বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙিন
১৭ মার্চ ২০২১ ১৩:৫৮
বঙ্গবন্ধু যেভাবে সহজে, আন্তরিকভাবে শিশুদের সাথে মিশে যেতেন, শিশুরা তাকে একান্ত আপন করে নিতো। আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেও এই ভালোবাসা অটুট থাকুক। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা বেড়ে উঠছি এবং এভাবেই এগিয়ে যেতে চাই। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন ও জাতীয় শিশু দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ কমিটি আয়োজিত এক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কথাগুলো বলছিলেন চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সিনথিয়া তাসনিম শুচি।
আজ ১৭ মার্চ—আমাদের জন্য একটি ঐতিহাসিক দিন। এই দিনটিতেই জন্ম নিয়েছিলেন হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে দিনটিকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। কারণ বঙ্গবন্ধু শিশুদের ভালোবাসতেন, শিশুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন, শিশুর হৃদয় হোক রঙ্গিন—এই প্রতিপাদ্যকে সামনে নিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও সারাদেশে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন। ১৯৯৭ সালের ১৭ মার্চ দিবসটি পালন শুরু হয়। ২০০১-০৬ মেয়াদে অন্য সরকার ক্ষমতায় আসার কারণে জাতীয় শিশু দিবস পালনের রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা বন্ধ হয়ে যায়। তবে দলীয় এবং বেসরকারি পর্যায়ে দিনটি পালন অব্যাহত ছিলে। ২০০৯ সাল থেকে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা আবার ক্ষমতায়। তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। এখন রাষ্ট্রীয়ভাবে আবার পালিত হচ্ছে জাতীয় শিশু দিবস।
এবারের দিবসটির গুরুত্ব আলাদা। কারণ এবারে বঙ্গবন্ধুর জন্মশত বছর উদযাপনের বছর, যে মহামানবের হাত ধরে আমরা পেয়েছি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। যে জন্মদিন নিয়ে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, “আমার জন্মদিনই কী, আর মৃত্যুদিনই কী? আমার জনগণের জন্য আমার জীবন ও মৃত্যু। আমি তো আমার জীবন জনগণের জন্য উৎসর্গ করেছি।”
বঙ্গবন্ধু ছোট্ট শিশুদের আদর স্নেহ করতেন, শিশুদের নিয়ে স্বপ্ন দেখছেন, শিশুদের মধ্যে ভবিষ্যতের আলোক শিখা দেখতেন। বঙ্গবন্ধুর বিভিন্ন বক্তব্যে তা আমরা দেখতে পাই। তিনি শিশুদের কোনো সমাবেশে উপস্থিত হলে শিশুদের সঙ্গে একাকার হয়ে যেতেন। শিশুদের সঙ্গে মিশে শিশুদের মতো আনন্দে মেতে উঠতেন।
জানা যায়, ১৯৭২ সালে কচিকাঁচার মেলার শিশুরা নিজেদের আঁকা মুক্তিযুদ্ধের ছবি নিয়ে যায় গণভবনে বঙ্গবন্ধুকে উপহার দিতে। বঙ্গবন্ধু ছবিগুলো দেখে এতটাই আবেগপ্রবণ হয়ে বললেন, “আমার দেশের শিশুরা এমন নিখুঁত ছবি আঁকতে পারে, এসব না দেখলে তা বিশ্বাস করা যায় না”। তিনি সেসময় আরও বলেন, “আজকের কর্মব্যস্ত সারাটা দিনের মধ্যে এই একটুখানি সময়ের জন্য আমি শান্তি পেলাম। শিশুদের সান্নিধ্য আমাকে সব অবসাদ থেকে মুক্তি দিয়েছে”।
গত ১৬ মার্চ তারিখের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার এই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি অনলাইনে হওয়ার কারণে পুরো অনুষ্ঠানটি বাসায় বসে উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে। আমি মুগ্ধ হয়ে পুরো অনুষ্ঠানটি দেখি এবং শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর যে আবেগ ভালবাসা, তা থেকে আশান্বিত হই। আঁকিয়ে শিক্ষার্থী সিনথিয়া তার বক্তব্যে যেভাবে বলেছেন, “চিত্রাঙ্কনের মাধ্যমে আমরা ফুটিয়ে তুলবো দেশের প্রতি, বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমাদের আবেগ ও ভালবাসা। আমার দাদা বাবা যেভাবে আমাদের কাছে মুক্তিযুদ্ধের গল্প, বঙ্গবন্ধুর গল্প শোনাতেন, আজ আমাদের সুযোগ হয়েছে কল্পনায় সেসব বিষয়গুলোকে নিজের মত নিয়ে ফুটিয়ে তোলার। আমরাও বঙ্গবন্ধুর মতো দেশকে ভালোবাসব। উদার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বেড়ে উঠব। এ দেশকে জাতির জনকের স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে নিজেদের সম্পৃক্ত রাখব।
চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার আয়োজক বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ উপ কমিটির সম্পাদক দেলোয়ার হোসেনের কাছে ভিন্নধর্মী এই আয়োজন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, “গতানুগতিক ধারার বাইরে আমরা অনুষ্ঠানটি করতে চেয়েছি, যেখানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সারাদেশ থেকে শিশুরা সরাসরি অনুষ্ঠানে যুক্ত থেকেছে এবং তাদের চিত্রকর্ম প্রদর্শন করেছে। আমাদের অনুষ্ঠানে স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পী শাহাবুদ্দিন আহমেদ, বাংলাদেশের তারুণ্যের প্রতীক মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা, শিক্ষাবিদ ড. নাসরিন আহমদ ও ড. খন্দকার বজলুল হক স্যারের সাথে একই অনুষ্ঠানে শিশুরা উপস্থিত থেকে অনুপ্রাণিত হয়েছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু যেভাবে শিশুদের আপন করে নিতেন, আমরা চেয়েছি শিশুদের মধ্যে দেশপ্রেম, বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশ ও পরিবেশ সম্পর্কে তাদের চিন্তার প্রসার ঘটুক, এই প্রতিযোগিতার বিস্তারিত আমাদের উপকমিটির ফেসবুক পেজে রয়েছে”।
শুধু দিবস পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না থেকে আমাদের প্রত্যেকের নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। শিশুদের সকল প্রকার নির্যাতন ও সহিংসতা থেকে মুক্ত রাখতে আমাদের প্রত্যেকেই ভূমিকা পালন করতে হবে। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধু যে ভালোবাসা প্রদর্শন করতেন, সেভাবেই একটি শিশুবান্ধব সমাজ বিনির্মাণ হোক এই দিবসের অঙ্গীকার।
লেখক: সাংবাদিক ও প্রাবন্ধিক