Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লকডাউন: মরতে মরতেও খাওয়ার চিন্তা!

মোস্তফা কামাল
১৭ এপ্রিল ২০২১ ০০:৪১

করোনায় ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু একশ ছাড়িয়েছে। দৌড়াতে দৌড়াতে দু’শতে যাবে না-সেই গ্যারান্টি আছে? এরপরও প্রশ্ন- লকডাউনে খাবো কি? কী চমৎকার প্রশ্ন। খেতে চান। খেতেই জন্মেছেন। মরতে চান না, কিন্তু বাঁচার ব্যবস্থাও করছেন না। বেঁচে গিয়ে তবেই খেতে চাই-সেই পথে হাঁটছেন না। লকডাউনের সমালোচনায় জিকির জপছেন।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রুখতে এ সময়ে লকডাউন দেওয়া ছাড়া আর কী উপায় ছিল সরকারের? বিকল্পও দেখাচ্ছেন না কেউ। করোনায় কেন ঘরে থাকতে হবে- কেন বাইরে যাওয়া যাবে না-গত ক’দিনের আলামতেও বুঝতে পারছেন না? না বুঝে থাকলে লকডাউন ফেল মারবে। সরকার শত চেষ্টায়ও মানুষকে আটকে রাখতে পারবে না। গত এক বছরে এই জরুরি বার্তাটি যারা বোঝেননি এটা তাদের ব্যাপার। না বোঝাও একটা স্বাধীনতা, একটা অধিকার।

বিজ্ঞাপন

মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব অবশ্যই সরকারের। কিন্তু, সরকারের বাইরে কি কারও বোধবুদ্ধির ব্যাপার নেই? তাদের ভূমিকাও জরুরি। মিডিয়া, সমাজের সচেতন অগ্রসর শিক্ষিত মানুষ, সেলেব্রেটি, সামাজিক-ধর্মীয় নেতারা দেশে-দেশে নিজ উদ্যোগে মানুষকে সচেতন করার দায়িত্ব পালন করছেন। আমাদের এখানে সেই দিকটায় ভীষণ খরা। করোনায় কত ক্ষতি হচ্ছে সেই আলোচনা তুঙ্গে। আবার লকডাউন শিথিল করার আবদারও কম নয়। দিনে দিনে লকডাউন শিথিলও হয়ে পড়েছে। সরকারের নিষ্ক্রিয়তা-ব্যর্থতার সমালোচনার বাজারও ভালো।

করোনাভাইরাস পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে গেলে কি অবস্থা হবে সেটা বুঝতে বিশেষজ্ঞ হওয়া জরুরি নয়। এর মধ্যেই হাসপাতালে হাসপাতালে সিট নাই। বেড নাই, অক্সিজেন নাই, আইসিইউ নাই। ফ্লোরেও জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না রোগীদের। এমনটা হওয়াই স্বাভাবিক। আমাদের স্বাস্থ্য সেক্টরের অবস্থা কারও অজানা নয়। আবার এ কথাও তো সত্য বিশ্বের কোনো দেশেই হাজার হাজার আইসিইউ থাকে না। সবদেশেই হাসপাতালে শয্যা সংখ্যার একটা সীমা থাকে। অসংখ্য মানুষের এক সাথে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হলে, আইসিইউর প্রয়োজন হলে, অক্সিজেনের দরকার হলে তাৎক্ষণিক বা দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ইতালির মতো শক্তিধর দেশেও করোনায় হাজার হাজার মানুষ মারা গেছে। এখনও মারা যাচ্ছে। একসঙ্গে এত এত অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে জায়গা দিতে পারেনি তারা। তার মানে কি তাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা খারাপ? বা সেসব দেশের সরকার অবহেলা করছে? মোটেই না। সমস্যাটা হয়েছে ব্যবস্থাপনায়। মানুষকে সীমিত পরিসরে বা লকডাউনে রাখতে না পারায়।

বিজ্ঞাপন

সবদেশেই মহামারির শুরু থেকেই নাগরিকদের ঘরে থাকতে বলা হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানতে বলা হয়েছে। মানুষ যত বাইরে ঘোরাফেরা করবে, ভাইরাস তত ছড়াবে। বিস্তৃত হবে। মানুষ যত ঘরে থাকবে আইসিউই বা হাসপাতারের ওপর তত চাপ কমবে। হাসপাতালে সিট নেই, আইসিইউ নেই- এই প্রশ্ন যতো ছোঁড়া হয়, তার সিকিভাগও যদি ঘরে থাকে না কেন, তা নিয়ে হলে চিত্র এমন নাও হতে পারত।

হাসপাতালে সিট বা আইসিইউ থাকলেও কি বাঁচা নিশ্চিত হত? কেউ অক্সিজেন নিলে বা হাসপাতালে ভর্তি হলে খরচ কি সরকার দেয়? যিনি সংক্রমণের শিকার, খরচ তাকেই করতে হয়। বাঁচলেও, মরলেও। অন্তত সেই বিবেচনায় তো ঘোরাফেরা বন্ধ বা কমানো যায়। মানুষের ‘মবিলিটি’র সাথে কোভিড ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার সম্পর্ক প্রমাণিত। সে কারনেই ‘ঘরে থাকার’ বা ‘লকডাউনে’র প্রসঙ্গটি এসেছে। এরপরও ঘরে থাকলে খাবো কী-এ প্রশ্নকে সামনে এনে সস্তা বাহাসে জয়ী-জয়ী ভাব নেওয়ার একটা মানসিকতা লক্ষণীয়। লকডাউন না থাকলে খুব ভালো ভুরিভোজ হয়? তাহলে খেতে থাকুন উদর ভরে। মরতে-মরতেও খান। বেঁচে থেকে খাওয়ার প্রসঙ্গ তাদের কাছে অবান্তর। আবার লকডাউন দিয়ে হাজার হাজার মানুষকে গ্রামে পাঠানোর ব্যবস্থা করাও তামাশার নামান্তর। মনে রাখা দরকার করোনা কেবল জনস্বাস্থ্যের বিষয় নয়, এটি জননিরাপত্তারও বিষয়। আইন শৃংখলা পরিস্থিতি মানেই ‘জননিরাপত্তা’ নয়। বৈশ্বিক মহামারিটিতে মৃত্যুর বাইরে আতঙ্কিত হওয়া, ভয় পাওয়া, অবসাদে ভোগা, রেগে যাওয়া, হতাশ হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো কি জননিরাপত্তার সর্বনাশ করছে না?

বাংলাদেশে করোনার তিনটি ভ্যারিয়েন্টের কথা বলা হচ্ছে। যুক্তরাজ্য, দক্ষিণ আফ্রিকা এবং ব্রাজিলিয়ান ভ্যারিয়েন্ট। বলা হচ্ছে শনাক্তের ৮১ শতাংশই দক্ষিণ আফ্রিকান ভ্যারিয়েন্ট। এর সংক্রমণে দ্রুত রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত হয়, প্রচুর অক্সিজেন প্রয়োজন হয়, হাসপাতাল থেকে সুস্থ ফেরার ভাগ্য সবার হচ্ছে না। এটিও কি কম আতঙ্কের? নিষ্ঠুর সত্য হচ্ছে-করোনা সম্পর্কে সবার ধারণাই ভাসা ভাসা। চিকিৎসাও এখন পর্যন্ত গবেষণা পর্যায়ে। গোটা বিষয়টি চরম অনিশ্চয়তা তৈরি করছে। এই আতঙ্ক, অসহায়ত্ব ও অনিশ্চয়তা, সবার মনে একধরনের ভয় তৈরি করছে। হুমকিতে ফেলছে জননিরাপত্তাকে।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

সারাবাংলা/এসবিডিই/আরএফ

করোনা সংক্রমণ করোনাভাইরাস কোভিড-১৯ লক ডাউন লকডাউন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর