জীবন ও জীবিকার সমন্বয় রক্ষার বাজেট
১ জুন ২০২১ ১৯:৪০
করোনাভাইরাস মহামারির মাঝেই ঘোষিত হতে যাচ্ছে ২০২১-২২ অর্থবছরের বাজেট। করোনাকালের দ্বিতীয় বাজেট এটি। আগামী বৃহস্পতিবার (৩ জুন) জাতীয় সংসদে এই বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এবারের বাজেটের আকার হতে পারে ৬ লাখ ৩ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা, যা চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেটের চেয়ে ৩৫ হাজার ৬৮১ কোটি টাকা বেশি। গত বছরের মতো এবারও করোনা মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আগামী অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের সারসংক্ষেপ উপস্থাপন করা হয়েছে। এরই মধ্যে বাজেটের সারসংক্ষেপ দেখেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বাজেট বাস্তবায়নের ওপরও জোর দিয়েছেন।
করোনা মহামারির চলমান সময়ে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরের বাজেটে বিশ্ব অর্থনীতির সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামঞ্জস্যতার নিরিখে বেশ কয়েটি বিষয়ের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে করোনা মোকাবিলা। আগামী দুয়েক বছর আমাদের দেশে করোনা মোকাবিলা সবচেয়ে জরুরি খাত হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিত। দেশকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হলে সবার আগে করোনার বিস্তার রোধে মনোযোগ দিতে হবে। এ জন্য ভ্যাকসিন প্রয়োগের বিকল্প নেই। আগামী অর্থবছরে দেশের সব নাগরিককে ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেজন্য ভ্যাকসিন কেনা, প্রয়োগ, সংরক্ষণ, ভ্যাকসিন প্রয়োগকারীদের প্রশিক্ষণসহ বিশাল কর্মযজ্ঞে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ আগামী বাজেটে রাখতে হবে।
বাজেটে গুরুত্ব দিতে হবে স্বাস্থ্যসেবা ও স্বাস্থ্যশিক্ষায়। বর্তমানে আমাদের চিকিৎসকের অপ্রতুলতা রয়েছে। যথেষ্ট ঘাটতি আছে দক্ষ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীর। আগামী অর্থবছরে এ খাতে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ দিয়ে এই সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে হবে। করোনার এই সংকটকালে জরুরি চাহিদা মেটাতেও এবারের বাজেটে এই খাতে বিশেষ বরাদ্দ রাখা যেতে পারে। এছাড়া স্বাস্থ্যশিক্ষা খাতকে ডিজিটাল প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসতে হবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা কৃত্রিম বুদ্ধিমতাতা ব্যবহার করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
অবশ্য আগামী বছরের বাজেটে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য খাতকে মনোযোগের কেন্দ্রে রেখেছেন। এবারের বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩২ হাজার ৭৩১ কোটি টাকা। এটি মোট বাজেটের ৭ দশমিক ৪ শতাংশ, আর জিডিপির ১ দশমিক ৩ শতাংশ। আগামী বাজেটে করোনায় কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, সেজন্য মাস্টারপ্ল্যানের আলোকে দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোকে অত্যাধুনিক করে তোলা, সরকারি হাসপাতালে অইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সরঞ্জাম বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। তবে এই মাস্টারপ্ল্যান যেন ঘোষণাতেই সীমাবদ্ধ না থাকে, সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে। যত দ্রুতসম্ভব এই মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন করতে হবে, যেন জনগণ উপকৃত হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবাকে আরও গতিশীল করতে আগামী বছরের বাজেটে চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মী নিয়োগ এবং তাদের জন্য প্রণোদনা, ঝুঁকি ও সম্মানি ভাতা বাবদ ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে, যা এ খাতে গতিশীল করবে বলে আমার বিশ্বাস।
করোনা মহামারিতে মানুষের জীবন রক্ষা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে গিয়ে জীবিকার ওপর আঘাত এসেছে। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ দেশের মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে সংগ্রাম করে চলেছেন। এই সংগ্রামে তিনি বেশ সফলতাও পেয়েছেন। ২০০৯ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করেই বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সরকার দারিদ্র্য বিমোচনে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। ১২ বছরে বিভিন্ন উদ্যোগের ফলে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছিল। ২০০৫ সালে যেখানে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ৪০ শতাংশ, ২০২১ সালে এই হার ২১ শতাংশে নেমে এসেছে। কিন্তু এখন বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ দারিদ্র্য পরিস্থিতিকে আরও প্রকট করে তুলেছে। তাই দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে আগামী বছরের বাজেটে বেশ কিছু কর্মসূচি রাখা একেবারেই আবশ্যক বলে মনে করছি।
করোনার কারণে কিছু লোক তাদের কাজ হারিয়েছে। তাদের জন্য নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। এবং যেসব কাজ হারিয়ে গেছে, সেই কাজগুলোকেও ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করতে হবে। এই দু’টি বিষয়কে বাজেটে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কিন্তু এই কাজ ফেরত পাওয়া এবং নতুন কাজ সৃষ্টি হওয়ার মধ্যেকার সময়ে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় রাখতে হবে। এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী অর্থবছরে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ও দারিদ্র্য নির্মূলে আড়াই কোটি মানুষকে অস্থায়ীভাবে সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার ব্যবস্থা করেছেন। এজন্য আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ লাখ ৫ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হবে। ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত রাষ্ট্রের স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে সামষ্টিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড আরও বেগবান করতে হবে।
অর্থমন্ত্রী অবশ্য বলেছেন, এই বাজেটের মাধ্যমে আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে দরিদ্রদের এই অবস্থা থেকে বের করে নিয়ে আসা। যারা অতিরিক্ত গরিব আছেন, তারা গরিব হবেন এবং যারা গরিব আছেন, তাদের মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসা আমরা আমরা কাজ করে যাচ্ছি। কিন্তু যদি এ বিশাল জনগোষ্ঠীকে মূল স্রোতধারায় নিয়ে আসতে হলে তাদের কর্মসংস্থানের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। সেটি না পারলে তাদের অর্থনীতির মূল স্রোতধারায় ফিরিয়ে আনা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়বে।
বাজেটে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও বিশেষ নজর দিতে হবে। কৃষি খাতেও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। দেশের খাদ্য সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ও আত্মনির্ভরশীলতা বাড়াতে কৃষিতে ভর্তুকি বাড়াতে হবে। কৃষিঋণে সুদের হার কমাতে হবে। শিক্ষিত-অশিক্ষিত তরুণদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে গ্রামীণ অর্থনীতির চালিকাশক্তিগুলোকে সুসংহত করতে হবে। বীজ, সার, কৃষি যন্ত্রপাতির দাম কমানোসহ কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণের ওপর জোর দিতে হবে। অবশ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দারিদ্র্য রোধে গত বছর ৫০ লাখ দরিদ্র পরিবারকে নগদ অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এ বছর করোনা মহামারিতে কাজ হারানো ৩৩ লাখ ৩৯ হাজার দরিদ্র পরিবার প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে আড়াই হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা পেয়েছে। কিন্তু এই মানুষগুলোকে অর্থনীতির মূল স্রোতে নিয়ে আসতে হলে তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে হবে। কারণ সবসময় সরকারের পক্ষে তাদের অর্থ সহায়তা দেওয়া সম্ভব হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় সরকারের দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের ত্রাণ বিতরণ ও পুনর্বাসন কর্মসূচিও অব্যাহত রয়েছে। ৬৪ জেলায় ইউনিয়ন হিসাব করে জেলা প্রশাসকদের কাছে বেশ কিছু টাকা দিয়ে রাখা হয়েছে, যেন যেকোনো জায়গায় তাৎক্ষণিক প্রয়োজনে তারা সেই অর্থ ব্যয় করতে পারেন এবং দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে পারেন। এছাড়া সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের অনুকূলে ১০ কোটি টাকা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই মহামারি মোকাবিলায় শিল্পী, কলাকুশলী থেকে শুরু করে মসজিদ-মাদরাসায়ও অনুদান দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা এই করোনা মহামারিতে সাধারণ মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। চিকিৎসার জন্য অসুস্থ মানুষকে হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছে, লাশ দাফন করেছে, মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে, ধান কেটে কৃষকের ঘরেও তুলে দিয়েছে। অন্যান্য রাজনৈতিক দলের ততটা উদ্যোগ আমরা দেখতে পাইনি।
মানব সভ্যতা টিকে আছে শিক্ষার ওপর। শিক্ষাকে বাদ দিয়ে মানব সভ্যতার অস্তিত্ব কল্পনাও করা যায় না। করোনায় যেসব খাত চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম শিক্ষা। এই খাতে যে ক্ষতিটা হচ্ছে, তার প্রভাব এখন সেভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে না। কারণ শিক্ষা একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। শিক্ষার যেকোনো প্রভাব ১০ থেকে ১২ বছর পরেও পড়তে পারে। করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গত ১৫ মাস ধরে বন্ধ। আগামী ১২ জুন পর্যন্ত এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা রয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের। এই বন্ধের সময় সময়সীমা সামনে হয়তো আরও অনেক দিন বাড়বে। এর প্রভাব এখন আমরা সেভাবে উপলব্ধি করতে পারব না। এর প্রভাব আমরা উপলব্ধি করতে পারব আরও ১০ থেকে ১২ বছর পরে। সেই বিষয়গুলো মাথায় রেখে আগামী অর্থবছরের বাজেট এবং এর পরবর্তী বাজেটগুলো প্রণয়ন করতে হবে।
দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের একটি অংশ এরই মধ্যে ঝরে পড়েছে। হয়তো আরও একটি অংশ আর পড়ালেখাই করবে না। বর্তমানে শিক্ষাব্যবস্থা এক কঠিন বাস্তবতায় দাঁড়িয়ে আছে। এই বাস্তবতায় শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়া রোধে বাজেটে বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে। শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে ভ্যাকসিনের আওতায় না এনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিলে সবাই ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। তাই যত দ্রুতসম্ভব এই খাত সংশ্লিষ্টদের ভ্যাকসিনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। বাজেটে এই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে বা বিশেষ বরাদ্দ রাখতে হবে।
বঙ্গবন্ধুকন্যা এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক উপদেষ্টার সুযোগ্য নেতৃত্ব ও অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ পুরোপুরি প্রতিষ্ঠিত। এই ডিজিটাল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে হবে। অর্থাৎ বিকল্প পাঠদান পদ্ধতি হিসেবে আমাদের ডিজিটাল প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে হবে। অনলাইনে পাঠদান অব্যাহত রাখতে হবে। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কোথাও বিনামূল্যে, কোথাও স্বল্পসুদে ল্যাপটপ কিংবা অ্যান্ড্রয়েড ফোনের ব্যবস্থা করতে হবে। বিনামূল্যে ইন্টারনেট সংযোগ ও ডাটার ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য বাজেটে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা কিংবা বরাদ্দ রাখতে হবে। শিক্ষকদের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণের বিষয়ে বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। তা না হলে শিক্ষকরা নতুন প্রযুক্তিতে শিক্ষা দানে উৎসাহিত হবে না।
বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সরকার প্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রতি অর্থবছরেই বাজেটের আকার রেকর্ড গড়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটের আকার ছিল তিন লাখ ৯১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এক লাখ ৩১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেড়ে বাজেটের আকার দাঁড়ায় পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। আর গত বছর করোনা সংকটের মধ্যেও ঘোষণা করা ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট আগের বছরের চেয়ে ৪৪ হাজার ৮১০ কোটি টাকা বাড়িয়ে পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা করা হয়। চলতি অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা বাড়ানো হচ্ছে, যা পেরিয়ে যাচ্ছে ছয় লাখ কোটি টাকার সীমা। বাংলাদেশকে অর্থনৈতিক মুক্তি ও দারিদ্র্য বিমোচনে অনেক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে এই বাজেট।
করোনা মহামারির মধ্যেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ্য নেতৃত্বে বাংলাদেশ যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে তার অন্যতম উদাহরণ হচ্ছে জিডিপি প্রবৃদ্ধি। করোনার মধ্যেও প্রবৃদ্ধি অর্জনে যে কয়েকটি দেশ এগিয়ে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। অন্যান্য দেশ যখন জিডিপি প্রবৃদ্ধি নিয়ে খাবি খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশে এই হার ৫ দশমিক ২৪ শতাংশ। আর আগামী অর্থবছরের বাজেটে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ২ শতাংশ। অন্যদিকে আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি ধরা হচ্ছে ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। এখন বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ২২২৭ ডলার, যা বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
যেকোনো প্রতিকূলতার মধ্যে মানুষ তার জীবন ও জীবিকা রক্ষার তাগিদে নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী লাড়াই করে থাকে। মানুষের এ লাড়াই মৃত্যু, শোক, জরা কিংবা তাপের মধ্যেও থেমে থাকে না। সাম্প্রতিক সময়ে করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারির বিপর্যস্ত বাস্তবতায় আমরা যার যার অবস্থান থেকে একইসঙ্গে জীবন ও জীবিকা রক্ষায় সেই ভূমিকা রাখতে সচেষ্ট রয়েছি।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি একটি ভাষণের বলেছিলেন, ‘আমাদের এমন একটা সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যে সমাজে কৃষকরা, ক্ষুধার্ত জনগণ আবার হাসতে পারবে।’ অর্থাৎ এই কৃষক-শ্রমিক ও বঞ্চিত মানুষের ভাগ্য গড়াই ছিল জাতির পিতার স্বপ্ন। সেটিই তিনি করতে চেয়েছিলেন। জাতির পিতার সেই সেই আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা এ দেশের ক্ষুধার্ত জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছেন। গত একযুগে দেশ কতটা উন্নত হয়েছে, তা গত তিন বছরের বাজেট পর্যালোচনা করলে যে কেউ বুঝতে পারবেন।
লেখক: উপাচার্য, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ডিজিটাল ইউনিভার্সিটি
সারাবাংলা/এসবিডিই/টিআর