চাকরিতে প্রবেশ এবং অবসরের বয়সসীমা প্রসঙ্গে
১৫ এপ্রিল ২০২১ ১৪:৩১
বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে। মানুষের আয় বেড়েছে । নিম্নবিত্তের চেয়ে বহুগুণে বেড়ে চলেছে উচ্চবিত্তের আয়। সাথে সাথে বেড়েছে আয় বৈষম্য। করোনাকালে কাজ হারিয়েছে অসংখ্য মানুষ। আবার আয় কমেছে অনেক মানুষের। অন্যদিকে আমরা স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের জন্য জাতিসংঘের কাছ থেকে সুপারিশ পেয়েছি। ২০২৬ সালে চূড়ান্ত অনুমোদন পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। দেশের অবস্থান উন্নতির সাথে সাথে মানুষের জীবন মানের উন্নতি জড়িত। ফলে দেখা যাচ্ছে মানুষের গড় আয়ু এবং কর্মক্ষম থাকার বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে। মানুষ এখন আগের চেয়ে বেশি বয়স পর্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে কাজ করতে পারে।
আমাদের দেশে একসময়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ছিল ২৫ বছর আর অবসরের বয়স ৫৫ বছর। স্বাধীন বাংলাদেশের শুরুর দিক থেকে চাকরিতে প্রবেশের সর্বোচ্চ বয়স ২৭ বছর আর অবসরের বয়স ৫৭ বছর করা হয়। এ অবস্থা প্রায় ২০ বছর ধরে চলে। ১৯৮০-এর দশকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় সেশনজটের ফলে শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ স্নাতক, বিশেষত স্নাতকোত্তর শিক্ষা ২৭ বছর বয়সের মধ্যে শেষ করতে পারছিল না। বিষয়টি অনুধাবন করে নতুন সরকার ১৯৯১ সালে ১৩তম বিসিএসের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বয়স তিন বছর বাড়িয়ে ৩০ বছরে উন্নীত করে। তখনও অবসরের বয়স ৫৭ বছরই থেকে যায়। যুক্তিসংগতভাবে ১৩তম বিসিএস দলের এবং এর সমসাময়িক সরকারি চাকরিজীবীদের অবসরের বয়সও তিন বছর বাড়িয়ে ৬০ বছর করা দরকার ছিল। কিন্তু সম্ভবত গড় আয়ু বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০১২ সালেই দুই বছর বাড়িয়ে অবসরের বয়স ৫৯ বছরে উন্নীত করা হয় এবং তার কিছু দিনের মধ্যেই মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অবসরের বয়স ৬০ বছর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং বিচারপতিদের অবসরের সীমা যথাক্রমে ৬৫ এবং ৬৭ বছর করা হয়।
শিক্ষাজীবন শেষ হতে এখন আর যদিও ৩০ বছরের বেশি লাগছে না তথাপি চাকরিতে প্রবেশে বয়সের সীমা রাখার আদৌ প্রয়োজন আছে কিনা ভেবে দেখার সময় কি এসেছে? কিছু চাকরি যেমন সামরিক বাহিনী, পুলিশ অর্থাৎ যেখানে শারীরিক ফিটনেস বেশি জড়িত সেসকল চাকরি ছাড়া বাকি সব চাকরিতে প্রবেশের বয়সের সীমা উঠয়ে দেয়া যায় কিনা তা ভেবে দেখা যেতে পারে। অন্যদিকে মানুষের গড় আয়ু যেহেতু ৭৩ বছরে উন্নীত হয়েছে এবং কর্মক্ষম থাকার সময়কালও বেড়েছে এবং পাশাপাশি মানুষের মেধা এবং অর্জিত জ্ঞান এবং অভিজ্ঞতা আরও বেশি দিন জাতির কাজে ব্যবহার করাই শ্রেয়। সেসব বিবেচনায় অবসরের বয়সসীমা সবার জন্য ৬৭ বছরে উন্নীত করা যেতে পারে।
লেখক: ব্যাংকার ও অর্থনীতি বিশ্লেষক