Sunday 06 Jul 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লজ্জার ভোর নিউ ইয়র্কে


১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ০৯:০২ | আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৭ ১০:০৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আজই ভাবছিলাম বিজয়ের মাসে আমার লাল সবুজের পতাকা, আমার মুক্তিযুদ্ধ, আমার স্বদেশ নিয়ে একটি লেখা লিখব। সবকাজ পণ্ড হলো। কবরের নিস্তব্ধতায় সব ভাবনা ভণ্ডুল হলো। আমি কি লিখব জানি না

আজকের সকালটা কেন মাথা নিচু করে দেওয়া একটা সকাল হলো?

লজ্জার মেঘে ঢাকা একটি সকাল হলো! অফিসে বসে আছি। টেবিলে এত্তগুলো কাজ পড়ে আছে।

আমার কলিগেরা যখনই রুমে ঢুকছে আমি কেমন কুঁকড়ে যাচ্ছি। কারো দিকে তাকাতে পারছি না আশঙ্কা হচ্ছে,যদি কেউ বলে, জানো না আজ কি হয়েছে? আজ তোমার দেশের একজন…

আমি তাকে কি উত্তর দেব? আমার এতদিনের শ্রম, আমার সততা, আমার প্রতি ওদের আস্থা, সবকি ঢাকা পড়ে যাবে একটি নাম, একটি ঘটনা, একটি লজ্জার আড়ালে?

বিজ্ঞাপন

সাতাশ বছরের ছেলেটি দুভার্গ্যজনক হলেও বাংলাদেশে জন্মেছে। তাই বলে কি সে বাংলাদেশের? আমার বাংলাদেশ তো এমন নয়। আমার বাংলাদেশ অন্যরকম। আমার বাংলাদেশ পবিত্র। আমার পুণ্যভূমি।

যে দেশে জন্মেছেন একজন সুর্যসেন,একজন প্রীতিলতা, যে দেশে জন্মেছেন শের এ বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সেই দেশের নাম বাংলাদেশ। যে দেশে মায়েরা হাসি মুখে সন্তানকে বলে, যা যুদ্ধে যা দেশটাকে স্বাধীন করে তবেই ফিরবি এর আগে নয়, সেই দেশের নামই তো বাংলাদেশ।

সেই দেশের সন্তান কীভাবে এমন ঘৃণ্য কাজ করতে পারে? আমার দেশের সন্তানের নাম হবে  প্রত্যয়, সুর্য, সীমান্ত, সফল, সুহৃদ।

আমার দেশের সন্তানের নাম কী করে আকাইদ উল্লাহ হয়? সমস্যা কী আমার! যেখানে কলঙ্কিত হচ্ছে দেশের পতাকা সেখানে নাম কেন আকাইদ উল্লাহ এই ভেবে পাগল হচ্ছি

আসলে পাগল হচ্ছি এই ভেবে যে এই ছেলেটি যে পরিবারে জন্মেছে, যাদের দেখে বড় হয়েছে, যাদের কাছ থেকে শিক্ষা পেয়েছে সেই পরিবেশ,  সেই মানুষগুলো, সেই প্রথা ও শিক্ষা আমাদের নয়, বাংলাদেশের নয়।

তার মানে আমি যে দেশটাকে পুণ্যভূমি ভেবেমাথা ঠেকাই সেই দেশটায় কোথাও একটা বিরাট ভয়ঙ্কর পরিবর্তন হয়েছে। যে পিতা সন্তানের নাম রাখতেন আকাশ সেই পিতাই আজ সন্তানের নাম রাখছে আকাইদ উল্লাহ।

যে মায়েরা একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ট্যাঙ্কের সামনে এগিয়ে দিতো তার কিশোর ছেলেটিকে সেই  তাদের সন্তানদের বুকে বোমা বেঁধে এগিয়ে দিচ্ছে সাধারণ নিরীহ মানুষের বিপরীতে।শিক্ষক পড়াচ্ছে ভুল বই। বিদ্যালয় হয়ে উঠছে সর্বনাশের প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র।

এই দেশে এসেছি। যে মানুষটি বাসন মাজছে, রাস্তা ঝাঁড়ু দিচ্ছে, কনকনে ঠাণ্ডা বা একশো ডিগ্রি গরমে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফল বিক্রি করছে তার যেমন একটাই স্বপ্ন, তেমনি যে মানুষটি অফিসে বসে কম্পিউটারে চোখ রাখছে, রোগী দেখছে, বড় বড় চাকরি করছে তারও একই স্বপ্ন। আমার সন্তান যেনো থাকে দুধে ভাতে এই একটি স্বপ্ন নিয়েই তো বেঁচে আছি

সন্তানের স্বপ্ন সফল করার জন্য নিজের স্বপ্নটিকেও কত সময় গলা টিপে মেরে ফেলছি কিসের জন্য? আমার সন্তান এভাবে শয়তানে পরিণত হবে তাই? আমার সন্তান ধর্মের নামে গলা কাটবে, বোমা মারবে, গুলি ছুড়বে তাই? তাহলে কিসের জন্য এত কিছু! আমরা ধর্মভীরু

অনেক সময় ভাবি আমার সন্তান পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ছে, ধর্ম পালন করছে তো ঠিক পথে আছে। ভুল। ভুল। ভুল।

ধর্মভীরু বানাতে যেয়ে নিজেই অথবা আমার বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে অন্য কেউ আমার সন্তানের ভেতরে বপন করছে রিলিজিয়াস র‍্যাডিকেলিজম এর বীজ। যে বীজ একসময় বিষবৃক্ষে পরিণত হচ্ছে

ছোট্ট বাচ্চা মেয়েটিকে বাড়তি কাপড়ে ঢেকে দিচ্ছি মাথা, চোখ, মুখ। এটাই কি আমাদের সংস্কৃতি, এ ইকি আমাদের শিক্ষা? ধর্মান্ধতার কালো ধোঁয়ায় ওদের মাথা নষ্ট হচ্ছে, নষ্ট হচ্ছে ভবিষ্যৎ। আমার ঘরের সন্তান নাম লেখাচ্ছে মৌলবাদী সংগঠনের সঙ্গে। আমরা কি এই বাংলাদেশ চেয়েছিলাম?

 

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর