সেদিন স্বাধীনতা পূর্ণতা পেয়েছিল
১০ জানুয়ারি ২০২১ ১৭:১৩
১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাংলার মুক্তিকামী জনগণ দেশের স্বাধীনতা ও বিজয় ছিনিয়ে আনলেও প্রকৃত অর্থে সেদিন স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে বাংলাদেশের মানুষ বিজয় উৎসব করতে পারেনি। কারণ বিজয়ের মহানায়ক সেদিন ছিলেন অনুপস্থিত। তিনি ছিলেন পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি। ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা, স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠ থেকে মুক্তি লাভ করে তাঁর স্বপ্নের স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশে ফিরে আসেন।
বাঙালি জাতি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে দখলদার পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে। মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাঙালির হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ সন্তান, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারে থেকে মুক্তি পেয়ে তাঁর প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসার মাধ্যমে সে বিজয় পূর্ণতা লাভ করে। প্রকৃত অর্থে সেদিনই বাংলাদেশের মানুষ তাঁদের বহু কাঙ্খিত বিজয় উৎসব পরিপূর্ণভাবে পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানিদের হাতে বন্দি ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ কালরাত্রিতে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বঙ্গবন্ধুকে তাঁর ধানমন্ডির ঐতিহাসিক বত্রিশ নম্বরের নিজ বাসভবন থেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যায়। বঙ্গবন্ধুর অবর্তমানে তাঁর নামেই এদেশের মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো নয় মাস প্রতিদিন প্রতি মুহূর্ত বাঙালির প্রতিটি মানুষের হৃদয় মননে ছিল তাঁদের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু মুজিব।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ ছিল নয় মাসের কিন্তু পাকিস্তানের শোষক গোষ্ঠীর নাগপাশ থেকে মুক্ত হতে বাঙালিকে সংগ্রাম করতে হয়েছে দীর্ঘ সিকি শতাব্দী পর্যন্ত, আর যার নেতৃত্ব দিয়েছেন বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এই নেতৃত্ব দিতে তাঁকে চরম মূল্য দিতে হয়েছে। জীবন যৌবনের চৌদ্দটি বছর তাঁকে পাকিস্তানের অন্ধকার কারা প্রকোষ্ঠে থাকতে হয়েছে। একদিকে ফাঁসির মঞ্চ অন্যদিকে বাঙালির অধিকার আদায়ের নিরলস সংগ্রাম। নিজের জীবনকে তুচ্ছ করে মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামকেই বেছে নিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। জেল-জুলুম নির্যাতন সহ্য করেছেন কিন্তু অন্যায়ের কাছে মাথানত করেননি কোনদিন। আর তাইতো বাঙালিদের মাথার মুকুট হয়ে বাঙালির আজীবনের লালিত স্বপ্ন স্বাধীনতা এনে দিতে পেরেছিলেন।
এই যে বঙ্গবন্ধুর ডাকে মানুষ বিপুলভাবে সাড়া দিয়েছিল, ভাবলে বিস্ময় লাগে! কি এমন ছিল তাঁর জাদুকরী ডাকে? তিনি মানুষকে বুঝতে পারতেন, ভালো বাসতেন, শুধু ভালো বাসতেন না, হৃদয় দিয়ে ভালো বাসতেন। পাকিস্তানি আমলে কত কত নেতা, কত বড় বড় নেতা, কেউ বাঙালিকে একসুতায় গাধতে পারেনি। কিন্তু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের শাসক গোষ্ঠীর রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিপীড়ন নির্যাতন সহ্য করে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানের ঘরে ঘরে গিয়ে মানুষকে স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করেছিলেন। অধিকারবঞ্চিত মানুষকে তাদের অধিকার আদায়ের জন্য উজ্জীবিত করেছিলেন, স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন তাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতার। কাজটি অতটা সহজ ছিলো না, অনেক অনেক কঠিন কাজ ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলার মানুষকে বুঝতে পেরেছিলেন, বাংলার খেটে খাওয়া গরীব দুঃখী, শোষিত বঞ্চিত মানুষের হৃদয় মন জয় করেছিলেন। তিনি ছিলেন সাধারণ মানুষের নেতা। সাধারণ মানুষের কষ্টে তিনি কষ্ট পেতেন, তিনি সব মানুষকে আপন করে নিয়েছিলেন। যার কারণে মানুষ তাঁকে ভালো বাসতেন, বিশ্বাস করতেন, আপন মনে করতেন। সে কারণেই তাঁর ডাকে সাড়া দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মুক্তি সংগ্রামে, মুক্তিযুদ্ধে। আর সেই যুদ্ধে ১৬ ডিসেম্বর জয় লাভ করলেও বাংলাদেশের মানুষ প্রকৃত বিজয়ের স্বাদ অনুভব করতে পারেনি। বিজয়ের পরিপূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে পারেনি বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতির কারণে।
তারপর ১০ জানুয়ারি আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। বঙ্গবন্ধু ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণার পর মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস তাকে থাকতে হয় পাকিস্তানের কারাগারের নির্জন প্রকোষ্ঠে। এ সময় প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয় এই মহান নেতাকে। তাঁর আগমনের দিনটি তাই এখনও বাঙালির মনে গভীর আনন্দের স্মৃতি হয়ে আছে। যা থাকবে অনন্তকাল। যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে ১৯৭২ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আগমন বাঙালি জাতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হিসাবে কাজ করেছে। দীর্ঘ সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা, আন্দোলন ও আত্মত্যাগের মাধ্যমে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের পর যুদ্ধ বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নেওয়ার প্রশ্নে দেশের মানুষ যখন বাস্তবতার মুখোমুখি- তখন পাকিস্তানের বন্দীদশা থেকে মুক্তি পেয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। নয় মাসের বেশি সময় পাকিস্তানের কারাগারে মৃত্যুযন্ত্রণা শেষে লন্ডন-দিল্লী হয়ে তাঁর প্রিয় মুক্ত স্বাধীন স্বদেশের পবিত্র মাটিতে পা ফেলেন।
১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পান। একটি পাকিস্তান সামরিক বিমানে খুব গোপনে বঙ্গবন্ধুকে লন্ডনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। লন্ডনে সময় তখন ভোর ৮টা ৩০ মিনিট, ৯ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল। তাঁর প্রিয় স্বাধীন বাংলাদেশে ফেরার জন্য বঙ্গবন্ধু ওঠেন ব্রিটিশ রাজকীয় বিমান বহরের কমেট জেটে। বাংলাদেশে ফেরার পথে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুরোধে বিমানটি দুই ঘণ্টার যাত্রা বিরতি করে দিল্লীতে। ভারতের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ভি ভি গিরি ও প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বঙ্গবন্ধুকে বিমান বন্দরে রাজকীয় অভ্যর্থনা জানান। সেদিন বঙ্গবন্ধু লন্ডন এবং দিল্লীতে পেয়েছিলেন বীরোচিত সংবর্ধনা। ১৯৭২ সালের ৮ জানুয়ারি সকাল ৭টায় বিবিসি’র ওয়ার্ল্ড সার্ভিসে প্রচারিত খবরে বলা হয়, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বিমানযোগে লন্ডনে আসছেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমানটি লন্ডনের হিথরো বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।’ প্লেনটি বিমানবন্দরে অবতরণ করার পর নেমে বঙ্গবন্ধু ভিআইপি লাউঞ্জে আসলে তাঁকে ব্রিটিশ বৈদেশিক দফতরের উপস্থিত কিছু কর্মকর্তা স্বাগত জানান। কিছুক্ষণের মধ্যে সেখানে ব্রিটিশ ফরেন অফিসের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা স্যার ইয়ার মাদারল্যান্ড উপস্থিত হয়ে জানান ব্রিটিশ সরকার বঙ্গবন্ধুকে রাষ্ট্রীয় অতিথির মর্যাদা দিয়েছেন। সকাল ৮টার মধ্যেই বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সরকারের সম্মানিত অতিথি হিসেবে লন্ডনের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত ক্যারিজেস হোটেলে নিয়ে আসা হয়। অল্প সময়ের মধ্যে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নেতা (পরে প্রধানমন্ত্রী) হ্যারল্ড উইলসন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে এসে বলেন ‘গুড মর্নিং মি. প্রেসিডেন্ট।’
বঙ্গবন্ধু যখন লন্ডনে পৌঁছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী স্যার এ্যাডওয়ার্ড হিথ ছিলেন লন্ডনের বাইরে। বঙ্গবন্ধুর পৌঁছানোর কথা শুনে পূর্বনির্ধারিত কর্মসূচী বাতিল করে প্রধানমন্ত্রী হিথ ১০নং ডাউনিং স্ট্রিটে ছুটে আসেন। প্রধানমন্ত্রী হিথ বঙ্গবন্ধুকে নজীরবিহীন সম্মান দেখান। ইতিহাস সাক্ষী ঐদিন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিথ নিজে তাঁর কার্যালয়ের বাইরে এসে গাড়ির দরজা খুলে দাঁড়িয়ে রইলেন, যতক্ষণ বঙ্গবন্ধু গাড়ি থেকে বেরিয়ে না এলেন।
কেমন ছিল বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সেই দিন। প্রত্যক্ষদর্শীর বর্ণনামতে ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বাংলাদেশের চিত্র ছিল এ রকম- সকাল থেকেই তেজগাঁও বিমানবন্দরের রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধ মানুষ। বাংলাদেশ বেতার থেকে ধারাবিবরণী দেয়া হচ্ছিল। বিমানবন্দর ও রাস্তার দু’পাশে অপেক্ষমাণ বীর বিজয়ী জনতা। অন্যরকম উত্তেজনা সবার চোখেমুখে। বাঙালির মহান নেতা আসছেন। লাখো মানুষের ভিড় রাজপথজুড়ে। সবার কণ্ঠে ‘জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু’ স্লোগান। অবশেষে অপেক্ষার পালা শেষ। বঙ্গবন্ধু এলেন। যে দেশ এবং যে স্বাধীনতার জন্য জীবনবাজি রেখেছিলেন শতাব্দীর মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, সেই পবিত্র মাটিতে পা দিয়েই আবেগে কেঁদে ফেলেন। বিমানবন্দরে তৎকালীন অস্থায়ী সরকারের মন্ত্রীবৃন্দ, জাতীয় নেতৃবৃন্দ, পরিবারের সদস্য, ছাত্রনেতা, মুক্তিযোদ্ধা সবাই অশ্রুসজল নয়নে বরণ করেন ইতিহাসের এই মহা নায়ককে। পরিপূর্ণ বিজয়ের আনন্দে ভেসে যায় তাঁর প্রিয় স্বদেশ।
১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশের দায়িত্ব নিয়ে সাড়ে তিন বছরে একটি স্বাধীন দেশের জন্য যা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু তা ছিল এক বিস্ময়কর ব্যাপার। দেশ পুনর্গঠনের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন, জাতিসংঘের সদস্যপদ অর্জন, কমনওয়েলথের সদস্যপদ অর্জন বিদেশের বুকে বাংলাদেশকে তুলে ধরা ছিল ঐ অল্প সময়ের সেরা অর্জন। সেটা সম্ভব হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিত্বের কারণে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ পুনর্গঠনে তিনি যে নিরলস শ্রম দিয়েছিলেন সেটাই ছিল বাংলাদেশের ভিত্তিমূল। যুদ্ধের নয় মাস পাকিস্তানিরা সব ধ্বংস করে দিয়েছিল। রাস্তাঘাট, ব্রীজ, কালভার্ট, কল কারখানা ওই অল্প সময়ে চালু করা ছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের বিরাট সাফল্য। একদিকে দেশি-বিদেশি পরাজিত শত্রুর অব্যাহত চক্রান্ত অন্যদিকে দেশীয় অতি লোভী কিছু দুষ্টু রাজনৈতিক নেতাদের চক্রান্ত শুরুতেই মানুষকে নানা বিভ্রান্তিতে ফেলেছিল। সব চক্রান্ত আর ষড়যন্ত্রকে পরাস্ত করে যখন দেশকে সঠিক পথে নিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই আঘাত হানা হয়েছিল বাঙালির হাজার বছরের স্বপ্ন পূরণের বাতিঘর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। যা পারেনি বর্বর পাকিস্তানি শোষক গোষ্ঠী তাই করলো তাদেরই এদেশীয় এজেন্ট খুনি মোস্তাক-জিয়া-ফারুক-রশীদ গংরা। চিরতরে নিভিয়ে দিলো বাঙালির বাতিঘর। স্বাধীনতার সাড়ে তিন বছরেই বাঙালির হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত বিজয় ধুলিস্মাৎ হয়ে গেল। আবার এতিম হয়ে গেল বাংলাদেশের মানুষ, স্বাধীনতা ও বিজয়ের আনন্দ বিষাদে পরিণত হলো।
পাকিস্তান আমলে চব্বিশ বছরের লড়াই সংগ্রাম শেষে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর যে বিজয় অর্জিত হয়েছিল তাঁর পরিপূর্ণতা পেয়েছিল ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সালে স্বাধীনতার মহানায়ক, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ফিরে আসার মধ্য দিয়ে। বিজয়ের সাড়ে তিন বছরের মধ্যেই হয়তো আমরা সেই বিজয়ের মহানায়ককে হারিয়েছি। কিন্তু তাঁর স্বপ্নের সেই স্বাধীন বাংলাদেশ আজ তাঁর আদরের কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছে। সব ষড়যন্ত্র চক্রান্তকে উপেক্ষা করে বাংলাদেশ আজ মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হতে চলেছে। মাথা পিছু আয় আজ উপমহাদেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, রিজার্ভের পরিমান প্রায় ৪৪ বিলিয়ন ডলার। জিডিপিতে বাংলাদেশ আজ অনেক দেশকেই অতিক্রম করে চলেছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যুর হার প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনা, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, টানা এক যুগ ধরে বছরের প্রথম দিন সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেওয়া, সামাজিক বেষ্টনীর আওতায় বিধবা ভাতা, বয়স্ক ও স্বামী পরিত্যাক্তভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা প্রদান। মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বহু পরিমাণ বৃদ্ধি করা, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়াসহ নানা ধরণের সামাজিক সুরক্ষামুলক কাজ করে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে একটি মানবিক রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। পদ্মা সেতু, রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, মাতারবাড়ী, পায়রা বন্দর, কর্ণফুলী টানেল, মেট্রোরেল, ফোর লেনে জাতীয় মহাসড়ক ও এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশকে আজ অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন তাঁর সুযোগ্য কন্যা চার চারবারের সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যা তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধুরই স্বপ্নেরই সফল বাস্তবায়ন।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু যেমন তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে ফিরে আসায় বাংলাদেশের মানুষ আনন্দে আপ্লুত হয়েছিলেন। স্বার্থকতা পেয়েছিল দেশের স্বাধীনতা তাঁর নেতাকে ফিরে পেয়ে। ঠিক তেমনই ১৯৭৫ এর পনেরই আগস্টের বিয়োগান্তক ঘটনার পর অবৈধ সামরিক শাসক জেনারেল জিয়ার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে নিজের জীবনের মায়া তুচ্ছ করে ১৯৮১ সালের সতেরই মে প্রিয়জন হারানোর একবুক ব্যাথা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা দেশে ফিরে এসেছিলেন বলেই বাংলাদেশ আজ সামরিক শাসনমুক্ত। বিচার হয়েছে একাত্তর ও পঁচাত্তরের খুনিদের। দেশে আজ গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠিত, স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায়। দেশ আজ উন্নতির উচ্চ শিখরে অবস্থান করছে। বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের দেশকে নিয়ে এবং দেশের মানুষকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলেন সেই স্বপ্নেরই সফল বাস্তবায়ন চলছে তাঁরই প্রতিষ্ঠিত দল আওয়ামী লীগ ও তাঁর কন্যার সঠিক নেতৃত্বে। ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস শুধু আনন্দের দিনই না, অনুপ্রেরণার দিন, আবেগের দিন, আর অবশ্যই ইতিহাসের একটি শ্রেষ্ঠ দিন, সেরা দিন। সে দিন এসেছিল বলেই বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে এগিয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব আজ দেখছে শেখ মুজিবের বাংলাদেশ আজ তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বুকটান করে মাথা উঁচু করে বীরদর্পে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। বঙ্গবন্ধু আপনি কি দেখছেন!
লেখক: কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মো. আসাদ উল্লাহ তুষার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস