নববর্ষ: অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা
১৪ এপ্রিল ২০২১ ১৫:৫৪
‘মুছে যাক গ্লানি, ঘুচে যাক জরা অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’— বাঙালি এখন কায়মনে এই প্রণতিই জানাচ্ছে পরম করুণাময়ের কাছে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের কারণে সমগ্র বিশ্ব মৃত্যুপুরী। সবার মনে একটাই চাওয়া—কবে নির্মূল হবে এই অদৃশ্য শত্রু।
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ। ফের লকডাউনের মতো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে সরকারকে। এমতাবস্থায় অদৃশ্য শত্রুর মোকাবিলায় ঘরবন্দী মানুষ।
এরই মাঝে বুধবার (১৪ এপ্রিল) বর্ষপঞ্জিকায় আসছে পরিবর্তন, বঙ্গাব্দ ১৪২৮। ১৪২৭ জুড়ে ছিল করোনায় জীবনযাপন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে মাস্ক পরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালাতে হয়েছে যাপিত জীবনের কর্মকাণ্ড। তবুও অর্থনীতি বাঁচাতে পথে নামতে হয়েছে মানুষকে।
এর মাঝেও প্রায়ই খবরে শোনা গেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানতে অবহেলার কথা। আর তাই যেন কাল হলো সবার জন্যে। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, মৃত্যুর তালিকা। আমরা আরেকটু সচেতন হলে হয়তো দ্বিতীয় ঢেউয়ের এমন দূরাবস্থা দেখতে হতো না।
আজ পূর্ব দিগন্তে যে সূর্য উঠেছে, তা আর পাঁচটা ভোরের মতো হলেও এর মাহাত্ম ভিন্ন। এটি যে বছরের প্রথম সূর্য, নতুন বছরের কিরণ। নব নব স্বপ্ন আর পুরনোকে স্মৃতির মণিকোটরে গেঁথে সে এসেছে নতুন রূপে, যে কিনা অতীতের গ্লানি, রোগ-শোক, বালা-মুসিবতকে দূরে রেখে নিয়ে যাবে নতুনের অবগাহনে। নতুন দিনে, নতুন সময় তথা নতুন স্বপ্নের পানে।
আজ বৈশাখকে বরণ করে সবাই যেমন বলছে, ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’; তেমনি কায়মনে প্রার্থনা করে চলেছে ‘তাপস নিঃশ্বাস বায়ে মুমূর্ষুরে দাও উড়ায়ে/ বৎসরের আবর্জনা দূর হয়ে যাক/ মুছে যাক গ্লানি ঘুচে যাক জরা/ অগ্নিস্নানে শুচি হোক ধরা’।
ঐতিহাসিকদের মতে, বৈদিক যুগে বাংলা সনের প্রথম মাস ছিল অগ্রহায়ণ। তবে মোঘল সম্রাট আকবর ফসলি সন হিসাবের সুবিধার্থে বৈশাখ মাসকে প্রথম মাস ধরে বাংলা বর্ষপঞ্জি চালু করেন। নবাব মুর্শিদকুলি খান বৈশাখ মাস থেকে বাংলায় প্রথম খাজনা আদায় শুরু করেন।
জমিদারি আমলে বৈশাখের মূল আয়োজন ছিল খাজনা আদায় উপলক্ষে ‘রাজপুণ্যাহ’ ও ব্যবসায়ীদের ‘হালখাতা’ উৎসব। জমিদারি প্রথা বিলোপের পর রাজপুণ্যাহও বিলুপ্ত হয়। আর আধুনিক সময়ে অর্থনৈতিক লেনদেনের ধারায় পরিবর্তন আসায় হালখাতাও তার জৌলুস হারিয়েছে।
বর্তমানে পহেলা বৈশাখের আয়োজনে তাই মুখ্য হয়ে উঠেছে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, যা প্রবর্তনের কৃতিত্ব পুরোটুকুই কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের। তিনি শান্তিনিকেতনে প্রথম ঋতুভিত্তিক উৎসবের আয়োজন করেন। বর্তমানে এ উৎসবকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে উঠার পাশাপাশি এসেছে নতুন এক গতিশীলতা।
পহেলা বৈশাখে সরকারি ছুটি। তবে এখনও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে সরকার ঘোষিত লকডাউন চলছে। তাই আমরাও ডিজিটাল বর্ষবরণের অনুষ্ঠানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে ‘উৎসব নয়, সময় এখন দুর্যোগ প্রতিরোধে’র প্রতিপাদ্যে যুক্ত হই। বেঁচে থাকলে অনেক আয়োজন হবে, উৎসব হবে।
তাই আসুন রবি ঠাকুরের কণ্ঠে আমরাও বলি, ‘মুক্ত করো ভয়, আপনা মাঝে শক্তি ধরো, নিজেরে করো জয়’। আমরা মহামারি করোনা জয় করব, সুন্দর বাংলাদেশ গড়ব। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়; জামালপুর