করোনাকালে সরস্বতীর আগমনে ভাবনা
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ২৩:৫৮
মঙ্গলবার, হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব সরস্বতী পূজা। দেশের বিভিন্ন পূজামণ্ডপে দেবী সরস্বতীর বন্দনায় ঢাক-ঢোল-কাঁসর, শঙ্খ ও উলুধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠবে। প্রতিবছরের থেকে এই বছরের পূজাটি ভিন্ন আমেজে অনুষ্ঠিত হবে। কারণ করোনাভাইরাসের কারণে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ। কবে খুলবে তা নিয়ে দেখা দিয়েছে শঙ্কা। ফলে সকল শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষাঙ্গনে ফেরার প্রবল আকাঙ্ক্ষা বিরাজ করছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলো সীমিত পরিসরে হচ্ছে বা হচ্ছে না, ফলে এই উৎসবকে কেন্দ্র করে মনে আনন্দের রেশ তৈরি হচ্ছে। আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাধা নেই তবে, যেহেতু করোনা পুরোদমে নির্মূল হয়নি তাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে আনন্দ ভাগাভাগি মনে হয় মন্দ হবে না। পাশাপাশি ধর্মীয় ভাব-গাম্ভীর্য ও সংস্কৃতির বিষয়টিও লক্ষ্য রাখতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে সংস্কৃতির মাঝে যেন অপসংস্কৃতি প্রবেশ না করে।
শাস্ত্রমতে, প্রতিবছর মাঘ মাসের শুক্লপক্ষের পঞ্চমী তিথিতে বিদ্যা ও জ্ঞানের অধিষ্ঠাত্রী দেবী সরস্বতীর চরণে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন অগণিত ভক্ত। সনাতন ধর্মীয় রীতিতে প্রত্যুষে দেবীকে দুধ, মধু, দই, ঘি, কর্পূর, চন্দন দিয়ে স্নান করানো হবে। এরপর চরণামৃত নেবেন ভক্তরা। সকালে হবে বাণী অর্চনা। পুরোহিতরা ‘সরস্বতী মহাভাগে বিদ্যে কমল লোচনে /বিশ্বরূপে বিশালাক্ষী বিদ্যংদেহী নমোহস্তুতে’ এ মন্ত্রে বিদ্যার দেবী সরস্বতীর আরাধনা করবেন, পূজার আচার পালন করবেন। পূজা ছাড়াও এ উপলক্ষে পুষ্পাঞ্জলি প্রদান, হাতেখড়ি, প্রসাদ বিতরণ, ধর্মীয় আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সন্ধ্যা আরতি ও আলোকসজ্জার আয়োজন থাকে।
ধর্মীয় বিধান অনুসারে সাদা রাজহাঁসে চড়ে বিদ্যা ও সুরের দেবী সরস্বতী পৃথিবীতে আসেন। সরস্বতী বিদ্যার ও ললিতকলার অধিষ্ঠাত্রী দেবী হিসেবে পরিচিত। সরস্বতী দেবী শ্বেতশুভ্রবসনা। দেবীর এক হাতে বেদ, অন্য হাতে বীণা। এ জন্য তাকে বীণাপাণি বলা হয়। হিন্দুদের বিশ্বাস, সরস্বতী খুশি হলে বিদ্যা ও বুদ্ধি অর্জিত হবে। প্রাচীনকালে তান্ত্রিক সাধকেরা সরস্বতী-সদৃশ দেবী বাগেশ্বরীর পূজা করতেন। ঊনবিংশ শতাব্দীতে পাঠশালায় প্রতি মাসের শুক্লা পঞ্চমী তিথিতে ধোয়া চৌকির উপর তালপাতার তাড়ি ও দোয়াতকলম রেখে পূজা করার প্রথা ছিল। শ্রীপঞ্চমী তিথিতে ছাত্ররা বাড়িতে বাংলা বা সংস্কৃত গ্রন্থ, স্লেট, দোয়াত ও কলমে সরস্বতী পূজা করত।
সরস্বতী দেবী শুধু বিদ্যার দেবী নয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মতে, ঐশ্বর্যদায়িনী, বুদ্ধিদায়িনী, জ্ঞানদায়িনী, সিদ্ধিদায়িনী, মোক্ষদায়িনী এবং শক্তির আধার। অজ্ঞতার অন্ধকার দূর করতেও কল্যাণময়ী দেবীর পাদপদ্মে প্রণতি জানানো হয়। শুধু একটি বই পড়ে শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়াটাই কিন্তু বিদ্যা নয়। সেই বিদ্যাকে জ্ঞান ও বুদ্ধিতে কাজে লাগিয়ে সঠিকভাবে প্রয়োগ করাকে শিক্ষা বলে। শিক্ষা এমন একটি বিষয় যা অজ্ঞতাকে দূর করে। নিজের ভালো-মন্দ, উচিত-অনুচিত বোধকে জাগিয়ে তোলে। আমাদের অনেক শিক্ষার্থী আছে সারাবছর পড়ালেখা না করে শুধুমাত্র সরস্বতী পূজা করে মনে করে কেন উত্তীর্ণ হলাম না? তাদের উদ্দেশ্যে বলি, তোমাদের সেই জ্ঞানটুকু অর্জন না হলে সরস্বতী কিভাবে উত্তীর্ণ করবে? প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হতে হবে।
জ্ঞান ও বুদ্ধি সকল ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রের জন্য দরকার । সুস্থ ও সুন্দর সমাজ গঠনের জন্য দরকার। সরস্বতীর বরে তেমন সমাজ গঠনের স্বপ্ন দেখি। “অজ্ঞতার অন্ধকার দূর হোক”কল্যাণময়ী দেবীর আগমনে দেবীর পাদপদ্মে এমন প্রণতি হোক।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট