শিশুরা যেন বড় হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে
১৭ মার্চ ২০১৮ ১৬:২৩
আজ ১৭ মার্চ। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন এবং জাতীয় শিশু দিবস। আমরা পরম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি এই মহান নেতাকে। জন্মদিনে জানাই তাকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাসে অনেক নেতা এসেছেন কিন্তু কেউই এ জাতির মুক্তি দিতে পারেননি। পারেননি এ ভূখণ্ডকে স্বাধীন করতে। বাঙালি হাজার বছর পরাধীনতার যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে। ১৯২০ সালের আজকের এ দিনে বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছে বলেই আজ এ জাতি মুক্ত হয়েছে, পেয়েছে স্বাধীনতা।
বঙ্গবন্ধুর জন্ম না হলে হয়ত আমাদের স্বাধীনতা পেতে আরও হাজার বছর লেগে যেত, বা হয়ত আমরা কোনোকালেই স্বাধীন হতে পারতাম না। কারণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে চর্চা করলে আমরা যা জানতে পারি, তা দেখে জানা যায় এ জাতির অন্য কেউ এ রকম এত ত্যাগ, এত আপসহীন, এত নিখুঁত রাজনীতি করেননি।
বাঙালি জাতির যত গর্ব সবই বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে। আমরা যদি ইতিহাস দেখি, তাহলে দেখব এ জাতির ইতিহাসে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই সারাবিশ্বের নির্যাতিত, নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে স্বীকৃত হয়েছেন। পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের বঞ্চিত, নিপীড়িত মানুষ বঙ্গবন্ধুকে তাদের নেতা বলে স্মরণ করে। তাই বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে বঙ্গবন্ধু সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। তার মাধ্যমে আমরা শুধু, মুক্তি পাইনি, আমরা শুধু স্বাধীনতা পাইনি, আমরা সারা পৃথিবীতে একটি বীরের জাতি, ন্যায়ের পক্ষে লড়াকু জাতি হিসেবেও পরিচিত পেয়েছি। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায়, ১৯২০ সালের ১৭ মার্চ গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়রা বেগমের ঘরে জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’র জন্ম বাঙালি জাতির ইতিহাসে সর্বোৎকৃষ্ট জন্ম, যে জন্ম না হলে আমাদের স্বাধীনতার জন্ম হতো না। বাঙালি তার পরিচয় পেত না।
পরিবারের চার মেয়ে ও দুই ছেলের সংসারে শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন তৃতীয় সন্তান। সেদিনের টুঙ্গিপাড়ার অজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’নামের শিশুটি পরবর্তীকালে হয়ে ওঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারি। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে তিনি হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা।
১৯৭৫ পরবর্তী ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর নাম মুছে ফেলার জন্য অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে । কিন্তু সব ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়েছে। কারণ বঙ্গবন্ধু ত একদিনে বঙ্গবন্ধু হননি। বঙ্গবন্ধু কাগজে কলমের খোঁচায় জাতির পিতা হননি। বঙ্গবন্ধুর উঠে আসা এদেশের মাটি থেকে। এদেশের কাদামাটি-ধুলা-জল গায়ে মেখেই তিনি বড় হয়েছেন।
বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল সরল। তার ছিলো একটাই এজেন্ডা-বাঙালির মুক্তি, বাঙালির স্বাধীনতা। তিনি কৈশোর থেকেই যে রাজনীতি শুরু করেছেন তা এদেশের মানুষের মুক্তির উদ্দেশ্যে রাজনীতি। তিনি এদেশের মানুষকে চিনতেন, এদেশের মানুষ তাকে চিনত। তিনি যে এ দেশের মানুষের পরম আপনজন তা এদেশের মানুষ চিনতে ভুল করেনি। তাই যারা তাকে হত্যা করে ভেবেছিল তার নাম মুছে ফেলা যাবে তারা ভুল ভেবেছিল। তারা হয়ত বঙ্গবন্ধুকে আঘাত করতে পেরেছে কিন্তু তাকে মুছে ফেলতে পারেনি। পারবেও না।
বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। শিশুদের নিয়ে তার অনেক স্বপ্ন ছিল। তিনি বিশ্বাস করতেন, আজকের শিশুরাই জাতির ভবিষ্যত। আগামীতে দেশগড়ার নেতৃত্ব দিতে হবে তাদেরকেই। তাই তার জন্মদিনকে শিশুদের জন্য উৎসর্গ করে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করা হয়। বঙ্গবন্ধুও তার জীবদ্দশায় জন্মদিনে কোনো অনুষ্ঠান করতেন না, কোনো আয়োজন থাকত না, তবে তিনি শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতেন।
তাই আজকে আমাদেরকেও গতানুগতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন না করে এ দিনটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর শিক্ষা ও তার আদর্শ শিশুদের মধ্যে পৌঁছে দিতে হবে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। তার এ গৌরবের ইতিহাস থেকে প্রতিটি শিশুর মাঝে চারিত্রিক দৃঢ়তার ভিত্তি গড়ে উঠবে। তাই তার জন্মদিনে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিশুদের তার আদর্শে গড়ে তোলার দৃপ্ত শপথ নিতে হবে আমাদেরকেই। কারণ শিশুরাই একদিন এদেশের নেতৃত্ব দেবে। আমাদেরকে আজ নিশ্চিত করতে হবে শিশুরা যেন বড় হয়ে ওঠে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে।
লেখক : পরিচালক, রেডিও ঢোল, এফএম ৯৪.০ ও প্রতিষ্ঠাতা, দ্য লাভলি ফাউন্ডেশন