Wednesday 27 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস— সুস্থ্য বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে


৭ এপ্রিল ২০২১ ১৩:৩৬

আজ ৭ এপ্রিল, বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস। সারা বিশ্বব্যাপী এ দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালিত হচ্ছে। এ বছরের প্রতিপাদ্য বিষয় Building a fairer, Healthier world. অর্থাৎ একটি সুন্দর এবং সুস্থ্য বিশ্ব গড়ার লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে হবে। কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির কারণে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের নানা ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। আমাদের সারা বছর যেমন কিছু অসংক্রামক ব্যাধি থাকে সঙ্গে নানা ধরনের সংক্রামক ব্যাধিও থাকে যা বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বকে একটি হুমকির সম্মুখীন করছে। একদিকে ধনী গরীবের বৈষম্য অন্যদিকে করোনার ছোবলে দারিদ্র্য গোষ্ঠী আরও বেশি কষ্টের মধ্যে জীবনযাপন করছে। গ্রামের অনেকেই আছেন যারা সঠিক পরিমাণে পুষ্টি পাচ্ছে না এবং মৌলিক চাহিদা, বিশুদ্ধ পানি ও স্যানিটাইজেশন ব্যবহার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে মহামারিকালে তাদের কষ্ট আরও বেড়ে গেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস এমন সময় এসেছে যা বাংলাদেশে লকডাউনের মধ্যে আমারা পালন করতে যাচ্ছি সুতরাং আমাদের এই দিবসের যে প্রতিপাদ্য বিষয় তা হলো দেশের মানুষকে সচেতন করা, বিশ্ববাসীকে সচেতন করা।

বিজ্ঞাপন

আমরা দেখছি, যে অনেকেই আছেন সামাজিক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। ধনী গরীবের বৈষম্য বাড়ছে। আমরা এই অবস্থায় কোভিডকালে আজকের যে স্বাস্থ্য খাতের চ্যালেঞ্জগুলো থেকে কিভাবে পরিত্রাণ পেতে পারি সেই বিষয়গুলো এই দিনটি উদযাপনে নতুন করে ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবারও বলছি যে, কোভিড-১৯ মহামারিকেল অনেকেই আছেন তারা হয়তো উন্নত জীবনযাপন করছেন, যারা স্বাস্থ্য খাতের সমস্ত সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন কিন্তু দেশের একটি বড় অংশ দরিদ্র, তাদের যে স্বাস্থ্য খাতের মৌলিক চাহিদা তা তারা ভোগ করতে পারছেন না। তাদের অপুষ্টি, তাদের মা ও শিশু স্বাস্থ্য, অনূর্ধ্ব পাঁচ বছরের যে মৃত্যু হার-এর সাথে বয়োবৃদ্ধ যারা আছেন তাদের যে স্বাস্থ্য খাতের সু্যোগ সুবিধা দেওয়া দরকার তা দিতে আমরা পুরোপুরি সক্ষম হচ্ছি না। এ অবস্থা শুধু বাংলাদেশেই নয় এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষকে কোভিড-১৯ টিকাদানের আওতায় আনতে পারিনি, খুব অল্প সংখ্যক লোককেই টিকাদানের আওতায় আনতে পেরেছি। যদিও আগামী ৮ এপ্রিল থেকে কোভিড-১৯ টিকা ২য় ডোজ শুরু হতে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আমরা জানি ২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা শনাক্ত হয় এবং ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি হিসেবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ঘোষণা দেয়। ১৮  মার্চ ২০২০ প্রথম বাংলাদেশি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। আজ ২০২১ এর ৭ এপ্রিল— ৩৯৬তম দিনে এসে পৌঁছেছি। মৃত্যু ৯ হাজারের বেশি। আমরা জানি সারা বিশ্ব স্বাস্থ্য খাতের উন্নতির জন্য নানাভাবে সংগ্রাম করছে। আমাদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি পেলেও দেশের অধিকাংশ মানুষ স্বাস্থ্য খাতের বেশিরভাগ সু্যোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অর্থাৎ ধনী গরীবের বৈষম্য ও সরকারি এবং বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা বৈষম্য রয়েছে। এই বৈষম্য আমাদের দূর করা দরকার। আমাদের স্বাস্থ্যের যেমন উন্নতি দরকার, শিক্ষার ও তেমন উন্নতি দরকার, কারণ স্বাস্থ্য ও শিক্ষার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। কর্মসংস্থানের সুযোগ সুবিধার উন্নতি প্রয়োজন। নারী পুরুষের বৈষম্য দূর করা প্রয়োজন। যদিও এর কিছুটা উন্নতি হয়েছে এরপরও বলবো এখনো আমরা পুরোপুরি উন্নতি করতে পারিনি। নারীর নিরাপত্তা নিয়ে ভাবতে হবে, খাদ্য নিরাপত্তা নিয়েও ভাবতে হবে।

করোনা মোকাবিলায় যদিও আমাদের সরকার বিভিন্নভাবে স্বাস্থ্য বিধি মানার নির্দেশনা দিয়েছে কিন্তু সাধারণ মানুষ পর্যায়ে তা যথাযথভাবে মানা হয়নি। প্রথম দিকে যে আতঙ্ক ছিল, উদ্বেগ ছিল তা থেকে মানুষ নতুন সাধারণ জীবনে পদার্পণ করেছে, ঠিক সেই সময় করোনা সংক্রমণ  আবারও বেড়ে গেছে। ঠিক এই নাজুক সময়ে আমরা বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস পালন করছি। এই সময়ে দাঁড়িয়ে আমরা যদি এই দিবসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অনুধাবন করতে চাই তাহলে এ বছরের যে প্রতিপাদ্য বিষয় সুন্দর ও সুস্থ্য পৃথিবী গড়তে হলে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সরকারের সাথে জনগণের একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলতে হবে পাশাপাশি চিকিৎসার যে মৌলিক চাহিদা তা সরকারকে পূরণ করতে হবে। মা ও শিশুর স্বাস্থ্য এবং সংক্রামক ও অসংক্রামক যে ব্যাধি সে বিষয়ে আরও ভাবতে হবে বলে আমি মনে করি। আমাদের দেশের স্বাস্থ্যের যে অবকাঠামো সেটা ভালো রয়েছে, আমাদের দেশের সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি তাও বিশ্বের রোল মডেল। আমাদের দেশের অন্যান্য যে চিকিৎসা সুবিধা— যেমন হৃদরোগের আধুনিক চিকিৎসা যা সারা বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যেতে পারিনি হয়তো মৌলিক কিছু চিকিৎসা দিচ্ছি কিন্তু সারা বাংলাদেশকে আমরা আধুনিক চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত করতে পারছি না। এটি স্বাস্থ্য খাতের একটি চ্যালেঞ্জ। স্বাস্থ্য রিপোর্ট অনুযায়ী প্রতিবছর অনেক লোক হৃদরোগের কারণে মারা যাচ্ছে। যেহেতু আমাদের দেশে এখনও উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিকস, শ্বাসকষ্ট, কিডনি রোগ ও লিভারের রোগ এরকম আরও বড় বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে কিন্তু কোনো হেলথ ইনস্যুরেন্স নেই তাই অনেকেই নিজের টাকায় আধুনিক চিকিৎসা সেবা নিতে পারছে না পাশাপাশি আমাদের দেশের ঔষধের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় কম হলেও দীর্ঘমেয়াদি ঔষধ গ্রহণ করতে অনেকের সামর্থ্য নেই। এসব বিষয় নিয়ে সরকারকে আরও ভাবতে হবে। হেলথ ইনস্যুরেন্স চালু করার উদ্যোগ নিতে হবে।

২০২০ সালে করোনা আমাদের জীবনযাপনকে বদলে ফেলেছিল। এই করোনা আমাদের অনেক আপনজনের চলে যাওয়ার কারণ হয়েছে। এখনো যদি আমরা এ বিষয়ে সতর্ক না হই তাহলে ভবিষ্যতে আমাদের বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হবে। তাই আমাদের মৌলিক কিছু নিয়ম মেনে চলতে হবে। হাঁচি কাশি শিষ্টাচার মানতে হবে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং বর্তমান সরকারের ১৮ দফা নির্দেশনা ও লকডাউন মেনে চলতে হবে। সরকারকেও দ্রুত আরও বেশি সংখ্যক লোককে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে হবে।

লেখক: হল প্রভোস্ট ও অধ্যাপক, কার্ডিওলজি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর