Saturday 07 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ শেখ হাসিনার আলোয় ফেরার দিন

মানিক লাল ঘোষ
১১ জুন ২০২১ ১৮:৫২

হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় পাল্টে যায় দেশের রাজনীতির দৃশ্যপট। ২০০৭ সালের ১৬ জুলাই ভোরে সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গ্রেফতার করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে। দীর্ঘ প্রায় ১১ মাস কারাভোগের পর ২০০৮ সালের ১১ জুন কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগারে বন্দি করা হলেও শেখ হাসিনার ২০০৭ সালের ৭ মে আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসা ছিল বাংলাদেশের গণতন্ত্রের জন্য, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের জন্য মঙ্গলকর।

২০০৭ সালে ১১ জানুয়ারির পর তার দেশে ফেরার ওপর বিধিনিষেধ জারি করে সামরিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার। রাজনীতি থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য চলে নানামুখী চক্রান্ত। কিন্তু ব্যর্থ হয় সব ষড়যন্ত্র। সব বাধা অতিক্রম করে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের সংগ্রামে ব্রতী হয়ে দেশেই ফিরে আসেন শেখ হাসিনা। কিন্তু ১৬ জুলাই যৌথবাহিনী গণতন্ত্রের মানসকন্যা শেখ হাসিনাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে। কারাগারে বন্দি করে রাখে ৩৩১ দিন। গণমানুষের নেত্রী যখন কারাগারে, তখন এ দেশের আপামর জনগণ তার অনুপস্থিতি গভীরভাবে উপলব্ধি করেছে। তার সাব-জেলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষের উদ্বেগ, গ্রেফতারের সংবাদ শুনে দেশের বিভিন্ন স্থানে মারা যান চার জন। বিভিন্ন গণমাধ্যমের উৎকণ্ঠা আপামর জনগোষ্ঠীকে স্পর্শ করেছিল। আদালতের চৌকাঠে শেখ হাসিনা ছিলেন সাহসী ও দৃঢ়চেতা; দেশ ও মানুষের জন্য উৎকণ্ঠিত; বঙ্গবন্ধুকন্যা হিসেবে সত্য কথা উচ্চারণে বড় বেশি সপ্রতিভ ছিল শেখ হাসিনা।

দেশের সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর এই দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা হচ্ছেন গণমানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা। তাই বঙ্গবন্ধুকন্যা কারাগারে তা মুজিব আদর্শের লাখো-কোটি নেতাকর্মী তো বটেই, মেনে নিতে পারেনি দেশের সাধারণ জনগণও।

শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের পর থেকেই আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হন জিল্লুর রহমান। তিনি দলের অন্যান্য নেতাদের নিয়ে দলীয় সভাপতির মুক্তির জন্য জনমত সৃষ্টি ও বিভিন্নভাবে সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেওয়া না হলে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে যাবে না বলেও ঘোষণা দেওয়া হয়।

ওই সময় কারান্তরীণ শেখ হাসিনা অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন বিদেশে চিকিৎসার জন্য তাকে মুক্তি দেওয়ারও দাবি ওঠে বিভিন্ন মহল থেকে। দল ভাঙার রাজনীতি, রাজনীতিতে বিভিন্ন ধরনের বিভ্রান্তি ছড়ানো, দলের অনেক শীর্ষ নেতাকে নানা ধরনের প্রলোভন দেখিয়ে শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলে। কিন্তু বিশেষ করে গণমানুষের দল আওয়ামী লীগের মূল শক্তি তৃণমূলের নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থাকায় সকল ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হয়। নেতাকর্মীদের ক্রমাগত চাপ, আপসহীন মনোভাব ও অনড় দাবির পরিপ্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকার শেখ হাসিনাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হয়। ফলে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে বিজয় লাভ করে। ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করা হয়। অবসান ঘটে দুঃশাসনের।

২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সন্ত্রাস, দুর্নীতি, ধর্ষণ ও লুটপাটের মাধ্যমে নরকে পরিণত করেছিল বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশকে। গ্রেনেড, বুলেট, বোমায় শেষ করতে চেয়েছিল গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে। কিন্তু মহান সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সকল সংকট থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে তাদের সুখে-দুঃখে অতন্দ্র প্রহরীর দায়িত্ব পালনের জন্য বার বার মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসেন জননেত্রী শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের মানুষ আর জোট সরকারের দুঃশাসনে ফিরে যেতে চায় না, শেখ হাসিনার মাঝে তারা খুঁজে পায় বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছবি। তাই তো টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আজ শেখ হাসিনা। তার দূরদর্শী নেতৃত্ব, সাহসী পদক্ষেপে বাংলাদেশ আজ শুধু উন্নয়ন আর অগ্রযাত্রার মাইলফলকই নয়, বরং শেখ হাসিনার মানবিক নেতৃত্ব আজ বিশ্বব্যাপী প্রশংশিত। করোনা সংক্রমণ থেকে দেশের মানুষকে রক্ষা করতে তার বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ ও প্রশংসার দাবিদার। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি সবাই প্রথম থেকেই মেনে চলত, তবে করোনায় জীবনহানির সংখ্যা আরও কমে যেত।

শত সংকট আর সম্ভাবনায় শেখ হাসিনাই বাংলার মানুষের আস্থা ও বিশ্বাসের শেষ ঠিকানা। যখনই এ দেশের গণতন্ত্র হুমকির মুখে পড়ছে, তখনই রক্ষাকবচ হয়ে গণতন্ত্র রক্ষায় ঢাল হিসেবে সামনে দাঁড়িয়েছেন জননেত্রী শেখ হাসিনা। এ দেশের মুক্তিকামী, আপামর জনতা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদমুক্ত এবং অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গঠনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বের বিকল্প নেই।

২০০৮ সালের ১১ জুন যদি সেদিন বঙ্গবন্ধুকন্যার মুক্তি না মিলত, জননেত্রী শেখ হাসিনার রাষ্ট্রপরিচালনার সাহসী নেতৃত্ব থেকে বঞ্চিত হতো দেশবাসী। উন্নয়ন আর অগ্রগতির চাকা যেত থেমে। ভুলুণ্ঠিত হতো মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। আবারও দুর্নীতি ও জঙ্গিবাদে ছেয়ে যেত বাংলাদেশ। সাম্প্রদায়িকতার বিষবাস্পে কেঁদে উঠত মানবতা। এ কারণেই আজকের দিনটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ দিন। তাই কারামুক্তির এই বিশেষ দিবসে গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার জন্য নিরন্তর শুভকামনা। মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা— সব ষড়যন্ত্র থেকে তিনি মুক্ত রাখুন বাঙালির আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক গণতন্ত্রের মানসকন্যাকে। জয়তু শেখ হাসিনা।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কার্যনির্বাহী সদস্য

সারাবাংলা/টিআর

কারামুক্তি দিবস শেখ হাসিনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

‘তুফান’ আসছে হিন্দি ভাষায়
৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৭:৪৯

সম্পর্কিত খবর