Thursday 21 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চীনের কূটনৈতিক ‘ঔদ্ধত্য’ এবং বাংলাদেশকে ঘিরে অভিলাষ

মর্তুজা হাসান সৈকত
২২ মে ২০২১ ২২:১৫

সম্প্রতি বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত গণমাধ্যমের সামনে এসে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বক্তব্য রেখেছেন। স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে অবস্থান করে সেই দেশকেই চোখ রাঙিয়ে তিনি বলেছেন— যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, অস্ট্রেলিয়া ও ভারতের জোট ‘কোয়াড’-এ বাংলাদেশের অংশগ্রহণ চীন ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে ‘যথেষ্ট খারাপ’ করবে। চীনের রাষ্ট্রদূতের মন্তব্যকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত বলে অভিহিত করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন জানিয়েছেন, ‘কোনো সামরিক জোটে যোগ দেওয়ার আগ্রহ বাংলাদেশের নেই। রাষ্ট্রদূত আগ বাড়িয়ে বলে ফেলেছেন।’

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে, চীনের রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি সম্পর্কে ‘কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত’ মন্তব্য করায় তার প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি। বিবৃতিতে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে চীনের ভূমিকা স্মরণ করিয়ে দিয়ে  বলা হয়েছে, ‘কোয়াড-এ বাংলাদেশের যোগদান বিষয়ে বাংলাদেশ থেকে সরকারিভাবে কোনো বক্তব্য প্রদান না করা সত্ত্বেও চীনা রাষ্ট্রদূত যে ভাষায় এর বিরোধিতা করেছেন, তাতে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় দেশসমূহে চীনের আধিপত্যবাদী আচরণেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। আমরা চীনা রাষ্ট্রদূতের এ হেন মন্তব্যের প্রতি ক্ষোভ ও নিন্দা ব্যক্ত করছি।’

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যটি নিয়ে দেশ-বিদেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হয়েছে। কারণ, আগ্রাসী কূটনীতি বিশ্বজুড়ে আলোচিত হলেও সেই কূটনীতিতেও ‘শিষ্টাচার’ বলতে একটা কথা আছে। এভাবে প্রকাশ্যে প্রতিক্রিয়া দেখানো যায় না। তাছাড়া একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ তার পররাষ্ট্রনীতিতে কী যুক্ত করবে, কী বাদ দেবে— সেটি একান্তই বাংলাদেশের নিজস্ব বিষয়। এসব চিন্তা করেই মন্তব্য করা উচিত ছিল চীনের রাষ্ট্রদূতের।

২.

চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের ‘আক্রমণাত্মক’ মন্তব্যের পর কোয়াড ইস্যু নিয়ে আলোচনা সমালোচনা তুঙ্গে উঠলেও গত মাসেই চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহি বাংলাদেশ সফরে এসে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে প্রথমে এই বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরে গেছেন। যেহেতু চীন ও ভারত ঐতিহাসিক কাল থেকেই চির প্রতিদ্বন্দ্বী, সেহেতু ভারতের ওপর চাপ বজায় রাখতে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থানের কৌশলগত সুবিধা কোনোভাবেই হাতছাড়া করতে চাইছে না চীন। বাংলাদেশকে তার হাতে রাখতে চায়। আর ঠিক এ কারণেই বাংলাদেশ কোয়াডে যোগদানের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না নিলেও সংশয়ের জায়গা থেকে চীন এতটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

অন্যদিকে, বঙ্গোপসাগরের ব্লু ইকোনমি জোন এবং আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিতে ভূতাত্ত্বিক আধিপত্য থাকায় বাংলাদেশ সবসময়ই সব হিসাব-নিকাশে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। কোয়াড জোটের নব উত্থান এই অঞ্চলে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও অর্থবহ করে তুলেছে। তাছাড়া, ভারতের সঙ্গে সীমানা থাকায় ও বঙ্গপোসাগরের সহজলভ্যতার কারণে বাংলাদেশ কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। আর এই সুবিধা লুফে নিতে বাংলাদেশের প্রতি চীনের আগ্রহ দিনে দিনে বেড়েছে বহুগুণ।

চীন সমুদ্রসংক্রান্ত আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করে দক্ষিণ চীন সাগর এবং সেখানকার কয়েকটি দ্বীপ দখলের চেষ্টা করছে। যার জন্য ওই অঞ্চলের প্রায় ২০টি দেশের সঙ্গে তার যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সাগর ও সাগরতলের সম্পদ সব দেশের সম্পদ হওয়ায় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই চীনের এই আগ্রাসী ভূমিকার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। চীনের এই আগ্রাসী পররাষ্ট্রনীতি মোকাবিলা করার জন্য অস্ট্রেলিয়া, ভারত, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত জোট ‘কোয়াড’ সক্রিয় হয়ে উঠেছে সম্প্রতি। এই কারণে জোট হিসেবে কোয়াডের উত্থানকে চীন নিজের জন্য হুমকি মনে করছে।

তবে বাংলাদেশের ঘোষিত পররাষ্ট্রনীতি হচ্ছে— ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’, যা বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে উৎসারিত। জন্মলগ্ন থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিরপেক্ষতার এই নীতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে। এ কারণেই বাংলাদেশ যেমন চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) সঙ্গে যুক্ত রয়েছে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজিতেও (আইপিএস) যুক্ত রয়েছে।

গত মাসে চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জেনারেল ওয়েই ফেঙ্গহির ঢাকা সফরে কোয়াড নিয়ে চীনের উদ্বেগের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন পরিষ্কারভাবে বলেছেন, দেশের স্বার্থ সমুন্নত রেখে অর্থনৈতিক উন্নয়নের উপাদান থাকলে বাংলাদেশ তাতে যুক্ত হলেও কোনো উদ্যোগে নিরাপত্তার বিষয়টি থাকলে তাতে যুক্ত হবে না। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশকে এখন পর্যন্ত কেউ কোয়াডে যোগ দেওয়ার আমন্ত্রণ জানায়নি কিংবা বাংলাদেশও কখনো কোয়াডে যোগ দেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেনি। এমনকি সম্প্রতি কোয়াড সম্প্রসারণের বিষয়ে যেসব লেখালেখি আর সমীক্ষা প্রকাশিত হয়েছে, তার মধ্যে সম্ভাব্য দেশের তালিকায় বাংলাদেশ নেই।

ট্রাম্পের যুদ্ধংদেহী মনোভাবের কারণে কিছুদিন আগেও কোয়াড একটি সামরিক জোট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছিল। নতুন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের শপথের পরে অবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। কোয়াডের এখন প্রধান উদ্দেশ্য ইন্দো-প্যসিফিক অঞ্চলকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আরও কার্যকর করে তুলতে এ অঞ্চলের সার্বভৌমত্ব, স্বাধীনতা, নিরাপত্তা, অবাধ বাণিজ্য ও নৌচলাচলসহ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে নানামুখী সহযোগিতার ক্ষেত্র গড়ে তোলা। তবে কোয়াড এখন সামরিক বা নিরাপত্তাবিষয়ক কোনো জোট হিসেবে বিবেচিত না হলেও চীন এটাকে নিজের বিরুদ্ধে হুমকি হিসেবেই দেখছে। তাছাড়া কোয়াড সামিটে বা কোথাও কোনো বিবৃতিতে চীনের নাম উল্লেখ করা হয়নি, এমনকি কোয়াড থেকে সম্প্রতি  টার্গেট করে চীনের বিরোধিতাও করা হচ্ছে না।

গত মার্চে অনুষ্ঠিত হওয়া কোয়াডের অনলাইন সামিটের মূল উদ্দেশ্য থেকেও সেটি প্রতীয়মান হয়েছে। করোনাকালে এর প্রধান লক্ষ্যটি হচ্ছে, ২০২২ সালের মধ্যে এশিয়ার বেশিরভাগ অঞ্চলে করোনাভাইরাসের সিংগেল ডোজের ১০০ কোটি ডোজ ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে কার্যকর ভূমিকা রাখা। আর এই ভ্যাকসিনের ডোজ সরবরাহের ক্ষেত্রে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হবে। তবে অর্থনৈতিকভাবে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে ওঠা চীন টিকা রাজনীতিকে কাজে লাগিয়ে ভূ-রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারে জোরেশোরে মাঠে নেমে নেমেছে, তার উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের পথে কোয়াড জোটই এখন সবচেয়ে বড় বাধা।

৩.

চীনের বিরুদ্ধে বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগ এখন মুখে মুখে। সম্প্রতি লি-মেং ইয়ান নামে চীনের একজন শীর্ষ ভাইরোলজিস্ট ‘সার্স করোনাভাইরাস’ নিয়ে চীনের বেশকিছু গোপন পরিকল্পনা ফাঁস হয়ে করেছেন। সেখানে তিনি দাবি করেছেন— চীনের সামরিক বিজ্ঞানীরা ২০১৫ সাল থেকেই এই ভাইরাসকে ‘জৈব অস্ত্র’ হিসেবে ব্যবহার করার বিষয়ে নিজেদের মধ্যে আলোচনা করছিলেন। বিশ্বব্যাপী ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে দেওয়া সেই চীনই এখন করোনার ভ্যাকসিনকে কেন্দ্র করে আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা চালাচ্ছে। এই রাজনীতিতে করোনার ভ্যাকসিনের বিনিময়ে চীন বাংলাদেশকে তার প্রেসক্রিপশন অনুসারে চলতে বাধ্য করতে চাইছে। কারণ, কিছুদিন আগে তারা বাংলাদেশকে করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত করেলেও এখন বলছে ডিসেম্বরের আগে ভ্যাকসিন বিক্রি করতে পারবে না। এটাও কি চীনের সেই ভূ-রাজনীতির অংশ? তারা কি ভ্যাকসিনের বিনিময়ে কোনো কিছুতে বাংলাদেশকে বাধ্য করতে চাইছে? তবে এর মধ্যেই চীনের দেওয়া উপহারের ৫ লাখ ভ্যাকসিন। আরও ছয় লাখ ভ্যাকসিন চীন উপহার দেবে— পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ফোনে সেটি জানিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বর্তমান সময়ে বাংলাদেশ নিয়ে চীনের আগ্রহের কেন্দ্র আসলে কোনো কূটনৈতিক সম্পর্ক নয়, ব্যবসায়িক লাভ আর ভূ-রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তারের সমীকরণ। চীন নিজের স্বার্থেই বাংলাদেশের সঙ্গে নিবিড় বন্ধুত্ব রাখতে চায়। এ কারণে চীন বাংলাদেশকে অবকাঠামোগত প্রকল্পের জন্য ঋণ গ্রহণে ব্যাপকভাবে প্রলুব্ধ করেছে। তবে চীনের এসব ঋণের সুদ সময়মতো পরিশোধ করতে ব্যর্থ হলে দেশটি নানাভাবে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা চালায়।

‘সিএফজিডি’ নামে একটি গবেষণা সংস্থার বিশ্লেষণ মতে, আটটি দেশ শিগগিরই চীনের এ ধরণের ঋণ ষড়যন্ত্রের শিকার হতে যাচ্ছে। দেশগুলো হলো— জিবুতি, কিরগিজস্তান, লাওস, মালদ্বীপ, মঙ্গোলিয়া, মন্টেনিগ্রো, পাকিস্তান ও তাজিকিস্তান। এ ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা আরও এগিয়ে। দেশটি তার একটি গুরুত্বপূর্ণ বন্দর উন্নয়নে চীনের ঋণ গ্রহণের সময় বুঝতে পারেনি কত ভয়ংকর ফাঁদে পা দিয়েছে। ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হয়ে ২০১৫ সালে তারা বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য চীনকে ইজারা দিতে বাধ্য হয়। ঠিক এইভাবে পাকিস্তানও তাদের একটি বন্দর ৪০ বছরের জন্য চীনকে লিজ দিতে বাধ্য হয়েছে।

৪.

চীন আসলে কখনো কারও বন্ধু হতে পারে না। ইতিহাস তাই বলে। বাংলাদেশের জন্য  বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়ানো রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখতেও ভূমিকা রাখছে চীন। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যখন পশ্চিমা বিশ্ব মিয়ানমারের প্রতি মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল, তখন বারবার দেশটিকে সমর্থন দিয়ে গেছে চীন। এমনকি মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের বিষয়টিতে সবসময়ই জাতিসংঘের হস্তক্ষেপের বিরোধী দেশটি। মিয়ানমার যেহেতু চীনের প্রেসক্রিপশনে চলে, তাই রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানের অদৃশ্য চাবি চীনের হাতেই। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ এই নিয়ে যে পদক্ষেপই নিতে চেষ্টা করুক না কেন, তাতে সবসময়ই বাধ সাধে স্থায়ী সদস্য চীন। গোটা বিশ্ব যেখানে এই গণহত্যার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে, সেখানে চীন স্বীকারই করে না রাখাইনে গণহত্যা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতীয় সীমান্তে প্রচুর সৈন্য মোতায়েন করেছিল চীন, বাংলাদেশকে অকুণ্ঠ সমর্থন দেওয়া ভারতের প্রতি চাপ প্রয়োগ করতে। চীন চেয়েছিল পাকিস্তানের জয়লাভ ত্বরান্বিত করতে। কিন্তু তখন তারা সেটা পারেনি, কারণ তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন চীন সীমানায় কয়েক হাজার সেনা পাঠিয়ে চীনকে রুখে দিয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে চীনের তৈরি যুদ্ধাস্ত্র ব্যবহার করেই পাকিস্তান বাংলাদেশে গণহত্যা চালিয়েছে। সেইসময় পাকিস্তানকে সর্বাত্মকভাবে সাহায্য সহযোগিতা করেছে চীন। শুধু তাই নয়, স্বাধীনতার পরেও চীন নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো ক্ষমতার অপপ্রয়োগ করে বাংলাদেশের জাতিসংঘের সদস্যপদ প্রাপ্তির পথ রুদ্ধ করে রেখেছিল। পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে বঙ্গবন্ধু লাহোরে ওআইসির সম্মেলনে যোগ দেন। তারপরই মূলত চীন ভেটো তুলে নেয়। তবে বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকা অবস্থায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি চীন। তাকে নির্মমভাবে হত্যা করার মাত্র ১৬ দিনের মাথায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় দেশটি।

চীন তার অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে কাউকে মাথা ঘামাতে দেয় না। তা না দিলেও অন্যদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোকে স্বভাবে পরিণত করেছে। দেশটি দীর্ঘদিন ধরে তার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ জিনজিয়াংয়ে ১০ লাখ সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিমদের বিভিন্ন ক্যাম্পে আটক রেখে জোর করে কাজ করানো, নির্যাতন ও নারীদের ধর্ষণ করে আসছে বলে অভিযোগ আছে। সেখানে মুসলিমদের দমন পীড়নের জন্য যেসব ‘পুনঃশিক্ষণ’ কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে, সেখানে নারীরা পরিকল্পিতভাবে ধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন ও অত্যাচারের শিকার হচ্ছেন বলে নতুন পাওয়া তথ্যে জানতে পেরেছে বিবিসি। ওই সেলগুলো থেকে প্রতিরাতে নারীদের তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়।

বাংলাদেশ সব সময় আর্থসামাজিক উন্নয়নের বিষয়গুলো সামনে রেখে এগিয়েছে। কখনো কোন সামরিক কিংবা প্রতিরক্ষা জোটে যোগ দেয়নি। এমন প্রেক্ষাপটে কোয়াডকে ঘিরে চীনের রাষ্ট্রদূতের বক্তব্যকে কেবল আগ বাড়িয়ে বলা কোনো কথার কথা বলে মনে হচ্ছে না। দেশটি যে নতুন কোন ভূ-রাজনৈতিক খেলা নিয়ে ময়দানে দ্রুতই হাজির হচ্ছে— বর্তমান অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে সেটি মোটামুটি নিশ্চিত ধরে নেওয়া যায়। এ অবস্থায় সবার সঙ্গে  সদ্ভাব বজায় রাখা বাংলাদেশকে ইতিহাস বিচার করে, নিজের স্বার্থ অক্ষুণ্ণ রেখেই ভবিষ্যতের পথরেখা তৈরি করতে হবে।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক

[email protected]

সারাবাংলা/টিআর

কূটনৈতিক সম্পর্ক কোয়াড চীনের রাষ্ট্রদূত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর