শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণায় স্বমহিমায় উদ্ভাসিত ছাত্রলীগ
৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৬:২৩
গত কয়েক বছর ধরে ছাত্রলীগ নিয়ে আমাদের অনেক কথা শুনতে হয়েছিল। এই অভিযোগের সবগুলোই যে সত্য, তা নয়। আবার সবগুলোই যে মিথ্যা, সেটিও সঠিক নয়। সে যাইহোক, ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে যখনই কোনো অভিযোগ উত্থাপিত হতো, আমার হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হতো। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর প্রতিষ্ঠিত এই ঐতিহাসিক ও কিংবদন্তি সংগঠনের আমিও একজন সদস্য ছিলাম। বিগত বছরগুলোতে ছাত্রলীগ নিয়ে যা কিছু দৃষ্টিকটু ঘটনা ঘটেছে, তার সবগুলোই ঘটিয়েছিল ছাত্রলীগে অনুপ্রবেশকারী বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ বিবর্জিত কিছু হঠকারী ও সুযোগসন্ধানী গোষ্ঠী। আর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার একটি সুগভীর ষড়যন্ত্রের অংশ। এই বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা আমি এই লেখার পরের অংশে উল্লেখ করছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু যে স্বপ্ন নিয়ে ছাত্রলীগ সৃষ্টি করেছিলেন, বাঙালি জাতির ইতিহাসের প্রতিটি টার্নিং পয়েন্টে ছাত্রলীগ প্রমাণ করেছে পিতার আদর্শই তার চলার পথে মূল আলোকবর্তিকা, পিতার স্বপ্নই তার চলার পথে ধ্রুবতারা। পিতার নেতৃত্বে বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম, স্বাধিকার আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশে সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের সংগ্রামসহ প্রতিটি ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যের আত্মাহুতিসহ এই সংগঠনের যুগান্তকারী অবদান রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ সারা বিশ্ব যখন করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত, বিশ্ব মানবতা যখন চরম সংকটাপন্ন—যে অবস্থাকে আমার কাছে ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড ওয়ার প্লাস’ মনে হয়েছে, করোনা থেকে মানুষের জীবন রক্ষার জন্য বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে যখন লকডাউন চলছিল, তখন বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ছাত্রলীগ মানবতার সেবায় এগিয়ে আসলো। সাংগঠনিক নেত্রীর নির্দেশে ছাত্রলীগ সারাদেশে কৃষকের জন্য ধান কাটতে শুরু করে, সে ধান তারা কাঁধে তুলে কৃষকের উঠানে পৌঁছে দিয়েছে, কৃষককে তার প্রয়োজন অনুযায়ী অন্যান্য সহায়তা করেছে, কোনো কোনো অঞ্চলে চিংড়ি চাষে সহায়তা করেছে, কোথাও আবার লবণ চাষেও সাহায্য করেছে। প্রিন্ট, ইলেকট্রনিক ও সোশ্যাল মিডিয়ার বদৌলতে আমরা দেখেছি ছাত্রলীগ প্রতিদিন দেশের প্রতিটি জেলায়, প্রতিটি উপজেলায়, প্রতিটি গ্রামে কৃষকের জন্য স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বিরামহীনভাবে ধান কেটে গেছে। দেশের এই চরম ক্রান্তিকালে ধান ফলনের সময় ছাত্রলীগের এই ধানকাটা, ধান পরিবহন ও ধান মাড়াই কর্মসূচি নিঃসন্দেহে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সাহায্য করেছে।
এছাড়া দেশের সর্বত্র করোনাভাইরাস প্রতিরোধের লক্ষ্যে ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় সমূহের ল্যাবরোটারিগুলোতে শিক্ষকদের সহায়তায় নিজেরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার প্রস্তুত করে সারাদেশে বিনামূল্যে বিতরণ করেছে। তারা আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দসহ সমাজের অনেক মানবহিতৈষী ব্যক্তির কাছে থেকে সহায়তা নিয়ে অসহায় ও দরিদ্র মানুষের মাঝে ফেস মাস্ক, স্যানিটাইজার এবং হাত ধোয়ার জন্য সাবান বিতরণ করেছে। বাহ্যিকভাবে পেশাদার পরিচ্ছন্ন কর্মীর মতো, অথচ অন্তরে ভালোবাসার পরশ দিয়ে ছাত্রলীগের সদস্যরা এন্টিভাইরাস স্প্রে হাতে ছুটে চলেছিল গ্রামের পর গ্রাম। নিজেরা খেয়েছে কী খায়নি- সেদিকে না তাকিয়ে তারা কর্মহীন ও অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্য পৌঁছে দিয়েছে। এছাড়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করোনা সংকটের কারণে কর্মহীন এবং অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য দেশব্যাপী হাজার হাজার কোটি টাকার সমমূল্যের যে খাদ্য সামগ্রী ও নগদ অর্থ পাঠাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রীর এই ত্রাণ কার্যক্রমেও ছাত্রলীগ সরকারি প্রশাসনকে সহায়তা করেছে।
আমার নিজের উপজেলা চাঁদপুরের কচুয়া সহ সারাদেশেই ছাত্রলীগ এই সকল মানবিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। একটা কেস স্টাডি হিসেবে বলছি, আমার পক্ষ থেকে কচুয়ায় লকডাউনের সময় কর্মহীন প্রায় ৩৫০০ পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছিল এই ছাত্রলীগ। উপজেলা ছাত্রলীগ অত্যন্ত যত্ন সহকারে ও সুনিপুণভাবে উপজেলার প্রতিটি গ্রামে গিয়ে পঁয়ত্রিশ শত পরিবারের খাদ্যসামগ্রী তাদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে। দেশব্যাপী ছাত্রলীগের আরও কিছু মানবিক কাজের কথা আমি বলতে চাই। নিজের মা করোনা আক্রান্ত হয়েছে—এই সন্দেহে অসুস্থ মাকে যখন নিজের কুলাঙ্গার সন্তানরা জঙ্গলে রেখে আসে, তখন ছাত্রলীগ করোনা আক্রান্ত ব্যক্তি ও তার পরিবারের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে মানবতার মা শেখ হাসিনার নির্দেশ ও তারই অনুপ্রেরণায়। করোনা আতঙ্কের কারণে দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন করোনা আক্রান্ত মৃত ব্যক্তির জানাজা ও দাফনের ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছিল, অকুতোভয় ছাত্রলীগ তখন এগিয়ে আসলো জননেত্রী শেখ হাসিনারই অনুপ্রেরণায়। চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে করোনার ভয়ে মুক্তিযোদ্ধার লাশ দাফনে যখন কেউ এগিয়ে এলো না, তখন এগিয়ে আসলো ছাত্রলীগ। করোনা সংকটের মধ্যে জনগণ যাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে প্রকৃত স্বাস্থ্য সেবা পায় সেটি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করতে নগরীর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে ছাত্রলীগ এক ধরণের গোয়েন্দা নজরদারি করেছে। করোনা সংকটে ছাত্র-ছাত্রী ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবীদের সহায়তার জন্য পাবনায় ছাত্রলীগের আবেদনের প্রেক্ষিতে জেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় সকল মেসের ভাড়া ৪০ শতাংশ মওকুফ করা হয়েছিল। নিজের দেহ থেকে ‘প্লাজমা’ দিয়ে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জীবন বাঁচাতে ছাত্রলীগই প্রথম এগিয়ে আসলো। এই লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন স্থানে তারা প্লাজমা ব্যাংকের সদস্য হলো। নেত্রীর আহ্বানে ছাত্রলীগ ঘূর্ণিঝড় আম্পানেও মানবিক কার্যক্রমে যুক্ত হয়েছিল। অনেক জায়গায় তারা সাধারণ মানুষকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সতর্কীকরণের লক্ষ্যে মাইকিং করেছে। অনেক জায়গায় উদ্ধার তৎপরতায় অংশ নিয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এই ঘূর্ণিঝড় আম্পানের তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত একাধিক বেড়িবাঁধ মেরামতে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে কাজ করেছে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। আবার কোথাও কোথাও বাঁধ নির্মাণেও সহায়তা করেছে ছাত্রলীগ। কুমিল্লার দেবিদ্বারে করোনা আক্রান্ত বিএনপি নেতার লাশ দাফন করতে তার আত্মীয়স্বজন ও নিজ দলের লোকজন যখন এগিয়ে আসলো না, তখন বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এই ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই বিএনপির নেতার জানাজা সহ তার দাফনের সকল আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেছিল। করোনাভাইরাস ও ঘূর্ণিঝড় আম্পানে ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের সহায়তার লক্ষ্যে নিজেদের উদ্যোগে একটি ফান্ড গঠন করেছে গোপালগঞ্জের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্যরা। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার শাহজাদপুর ইউনিয়নে প্রায় ৩০ হাজার মানুষের চলাচলের রাস্তায় সাঁকো নির্মাণ করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। বিশ্বব্যাপী পরিবেশ বিপর্যয় ও প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে প্রকৃতিকে রক্ষায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে ছাত্রলীগ দেশব্যাপী ব্যাপকভাবে বৃক্ষ রোপণ করেছে। দেশব্যাপী করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসা সেবার জন্য স্থাপিত আইসোলেশন কেন্দ্রগুলোতেও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তিদের সেবা দিয়ে যাচ্ছে।
জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে সবসময়ই সৃষ্টিশীল ও মানবতার পথে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া যখন আওয়ামী লীগকে শায়েস্তা করার জন্য তার ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলই যথেষ্ট বলে হুমকি দিয়েছিলেন, তখন জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাত্রলীগের হাতে কাগজ-কলম-বই তুলে দিয়েছিলেন। আর ২০২০-এ করোনা মহামারিতে মানবতার মা শেখ হাসিনা ছাত্রলীগকে বই-খাতা-কলম রেখে কৃষকের পাশে কাস্তে নিয়ে দাঁড়াতে বলেছেন আর কর্মহীন ও অসহায় মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে বলেছেন। জাতির পিতার নির্দেশে যে ছাত্রলীগ একদিন অস্ত্র হাতে জীবনের মায়া ত্যাগ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল, দেশের স্বাধীনতার প্রায় পঞ্চাশ বছর পর তারই কন্যা রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার নির্দেশে সেই ছাত্রলীগ মৃত্যুভয়কে জয় করে আরেকটি যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েছিল।
লকডাউনের সময় ছাত্রলীগের সভাপতি প্রিয় ছাত্র আল নাহিয়ান খান জয়ের কাছ থেকে যখন সারা দেশব্যাপী ছাত্রলীগের বিভিন্ন মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে খোঁজ খবর নিচ্ছিলাম, জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে নেওয়া ছাত্রলীগের এই সকল জনকল্যাণমূলক ও দেশপ্রেমের কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত বর্ণনা শুনে আমার মনে হয়েছে, আমি এক স্বপ্নের ছাত্রলীগের কথা শুনছি। পিতা বঙ্গবন্ধুর যে মহান আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে একদিন ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হয়েছিলাম, আমি সেই ছাত্রলীগকেই দেখতে পাচ্ছি। দেশের মানুষের জন্য ছাত্রলীগের এই ভালোবাসা, মমত্ববোধ আর ইস্পাতকঠিন দেশপ্রেম তারা পেয়েছে পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ আর সাংগঠনিক নেত্রী রাষ্ট্রনায়ক শেখ হাসিনার অনুপ্রেরণা থেকে। এই ধরণের ভালোবাসা আর কমিটমেন্ট এদেশের দ্বিতীয় কোনো ছাত্রসংগঠন দেখাতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার কেন?
এবার আসি ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচার প্রসঙ্গে। ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কিছু নয়, বরং এগুলো আমাদের অহংকার, বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে প্রশ্নবিদ্ধ করার লক্ষ্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। এই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছিল আমাদের স্বাধীনতার পর থেকেই। পঁচাত্তরের আগে ও পরের এই ষড়যন্ত্রের কথা আমরা অনেকেই জানি; তাই আমি এর পুনরাবৃত্তি করতে চাই না। ষড়যন্ত্রের মূল কারণ হচ্ছে— বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টিতে যে কয়েকটি অস্ত্র ব্যবহার করেছিলেন, তার অন্যতম হচ্ছে তারই প্রতিষ্ঠিত এই ছাত্রলীগ। পঁচাত্তরের পর পরিষ্কার হলো, বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী গোষ্ঠী আমাদের মুক্তিসংগ্রামের মহান আদর্শগুলোকে দুর্বল ও প্রয়োজনে ভূলুণ্ঠিত করার লক্ষ্যে ঐতিহাসিকভাবে আমাদের গৌরবের প্রতিষ্ঠান ও জাতীয় অর্জনগুলোকে বিতর্কিত ও দুর্বল করার কৌশল গ্রহণ করেছিল।
এই প্রক্রিয়ায় ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে লেখা সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করা হলো। সংবিধানের মৌলিক অংশ প্রস্তাবনা থেকে অবৈধভাবে মুক্তিসংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের কিছু মৌলিক আদর্শ বাতিল করে সেখানে প্রতিস্থাপন করা হলো ঐ আদর্শ বিরোধী বিধান। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ আইন সংবিধানের আরও অনেক জায়গায় মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ সম্বলিত বিধানগুলো বাতিল করা হয়েছিল। ওই সময়ে তারা ইতিহাস বিকৃতির মহোৎসবে মেতে উঠল। জাতির পিতার নাম মুছে ফেলার চেষ্টা করা হলো। সরকারি ও প্রশাসনিকভাবে ‘বঙ্গবন্ধু’ নামটি নিষিদ্ধ করা হলো। এই প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই ছাত্রলীগের উপর সবসময় আক্রমণ হয়েছে, কারণ বঙ্গবন্ধু এই ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন আর বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ আমাদের মহান মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে অনন্য ভূমিকা রেখেছিল। আর এদেশে কিশোর ও তরুণ প্রজন্মের মাঝে বঙ্গবন্ধু ও বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের আদর্শ ও মূল্যবোধ ছড়িয়ে দেওয়ার নির্ভরযোগ্য শিক্ষালয় মনে করা হয় এই ছাত্রলীগকে। তাই ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে পারলে স্বাধীনতার চেতনাবিরোধী ও আওয়ামী লীগ বিদ্বেষী দেশি-বিদেশি চক্রের উদ্দেশ্য সফল হবে বলে তাদের বিশ্বাস।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে তাদের ক্ষোভের আরও কারণ রয়েছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে কার্যত ছাত্রলীগ হচ্ছে ফাউন্ডেশন। আওয়ামী লীগের নেতা কর্মীদের আদর্শিক ভিত্তি ও রাজনৈতিক ওরিয়েন্টেশন হয় ছাত্রলীগেই। যৌক্তিক কারণেই ছাত্রলীগের ব্যাকগ্রাউন্ড ছাড়া সাধারণত আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে আসা যায় না। ছাত্রলীগের সাবেক নেতৃত্ব থেকেই আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়। তবে প্রথা অনুযায়ী ছাত্রলীগের রাজনীতিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত না থাকলেও বিশেষক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ চর্চার শক্ত ব্যাকগ্রাউন্ড থাকলেও (যা ছাত্রলীগের আদর্শের সমার্থক) এটিকে আওয়ামী লীগে নেতৃত্ব নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক যোগ্যতা হিসেবে গণ্য করা হয়। দলে অন্তর্ভুক্তির এই ধরণের প্রথা বৃহৎ গণতন্ত্র ভারত সহ অনেক দেশেই বহুল প্রচলিত। মোটা দাগে বলতে গেলে, আওয়ামী লীগের রাজনীতির জন্য ছাত্রলীগ হচ্ছে কার্যত একটি রাজনৈতিক একাডেমি— যেখান থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা জাতির পিতার আদর্শ, মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ, দলীয় আদর্শ ও নীতিসমূহ, রাজনৈতিক সংস্কৃতি, রাজনৈতিক এথিকস, লিডারশিপ, সাংগঠনিক কর্মকৌশল, রাজনৈতিক ইতিহাস, রাজনৈতিক অর্থনীতি, নির্বাচনী রাজনীতি, সংসদীয় গণতন্ত্র, জাতীয় রাজনীতি, ভূ-রাজনীতিসহ আন্তর্জাতিক রাজনীতি ইত্যাদি বিষয়সহ সকল প্রাসঙ্গিক বিষয়ে একাডেমিক ও ব্যবহারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা অর্জন করে।
তাই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে কোনো অপবাদ প্রতিষ্ঠিত হলে সেটি আওয়ামী লীগের বর্তমান ও ভবিষ্যতের নেতৃত্বকে ইমেজ সংকটে ফেলবে—এই ধারণা থেকেই আওয়ামী বিরোধী শক্তিসমূহ মূলত আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার লক্ষ্যেই ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে এই অপপ্রচার চালিয়ে আসছে। আওয়ামী বিরোধী এই অপশক্তি আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করতে বদ্ধপরিকর। ১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর, আর ২১ আগস্টে তারা সেই কাজটিই করতে চেয়েছিল। আওয়ামী বিরোধী এই চক্রের কেউ কেউ সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে সুশীল সমাজের লেবাসে দেশে বিদেশে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে প্রচারণায় লিপ্ত থাকে। এর অংশ হিসেবেই অনলাইন-ভিত্তিক এনসাইক্লোপিডিয়া উইকিপিডিয়ায় বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সম্পর্কে সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বিদ্বেষপূর্ণ তথ্য দেওয়া হয়েছে। ওই রিপোর্টের কোথাও বাঙালির মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগের ঐতিহাসিক অবদানের কথা সহ ছাত্রলীগ সম্পর্কে ইতিবাচক কিছুই উল্লেখ করা হয়নি। আমরা এটি সম্পূর্ণভাবে এডিট করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছি।
আরেকটি বিষয়, ছাত্রলীগ অসাংবিধানিক ও অগণতান্ত্রিক সরকারগুলোর বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রামে সবসময় নেতৃত্ব দিয়েছে। একারণেও মহল বিশেষ ছাত্রলীগের উপর ক্ষুব্ধ। এছাড়া একশ্রেণীর সুবিধাবাদী, সুযোগসন্ধানী ও রাজনৈতিক উচ্চাভিলাষী ব্যক্তি যারা ছাত্র জীবনে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিল না কিংবা ছাত্রলীগের আদর্শের বিপরীতে রাজনীতি করেছে কিংবা সারাজীবন রাজনৈতিক সংস্কৃতির বাইরে ছিল, তারা সুবিধা বুঝে নিজেদের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের ক্ষেত্র তৈরি করতে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অপপ্রচারে লিপ্ত থাকে। এই দলে রয়েছে কিছু সরকারি কর্মকর্তা যারা ছাত্রজীবনে অন্য আদর্শের রাজনীতি করেছে কিংবা যারা জীবনে কোনোদিন রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল না। এই সকল ব্যক্তি চাকরি থেকে অবসরের পর শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্য সরকারি দল হিসেবে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না থাকলে তারা ক্ষমতাসীন অন্য রাজনৈতিক দলে যোগদানের চেষ্টা করতো।
ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে আরেকটি অপপ্রচার হচ্ছে, ছাত্রলীগ মেধাশূন্যদের সংগঠন। অর্থাৎ মেধাবী ছাত্ররা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত নয়। অথচ গত ছয় দশকে অগণিত মেধাবী ছাত্র যারা এই সংগঠনের সদস্য ছিলেন, তারা ছাত্রত্ব শেষ করে জাতীয় অঙ্গনে, এমনকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। উপনিবেশিক পাকিস্তান আমল থেকেই ছাত্রলীগের সদস্যদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের পরীক্ষায় মেধা তালিকায় শীর্ষ স্থানগুলো অর্জন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা ও গবেষণার পেশা গ্রহণ করেছেন। তাদের অনেকেই বুদ্ধিজীবী ও দার্শনিক হিসেবে দেশে-বিদেশে অবদান রেখেছেন। অনেকে সমগ্র পাকিস্তানের মধ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় শীর্ষস্থান লাভ করে সিভিল সার্ভিসে যোগ দিয়েছিলেন। তাদের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশ ও তার অনুপ্রেরণায় বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের পক্ষে কাজ করেছেন। অনেকে দেশে-বিদেশে বিজ্ঞানী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন। দেশের স্বাধীনতার পরও একই ধারা অব্যাহত রয়েছে। আমার নিজের কথা-ই বলি। বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৪ সালে আমাকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রথম আইন বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আমার একাডেমিক ক্যারিয়ারের মধ্যে আছে, শিক্ষাবোর্ডে মেধাতালিকায় স্থান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন সম্মানে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম স্থান, যুক্তরাজ্যের বিখ্যাত ডান্ডি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনের অত্যন্ত বিশেষায়িত ফিল্ড-এনার্জি ল’ এন্ড পলিসি-তে মর্যাদাপূর্ণ ডিন্স এওয়ার্ড সহ পিএইচডি অর্জন। ছাত্রলীগের ওই একই কমিটিতে আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন সমাজবিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী ছাত্র ড. জামালউদ্দিন যার একাডেমিক ক্যারিয়ার আমার মতোই ছিল। তিনি যুক্তরাজ্যের নটিংহ্যাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করছেন। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন মেধাবী ছাত্র আমাদের কমিটিতে ছিল। আমাদের আগের ও পরের প্রজন্মের ছাত্রলীগের সদস্যরা অনেকটা একই রকম মেধাবী ছিল। তাদের অনেকেই দেশে-বিদেশে সর্বোচ্চ একাডেমিক ও প্রফেশনাল ডিগ্রি সম্পন্ন করে স্ব স্ব ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে দেশের জন্য কাজ করছেন।
আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা মমতাময়ী অভিভাবক হিসেবে নিয়মিত আমাদের পড়াশুনার অগ্রগতির খোঁজ খবর নিতেন। তিনি আমাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন, যে সকল ছাত্রদের পরীক্ষার তারিখ ঘোষিত হবে, তারা সংগঠন থেকে ছুটি নিয়ে শুধু পড়াশুনা করবে পরীক্ষার জন্য। তিনি সবসময় বলে আসছেন, ছাত্রদের কাজ আগে পড়াশুনা, তারপর রাজনীতি। এর ফলে ছাত্রলীগে পড়াশুনা ও মেধার চর্চা অনেক বেশি বৃদ্ধি পেয়েছিল। উল্লেখ্য, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই শিক্ষাঙ্গনে অস্ত্রের ঝনঝনানি আর অভিশপ্ত সেশনজট চিরতরে বন্ধ করে এদেশে প্রকৃত শিক্ষার পরিবেশ উপহার দিয়েছেন। তিনি জেলায় জেলায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ শিক্ষার উন্নয়নে যা যা করণীয়, তা-ই করেছেন। বঙ্গবন্ধুর পর জননেত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া এরকম শিক্ষানুরাগী রাষ্ট্রনায়ক বাংলাদেশে আমরা আর দেখিনি। স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৫-তে শিক্ষাকে সকল নাগরিকের মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে ঘোষণা করে বিধান করেন যে, রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব হবে নাগরিকদের এই প্রয়োজন মেটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করা। অর্থাৎ মৌলিক প্রয়োজন হিসেবে শিক্ষার অধিকার বঙ্গবন্ধুই আমাদের দিয়ে গেছেন। আমরা হয়তো অনেকেই জানি না, ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশ ও অন্যান্য পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য একই রকম আইন প্রণয়ন করে পিতা বঙ্গবন্ধু জ্ঞানের অবাধ প্রবাহ, মুক্তচিন্তা ও স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের ‘একাডেমিক ফ্রিডম’ প্রদান করেন। এই আইনের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ছাত্রদের সরাসরি রাজনীতি করার অধিকার দিয়ে গেছেন।
প্রতিটি প্রজন্মেই মেধাবী ছাত্ররা ছাত্রলীগের সঙ্গে ছিল। ছাত্রলীগের এই মেধাবী সদস্যরা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, অর্থনীতি, আইন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, কূটনীতি, চারুকলা সহ জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় মেধার স্বাক্ষর রেখে দেশ ও মানবতার সেবা করছেন। সমাজ ও রাষ্ট্রের নানা স্তরে ছাত্রলীগের মেধাবী সদস্যরা যে অবদান রেখেছে, আর কোনো ছাত্রসংগঠনের সদস্যরা এরকম অবদান রাখতে পেরেছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ছাত্রলীগের মেধাবী সদস্যরা নিজ যোগ্যতা বলে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিসভার সদস্য থেকে শুরু করে সুপ্রিমকোর্টের বিচারপতিসহ সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান এবং সামরিক ও বেসামরিক প্রশাসনের শীর্ষ পদসহ রাষ্ট্রের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাত্রলীগের প্রাক্তন সদস্যরা দায়িত্ব পালন করেছেন।
জাতির পিতার নির্দেশনায় মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদ-সহ সকল পর্যায়ের পদে ছাত্রলীগের প্রাক্তন সদস্যগণ দায়িত্ব পালন করে আসছেন। ছাত্রলীগের সদস্যরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ বুকে ধারণ করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রতি ইস্পাত কঠিন আনুগত্য রেখে জাতীয় রাজনীতির প্রতিটি স্তরে মেধার স্বাক্ষর রেখে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। তাদের প্রতিটি কাজেই মেধা, মনন, প্রগতি আর দেশপ্রেমের ছোঁয়া থাকে। ‘ছাত্রলীগে মেধাবী ছাত্র নেই’—এ ধরণের অপপ্রচার দুরভিসন্ধিমূলক ও ষড়যন্ত্রমূলক।
এটি অত্যন্ত দুঃখজনক যে, গত তিন দশকে রাষ্ট্রীয় কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্বপালনকারী ব্যক্তিকে আমি দেখেছি যারা ছাত্রলীগ সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব দেখাতেন। তারা সুযোগ পেলে ছাত্রলীগকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করতেন। কিছু পত্রিকার সম্পাদকও সবসময় ছাত্রলীগের প্রতি বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব দেখিয়েছেন; এখনো সেই ধারা অব্যাহত আছে। তাদের সকলের উদ্দেশ্যে আমি বলতে চাই, আজ বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টি হয়েছিল বলে আপনি রাষ্ট্রীয় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন; সরকারি উচ্চ পদে আসীন হয়েছেন; এই রাষ্ট্রের সুবিধাভোগী হয়েছেন। আপনি কি জানেন, জাতির পিতার নেতৃত্বে মুক্তিসংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধে ছাত্রলীগ ছিল তার নিউক্লিয়াস? আপনি কি জানেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তার ছাত্রলীগ এই রাষ্ট্রের জাতীয় পতাকা তৈরি করেছিল এবং বঙ্গবন্ধু সেটি তাদের দিয়েই প্রথম উড়িয়েছিলেন? আপনি কি জানেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তারই উপস্থিতিতে একাত্তরের মার্চের তিন তারিখে ছাত্রলীগই পাঠ করেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইশতেহার? স্বাধীন বাংলাদেশের চেহারা কিরকম হবে— সেটি ওই ইশতেহারে তুলে ধরা হয়েছিল । আপনি কি জানেন, ওই ইশতেহারেই বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত কী হবে—সেই প্রস্তাব ছিল? আপনি কি জানেন, এটি সেই সংগীত যেটি বঙ্গভবনের অনুষ্ঠানে বাজানো হলে আপনি সোজা দাঁড়িয়ে থাকেন? আপনি কি জানেন, বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ছাত্রলীগ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অন্যতম মূল সংগঠক হিসেবে নেতৃত্ব দিয়েছে আর মুক্তিসংগ্রাম সহ এই যুদ্ধে ছাত্রলীগের কয়েক লাখ সদস্য দেশমাতৃকার জন্য জীবন দিয়েছে? আপনি কি জানেন, বঙ্গবন্ধুকন্যা রাষ্ট্রনায়ক জননেত্রী শেখ হাসিনা এই ছাত্রলীগের নেতা হিসেবে বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের একজন বীর সেনানী ছিলেন? আপনি কি জানেন, বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিসংগ্রামে অগ্রণী ভূমিকা পালন করার জন্যই বঙ্গবন্ধু এই ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ১৯৪৮ সালে? আর এ সকল কারণেই জাতির পিতা স্বাধীনতার পর বলেছিলেন, ‘ছাত্রলীগের ইতিহাস, বাঙালির ইতিহাস।’ এর অর্থ হচ্ছে, ছাত্রলীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা যায় না । বাংলাদেশ রাষ্ট্র সৃষ্টির ইতিহাসের সঙ্গে ছাত্রলীগের নাম মিশে আছে। এই স্বীকৃতি দিয়ে গেছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু—যিনি বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছেন। এই ছাত্রলীগ তারই সৃষ্টি।
লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ