ঊর্ধ্বমুখী করোনায় দেশ জেরবার, লকডাউন চলে না ‘কার্ফ্যু’ দরকার
৭ এপ্রিল ২০২১ ১৬:১৯
করোনার দ্বিতীয় ঢেউ গোটা দেশকে জেরবার করে দিচ্ছে। আবারও লকডাউন। মানে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব। ২০২০ সালের ৮ মার্চ। দেশ সাক্ষী ছিল প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ার। মারণ ভাইরাস থাবা বসায় সেদিন। করোনার আতঙ্ক সেই থেকে শুরু। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর গত বছর ১৮ মার্চ দেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। সংক্রমণ বৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল প্রথমবার সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছিল সরকার। পরে কয়েক দফা মেয়াদ বেড়ে ৬৬ দিন সাধারণ ছুটি চলে। সে সময় সব অফিস-আদালত, কলকারখানা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারাদেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। ছুটির মধ্যে সব কিছু বন্ধ থাকার সেই পরিস্থিতিটি আমাদের দেশে লকডাউন হিসেবে পরিচিতি পায়। ঠিক এক বছরের মাথায় আগের সেই ভয়টা এবার আরও দ্বিগুণ শক্তিতে চাঙ্গা হয়ে ফিরেছে।
একথা ঠিক, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করার তাগিদ সরকারের নীতিনির্ধারক মহল বেশ ভালোভাবেই উপলব্ধি করেছেন। সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সাত দিনের লকডাউন দেওয়া হয়েছে। এবার সরকারের লকডাউনের ঘোষণা আকস্মিক ও অপ্রত্যাশিত নয়। এর আগে গত ২৯ মার্চ সংক্রমণের বিস্তার রোধে ১৮ দফা নির্দেশনা সংবলিত প্রজ্ঞাপনে লকডাউনের আভাস-ইঙ্গিত ছিল। ইতিমধ্যে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার উদ্বেগজনক মাত্রায় বেড়ে যাওয়ায় লকডাউন ছাড়া উপায় নেই। দৈনিক মৃত্যু ষাটের কাছাকাছি। দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছয় হাজারের উপরে ঘোরাফেরা করছে। এ পর্যন্ত প্রায় দশ হাজারের কাছাকাছি মৃত্যুও হয়েছে। করোনার এই বৃদ্ধি ধারাবাহিক। একদিন বাড়ছে, একদিন কমছে, বিষয়টা এমন নয়। তাই ভয় অমূলক নয়। সংক্রমণ বাড়ার এই প্রবণতা অব্যাহত থাকলে সামনে বিপদের দিন আসছে বললে ভুল হবে না।
হঠাৎ করোনাভাইরাসের এই বাড়বাড়ন্তের নেপথ্য কারণ কী? গবেষকদের মতে, ‘করোনাভাইরাসের যে ঢেউ আজ বয়ে যাচ্ছে, তার জন্য ভাইরাস নয়, মানুষ দায়ী। এর আগে আমাদের দেশে যখন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে যায়, তখন প্রয়োজন ছিল স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে জোর দেওয়া। তখন আমরাও প্রতিরোধমূলক কার্যক্রমগুলো কমাতে শুরু করি। সাধারণ মানুষ যেমন অসতর্ক হয়, তেমনি কর্তৃপক্ষ থেকেও এক ধরনের অবহেলা ও শৈথিল্য দেখা দেয়। দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ পুরোটা নিয়ন্ত্রণে আসার আগেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে অফিস-আদালত, কল-কারখানা, যানবাহন সব কিছু পুরোদমে খুলে দেওয়া হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও প্রায় খুলি খুলি করছিল। এদিকে লকডাউন ঘোষণা করার পরও বইমেলা বন্ধ হয়নি। বরং এই পরিস্থিতিতেও প্রতিদিন বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত একুশে বইমেলা চলবে বলে জানানো হয়েছে। করোনার এই সময়ে বইমেলা শুরু করারই বা কী দরকার ছিল? পৃথিবীর কোনো দেশেই মহামারি করোনাকালে কোনরূপ মেলা হয় না। এসময়ে মানুষের জীবনের চেয়ে প্রকাশকদের ব্যবসায়ীক স্বার্থটিই কি বড়?
ইউরোপের ম্যাপ দেখলে বোঝা যায়, গত বছরের জুন-জুলাইয়ে করোনা একদম নিচে নেমে যায়। এরপর মানুষ মাস্ক খুলে উল্লাস করে। বাকিটা ইতিহাস। বাংলাদেশেও তাই হয়েছে। যখনই আমাদের দেশের এয়ারপোর্টে ভ্যাকসিন এসেছে, তখনই আমরা মনে করেছি যে, আমাদের শতভাগ প্রতিরোধ তৈরি হয়ে গেছে। ভ্যাকসিনের কারণে মানুষজন মনে করেছে, এখন যা ইচ্ছা তাই করা যাবে। দলবেঁধে কক্সবাজারসহ বিভিন্ন স্থানে বেড়াতে যায়। পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে লাখ লাখ পর্যটকের ঢল নামে। আর কে না জানে, এবার অধিকাংশ সংক্রমণ হয়েছে কক্সবাজার থেকে। এভাবে দেশের মানুষ ও সরকারের শিথিলতায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ছে তো বাড়ছেই। যার অনিবার্য ফল হিসেবে বর্তমানে একটা ভয়াবহ বিপদের মুখে আমরা দাঁড়িয়ে রয়েছি।
লকডাউন ঘোষণার আগে করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে ১৮ দফা নির্দেশনা দিয়ে প্রশংসিত হয় সরকার। তবে নির্দেশনা বাস্তবায়িত হয় অতি ধীরে। আবার দেখা যায়, কতিপয় নির্দেশনা বাস্তবতার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যেমন, লকডাউনে খোলা থাকবে—অফিস-আদালত, কল-কারখানা, গার্মেন্টস। এতো কিছু খোলা থাকা মানে যানবাহন থাকে। মানুষের মুভমেন্ট থাকে। সঙ্গত কারণেই পাবলিক বাহনে জনসাধারণের ভিড় বাড়ে। এটা তো লকডাউন হলো না। সরকারি নির্দেশনার পর ১ এপ্রিল গণপরিবহনগুলোতে ৬০ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি করায় বাসে উঠতে না পেরে বিক্ষোভ করেছে রাজধানীর নিকুঞ্জ এলাকার খিলক্ষেত সড়কে কর্মস্থলগামী যাত্রীরা। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে সাংঘর্ষিক পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত হয়। নির্দেশনায় আরও বলা হয়, বয়স ৫৫-ঊর্ধ্ব কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বাড়িতে অবস্থান করে কর্মসম্পাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। কিন্তু এই বয়সীরা অধিকাংশ এখনও ডিজিটাল যোগাযোগে দক্ষ নন। আর বাস্তব বিবেচনায় করোনায় ৫৫ বছরের কম বয়সী এবং তরুণ প্রজন্মের মধ্যে ব্যাপক হারে সংক্রমণ ও মৃত্যু ঘটে চলেছে। অন্যদিকে ডিজিটাল তরুণ প্রজন্ম বাড়িতে থেকে অনলাইন প্রাত্যহিক অফিসের কাজ সম্পাদনে সুদক্ষ। কিন্তু এমন নির্দেশনার কারণে বিগত লকডাউনে অনলাইন কর্মসম্পাদনকারী কর্মকর্তা, কর্মচারীরা অফিসের প্রাত্যহিক টেকনিক্যাল কাজ অনলাইনে করার সুযোগও পাচ্ছে না। যে কাজ অনলাইনেই করা যায় সে কাজ করার জন্য তাদের প্রতিদিন সশরীরে বাধ্যতামূলক পাবলিক গাড়িতে অফিসে আসা যাওয়া করতে হচ্ছে। একারণে অনেক তরুণ কর্মকর্তা-কর্মচারীর সামাজিক দূরত্ব রক্ষা সম্ভব হচ্ছে না। তাই এমন নির্দেশনা ডিজিটাল বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য সাংঘর্ষিক বৈকি। ওদিকে সরকার গণজমায়েত বা সমাবেশ না করার পরামর্শ দিলেও শুক্রবারে বায়তুল মোকাররমে হেফাজতের জনসমাগম হয়। ঢাকাসহ দেশের ৫৫টি স্থানে লক্ষ মানুষের সমাবেশ ঘটিয়ে সরকারি উদ্যোগে মেডিক্যাল কলেজের ভর্তি পরীক্ষাও নেওয়া হয়। ১ লাখ ১৬ হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের ব্যাপক মাত্রায় গাদাগাদি ভিড়ের চিত্র সংবাদ মাধ্যমে প্রচারিত হতে দেখা যায়। হেফাজতের সমাবেশ আর পরীক্ষা ঠেকানো হলে বিশেষ কি কোন ক্ষতি হতো? অবশেষে সরকার পর্যটন বন্ধ করেছে। কিন্তু প্রথমে পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায়, পরে কক্সবাজারে ও সারাদেশে। একই সময় দেশের সব জায়গায় পর্যটন বন্ধের সিদ্ধান্ত কি হতে পারতো না? ইউরোপ ও অন্য বারটি দেশ থেকে যাত্রী আসার ব্যাপারে কড়াকড়ি তো সেই ঠিকই করা হলো। কিন্তু সংক্রমণ পরিস্থিতি অনেক দূর গড়ানোর পর।
নতুন করে করোনা পরিস্থিতির অবনতিতে করোনা সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে বর্তমানে ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া এমনকি আমাদের নিকটতম প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিভিন্ন দেশে কার্ফ্যু চলছে। আমাদের দেশে বাড়-বাড়ন্ত করোনার ভয়াবহ বিপদের মুখ থেকে মানুষকে বাঁচাতে ৫ এপ্রিল থেকে সাতদিনের জন্য দেওয়া হয়েছে লকডাউন। বিজ্ঞানীদের মতে, সাতদিনের লকডাউন স্বাস্থ্যবিজ্ঞানের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে লকডাউন দেওয়া হলে সেটা কমপক্ষে ১৪ দিন বা দুই সপ্তাহ হওয়া বাঞ্ছনীয়। কারণ করোনাভাইরাসের ইনকিউবেশন পিরিয়ড অর্থাৎ সুপ্তিকাল বা সংক্রমিত করার সময় ১৪ দিন সময়। করোনাভাইরাস শরীরে ১৪ দিন পর্যন্ত ঘাপটি মেরে থাকে। শরীরে প্রবেশের ১৪তম দিনেও ভাইরাসটি রোগ তৈরিতে সক্ষম। এজন্য বৈজ্ঞানিক বিবেচনা থেকে ১৪ দিনের লকডাউন হওয়াই যৌক্তিক ছিল। এছাড়া প্রজ্ঞাপনটির নির্দেশনাগুলো লক্ষ্য করলে মনে হয়, এগুলোর লক্ষ্য প্রধানত শহর-নগরের মানুষ। কিন্তু ১৭ কোটি মানুষের বাংলাদেশের সিংহভাগ জনগোষ্ঠীই তো গ্রাম-মফস্বলে বাস করেন। গ্রামাঞ্চলে সর্বাধিক লোকসমাগম ঘটে হাটবাজারে। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সব কাঁচাবাজার খোলা থাকবে, তাহলে গ্রামীণ হাটবাজারও কি খোলা থাকবে? সেগুলোতে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কী নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে?
দেখা যায়, এবারের লকডাউন আগের চেয়েও বেশি ঢিলেঢালা। লকডাউনকে বিনোদন ছুটি বানিয়ে ফেলা হয়েছে। একে বলা যেতে পারে লকহীন লকডাউন। মানুষের চলাচল ও সংস্পর্শের সঙ্গে করোনার সংক্রমণ যুক্ত। রাতের বেলা মানুষের সংস্পর্শ ও চলাচল বলতে গেলে এমনিতে থাকেই না। রাতের চেয়ে দিনের বেলায় করোনা সংক্রমণ বেশি হয়, কথাটা বুঝতে বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার হয় না। তাহলে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ভোর ৬ টা পর্যন্ত রাত্রিকালে লকডাউন হওয়ার যুক্তিটা কী? দেখে শুনে মনে হয়, দেশজুড়ে চলমান করোনাভাইরাসের উচ্চ মাত্রার সংক্রমণ নিয়ে কারও তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। করোনা চলছে করোনার মতো করে। আমরা চলছি আমাদের মতো খুড়িয়ে খুড়িয়ে। করোনাকে তার নিজের মতো করেই চলতে দিচ্ছি। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ যেনো আপন মনে নিজ থেকেই কমে যাবে। অথচ বিশেষজ্ঞরা বার বার সতর্ক করে বলছেন, ‘সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়ায় বিচক্ষণতা, দূরদর্শিতা, সমন্বয় ও সময়োপযোগিতার বিরাট ঘাটতি রেখে এভাবে চললে মহামারির নতুন আঘাত সামলানো অত্যন্ত দুরূহ হয়ে উঠবে।’ তাই নির্দেশনাগুলোর সংশোধনীতে সরকারকে অবশ্যই দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে। নির্দেশনা জারির সময়েই সব দিক বিবেচনায় নিয়ে ভেবে দেখা দরকার সেগুলো বাস্তবায়ন করা কতটা সম্ভব। সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতা প্রয়োজন, যাতে কোনো সিদ্ধান্তের ফলে বিভ্রান্তি ও নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব না ঘটে। জনজীবনে দুর্ভোগ না বাড়ে। বাস্তবায়ন করা অসম্ভব এবং জনসাধারণের জন্য সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে, এমন নির্দেশনা জারি করা উচিত নয়। এখন সময় হয়েছে, করোনা মোকাবিলায় রাষ্ট্রকে এখন যুদ্ধকালীন ভিত্তিতে দিন-রাত কাজ করার।
তবে হ্যাঁ। আগেও দেখা গেছে, আমাদের জনবহুল বাংলাদেশে গতানুগতিক লকডাউন সম্ভব নয়। জীবিকা রক্ষায় মানুষ পায়ে হেঁটে ঢাকা রওয়ানা হয়ে যায়। একবার চিচিং ফাঁক হয়ে গেলে, চিচিং বন্ধ করা, মানুষকে ঘরে ঢুকানোর কাজ আরও কঠিন। সরকারের ওপর মহল থেকে বারবার করে বলা হয়, করোনা থেকে নিজে বাঁচতে এবং বাকিদের বাঁচাতে ঘরে থাকতে। আমরা কি সে কথা শুনি? মাস্ক না থাকার কতই না অজুহাত দেখায়—অজুহাত মাস্টার বাঙালি। কিন্তু মহামারি অজুহাত মানে না। এবার কোনো অবস্থাতে কেউ অজুহাত দেবেন না প্লিজ। এবারের ভয়াবহ করোনাকালের লকডাউনে যতকিছু খোলা রাখা হয়েছে তাতে এখনই বলে দেয়া যায়— এই লকডাউন সফল হবে না। রাজাবাজারের গলি বা মাদারীপুরে আগে যেসব লকডাউন হয়েছে এবার সে চেষ্টাও নেই। অথচ এবারের ঊর্ধ্বমুখী করোনার ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রণে আনতে দরকার লকডাউনে চরম কঠোরতা অবলম্বন। অন্তত জনগণের জীবন রক্ষার্থে যুদ্ধের মতো কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। এজন্য দেশব্যাপী কার্ফ্যু জারি করা দরকার। পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী দিয়ে কড়াকড়ি আরোপ কওে বিধিনিষেধ মানাতে বাধ্য করা দরকার। মনে রাখতে হবে, উন্নত দেশে লকডাউন মানে কার্ফ্যুর আরেক নাম। কার্ফ্যু শব্দটা রাজনৈতিক বাঙালির সংস্কৃতি। সংকটকালীন আস্থার এক শব্দ। আমাদের দেশের মানুষ সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঠেকাতে কার্ফ্যুর সঙ্গে পরিচিত। এই কার্ফ্যুর মূল লক্ষ্য সেনাবাহিনী কর্তৃক জনস্বার্থে মানুষের চলাচল নিয়ন্ত্রণ। বর্তমান করোনা সংকটকালে দেশের আপামর জনতাও চায় রোগ মোকাবেলায় কঠোর কার্ফ্যু। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে পৃথিবীর দেশে দেশে কার্ফ্যু স্টাইলে যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব নিয়ে লকডাউন হচ্ছে। এভাবে মানুষের অপ্রয়োজনীয় চলাচল কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ সফল হয়েছে যারা, তারা সফল হয়েছে করোনার বিরুদ্ধে সংগ্রামেও। গবেষকরা বলছেন, ‘বর্তমানে করোনাভাইরাসকে সহজভাবে নেওয়ার কোনো অবকাশ নেই। করোনা প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণে ঢিলেঢালা ভাব ও মানুষের মধ্যে অসচেতনতার ফলে যে কোনো সময় করোনার সংক্রমণ হু হু করে ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে।’
হঠাৎ করে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যায় বিস্ফোরণ ঘটে যাওয়ার মতো এমন পরিস্থিতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশে আগেই ঘটেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের মানুষ ভয়াবহ করুণ দৃশ্য অনলাইনে দেখেছে। দুঃখজনকভাবে বাংলাদেশে সেরকম কিছু হলে উদীয়মান অর্থনীতির দেশের জন্য আশঙ্কার কারণ বৈকি! বাংলাদেশ এখন তেমনই আগ্নেয়গিরির শিখরে যে দাঁড়িয়ে নেই, তাই বা কে বলবে? আমরা যদি কঠোর লকডাউন দিয়ে করোনাভাইরাসের রাশ টেনে ধরতে না পারি, তাহলে অনেক জীবন দিয়ে, অর্থ দিয়ে, স্বাস্থ্য, ভোগান্তি এবং জাতীয় অর্থনীতির বহু ক্ষতি দিয়ে আমাদের সেই দায় শোধ করতে হবে। নাহলে নুহ্ (আ:) নবীর জাহাজের গল্পটাই সত্যি হয়ে উঠবে। পৃথিবীর প্রলয়কালে বিভিন্ন প্রজাতিকে বাঁচাতে মানুষ জাহাজে ভেসে পড়েছিল অনির্দিষ্ট পথে। ধর্মগ্রন্থের এই কাহিনী বাংলাদেশে বাস্তব না হোক। রোগ বালাই, প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং আরও নানান সমস্যা যুগে যুগে পৃথিবীতে এসেছে। আগামী দিনেও আসবে। ভীত না হয়ে সাহস, ধৈর্য, সঠিক জনসচেতনতা এবং বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে আমাদেরকে সমাধান খুঁজতে হবে। ভ্যাকসিন হিরো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা, উদ্যোগ ও সহযোগিতায় বাংলাদেশ করোনা জীবাণু যুদ্ধে জয়ী হবে। এই প্রত্যাশা ও প্রার্থনা সকলের।
লেখক: বিজ্ঞান লেখক ও গবেষক, সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়