লকডাউন শিথিলতায় স্বাস্থ্যবিধি এড়ানোর সুযোগ নেই
১৯ জুলাই ২০২১ ২২:১০
গত বছরের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার দেশ এবং জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বরাবরই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে। এ কারণে বিশ্বের যেকোনো দেশের তুলনায় আমাদের দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে ছিল।
এরপর বিভিন্ন সময়ে সংক্রমণ বেশি-কম হলেও মাসখানেকের বেশি সময় ধরে দেশে করোনা পরিস্থিতি আগের তুলনায় অনেকটাই বেড়েছে। শুরুর দিকে সংক্রমণ অনেকটা শহরকেন্দ্রিক হলেও সাম্প্রতিক সময়ে এটি বাংলাদেশের সমস্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষত ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট শনাক্তের পর ছড়িয়ে পড়ার হার বেড়েছে। আগে যেখানে আক্রান্ত ও মৃত্যুর অধিকাংশই ঢাকা বিভাগে ছিল, এখন সেটি অন্যান্য বিভাগেও ছড়িয়ে পড়েছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, রোববার (১৮ জুলাই) পর্যন্ত বিশ্বে করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে ১৯ কোটিরও বেশি। করোনা সংক্রমণ নিয়ে মৃত্যু ছাড়িয়ে গেছে ৪০ লাখ। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে রোগী শনাক্ত ও মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে। এই তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে ব্রাজিল এবং তারপরে রয়েছে ভারত।
করোনার প্রাদুর্ভাব হ্রাস-বৃদ্ধির সঙ্গে বিশ্বের সচেতন দেশগুলো লকডাউন শিথিল ও কঠোর করছে। জনগণের বড় অংশ, যারা করোনায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ, তাদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনার আগ পর্যন্ত মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ কঠোর স্বাস্থ্যবিধি পালনের কোনো বিকল্প এখনো তৈরি হয়নি।
এরই মধ্যে ঈদুল আজহা সামনে রেখে গত ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত সর্বাত্মক লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করেছে সরকার। একইসঙ্গে ঈদের ছুটি শেষ হওয়ার পর আগামী ২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ফের লকডাউনের ঘোষণাও এসেছে।
লকডাউন শিথিলের এই সময়ে যেন সবাই যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে চলে, সেটি নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিদের নিজ নিজ এলাকায় সচেতনতা তৈরিতে এবং জনগণকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।
আমাদের দেশে এখনো বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে নভেল করোনাভাইরাসের ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতনতা গড়ে ওঠেনি। ভাইরাসটির সংক্রমণের প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণার অভাবে অনেক মানুষ সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে লকডাউনের শিথিলতার সময়ে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে। জনসাধারণকে বার বার সাবান দিয়ে হাত ধোয়া, সবসময় মাস্ক পরিধান, অকারণে বাড়ির বাইরে বের না হওয়া, কোরবানির পশুর হাট ও ঈদ জামাতে সবাই যেন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে।
ঈদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ঈদের নামাজ শেষে কোলাকুলি, করমর্দন, আর বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করা, ছোটদের চুমু দিয়ে আদর, বাচ্চা আর তরুণদের আনাগোনা, কোরবানির মাংস বণ্টন। এছাড়া পাড়া-পড়শী, বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনদের বাসায় যাওয়া, তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া, রাস্তাঘাটে, পার্কে, চিড়িয়াখানায় ঘোরাঘুরি, রেস্টুরেন্ট, পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্রে আড্ডা— এভাবেই কাটে ঈদের দিনটি। কিন্তু পরিবার ও প্রিয়জনদের সুরক্ষার কথা চিন্তা করে আগের বছরগুলোর মতো এ বছর এগুলো করা থেকে বিরত থাকতে হবে। সাময়িক অসতর্কতা ঈদ পরবর্তী সময়ে আমাদের জীবনে যে দুর্ভোগ বয়ে না আনে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে— জীবনের মূল্য সবচেয়ে বেশি। করোনার সংক্রমণ ও মৃত্যুতে অনেক পরিবারে অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে। তাই শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে স্বাস্থ্যবিধি মেনে সপরিবারে আনন্দের সঙ্গে নিজ নিজ বাসায় ঈদ উদযাপনই হবে আমাদের সকলের কাম্য।
লেখক: ঝিনাইদহ৩ আসনের সংসদ সদস্য
সারাবাংলা/টিআর