Saturday 14 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চামড়া ব্যবসায় সুখবরের চেষ্টা

মোস্তফা কামাল
১৮ জুলাই ২০২১ ২১:৫৪
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বিক্রেতার সঙ্গে আলাপ করে সরকার চাল, তেল, পেঁয়াজের দাম ঠিক করে বলে সমালোচনা থাকলেও কোরবানির চামড়ার ব্যাপারটা আলাদা। ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপ করেই চামড়ার দাম ঠিক করতে হয়। এবারও হয়েছে। কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে এবার গেলোবারের মতো ঝক্কি হবে না— এমন আভাস এসেছে সরকারের তরফ থেকে। চামড়ার দাম ও সার্বিক ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৃহস্পতিবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আয়োজনে বৈঠকে বার্তাটি দিয়েছেন মন্ত্রী টিপু মুনশি।

পশু ও আকারভেদে এবার চামড়ার দাম গত বছরের চেয়ে সামান্য বাড়িয়ে ধরা হয়েছে। ট্যানারি ব্যবসায়ীদের এবার ঢাকায় লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়া কিনতে হবে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। গেল বছর এই দাম ছিল ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। ঢাকার বাইরে লবণযুক্ত প্রতি বর্গফুট গরু বা মহিষের চামড়ার দাম হবে ৩৩ টাকা থেকে ৩৭ টাকা। গত বছর তা ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। এছাড়া সারাদেশে এবার লবণযুক্ত খাসির চামড়ার দাম ধরা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ১৫ থেকে ১৭ টাকা। আর বকরির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১২ থেকে ১৪ টাকা। সরকারিভাবে গতবছর খাসির চামড়ার ধার্য দাম ছিল ১৩ থেকে ১৫ টাকা এবং বকরির ১০ থেকে ১২ টাকা।

বিজ্ঞাপন

চামড়ার বিক্রেতা অর্থাৎ কোরবানিদাতাদের কোনো সংগঠন নেই। সরকার, মন্ত্রী বা কারো সঙ্গে বার্গেনিংয়ের সক্ষমতাও নেই। তাদের কথা তুলে ধরার কোনো ফোরাম না থাকায় আলামতে ধরে নেওয়া যায়, মন্ত্রী ও ব্যবসায়ীদের সমঝোতায় ধার্য দামটা কার্যকর হলেও মন্দের ভালো বলে মানতে বাধ্য তারা। বৈঠকে এ বছর লবণ ছাড়া চামড়ার দাম আলোচনায় আসেনি। কোরবানিদাতা থেকে শুরু করে চামড়া সংগ্রহকারী মসজিদ ও এতিমখানাগুলোকে চামড়ায় লবণ দেওয়ার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সেখানে আচ্ছা রকমের গলদ বা তথা ঝামেলার শঙ্কা আছে। গরমের মৌসুমে আদ্রতা ও তাপমাত্রা বিবেচনায় চামড়ার মান ধরে রাখতে কোরবানির ঘণ্টা চারেকের মধ্যে চামড়ায় লবণ দেওয়ার পরামর্শ শোনানো হয়েছে। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, কোরবানির আগে-পরে তিন-চার দিন আর্দ্রতা থাকবে ৯৫ থেকে ৯৭ শতাংশ। তাপমাত্রা থাকবে ৩২ থেকে ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। অবস্থাটা চামড়া সংরক্ষণের জন্য ভালো খবর নয়। তাই উদ্বেগ থেকেই যাচ্ছে। চাতুরি-কারসাজি সর্বোপরি বাজে পরিস্থিতি তৈরির কিছু ফাঁক চামড়া ব্যবসায় বরাবর থেকেই যায়।

বাংলাদেশে সারাবছর মোট পশু জবাইর অর্ধেকই হয় কোরবানির মৌসুমে। কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে কাঁচা চামড়া কিনে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা তা বিক্রি করেন পাইকারদের কাছে। পাইকাররা সেগুলোতে লবণ দিয়ে বিক্রি করেন ট্যানারিতে। ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের তথ্য অনুযায়ী, বছরে বাংলাদেশ থেকে কমবেশি ২২ কোটি বর্গফুট চামড়া পাওয়া যায়। এর ৬৪ দশমিক ৮৩ শতাংশ গরুর চামড়া, ৩১ দশমিক ৮২ শতাংশ ছাগলের, ২ দশমিক ২৫ শতাংশ মহিষের, আর ভেড়ার ১ দশমিক ২ শতাংশ। প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের হিসাবে এবার এক কোটি ১৮ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। এর মধ্যে গরু-মহিষ ৪৫ লাখ এবং ছাগল ভেড়া ৭২ লাখ।

অনেক হিসাবই বাস্তবের সঙ্গে মেলে না। ধারেকাছেও থাকে না। বিশেষ করে চামড়া সংগ্রহ, দাম, সংরক্ষণ নিয়ে কেলেঙ্কারি আঠার মতো লেগে থাকছে। গত বছর দাম না পাওয়ার সঙ্গে চামড়া নষ্ট হয়ে যাওয়ার খবরের নেপথ্যে বর্বরতা ছিল চরমে। এবার সরকারি তরফে আগেভাগে কিছুটা হলেও স্বস্তির খবর দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে। এর সঙ্গে আরেকটু ভালো খবর হচ্ছে, সরকারের বেঁধে দেওয়া দরে চামড়া খাতের ব্যবসায়ীরা কেবল সন্তুষ্ট নন। সম্ভব হলে কিছু বেশি দাম দেওয়ার আশ্বাসও শুনিয়েছেন। বাকিটা ভবিষ্যৎ। কয়েকদিনের অপেক্ষা।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ এ বছর ঢাকায় গরুর চামড়ার দাম ২০১৮ সালের মতো ৫০ থেকে ৫৫ টাকা এবং ঢাকার বাইরে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু ব্যবসায়ীরা এ প্রস্তাবে নাখোশ হয়ে কিছুটা চটেছেন। পরে বাণিজ্যমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের মন রেখেছেন। বলেছেন, ‘আপনাদের কথাই থাকলো। আল্লাহর ওয়াস্তে যা বলেছেন সেটা যেন বাস্তবায়ন করেন।’

চামড়া ব্যবসায়ীদের মতিগতি, কিছু আলামত বা ভাবনমুনার কাছে সরকারকে বশ মানতে হয়। চামড়ার স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক দর, চাহিদা, সরবরাহ, রফতানির সার্বিক পরিস্থিতিসহ আরও অনেক কিছু বিবেচনায় নিতে হয়। বাণিজ্যমন্ত্রীর কথার মধ্যেও সেই রেশ স্পষ্ট। তাকে উচ্চারণ করতে হয়েছে ‘আল্লাহর ওয়াস্তে’র কথা। গত দু’বছর ধরে পরিস্থিতিটা আরেকটু কঠিন। করোনা মহামারি, চাহিদা কমে যাওয়ায় আগের বছরের মজুত রয়ে গিয়েছিল গতবছন। অর্থ সংকটে ভাটা পড়েছিল চামড়া সংগ্রহে। ফলে বড় বিপর্যয়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে চামড়া ব্যবসায়ীদের। নামমাত্র দামও না মেলায় দেশজুড়ে চামড়া ফেলে দেওয়ার বহু ঘটনায় গত দুই বছর ঈদ উৎসবের সময় আলোচনা-সমালোচনা ছিল ব্যাপক। এবার ইতিবাচক কিছুটা ভিন্নতা এলেও তাকে মন্দের ভালো বলতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক-কলামিস্ট; বার্তা সম্পাদক, বাংলাভিশন

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর