অভিভাবকের দায় ও দায়িত্ব
১১ এপ্রিল ২০২১ ২৩:৩১
আমাদের দেশে প্যারেন্টিং নিয়ে কেউ কোনো কথা বলে না। কেন বলে না? এটাও ওই প্যারেন্টিং-এর একটা অন্ধ সংস্করণ। কারণ জন্ম থেকেই আমাদের শেখানো হয়েছে অভিভাবক যা বলেন সব ঠিক বলেন, তাদের সকল কথা বেদবাক্য। পিতামাতাকে আমরা এই যে দেবতার স্থান দিয়েছি, তা অবশ্যই ইতিবাচক। সন্তানের প্রতি পিতামাতার মঙ্গল আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমাদের মধ্যে কোনো রকম সন্দেহ ইতঃপূর্বেও ছিল না, এখনো নেই। পূর্বজদের অভিজ্ঞতা উত্তর প্রজন্মের জীবনযাপনকে সহজ করে একথা অনস্বীকার্য। কিন্তু একই সাথে এ কথাও অনস্বীকার্য যে, পিতামাতাও মানুষ। ভুল সিদ্ধান্ত নেওয়া তাদের পক্ষেও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু আমাদের পিতামাতারা নাদান এবং এই একটা বিষয়ে আমি বলব স্বৈরাচারীও বটে। অধিকাংশক্ষেত্রে তারা আজীবন তাদের পূর্বজদের ন্যায়-অন্যায় সব মেনে নিয়েছেন এবং তারাও এখন সেটাই চান। তার চেয়েও বড় বিষয় তারা অধিকাংশক্ষেত্রেই নিজেদের অপূর্ণতা সন্তানের উপর চাপিয়ে দেন। তারা বোঝেনই না যে নিজেদের অজান্তেই তারা স্বৈরাচারী হয়ে ওঠেন। এই যে, দুর্নীতিতে আমরা বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হলাম তার দায় কি রাষ্ট্রের একার? মোটেও নয়।
একটা রাষ্ট্রের মূল ইউনিট তো পরিবার। পরিবার নামক মূল সংগঠনটি ব্যর্থ বলেই রাষ্ট্রের সকল সিস্টেম ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। একটা ছোট্ট উদাহরণ দেয়া যাক, বর্তমানে মোটামুটি শিক্ষিত (শিক্ষিত না বলে সার্টিফিকেটধারী বলতে আমি বেশি আগ্রহী) পরিবারের যে কোনো সন্তানকে স্কুলে ভর্তি করানোর সময় পিতামাতা সন্তানের কল্যাণের জন্য (!) বয়স কমিয়ে দেন। পিতামাতা সরকারি চাকরি বা সন্তানের ক্যারিয়ারের দোহাই দিয়ে বয়স নিয়ে এ ধরনের কপট মিথ্যাচারকে বৈধ মনে করেন। এ আচরণের মাধ্যমে তারা কি সন্তানকে পরোক্ষভাবে এটাই শিক্ষা দেন না যে ক্যারিয়ার বা একটা সরকারি চাকরির জন্য মিথ্যা বলা বৈধ? এ সন্তানটিই যখন বড় হয়ে ক্যারিয়ার গড়ার জন্য মিথ্যাচার করবে, ঘুষ খাবে, দুর্নীতি করবে, তার দায় কার?
আমাদের পিতামাতারা ন্যায়-অন্যায়কে গুরুজনের সঙ্গে মিলিয়ে ফেলেন। গুরুজন বা বয়সে অপেক্ষাকৃত বড় কারো কথা আমাদের আসমানি কিতাবের মতোই মানতে বলা হয়। আমি বার বার বলছি পূর্বজদের অভিজ্ঞতা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু অন্ধভাবে যে কোনো কিছুই মানা অন্যায়। আমরা ভুলে যাই, দেবতারও স্খলন হয়। গুরুজন কোনো অন্যায় কথা বললে, তা বুঝতে পারার পরও আমাদের এখানে শেখানো হয় যে গুরুজনের কথার উত্তর দিতে হয় না। একমত না হলেও মেনে নিতে হয় কোনো তর্ক ছাড়াই। এই মেনে নেওয়ার প্রবণতা, প্রতিবাদ না করে নির্বাক থাকার অভ্যাস আর নিজের মতকে প্রতিষ্ঠা না করতে পারার ব্যর্থতা থেকেও এমন মেরুদণ্ডহীন নতুন প্রজন্ম তৈরি করেছি আমরা। ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা বয়সের উপর নয়, বিবেচনাবোধ ও শিক্ষার সমন্বয়ে তৈরি হয়। জীবন-যাপনের অভিজ্ঞতাই সেখানে মাপকাঠি হতে পারে না। যদি বয়সের ভিত্তিতেই তা হতো, তাহলে পৃথিবীতে বর্তমানে সবচেয়ে বয়স্ক ব্যক্তিটিই সবচেয়ে জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে গণ্য হতেন, তাই নয় কি? আমাদের সন্তানকে বিনয়ের সাথে ন্যায়-অন্যায় বোধ শেখালে, পরিবারের মধ্যে ছোট-বড় যেই অন্যায় করুক, প্রতিবাদ-প্রতিহত করা শেখালে এমন প্রতিবাদহীন প্রজন্ম তৈরিই হতো না। পরিবারই তাকে সব কিছু মুখ বুজে সহ্য করে প্রতিবাদ না করার সংস্কৃতির শিক্ষা দেন বলে, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরে অন্যায়কেও অন্যায় বলার মতো সাহস এবং ইচ্ছা কোনোটাই আর কাজ করে না। এরা মুখ বুজে এটিই হওয়ার ছিল ভেবে রায় দেয় মজ্জাগত স্বভাব থেকেই। ফলে এই যে দুর্নীতিগ্রস্থ প্রতিবাদহীন প্রজন্ম তৈরি হচ্ছে তার দায় কার?
আর আমাদের গুরুজনের মধ্যেও অন্যের মত মেনে নেওয়ার বা অন্যের মতকে সম্মান জানানোর মত জ্ঞানের অভাব বরাবরই লক্ষণীয়। ‘যত মত, তত পথ’ জীবনের এ সহজ সত্যটিকে তারা গ্রহণ করতে পারেননি। দুঃখজনক হলেও সত্য অভিভাবক নিজেই যেহেতু তার ভুল বুঝতে পারেন না বা নিজের ভুল বোঝা সত্ত্বেও সন্তানের কাছে ছোট হবেন ভেবে তা স্বীকার করে নেন না, প্রজন্ম তৈরিতে সেটিই আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রকৃতপক্ষে কোনো মানুষই পূর্ণাঙ্গ হতে পারেন না এবং তা তিনি মেনে নিয়ে অন্যের মতকে শ্রদ্ধা করলেই বরং সম্পর্কের সহজীকরণ ও পারস্পারিক শ্রদ্ধাবোধ তৈরি হয়। একজন আইনস্টাইন বিজ্ঞানের মহারথী হওয়া সত্ত্বেও মিস্টিক রবীন্দ্রনাথকে শ্রদ্ধা করতেন। তিনি যদি ভাবতেন তিনি আইনস্টাইন, সুতরাং তিনিই শ্রেষ্ঠ, অন্য কাউকে কেন শ্রদ্ধা করবেন বা আরেকজনের মতকে কেন মেনে নেবেন তবে তা বোকামির নামান্তর। আসলে আরেকজনের মতকে শ্রদ্ধা করলে যে নিজেরই সম্মান বৃদ্ধি পায়, এ সহজ সত্যের প্রাকটিস আমরা করতে পারিনি। ফলে এ ভূখণ্ডেও শেষ কয়েক দশকে অসহিষ্ণুতা চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। ছোট-বড় যেই হোক তাদের মতকে প্রাধান্য দেওয়া পরিবার থেকেই শেখানো গেলে এ ধরনের পরিস্থিতি উদ্ভূত হতো না বলেই আমার বিশ্বাস। ফলে এই উশৃঙ্খল, অসহিষ্ণু প্রজন্মের দায় কার?
আমরা সন্তানকে কথা বলা শেখার পরপরই ছড়া শেখাই—পড়াশোনা করে যে গাড়ি ঘোড়া চড়ে সে। সন্তানকে ছোট থেকেই প্রলুব্ধ করা হয় যে, তুমি পড়াশোনা করবে শিক্ষা অর্জনের জন্য নয় বরং গাড়ি ঘোড়া চড়ার জন্যে। তুমি পড়াশোনা করবে ভালো চাকরি করার জন্য, অন্যকে ডোমিনেট করতে, সর্বোপরি সুন্দরী বউ পাওয়ার জন্য, ভালো ঘরে বিয়ে করার জন্য। সাহিত্যপাঠের গল্প উপন্যাসগুলো এখানে মানবিকবোধের উন্মেষের জন্য নয়, লাইন টু লাইন মুখস্থ করানো হয় ভালো নম্বর পাওয়ার জন্য। এখানে শিক্ষা শিক্ষিত হওয়ার জন্য নয়, জ্ঞানের আলোয় নিজেকে আলোকিত করার জন্য নয়, শিক্ষা এখানে অর্থ উপার্জনের নিয়ামক মাত্র, মনের আঁধার দূর করার উপাদান নয়। ফলে দেশে শুধু সার্টিফিকেটধারী চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা ক্রমবর্ধমান, কিন্তু শিক্ষিত মানুষ তৈরি হচ্ছে না। আমরা যদি সার্টিফিকেটধারী শিক্ষিত না বানিয়ে ছোট বেলা থেকেই সন্তানদের শেখাতাম যে শিক্ষা অর্জন করো, জ্ঞানের ক্ষুধা থেকে, জীবনকে জানার জন্য, ভালো মানুষ হলে, প্রায়োগিক জ্ঞান থাকলে যে কোনো কিছু করেই সৎ পথে উপার্জন সম্ভব, তাহলে এই বেকার সার্টিফিকেটধারী প্রজন্ম তৈরি হতো না। এ কর্মসংস্থানহীন বেকার সার্টিফিকেটধারী প্রজন্মের দায় কার?
এই ঘরানায় মানুষ হওয়া প্রজন্মই চূড়ান্তভাবে হতাশ। জন্ম থেকে যারা পড়াশোনা করেছেন গাড়ি-ঘোড়ায় চড়ার জন্য, ভাল চাকরির জন্য; সার্টিফিকেট পাবার পরই তারা একটা চাকরি আশা করবেন এবং চাকরি না পেলে তারা হতাশ হবেন, ডিপ্রেশনে ভুগবেন, আত্মহননের পথ বেছে নেবেন, এটাই সহজ।তাহলে হতাশাপূর্ণ এ জাতি গঠনের দায় কার?
আবার এই হতাশ প্রজন্মই যাদের জীবনের মানেই শেখানো হয়েছে ক্যারিয়ারের সফলতার মাপকাঠিতে, টাকা উপার্জনের মেশিন হিসেবে, বাস্তবে যখন তা সে পাচ্ছে না, সে তো হতাশায় নিমগ্ন হবেই এবং ব্যাপকভাবে অন্যায়ের পথে পা বাড়াবেই। অর্থ উপার্জনই যদি হয় সফলতার মাপকাঠি, তবে তা যে উপায়েই হোক সৎ অথবা অসৎ তাতে তার বিবেকে এতটকু নাড়া দেওয়ার কথা নয়। এই অসৎ দুর্নীতিগ্রস্থ প্রজন্ম তৈরির দায় কার?
এখানেই শেষ নয়। আমাদের সন্তানেরা এখন আর আদর্শবান হয় না, দুর্নীতিতে প্রথম হয়। এর প্রধান কারণ যে ব্যাড প্যারেন্টিং, এর এমন হাজারটা উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। সন্তানকে আমরা এখন কোনো আদর্শবান মানুষের গল্প শোনাই না, সমাজসেবিদের গল্প শোনাই না, শোনাই টাকাওয়ালা সফলদের গল্প। আমরা শোনাই পাশের বাড়ির কোন প্রতিবেশীর সন্তান তার চেয়েও বেশি নম্বর পেয়েছে এ কথা। এখন আপনার সন্তানটিই যদি আপনাকে ঘুরিয়ে বলে পাশের বাড়ির ছেলেটির অভিভাবক যা করে আপনি তা করেন কিনা, তখন কি সেটা অন্যায় হবে? তার দৃষ্টিতে হবে না, এজন্যই হবে না যে, এই তুলনা করার বিষয়টি আপনারাই তাকে শিখিয়েছেন। আমাদের মনে রাখা উচিত সন্তানেরা উপদেশ নয়, অনুকরণে শেখে। সন্তানের মধ্যে যে গুণটি আপনি দেখতে চান; আগে নিজেই সে গুণটি আয়ত্ত করার চেষ্টা করুন। নিজেকে পরিবর্তন করুন, সন্তান আপনা আপনিই শিখবে। কারণ, শিক্ষা বিষয়টির মূল শর্তই হলো তা স্বতঃস্ফূর্ত হওয়া জরুরি।
ডাক্তার সাবরিনার ঘটনা থেকেও আমরা শিক্ষা নিতে পারিনি। সোশ্যাল মাধ্যমে অনেক বেশি ভাইরাল হওয়া ঘটনাটিতে সাবরিনার অনেক বন্ধুই দাবি করেছিল সাবরিনার অর্থের কথা, সফলতার কথা। তার বন্ধুমহলের বাবা-মারা তাদের সন্তানদের গর্বের সাথে তুলনা করে বলতেন, ‘সাবরিনা দ্যাখ এই বয়সে কতকিছু করেছে। তুই তো কিছুই পারলি না’। কিন্তু আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি, এই অভিভাবকেরাই কয়দিন পর সাবরিনা ধরা পড়ার পর ভিন্ন কথা বলেছেন। তার মানে তারা হয় আগে ভুল ছিলেন নয় এখন। তারা কি তাদের সন্তানদের পরে একবারও বলেছিলেন যে তারা ভুল ছিলেন এবং তার সন্তানটি অবৈধ উপার্জন করেনি, এটিই ভালো ছিল?
সন্তানের নেতিবাচক দিকগুলোকে আমরা যেমন কটাক্ষ করি, ইতিবাচকতাকেও সেভাবে প্রশংসা করার মতো উদারতা আমাদের মধ্যে নেই। সদগুণকে লালন করতে হয়, অনুপ্রেরণা দিতে হয়। সন্তান ভালো করলে তার গৌরব আমরা যেমন গ্রহণ করে গৌরবান্বিত হই, তাদের ভুলটাকেও নিজেদের ভুল বলেই গ্রহণ করার মানসিকতা আমাদের আনতে হবে। অভিভাবকেরা এই একটা জায়গায় অত্যন্ত স্বৈরাচারী এবং এর খেসারত তাদেরও দিতে হয়। ঘরে-বাইরে, রাস্তায়, রাজনীতিতেও তাই আমরা দেখি এই স্বৈরাচারী বৈশিষ্ট্য। কারণ, আমরা আমাদের সন্তানদের এই শিক্ষাই দিয়েছি।
গত দশকে আমাদের পরিবারের ভাঙন, মূল্যবোধের অবক্ষয়জনিত সমস্যাটি এত ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে যে, না দেখতে চাইলেও তা আর লুকানো যাচ্ছে না। বিষয়টির ব্যাপকতা এত ভয়ানক রূপ ধারণ করেছে যে, চোখ বুজে থাকলেও এর পচা পুঁজের গন্ধও এড়ানো যাচ্ছে না। সামাজিকভাবে স্বীকৃত অনেক উচ্চপদস্থদের বিরুদ্ধেও পিতা মাতার প্রতি করা অপরাধ-অপদস্থতার অভিযোগ আমাদের সামনে এসেছে। এ নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন এবং কোনো কারণেই এটি মেনে নেওয়ার মতো নয়। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত একজন ম্যাজিস্ট্রেট তার বৃদ্ধ মাকে রাস্তায় ফেলে এসেছেন, এমন ঘটনা একটি দুটি নয়-একাধিক। তার মানে এটিকে আর কোনোভাবেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে চালিয়ে দেওয়া যায় না। অভিভাবকেরা সন্তানের সব দোষ গোপন করে যখনই বলেন ক্যারিয়ার ঠিক থাকলেই হলো, তা অন্যায়। অভিভাবক যখন সন্তানকে বলেন বড় হয়ে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ম্যাজিস্ট্রেট হও, তা অন্যায়। অভিভাবকেরা কখনও বলেন না মানুষ হও। আপনারা তো তাদের ডাক্তার, প্রকৌশলী, বিজ্ঞানী, ম্যাজিস্ট্রেট হতে বলেছেন, তারা তাই হয়েছেন, শুধু মানবিকবোধসম্পন্ন মানুষ হননি। সুতরাং তারা আপনাদের অশ্রদ্ধা করবে, রাস্তায় ফেলে যাবেন, এটাও তাদের দিক থেকে স্বাভাবিকই বটে। আপনি নিমগাছ চারা লাগিয়ে পানি আর সার দিয়ে যত্ন আত্তি করলেই তো আর তাতে সুমিষ্ট আম ফলার কথা নয়। আম খেতে হলে আম চারাই লাগাতে হবে, নিমগাছ নয়, তা নিমগাছ যতই ভালো গাছ হোক— সহজ হিসাব।
সমাজবিজ্ঞানে একটা টার্ম আছে। কোনো পুকুরের একটি মাছ মরে ভেসে উঠলে আমরা সে মাছটিকে আলাদা করে নেই এবং ধরে নিই ওই মাছটির মধ্যেই কোনো সমস্যা ছিল। কিন্তু যখন একি পুকুরের প্রায় শখানেক মাছ মরে ভেসে ওঠে তখন বুঝতে হয়, পুকুরে নিশ্চয়ই এমন কিছু ঘটেছে, যাতে মাছগুলো আক্রান্ত হচ্ছে এবং মারা যাচ্ছে। তখন পুকুর কর্তৃপক্ষের উচিত চটজলদি সমস্যা শনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা। আমাদের নতুন প্রজন্ম যখন ব্যাপকহারে হতাশ হচ্ছে, আত্মহননের পথ বেছে নিচ্ছে, দুর্নীতিতে সেরা হচ্ছে, মুল্যবোধের অবক্ষয়ের চরমে পৌঁছে বাবা-মাকে অবলীলায় খুন করে ফেলছে, নেশায় আচ্ছন্ন হচ্ছে, তখন আমাদের বোঝা উচিত আসলে এটি আর কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, এটি আমাদের লালন-পালনেরই কোনো সমস্যা। অবিলম্বে সেগুলো চিহ্নিত করে ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে বাকিগুলোও আক্রান্ত হবে খুব দ্রুত। সেই যে ‘সময় গেলে সাধন হবে না’ এমন কখনোই কাম্য নয়।
হ্যাঁ, তবে অনেকেই বিপরীত যুক্তি খণ্ডন করে দাবি করতে পারেন যে, ওই পুকুরে ওত মাছ মারা যাওয়া সত্ত্বেও কিছু মাছ অবশ্যই বেঁচে ছিল, তবে স্বীকার করে নেব, হ্যাঁ থাকে হয়ত। কিন্তু তারাও একসময় মৃত মাছগুলোর পচনে তৈরি হওয়া গ্যাসে আক্রান্ত হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মরে ভেসে ওঠে। এখন অভিভাবকেরা যদি মনে করেন তারা এই অসুস্থ গুটিকতক মুমূর্ষু প্রজন্ম নিয়ে পথ চলবেন, তবে আপনারা আপনাদের সুপার ইগো, স্বৈরাচারী কর্তৃত্ব, পুরাতনের জীর্ণতা আঁকড়ে ধরে পড়ে থাকুন। আপনাদের এই স্বৈরাচারী প্যারেন্টিংয়ের জন্য সব শিশুই মনে মনে শুধু বড় হতে চায়, শুধু সামান্য গুরুত্ব পাওয়ার আশায়। তাই আমাদের শিশুরা শুধু আপনাদের মতো দৈহিক বড়ই হয়ে চলেছে, মানুষ হতে আর পারছে না। এ দায় কার?
লেখক: প্রাবন্ধিক