আশ্রয়হীনের স্বপ্নপূরণ
২৩ জানুয়ারি ২০২১ ১৫:৩৪
বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই যুগান্তকারী ইচ্ছার প্রতিফলন দেখছে দেশ। সারা দেশে ৬৯ হাজার ৯০৪টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার জমিসহ ঘর পাচ্ছে। একসঙ্গে এত ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে ঘর করে দেওয়ার ঘটনা একটি ঐতিহাসিক ঘটনা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘোষণা অনুযায়ী তিনটি প্রকল্পের মাধ্যমে এই উদ্যোগ বাস্তবায়ন করা হয়। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘দুর্যোগ সহনীয় বাড়ি প্রকল্প’, ভূমি মন্ত্রণালয়ের আওতায় ‘গুচ্ছগ্রাম প্রকল্প’ এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ‘আশ্রয়ণ প্রকল্প-২’ প্রকল্পের আওতায় দেশের ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘর নির্মাণ করে।
ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল,অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা ও আয়বর্ধক কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণের লক্ষ্যে সরকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ বাস্তবায়ন করছে। এ প্রকল্পে ঘূর্ণিঝড়, সিডর, আইলা আক্রান্ত এলাকার জন্য পাকা ব্যারাক, অন্যান্য অঞ্চলের জন্য সেমি-পাকা ব্যারাক এবং নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য তাদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি ও রীতিনীতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে বিশেষ ডিজাইনের গৃহ নির্মাণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল।
যার কোনো জমি ও ঘর নেই, তাদেরকে আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যারাকে পুনর্বাসন করা হচ্ছে। যার ১-১০ শতাংশ জমি আছে কিন্তু ঘর নেই অথবা জরাজীর্ণ ঘরে বসবাস করে, তাদের নিজ জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া এবং যার কোনো জমি নেই তিনি কমপক্ষে ১ শতাংশ জমি দানসূত্রে অথবা অন্য কোনোভাবে প্রাপ্ত হলে তাকে তার জমিতে ঘর নির্মাণ করে দেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে এই প্রকল্পে। দেশে ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবার ২ লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১টি। অন্যদিকে অল্প জমি আছে, কিন্তু ঘরহীন বা থাকলেও জরাজীর্ণ—এমন পরিবার আছে ৫ লাখ ৯২ হাজার ২৬১টি। ধাপে ধাপে দেশের ৮ লাখ ৮২ হাজার ৩৩টি গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার ঘর পাবে। দিনাজপুরের সদরের বাঙ্গীপোচা ব্রীজের কাছে পুনর্তবা নদী সংলগ্ন হিজড়া সম্প্রদায়কে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশে প্রথম ২৫০টি ঘর নির্মাণ করে দেয়।
১৯৯৭ সালের ১৯ মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কক্সবাজারে পরিদর্শনে যান। সেখানে মানুষের দুঃখ দুর্দশা দেখে অত্যন্ত সহানুভূতিশীল হয়ে পড়েন। কারণ এর কিছুদিন আগেই কক্সবাজার জেলাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকা ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্ত হয়। ফলে অনেক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ে। তাৎক্ষনিক সকল গৃহহীন পরিবারসমূহকে পুনর্বাসনের নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তারই পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৯৭ সালে আশ্রয়ণ নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। সারাদেশে গ্রামাঞ্চলে ব্যারাক হাউজ এবং বিভাগীয় সদর ও রাজউক, বিভিন্ন সিটি কর্পোরেশন এলাকা, জেলা ও উপজেলা সদর এবং পৌরসভা এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গৃহহীন মানুষদের পুর্নবাসনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সেই মহানুভবতারই সফল বাস্তবায়ন হলো আশ্রয়ণ প্রকল্প।
আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে পুনর্বাসিত ভূমিহীন, গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের স্বামী-স্ত্রীর যৌথ নামে ভূমির মালিকানা স্বত্বের দলিল/কবুলিয়ত সম্পাদন, রেজিস্ট্রি ও নামজারী করে দেওয়া হয়। পুনর্বাসিত পরিবারসমূহের জন্য সম্ভাব্য ক্ষেত্রে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ, মসজিদ নির্মাণ, কবর স্থান, পুকুর ও গবাদিপশু প্রতিপালনের জন্য সাধারণ জমির ব্যবস্থা করা হয়। পুনর্বাসিত পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন উৎপাদনমুখী ও আয়বর্ধক কর্মকাণ্ডের জন্য ব্যবহারিক ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দান এবং প্রশিক্ষণ শেষে তাদের মধ্যে ক্ষুদ্র ঋণ বিতরণ করার সুযোগ জীবিকায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
আশ্রয়ণ প্রকল্পে পুনর্বাসিত পরিবারবর্গ সমবায় সমিতি গঠনের মাধ্যমে দলভুক্ত হওয়া এবং সমবায় বিভাগে নিবন্ধিত হওয়ার যে সুযোগ রাখা হয়েছে, তা তাদের সঞ্চয়ী মনোভাবকে আরও বেগবান করবে। সমিতির সদস্য ও তাদের পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক সদস্যদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ প্রদানের যে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে তা এলাকার লোকদের সচেতন ও দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে উঠতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। প্রকল্প এলাকায় ভালো যোগাযোগের রাস্তা, বিদ্যুৎ সুবিধা, বিশুদ্ধ খাবার পানি, শিক্ষা, বিনোদন ও স্বাস্থ্য সেবার ব্যবস্থা জোরদার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে।
অবহেলিত ও অসহায় পরিবারের মাথা গোঁজার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী উদ্যোগ নিয়েছেন, তা এককটি গৃহহীনের, এককটি পরিবারের স্বপ্নের বাস্তবায়ন। যারা শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষাকে মাথায় নিয়ে জীবনের স্বপ্ন বুনতেন, বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজতেন, আজ তারা পাকা ঘরে নিবেন শান্তির সুবাস।