দেশের করোনা পরিস্থিতি খুব দ্রুতই বিপদজনক হয়ে উঠেছে। করোনার চূড়ান্ত অভিঘাত শুরু হয়েছে। প্রতিদিন মৃত্যুর মিছিল লম্বা হচ্ছে। বিষয়টা এখন হেলাফেলা করার মতোন নয়। হয়তো আমরা আশাবাদী ছিলাম, সব ঘাটতি পুষিয়ে দিয়ে আপদ নিশ্চয় বিদায় নেবে। সেই আশাবাদ বছর না ঘুরতেই ফুরিয়েছে, করোনা নিঃস্ব করেছে অসংখ্য পরিবারকে, স্বজন, উপার্জন হারিয়ে তারা চোখে অন্ধকার দেখছে। প্রান্তিক কৃষক থেকে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, ছাঁটাই হওয়া শিক্ষক থেকে শ্রমিক -সবাই দাঁড়িয়ে এক অতল খাদের কিনারে, যা থেকে উঠে আসার পথ আমাদের জানা নেই।
গতবছর করোনার শুরুতে আমরা যে সতর্কতামূলক সুরক্ষা নিয়েছিলাম, এবার তার ধারে-কাছেও নেই। বাইরে গেলে সুরক্ষা নিশ্চিত করে যাওয়া, ঘরে ঢোকার আগে জীবাণুনাশক স্প্রে করা, কাপড় পাল্টে ডিটারজেন্ট দিয়ে ধুয়ে ফেলা, হাত, নাক, মুখ ধুয়ে ফেলা, পরিচ্ছন্ন হওয়ার আগে পরিবারের সদস্যদের কাছে না আসা, সব আমরা প্রায় ভুলতে বসেছি। অনেকটা ঢিলেঢালা ভাব চলে এসেছে। সরকারের গতবারের যে প্রস্তুতির প্রচেষ্ট ছিলো, প্রচারণা ছিলো, এবার তাও ভেঙ্গে পড়েছে।
প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আত্মীয়-পরিজন, চেনা-অচেনা সবাই সতর্ক হোন। আপনার একটু অসতর্কতা পরিবারে বিপর্যয় নিয়ে আসতে পারে। পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে সরকারি হিসাবের দিকে তাকিয়ে থেকে লাভ নেই। চার-পাশের খবর নিন, তাহলেই বুঝবেন। এবার কিন্তু কোনো বয়সের সীমা নেই। পুরো পরিবারই আক্রান্ত হচ্ছে।
ঈদ উদযাপন করছেন, খুবই ভালো কথা। ঈদ বলে কথা। পরিস্থিতি যতই প্রতিকূল থাকুক, মানুষ ঈদটা উদযাপন করতে চায়। বিচ্ছিন্ন পরিবারগুলো সংযুক্ত হতে চায়। কিন্তু এতো উৎসবমুখরের মধ্যে ভুলে যাবেন না নিজে সুরক্ষিত থাকার ব্যাপারে। আর পাশে যে মানুষটি অনাহারে আছে, ঈদের আনন্দ থেকে বঞ্চিত, তার দিকে হাতটা বাড়িয়ে দিন। এক বেলার তৃপ্তির আহারও যদি তাদের না জোটে, ঈদটা সুন্দর হয় না। কিছু পরিবারের আনন্দ-আয়োজনটা যারা নিশ্চিত করতে পারেন, যাদের সামর্থের অভাব নেই, তারা যদি হাত গুটিয়ে রাখেন, তাহলে ঈদের আনন্দটা সাবর্জনীন হয় না। পরিপূর্ণ হয় না। একটা কথা, ত্যাগের মহিমার কোনো অন্ত নেই। মহামারী, অতিমারী কিংবা মন্বন্তর যেভাবেই বিশেষণ করি না কেনো, এ সময়টা আমাদের তা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। আরো বেশি সজাগ থাকতে হবে। এবার ঈদের সময় করোনার পাশাপাশি ঢাকা শহরের ডেঙ্গুর প্রকোপও বেড়েছে। আমাদের সবাইকে যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করতে হবে। সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। তার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বাড়াতে হবে।
যেখানে কোরবানি দিচ্ছেন, কোরবানি উত্তর সেই জায়গাটিও পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন করতে সচেতন মানুষ হিসেবে আপনার সদিচ্ছাই জরুরি। সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা, ইউনিয়ন পরিষদ-সহ পরিষেবা ব্যবস্থাপনাকে আরো জোরদার করতে হবে।
নিজে সুরক্ষিত থাকুন, সবাইকে নিরাপদ রাখুন। সবার আনন্দ নির্বিঘ্ন হোক। এই কঠিন সময়ে মহামারির বিষটা যেনো আর না ছড়ায়, সেই চেষ্টা আমরা যেনো নিরন্তর করে যাই। সামান্য ভুলে দেশ ও জনগণকে ভয়াবহ বিপদের মধ্যে ঠেলে দেয়া যায় না। আপনার-আমার সতর্কতায় এ অন্ধকার কেটে যাবে নিশ্চয়।
সবার জন্য শুভ কামনা। ঈদের শুভেচ্ছা।
লেখক: সহকারী সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন, কেন্দ্রীয় কমিটি