Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সংগ্রামে-সংকটে-অর্জনে গণমানুষের সঙ্গে আওয়ামী লীগের ৭২ বছর

আব্দুর রহমান
২৩ জুন ২০২১ ০৯:০০

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করে, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে বাঙালি যে রাষ্ট্র পেল, তা প্রত্যাশিত পাকিস্তান ছিল না। কুশাসন-কোটারি, জুলুম-অত্যাচার, আঞ্চলিক বৈষম্য, জাতি নিপীড়ন প্রথমেই জনগণের জীবন অতীষ্ঠ করে তুলল। এ যেন এক শকুনের হাত থেকে অন্য শকুনের হাতে পড়ার মতো। পাকিস্তানের এই স্বাধীনতাকে শেখ মুজিবুর রহমান ‘ফাঁকির স্বাধীনতা’ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন।

বিজ্ঞাপন

১৯৪৭ সালে দু’টি আলাদা ভূখণ্ড, ভিন্ন ভাষা, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন খাদ্যাভ্যাস ও ভিন্ন মানবিক বোধবুদ্ধি নিয়ে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার মাত্র চার মাস ২০ দিনের মাথায় বয়সে তরুণ শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি গঠন করেন সরকারবিরোধী ছাত্র সংগঠন ‘পাকিস্তান মুসলিম ছাত্রলীগ।’ আর এর একবছর পরই জন্ম নেয় আওয়ামী লীগ, যা মাত্র দুই দশকের পথপরিক্রমায় একটি জাতিসত্তার স্বাধিকারের লড়াইয়ের নেতৃত্ব দিয়ে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ উপহার দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উপমহাদেশের অন্যতম প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক দল সেই আওয়ামী লীগের ৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আজ। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন ঢাকার স্বামীবাগে কে এম দাস লেনের রোজ গার্ডেনে (হুমায়ুন সাহেবের বাড়ি) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর উদ্যোগে আয়োজিত এক কর্মী সম্মেলনে গঠন করা হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ’। মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী সভাপতি, টাঙ্গাইলের শামসুল হক সাধারণ সম্পাদক, শেখ মুজিবুর রহমানকে (কারাবন্দি ছিলেন) যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক করে গঠিত হয় ‘আওয়ামী মুসলিম লীগ’-এর প্রথম কমিটি।

১৯৫৫ সালে দলটি ধর্মনিরপেক্ষতাকে আদর্শ হিসাবে গ্রহণ করে। দলের নামকরণ হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান আওয়ামী লীগ।’ দেশের স্বাধীনতা এনে দেওয়া দলটির ইতিহাস তাই বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িয়ে আছে। সময়ের পরিক্রমায় আওয়ামী লীগ ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান— নাম দু’টি এক ও অভিন্ন হয়ে ওঠে।

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন, চুয়ান্নর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, আইয়ুব খানের সামরিক শাসনবিরোধী আন্দোলন, চৌষট্টির দাঙ্গার পর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি প্রতিষ্ঠা, ছেষট্টির ছয় দফা আন্দোলন ও ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে এ দেশের মানুষকে সংগঠিত করে আওয়ামী লীগ গণমানুষের সংগঠনে পরিণত হয়। এভাবে ২৪ বছরের সংগ্রাম একেবারে সংগঠিত হয়ে ওঠে ১৯৭১ সালে, তৎকালীন আওয়ামী লীগের সভাপতি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাত ধরে। ৯ মাসের মহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ বীর শহিদের রক্ত আর দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় লাল-সবুজ পতাকার একটি বাংলাদেশ।

পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে ইতিহাস থেকে মুছে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করা হয়। পরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাকে ১৯৮১ সালের ১৩, ১৪ ও ১৫ ফেব্রুয়ারির কাউন্সিলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। এরপর বঙ্গবন্ধুকন্যা যখন দেশে ফিরে আসবেন বলে ঘোষণা করেন, তখন হন্তারক জিয়াউর রহমান তার স্বদেশ প্রত্যাবর্তনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিলেন। জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ় সংকল্প, তার দেশে ফেরার অপ্রতিরোধ্য ইচ্ছা এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে জিয়াউর রহমান তাকে দেশে আসতে দিতে বাধ্য হন।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের প্রায় ছয় বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে সব প্রতিবন্ধকতার জাল ছিন্ন করে ১৯৮১ সালের ১৭ মে নিজ ভূমে ফিরে আসেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। এরপর এক দশক ধরে সারাদেশ ঘুরে দলকে সংগঠিত করেন। স্বৈরাচারবিরোধী তীব্র গণআন্দোলনও হয় তার নেতৃত্বেই। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে দলের প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে ২৩ জুন দলটি ক্ষমতায় এসে সরকার গঠন করে।

২০০১ ও ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারির পর আর এক দফা বিপর্যয় কাটিয়ে উঠে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচনে তিন-চতুর্থাংশ আসনে বিজয়ী হয়ে আবারও রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পায় আওয়ামী লীগ। পরবর্তী সময়ে ২০১৪ সালের ৫ জানুযারি এবং ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে বিজয়ী হয়ে বাংলাদেশের ইতিহাসে টানা তিন মেয়াদে সরকার পরিচালনা করছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

সুদীর্ঘ রাজনৈতিক ইতিহাসে ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে প্রথমবার পাকিস্তান আমলেই সরকারে আসে আওয়ামী লীগ। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সরকার হিসেবে ক্ষমতায় আসে দলটি। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সপরিবারে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের স্মরণীয় অধ্যায়ের অবসান ঘটে। এরপর ১৯৮১ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতির দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তার সততা, দক্ষতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বে চার দফায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে। আজ শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশকে দাঁড় করিয়েছেন উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে।

লেখক: সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/টিআর

৭২তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আওয়ামী লীগ আব্দুর রহমান

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর