মহল কোনো অবস্থায় প্রেস কাউনসিলে যায় না। ক্ষমতার অপব্যবহার আর সাংবাদিকদের স্রেফ হয়রানি ও শায়েস্তা করতে আশ্রয় নেয় ফৌজদারি আদালতের। প্রেস কাউনসিলের অনুমতি ছাড়া যাতে কেউ ফৌজদারি আদালতের আশ্রয় নিতে না পারে, সেজন্য নিতান্তই প্রয়োজন একটি বিধান থাকা। নতুবা অকার্যকর ও অথর্বে পরিণত হবে ‘প্রেস কাউনসিল’ নামের অতি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটি।

পার্থিব জগতে সত্য ও মিথ্যার রয়েছে পাশাপাশি অবস্থান। অজস্র ভুলভ্রান্তিকে অতিক্রম করলেই যথার্থ সত্যের সন্ধান মেলে। এর জন্য কাঙ্ক্ষিত হিরণ্ময় সত্য উদঘাটনে বাস্তবের কঠিন ও দুর্গম পথে দরকার নিঃশঙ্ক দীপ্ত পদচারণ। আবহমানকাল থেকে যেন পরিণামদর্শী এবং মুক্তি ও শান্তি পিয়াসী ব্যক্তি দ্বন্দ্বযুক্ত উভয়ের অবস্থানকে তুলনা করে অধিকতর উত্তমকে গ্রহণ করে কাছে টেনে নিতে পারে এজন্য সংবাদপত্রকে তথা গণমাধ্যমকে বলা হয় ‘ওয়াচডগ’। যে কোনো গণতান্ত্রিক দেশে গণমাধ্যমের উদ্দেশ্য প্রধানত চারটি— ১. শিক্ষিত করা, ২. বিনোদন দেওয়া, ৩. তথ্য প্রচার করা বা পৌঁছে দেওয়া; এবং ৪. জনমত সংগঠিত করা।

গণমাধ্যমের ব্রত হচ্ছে জানানো। প্রতিদিনের স্বরূপ উদঘাটন করা। এ জগতে জনগণের কল্যাণে অজানাকে জানাবার, অচেনাকে চেনাবার, সুপ্তকে ব্যক্ত ও ব্যাপ্ত করার কাজ করছে অবিরাম। অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করার মাধ্যম হচ্ছে সংবাদপত্র তথা সংবাদ বা গণমাধ্যম। রাষ্ট্র গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো সুযোগ নেই। গণতান্ত্রিক পরিবেশ বা রাষ্ট্রীয় জীবনে আইনের শাসন এবং গণতান্ত্রিক নীতিমালার প্রতিষ্ঠা দিতে হলে একদিকে যেমন সংবাদপত্র তথা গণমাধ্যমের নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা ভোগ প্রয়োজন, অন্যদিকে তেমনি প্রয়োজন গণমাধ্যমকে তার সম্মানে এবং যোগ্যতায় বেড়ে ওঠা। এই কাজ দু’টি পরিপূরক। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাক স্বাধীনতার মতোই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থার অপরিহার্য অঙ্গ এবং সেই কারণেই গণমাধ্যমকে একদিকে যেমন যোগ্য ও সাহসী হতে হয়, অন্যদিকে তেমনি হতে হয় দায়িত্বশীল। যার যত স্বাধীনতা, তাকে ততটাই দায়িত্বশীল হতে হয়।

রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ সংবাদ বা গণমাধ্যম ও সাংবাদিকতা আজ যেভাবে হুমকির মুখোমুখি এসে দাঁড়িয়েছে, তাকে রক্ষা করতে তথা তার নিরাপত্তা বিধানে নিয়োজিত রাষ্ট্রীয় অন্যসব অপরিহার্য স্তম্ভগুলো যদি ভূমিকার ক্ষেত্রে নিষ্ক্রিয় রয়, তবে দেশ স্থবির হয়ে পড়বে। গণতন্ত্রের স্তম্ভগুলোকে অধিক সক্রিয় ও শক্তিশালী করতে হবে সংবাদমাধ্যমকে দিয়েই। কেননা, সাংবাদিকরা গণতন্ত্রের অতন্দ্র প্রহরী এবং সমাজ পরিবর্তনের চালিকাশক্তি।

আমার পত্রিকা যার সম্পাদকীয় আপ্তবাক্য ছিল ‘লেখালেখির জন্য প্রধান সম্পাদক ব্যতীত কাউকে দায়ী করা যাবে না’ এবং সম্পাদকীয় নীতি ছিলো ‘সত্য চিরঞ্জীব, তথ্য পবিত্র এবং সংবাদপ্রকাশ প্রমাণভিত্তিক’— ওই পত্রিকাটি এরশাদ সামরিক শাসনামল থেকে অদ্যাবধি ৬৩ টি মামলা খেয়েও বাংলাদেশের একমাত্র ‘নন-স্টপ’ সংবাদমাধ্যম হিসেবে বেঁচে আছে তথ্যপ্রদান সেবায়।

সাংবাদিকরা আইনের ঊর্ধ্বে নন, আবার জনগণের তথ্য জানাও সাংবিধানিক অধিকার। ‘কালের নতুন সংবাদ’ কেন, সব সংবাদমাধ্যমই সবসময় কোড অব এথিকস এবং আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখেই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর সেই ‘গ্রামবার্তা প্রকাশিকা’র মতোই বন্ধুর পথ ডিঙিয়ে ‘তবুও এগিয়ে যেতে হবে’।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; সহযোগী সম্পাদক, আজকের সূর্যোদয়, ঢাকা

সাংবাদিকতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর