Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শব্দদূষণ প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি


২৩ মার্চ ২০২১ ১৪:০১

ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে শব্দদূষণ। প্রতি মুহূর্তে ঘটছে শব্দদূষণ। কী দিন, কী রাত সবসময়ই শব্দদূষণের তীব্র মাত্রার যন্ত্রণা। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সবকিছু স্তব্ধ থাকার সুবাদে কিছুদিন মানুষ শব্দদূষণের যন্ত্রণা থেকে রেহাই পায়। বিশেষ করে রাতের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটেনি। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে করোনা বিদায় না নিলেও ফিরে এসেছে ভয়ানক শব্দদূষণ। এই দূষণ মানুষের স্বাভাবিকতা কেড়ে নিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে স্থিরতা, সুস্থতা। কখন এই শব্দদূষণ বন্ধ হবে তা কারও জানা নেই। শব্দদূষণ সহনীয় মাত্রায় না আসলে বা বন্ধ করার ব্যবস্থা না নিলে মানুষের দেহ ও মনে তার সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে।

বিজ্ঞাপন

কলকারখানার যন্ত্রপাতির শব্দ, যানবাহনের হর্নের শব্দ, বিমান উড্ডয়ন-অবতরণের সময়ে উচ্চশব্দ, মাইকের শব্দ, গান-বাজনা, সভা- সমাবেশের বক্তৃতাসহ নানা কারণে শব্দদূষণ ঘটছে। মাত্রাতিরিক্ত শব্দের কারণে রাস্তা-ঘাটে চলা দায়। মানুষ শব্দদূষণে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে। আমাদের দেশে শব্দ নিয়ন্ত্রণের আইন আছে কিন্তু তার যথাযথ প্রয়োগ নেই। রাত মানুষের ঘুমের জন্য একটি উত্তম সময়। এ সময় প্রায় সব মানুষ তাদের কাজকর্ম শেষে বাড়ি ফেরে। নীড়ে ফেরে পশু-পাখিরাও।

বিজ্ঞাপন

সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে মানুষ রাতে ঘুমায়। দিনের পাশাপাশি রাতের এই সময়টুকুও হাতছাড়া হয়ে যায়। জেগে থাকতে হয় রাত অবধি। সূর্যাস্ত থেকে ক্ষেত্রবিশেষে সূর্যোদয় পর্যন্ত নানা অনুষ্ঠানের উচ্চ শব্দ অব্যাহত থাকে। এ ধরণের শব্দ উৎপত্তিস্থল থেকে বহুদূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং রাতের নিস্তব্ধতায় এর ব্যাপকতা আরও গভীরভাবে অনুভূত হয়।

ফলে মানুষের সুনিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটে এবং দেহ ও মনে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। কী নগর, কী গ্রাম সর্বত্রই যেন প্রতিযোগিতা দিয়ে শব্দদূষণ বাড়ছে। এ নিয়ে কারো কোন জোরালো ভূমিকাও চোখে পড়েনি কোন সময়। শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ চান সাধারণ মানুষ। এর বিহিত চান তারা।

হ্যাঁ, নিঃশব্দে তো আর সব কাজ করা সম্ভব নয়। তাই বলে দিনে-রাতে অনর্থক শব্দদূষণ ঘটানোর কোনো মানে হয় না। সাধারণ মানুষকে কষ্টে ফেলে কোনো কাজ এমনিতে উচিত নয়। দিনের বেলা শব্দদূষণের মাত্রা বেঁধে দেওয়া এবং রাতের বেলা শব্দদূষণ বন্ধ কিংবা নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা অপরিহার্য বলে মনে করি।

পৃথিবীর অধিকাংশ উন্নত দেশে নেহায়েত প্রয়োজন ব্যতীত গাড়ির হর্ন বাজানো নিষেধ এবং অপরাধ হিসেবে গণ্য। সেখানে উন্মুক্ত স্থানে সভা, সমাবেশ বা অনুষ্ঠানে ব্যবহৃত মাইকে শব্দ সর্বোচ্চ কত ডেসিবল পর্যন্ত হবে এবং কত সময় অবধি চলতে পারবে তা আইন ও বিধি দ্বারা নির্ধারিত।

এক পরীক্ষায় দেখা গেছে, উচ্চ শব্দযুক্ত পরিবেশে যারা বসবাস করে বা কাজ করে তাদের শ্রবণ শক্তি দশ বছরের মধ্যে প্রায় অর্ধেক হ্রাস পায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে সাধারণত ৬০ ডেসিবল মাত্রার শব্দ একজন মানুষকে সাময়িকভাবে বধির করে ফেলতে পারে।

শব্দের সহনীয় মাত্রা হলো শয়নকক্ষে ২৫ডিবি, বসবাস ও খাবার ঘরে ৪০ডিবি, রেস্তোরাঁয় ৪০-৬০ ডিবি, রাত্রিকালীন ৪৫ ডিবি। যখন এই শব্দসীমা অতিক্রম করে তখনই শব্দদূষণ ঘটে। (সূত্র: উইকিপিডিয়া)।

শব্দদূষণের কারণে শিশু, বৃদ্ধ, রোগী সর্বোপরি সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। হ্রাস পাচ্ছে শ্রবণ শক্তি। রাতের বেলা শব্দদূষণের কারণে কষ্ট আরও বেড়ে যায়। পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও ঘুম না হলে কোনো মানুষই সুস্থতা বোধ করেনা। ফলে দিনের বেলা তার কর্মক্ষমতা কমে যায়।

শব্দদূষণ একটি সামাজিক সমস্যা এবং এ ধরণের দূষণ নিয়ন্ত্রণে কঠোর আইন করা জরুরি। এ ব্যাপারে প্রশাসনকে জোরালো ভূমিকা পালন করতে হবে।

লেখক : শিক্ষক ও প্রাবন্ধিক

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর