করোনা দুর্যোগ এবং রাজনীতি
১২ এপ্রিল ২০২১ ২১:৫৫
মহামারি করোনাভাইরাস ছাড়া গত এক বছরে আর কোনো বিষয় আলোচনায় তেমন গুরুত্ব পায়নি। করোনাই এক বছর ধরে চলছে ‘টক অফ দ্য ওয়ার্ল্ড’। অপরিচিত এই জীবাণু মানব জাতির এতদিনের অর্জিত জ্ঞান-বিজ্ঞানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে সংহার করে চলেছে একের পর এক প্রাণ। কোনো দৈব-দুর্বিপাক বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলে কয়ে আসে না। বিশেষ করে করোনার মতো মহামারি তো নয়ই। পৃথিবীর কারোই কল্পনাতেও ছিল না যে, এমন এক অসহনীয় পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। তবে এটাই সত্য যে, করোনার মতো মহামারি কামড় বসিয়েছে সারা পৃথিবীতে। আর এ করোনার কারণেই জানা গেল দেশে দেশে স্বাস্থ্য খাতের অবস্থা, দুর্বলতা, সীমাবদ্ধতা। আস্তে আস্তে জানা যাবে অন্যান্য খাতের অবস্থাও। পৃথিবীর সব মানুষ এখন একই সমস্যায় আক্রান্ত, একই আতঙ্কে দিশেহারা, একই অনিশ্চয়তায় বিষণ্ণ।
বিপর্যয় হিসেবে কোভিড-১৯ নতুন। আমরা এখনও এই বিপর্যয়কে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারিনি। বুঝে উঠতে যে আরও সময় লাগবে সেটা বুঝতে পারছি । করোনার লাগাম টেনে ধরার সক্ষমতা এক বছরে অর্জন করা সম্ভব হয়নি। সম্পূর্ণ জানা হয়নি যে আর্থিক খাতগুলোতে কতটা ক্ষতি হয়েছে। শুরুতে এর কোনো চিকিৎসা ছিল না , ছিল না কোনো প্রতিষেধক। বেশ কিছু দেশে বিজ্ঞানীরা গবেষণাগারে নিমগ্ন থেকে প্রতিষেধক টিকা আবিষ্কারে সফল হলেও তা এখনো করোনার গতি রোধ করতে পারেনি। । সুদিনের আশায় এখন মানব জাতির চলছে উৎকণ্ঠিত অপেক্ষা।
ইতিহাস থেকে আমরা একটা বিষয় জেনেছি, যুদ্ধ বা মহামারির মতো বিপর্যয়ে বহু দেশেরই অর্থনৈতিক গতিপথ সম্পূর্ণ পাল্টে যেতে পারে। এতদিন যারা জিতেছিল, তারা চলে যেতে পারে পরাজিতের কাতারে । আবার যারা পিছিয়ে ছিল তারা হয়ে উঠতে পারে নতুন বিজয়ী। এ ক্ষেত্রে কে কিভাবে সেই পরিস্থিতি নিজেদের আয়ত্তে নিতে পারে, তার উপরই নির্ভর করবে সফলতা।
এই বিপর্যয় সামলে উঠতে আমাদেরও ভাবতে হবে । যতদূর সম্ভব অর্থনীতি এগিয়ে নিতে হবে। দেখতে হবে সাধারণ মানুষ যেন অনাবশ্যক কষ্ট না পায়। জাতীয় অর্থনীতি কোন পথে যেতে চলেছে, তার প্রাথমিক আভাসকে ভিত্তি ধরে অর্থনৈতিক গতিপথ নির্ধারণ করতে হবে। তবে যে সর্বগ্রাসী সংকট ধেয়ে আসছে—সরকারের একক চেষ্টায় তা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে না। নাগরিক শক্তিকেও এগিয়ে আসতে হবে। সরকারের সমালোচনায় সীমাবদ্ধ না থেকে নাগরিক সমাজকেও যথাযথ দায়িত্ববোধের পরিচয় দিতে হবে। রাষ্ট্রের সঙ্গে নাগরিক শক্তির সহযোগিতার একটি নতুন ধারা গড়ে ওঠার মাধ্যমে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার অবস্থা তৈরি হতে পারে।
এই মুহূর্তে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ভাইরাসের সংক্রমণ রোধের ব্যবস্থা করা এবং অর্থনীতিকে চালু রাখার মধ্যে একটা ভারসাম্য তৈরি করা। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বোঝা কিছুতেই দেশের নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত তথা সাধারণ জনগণের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া যাবে না। ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয়ের পর অর্থনীতির ধ্বংসস্তূপে এসে দাঁড়ানোও কোনো কাজের কথা নয়। জীবন বাঁচিয়ে রাখার জন্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যেমন আবশ্যক, তেমনি অর্থনীতির চাকা সচল না রাখলেও জীবন চলবে না। জীবন ও জীবিকার একটি সুসমন্বয় ঘটাতে হবে। কাজটি সহজ নয়। আমাদের অনেকের মধ্যেই নিয়ম-বিধি না মানার এক ধরনের উগ্র মানসিকতা রয়েছে। একজন নিয়মের প্রতি তাচ্ছিল্য দেখালে, বিধি ভঙ্গ করলে তা যে অনেকের জীবন বিপন্নের কারণ হতে পারে সেটা আমরা অনেকেই বুঝতে চাই না। স্বেচ্ছায় নিয়ম না মানলে সব সময় ভয় দেখিয়ে সেটা সম্ভব নয়।
করোনা ছড়িয়েছে। ব্যাপকভাবেই ছড়িয়েছে। মাঝখানে একটু বিরতি দিয়ে করোনা আবার ভয়ঙ্কররূপে বিস্তার লাভ করছে। সারা পৃথিবীতে এ পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে ১৩ কোটির উপর, মৃতের সংখ্যাও কম নয়, প্রায় সাড়ে ২৯ লাখ। সংক্রমণ এবং মৃত্যু দু’টোই এখন প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। আমাদের দেশেও সংক্রমণ এবং মৃত্যু দু’টোই বাড়ছে। প্রথম দফার চেয়ে দ্বিতীয় দফায় বাংলাদেশে করোনার রুদ্ররূপ দেখা যাচ্ছে। তবে পরিসংখ্যান ইউরোপ বা আমেরিকার সঙ্গে আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার ফারাক বিপুল। কেন, তা এখনও নিশ্চিত ভাবে জানা যায়নি। আফ্রিকা বা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো অবশিষ্ট দুনিয়ার থেকে বিচ্ছিন্ন, সে কথা মোটেই বলা যাবে না। বাংলাদেশিরা দুনিয়ার সবচেয়ে বেশি ভ্রাম্যমাণ জনগোষ্ঠীর একটি। ইথিয়পীয়র সঙ্গে চীনের আর্থিক সংযোগ জোরদার। কিন্তু দু’টো দেশেই কোভিড-১৯’এ মৃত্যুর হার তুলনামূলক কম দেখা গেছে। তবে পরিস্থিতি যে এ রকমই থাকবে, সেটা ধরে নেওয়া ভুল হবে। কিন্তু একই রকম ভুল হবে এটা ধরে নেওয়া যে ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কোভিড-১৯ যে পথে চলেছে, আফ্রিকা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সেই একই ধারায় চলবে। করোনা সব দেশে একই আচরণ করছে না। তবে সংক্রমণ রোধে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা, সঙ্গনিরোধ, বিচ্ছিন্ন থাকার মতো স্বাস্থ্যবিধিগুলো কঠোরভাবে মেনে চললে আমাদের দেশের করোনা পরিস্থিতি হয়তো বেসামাল হতো না। কিন্তু আমরা প্রাথমিকভাবেই ধৈর্যের পরিচয় দিতে ব্যর্থ হয়েছি।
সংক্রমণ ঠেকাতে যুক্তিগ্রাহ্য পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দ্বিধাদ্বন্দ্ব সমস্যা বাড়িয়েছে। এটাও মনে রাখা দরকার যে ঝুঁকি কখনও একেবারে শূন্যে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে না বলে বিশেষজ্ঞরা বলছেন। জীবনে কোনো কাজই সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত নয়। কাজেই করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিকে শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য এমন পদক্ষেপ গ্রহণও হয়তো বাস্তবসম্মত হবে না যা আমাদের সমাজ ও অর্থনীতির জন্য বড় বিপর্যয় ডেকে আনার আশঙ্কা তৈরি হয়। আমরা যাই করি না কেন, আমাদের মনে রাখতে হবে দরিদ্র মানুষের কথা, যাদের কোনো সঞ্চয় নেই, বেঁচে থাকার বিকল্প ব্যবস্থা বা উপায় নেই।
দীর্ঘস্থায়ী লকডাউন বা অবরুদ্ধ অবস্থার ধকল সহ্য করার সক্ষমতা আমাদের অর্থনীতির নেই। আবার লকডাউন তুলে নিলে করোনা ঝুঁকি মারাত্মক হয়ে দেখা দেওয়ার বাস্তব অভিজ্ঞতাও আমাদের এরমধ্যেই হয়েছে । তাই কী প্রক্রিয়ায় আমরা করোনা বিপদ থেকে বেরিয়ে আসতে পারব, দেশের আর্থিক নীতি এবং জনস্বাস্থ্যের সামনে সেটা একটা মস্ত চ্যালেঞ্জ। কাজটা সাবধানে, সব দিক ভেবে , হিসাব-নিকাশ করেই করতে হবে। কোন দেশে লকডাউনে কতখানি কড়াকড়ি হচ্ছে, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকরা তার একটা সূচক তৈরি করেছেন। অল্প কয়েক দিনের জন্য হলে এই কড়াকড়ি বহাল রাখা যায়, কিন্তু দীর্ঘদিনের লকডাউনের কড়াকড়ি অর্থনীতিকে বেহাল করে দেবে । এতে গরিব মানুষের ওপর মারাত্মক প্রভাব পড়বে, দেশের দীর্ঘমেয়াদি আর্থিক স্বাস্থ্যের খুব ক্ষতি হবে, যা ইতিমধ্যেই অনেকটাই হয়েছে।
আমাদের দেশে কাগজে কলমে ৬৬ দিন লকডাউন চললেও বাস্তবে খুব কড়াকড়ি আরোপ করা যায়নি। মানুষের চলাচল এবং ঘোরাফেরা একেবারে বন্ধ হয়নি। বাজারে উপচে পড়া ভিড় সব সময় দেখা গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া আর কোনো কিছুই বছরাধিককাল ধরে বন্ধ নেই। সরকারি-বেসরকারি অফিস-প্রতিষ্ঠান, গণপরিবহন কয়েকদিন বন্ধ থেকে আবার স্বাভাবিক হয়েছিল। কিন্তু জরুরি সেবা চালু থাকায় সুযোগ নিয়েছে অন্যরাও। এবার করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের মুখে আবার কড়া লকডাউনের বিষয়টি সামনে এসেছে। তবে এখন সীমিত পরিসরে হলেও কিছু জিনিস সচল না রাখলে মানুষের তো ভাতে মরার অবস্থা হবে । মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ বন্ধ হলে চলবে না। বেসরকারি ক্ষেত্রে কাজ হতে দিতে হবে, বিশেষত অসংগঠিত এবং ক্ষুদ্র শিল্পে। সামাজিক দূরত্ব, মাস্ক ব্যবহার করা, হাত ধোয়ার মতো নিয়ম অবশ্যই মেনে চলতে হবে। কিন্তু শ্রমিকরা যাতে কাজের জায়গায় যেতে পারেন, কৃষিক্ষেত্রে এবং ছোট ছোট কারখানায় যাতে নির্বিঘ্নে কাজ চলতে পারে, সেটাও নিশ্চিত করতে হবে। সব মনোযোগ যেন পোশাক শিল্প বা সংগঠিত খাতের দিকে না থাকে। যাদের কথা বলার সুযোগ নেই, যাদের হয়ে কথা বলার কেউ নেই– তাদের হয়ে তো সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে।
দুনিয়াভর যে ওলটপালট চলছে, তার মধ্যে দাঁড়িয়ে আমরা যদি কোনো ভুল পদক্ষেপ নেই সেটা সাধারণ ভুল হবে না। সেই ভুল শুধরে নেওয়ার সুযোগ মিলবে না। আজকের একটা ভুল পদক্ষেপ স্থির করে দেবে আগামী কয়েক দশক দেশের অর্থনীতি কোন কক্ষপথে চলবে।
করোনার বিপর্যয়ে গত এক বছরে আমরা কি কিছু শিখতে পেরেছি? আমাদের চোখ থেকে ঠুলি কি খুলতে পেরেছি? আমরা কি আমাদের ভুলগুলো চিহ্নিত করতে পেরেছি? এই সময়টা আসলে সহানুভূতির, সহৃদয়তার, ভালোবাসার, বিবেকের। কুসংস্কার বিসর্জন দিয়ে বিজ্ঞান ও সৃষ্টিশীলতাকে জায়গা করে দেওয়ার। জাতি-বর্ণ-ধর্ম নির্বিশেষে মানবিক সাম্যের নীতির পথে আবারও এগিয়ে যাওয়ার। কিন্তু আমরা সব ক্ষেত্রে সমান মানবিকতার পরিচয় দিতে যেমন পারছি না, তেমনি অন্ধ বিশ্বাসও পরিহার করতে পারছি না। নানামুখী দ্বন্দ্ব আমাদের সামনে যে বৃত্ত এঁকে দিচ্ছে, শেষ পর্যন্ত এই বৃত্ত ভাঙার মতো সাহসী আমরা হতে পারবো বলেও মনে হয় না। তবে এটা ঠিক যে, করোনা-পরবর্তী পৃথিবী আর আজকের পৃথিবী এক থাকবে না। সমাজ, রাজনীতি, অর্থনীতিতে নানা বাঁকবদল ঘটার সম্ভাবনাই বেশি। পুঁজিবাদ তার ভয়ংকর শক্তি নিয়ে দুনিয়াজোড়া আধিপত্য অক্ষুণ্ণ রাখতে হয়তো পারবে না। বাজার অর্থনীতির রমরমা অবস্থাও হয়তো বহাল থাকবে না। রাষ্ট্রই যে নিদানকালে বড় ভরসা সেটা বোঝা গেছে। তাই বিশ্ব রাজনীতি আবার এক বিকল্প শক্তিকেন্দ্রের সন্ধান করবে বলেই মনে হয়।
আর্থিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশেও নতুন পথ খোঁজার চেষ্টা লক্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। চিরাচরিত পন্থায় প্রচলিত কাঠামোর ওপর অল্পবিস্তর প্রসাধনী লেপন করে উত্তরণের পথ খুঁজলে সুফল পাওয়া যাবে না। একই ভুল পথে দুই বার হাঁটলে সেটা হবে গুরুতর ভ্রান্তি। প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশে তেমন দূরদর্শী রাজনৈতিক নেতৃত্ব আছে কি? নেতৃত্ব আকাশ থেকে পড়ে না। এই সংকটকালেও আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্বের চরম দেউলিয়াপনাই প্রকট হয়ে দেখা গেল। এত এত দল, এত এত নেতা—কী করলেন তারা করোনাকালে? এই দুঃসময়ে শীতঘুমে যাওয়া দল ও নেতাদের খারিজ করতে হবে। বিপদমুক্ত দেশে এরা মানুষের সামনে দাঁড়ালে তাদের বর্জন করার প্রশ্ন আসবে। বিপদ দেখলে যারা শামুকের মতো নিজেদের খোলসের মধ্যে গুটিয়ে নেন তাদের নির্বাসনে পাঠাতে হবে।
এখন পর্যন্ত দেশের রাজনীতির হাল ধরে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার নেতৃত্বেই সব কিছু চলছে। মানুষের আশা-ভরসা শুধু তার ওপরই। দেশে কার্যকর বিরোধী দল নেই। একটি শক্তিশালী বিরোধী দলের উপস্থিতি সম্ভবত সরকারও চায় না। তবে গণতন্ত্রের জন্য এটা খুব স্বাস্থ্যকর অবস্থা নয়। প্রধানমন্ত্রীর একক কর্তৃত্বের শাসন সরকারের জন্য স্বস্তিকর হলেও এটা প্রকৃত গণতন্ত্রকামীদের শিরপীড়ার কারণ। এটা মজবুত কাঠামো নয়। প্রধানমন্ত্রীও নিশ্চয়ই সেটা বোঝেন। আবার নিজের অসহায়ত্বও তিনি বোঝেন। তার দল এবং সহযোগী নেতৃত্বের দুর্বলতাও তার অজানা নয়। তিনি ছাড়া আর সবাইকে কেনা যায়—এমন খেদোক্তি তার নিজের। তার চার পাশে কাজের লোক কম। নানা ধান্ধার লোক বেশি। ‘আমি কি পাবো’, ‘ও পেয়েছে আমি কেন পাবো না’—এই মনোভাব যাদের তাদের দূর না করলে ‘পাওয়া’ এবং ‘খাওয়া’র প্রতিযোগিতায় সব বরবাদ হয়ে যাবে। হয়তো এরমধ্যে তা অনেকাংশে গেছেও। যেসব সুবিধাভোগী মন্ত্রী, এমপি, নেতাদের করোনাকালে মানুষের পাশে দেখা যায়নি তাদের সবাইকে পরবর্তী সময়ে রাজনীতি থেকেও নিরাপদ দূরত্বেই রাখতে হবে। বিশাল দল আওয়ামী লীগের দাপুটে সব নেতারা কোথায়? এত বড় দলে এত এত নেতা থাকতে সচিবদের কেন জেলার সমন্বয়কের দায়িত্ব দিতে হয়েছিল? এখনই সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময়। ক্রান্তিকালে যদি প্রধানমন্ত্রীর হাতকে তারা শক্তিশালী করতে না পারেন তাহলে এই সুবিধাভোগীরা দেশের বা দলের কী কাজে লাগবে? প্রধানমন্ত্রীকে ভেবে দেখতে হবে মুখোশে ঢাকা মুখ নিয়ে তিনি কতদিন চলবেন?
ব্যর্থতা দলবাজি দুর্নীতির অভিযোগ শাসকদের বিরুদ্ধে থাকে। বড় বিপর্যয় হলে কাদা ছোড়াছুড়িও রাজনীতির চিরকালীন বৈশিষ্ট্য। তবে ত্রাণ বিতরণে দুর্নীতি মুক্ত থাকার জন্য বিতরণ ব্যবস্থায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের যুক্ত করতে হবে। স্বচ্ছতা সুশাসনের প্রধান শর্ত। কোন শ্রেণির মানুষকে, কোন খাতে কত সাহায্য করা হচ্ছে তা গণমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে প্রচার করা উচিত। সন্দেহবাদীরা যাতে সত্যাসত্য যাচাই করতে পারে।
খাদ্য জনগণের মূল চাহিদা। তাই চাল থেকেই মতলবি রাজনীতি সস্তা ‘ভিটামিন’ সংগ্রহ করে থাকে। তাই চাল নিয়ে সামান্য অনিয়মও প্রশ্রয় দেওয়া চলবে না। আবার দলের যেসব অর্বাচীন নেতাকর্মী ত্রাণ সহায়তা কিংবা ধান কাটার নামে ‘হাস্যকর’ ফটোসেশন করছেন তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নিতে হবে। এখন তথ্য গোপন করা কঠিন, সবার হাতে হাতে এখন মোবাইল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম অতিসক্রিয়। তথ্যের অত্যাচারে মাথা গুলিয়ে যাওয়ার অবস্থা। মানুষের অনাহারে থাকার নাটুকে ভিডিও ভাইরাল হতে পারে। বাসন্তী নাটকের কথা মনে রাখতে হবে। রাজনীতি এমন এক সামাজিক ব্যবস্থা যা দুর্যোগেও থেমে থাকে না। মাথা গলানোর ছিদ্র বের করতে যারা সক্রিয় তাদের প্রতিহত করার প্রজ্ঞা যিনি দেখাতে পারবেন, তিনিই তো আগামীর রাজনীতির কাণ্ডারি হবেন।
লেখক: সাংবাদিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক