Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

স্বপ্নের মহাকাশ ছোঁবে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট

সন্দীপন বসু
১ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৪৭

কদিন বাদেই স্বপ্নের মহাকাশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে দেশের প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ (স্যাটেলাইট) ‘বঙ্গবন্ধু-১’। যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে মহাকাশে নিজের কক্ষপথে রওয়ানা হবে বাংলাদেশের পরম কাঙ্ক্ষিত এ উপগ্রহটি। প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার এ কৃত্তিম উপগ্রহ প্রকল্পের পুরো কাজ শেষ। ফ্রান্সে এই উপগ্রহের নির্মাণ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। বাংলাদেশে শেষ হয়েছে ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণকক্ষ নির্মাণের কাজ।

বিজ্ঞাপন

এবার মহাকাশযাত্রার পালা। সবকিছু ঠিক থাকলে চলতি মাসেই ‘ফ্যালকন-৯’ নামে মহাকাশযানে উপগ্রহটির উৎক্ষেপণ হবে ‘কেপ কারনিভাল স্পেসএক্স’ থেকে। এই উৎক্ষেপণ সম্পন্ন হলে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের ৫৭তম দেশ যাদের কৃত্তিম উপগ্রহ রয়েছে।

কৃত্তিম উপগ্রহ কী

পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো কৃত্তিমভাবে বানানো যন্ত্রনিয়ন্ত্রিত যানগুলোই কৃত্রিম উপগ্রহ। এই উপগ্রহগুলো মূলত পৃথিবীর বাইরের কক্ষপথে ঘুরে ঘুরে বিশ্ব ও মহাবিশ্বের ওপর নজরদারিসহ নানা কাজ করে।

কৃত্তিম উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানোর শুরুটা ১৯৫৭ সালে।  ওই বছর তখনকার সোভিয়েত ইউনিয়ন ‘স্পুটনিক-১’ নামে একটি উপগ্রহ মহাকাশে পাঠায়। ওই থেকে শুরু। দু’বছর বাদে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মহাকাশে পাঠায় আরেকটি উপগ্রহ। এরপর মহাকাশে নানা কারণে কৃত্তিম উপগ্রহ পাঠানো স্বাভাবিক বিষয়ে পরিণত হয়। গত ৬০ বছরে বিভিন্ন কাজে প্রায় দেড় হাজারের বেশি উপগ্রহ পৃথিবীর চারপাশের মহাকাশে পাঠানো হয়েছে।

কৃত্তিম উপগ্রহের ‍ওপর নজর রাখে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশবিজ্ঞানীদের একটি সংগঠন ইউনিয়ন অব কনসার্নড সায়েনন্টিস্টস (ইউসিএস)। সংগঠনটির সম্প্রতি প্রকাশিত এক নিবন্ধের বরাত দিয়ে টাইম ম্যাগাজিন জানিয়েছে, এই মূহুর্তে পৃথিবীর কক্ষপথে ৭০৫টি যোগাযোগ, ৪১২টি পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, ১৬৩টি প্রযুক্তি উন্নয়ন ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংগ্রহে ৬৩টি উপগ্রহ কাজ করছে। এছাড়া আরও কিছু উপগ্রহ নানাবিধ কাজে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে চলেছে অবিরত।

পৃথিবীর বাইরে প্রায় দেড় হাজার কৃত্তিম উপগ্রহের মধ্যে ৪১৬টি যুক্তরাষ্ট্রের, ১৩৪টি চীনের। আর রাশিয়ার আছে ১১৩টি কৃত্তিম উপগ্রহ। এই তিন রাষ্ট্রের যৌথ মালিকানায় আবার কিছু উপগ্রহ পাঠানো হয়েছে মহাকাশে। এই তিন দেশ ছাড়াও বিশ্বের ৫৬টি দেশের মালিকানায় আছে কৃত্তিম উপগ্রহ। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এমনকি আফগানিস্তানেরও নিজস্ব কৃত্তিম উপগ্রহ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

উপগ্রহগুলোর কাজ

কৃত্তিম উপগ্রহের নানা ধরনের কাজ আছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থার (নাসা) ওয়েবসাইটের তথ্য মতে, সারাবিশ্বে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, আবহাওয়া ও জলবায়ু পর্যবেক্ষণ, গ্লোবাল পজিশনিং সিস্টেমের (জিপিএস) অবস্থান নির্ণয়, গোয়েন্দা কর্মকাণ্ড, জরিপ ও সেনাসংশ্লিষ্ট কাজে উপগ্রহ বেশি ব্যবহার করা হয়। এছাড়া মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণা, আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টেলিভিশন বা রেডিও চ্যানেলের সম্প্রচার কাজ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তি, আকাশ-সড়ক ও জলপথে দিক নির্ণয় ও নির্দেশনায়, দূর সংবেদনশীল অনুসন্ধান, মাটি বা পানির নিচে অনুসন্ধান ও উদ্ধার কাজে, মহাশূন্যে উদ্ভাবন ও আবিষ্কার, ছবি তোলা ও তথ্যসংগ্রহ, বন্যা-ঝড়সহ প্রাকৃতিক বিভিন্ন ঘটনা ও বিপর্যয়ের পূর্বাভাসে উপগ্রহের সাহায্য নেওয়া হয়।  এছাড়া বিভিন্ন রশ্মি শনাক্তকরণ, দুর্গম অঞ্চলে উদ্ধারকাজে সহায়তা, তেল-গ্যাসসহ বিভিন্ন খনি শনাক্তকরণ ইত্যাদি কাজেও কৃত্তিম উপগ্রহের ভূমিকা আছে।

তবে যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে কৃত্তিম উপগ্রহের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। এই সময়ে মোবাইল ও রেডিও যোগাযোগের বেশিরভাগই উপগ্রহের মাধ্যমেই হচ্ছে। এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে নির্ভুল জিপিএস সিস্টেম এই কৃত্তিম উপগ্রহের অবদান।

উপগ্রহের কাজের পদ্ধতি

নাসার তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীর ডিম্বাকার আকৃতির কারণে কৃত্রিম উপগ্রহগুলো এর চারপাশে ডিমের আকৃতিতে ঘোরে। উপগ্রহ প্রধানত দুই ধরনের- যোগাযোগে ব্যবহৃত জিওস্টেশনারি ও ছবি তোলার কাজে ব্যবহৃত পোলার উপগ্রহ।

জিওস্টেশনারি উপগ্রহগুলো পৃথিবীর কক্ষপথে পশ্চিম থেকে পূবে ঘোরে। এরা পৃথিবীর আহ্নিক গতির সমান গতিতে এগিয়ে চলে। এজন্য পৃথিবী থেকে টেলিস্কোপে দেখলে এই উপগ্রহগুলোকে স্থির মনে হয়। আর পোলার উপগ্রহ ঘোরে উত্তর থেকে দক্ষিণে মেরুমুখী হয়ে। এরা আহ্নিক গতির প্রায় তিন থেকে চারগুণ গতিতে এগিয়ে চলে। এই ধরনের উপগ্রহগুলোর গতি আহ্নিক গতির চেয়ে বেশি হওয়ায় টেলিস্কোপে এদের বেশিক্ষণ দেখা যায় না।

মহাকাশে উপগ্রহগুলোর ঘোরা মাধ্যাকর্ষণ শক্তির সঙ্গে সম্পর্কিত। এরা এমনভাবে পৃথিবীর চারপাশে ঘোরে যাতে গতি বজায় থাকে এবং মাধ্যাকর্ষণ শক্তি একে পৃথিবীর আওতার বাইরে যেতে দেয় না। মহাকাশে বাতাসের চাপ না থাকায়, উপগ্রহগুলো বাধাহীনভাবে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। মূলত সৌরশক্তিতে চলে কৃত্তিম উপগ্রহ।

পৃথিবী থেকে উপগ্রহের দূরত্বের একটি নির্দিষ্ট পরিমাপকের কথাও জানানো হয়েছে নাসার ওয়েবসাইটে। যোগাযোগ ও আবহাওয়া পর্যবেক্ষণকারী উপগ্রহগুলো সাধারণত পৃথিবী থেকে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থান করে। এই উপগ্রহগুলোতে বেতার তরঙ্গ ব্যবহার করে পৃথিবী থেকে সিগন্যাল বা ডেটা পাঠানো হয়, উপগ্রহ সেগুলো গ্রহণ করে এবং ফিরতি তথ্য বিবর্ধিত (এম্পলিফাই) করে পৃথিবীতে পাঠায়। পৃথিবীতে থাকা ডিশএন্টেনা বা এই ধরনের যন্ত্রগুলো এই সিগন্যাল গ্রহণ করে বিভিন্ন যন্ত্রাংশে ব্যবহারের জন্য পাঠায়। আর পোলার উপগ্রহগুলো আরও কাছ দিয়ে পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরে চলে।

দেশের প্রথম উপগ্রহ নির্মাণের পথপরিক্রমা

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, মহাকাশে বাংলাদেশের একটি নিজস্ব কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর কথা প্রথম শুরু হয় ১৯৯৯ সালে। এরপর অনেক ধাপ পেরিয়ে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আন্তর্জাতিক টেলিকমিউনিকেশন ইউনিয়নের কাছে আবেদন করে। একই বছরে অনুমোদনও পাওয়ার পর উপগ্রহটি নির্মাণ ও উৎক্ষেপণে দরপত্র চাওয়া হয়। একইসঙ্গে গাজীপুর এবং রাঙ্গামাটির বেতবুনিয়াতে উপগ্রহের দু’টির ভূ-নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্রও আহ্বান করা হয়। উপগ্রহ প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান ড. শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে জানান, বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ তৈরির পুরো কর্মযজ্ঞটি সম্পন্ন হয়েছে বিটিআরসির তত্ত্বাবধায়নে। তিনটি ধাপে নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এগুলো হলো উপগ্রহের মূল কাঠামো তৈরি, উপগ্রহ উৎক্ষেপণ ও ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণের জন্য গ্রাউন্ড স্টেশন তৈরি।

ফরাসি-ইতালিয়ান মহাকাশযান নির্মাতা প্রতিষ্ঠান থ্যালেস আলেনিয়া স্পেসকে এই উপগ্রহটি নির্মাণের কাজ দেওয়া হয়। যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানি ‘স্পেস পার্টনারশিপ ইন্টারন্যাশনাল’ ইতোমধ্যে এ প্রকল্পের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে উপগ্রহের নকশা তৈরি করে।

মোট দুই হাজার ৯৬৭ কোটি টাকা প্রস্তাবিত বাজেটে শুরু বাংলাদেশের প্রথম উপগ্রহের কাজ। যার মধ্যে এক হাজার ৩১৫ কোটি ৫৪ লাখ টাকা দিয়েছে সরকার। আর ১ হাজার ৬৫২ কোটি ৪৪ লাখ টাকা বৈদেশিক ঋণ হিসেবে বহুজাতিক ব্যাংক এইচএসবিসি থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।

গত মাসের শেষের দিকে থ্যালেস অ্যালেনিয়া স্পেস জানায়, উপগ্রহটি নির্মাণের কাজ শেষ এবং তা ফ্লোরিডায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চলতি মাসেই যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা স্পেসএক্সের ‘ফ্যালকন-৯’ রকেটে করে উপগ্রহটি মহাকাশে পাঠানো হবে।

ড. শাহজাহান মাহমুদ সারাবাংলাকে আরও জানান, উপগ্রহ উৎক্ষেপণের কাজটি বিদেশে হলেও এটি নিয়ন্ত্রণ করা হবে বাংলাদেশ থেকেই। এজন্য গাজীপুরের জয়দেবপুর ও রাঙামাটির বেতবুনিয়ায় ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা (গ্রাউন্ড কন্ট্রোল স্টেশন) তৈরির কাজ চলছে। ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ ও প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

বিটিআরসি সূত্রে আরও জানা গেছে, উপগ্রহটির কক্ষপথ (অরবিটাল স্লট) কেনা হয়েছে রাশিয়ার প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্পুটনিকের কাছ থেকে।  চুক্তির মেয়াদ অনুসারে প্রাথমিকভাবে ১৫ বছরের জন্য এ কক্ষপথ কেনা হয়েছে। এছাড়া আরও ৩০ বছর বাড়ানো যাবে এই চুক্তির মেয়াদ। আর এই মোট ৪৫ বছরই বঙ্গবন্ধু উপগ্রহের মেয়াদকাল।  মহাকাশের ১১৯ দশমিক ১ পূর্ব দ্রাঘিমায় প্রায় ২১৯ কোটি টাকায় কেনা হয়েছে এ কক্ষপথের অবস্থান। এই ঠিকানায় অবিরত ঘুরবে বঙ্গবন্ধু-১। সেবা দিয়ে যাবে বাংলাদেশের কোটি মানুষকে।

যেসব সুবিধা পাবে বাংলাদেশ

‘বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ-১’ এর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেসবাউজ্জামান জানিয়েছেন, উপগ্রহ থেকে পাওয়া সুবিধাগুলোর বিষয়ে। সারাবাংলার সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মূলত একটি যোগাযোগ উপগ্রহ। এটি টেলিভিশন বা রেডিও চ্যানেলের সম্প্রচার কাজ, মোবাইল ফোন ও ইন্টারনেট যোগাযোগ প্রযুক্তির উন্নতি ঘটানোর মাধ্যমে দেশের সার্বিক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত করবে।

প্রাকৃতিক দুর্যোগের আগাম তথ্য পেতে এখন অন্য দেশের মালিকানাধীন উপগ্রহ প্রযুক্তির উপর নির্ভর করতে হয়। বঙ্গবন্ধু উপগ্রহ চালু হলে, বন্যা ও ঘূর্ণিঝড় এর সম্ভাবনা থাকলে নিজ সামর্থ্যেই বাংলাদেশ আগাম সতর্কতা জারি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারবে। উপগ্রহটি থেকে নিয়মিতই আবহাওয়ার পূর্বাভাস পাওয়া যাবে। যা ঝড়ের গতিবেগ ও পথ নির্ণয় করতে সহায়তা করবে।

মোহাম্মদ মেসবাউজ্জামান আরও জানান, এই উপগ্রহের সহায়তায় দেশের টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারখাতে যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। এক কথায় বদলে যাবে বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ খাত। এতদিন দেশের টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর সম্প্রচারে অন্য দেশের উপগ্রহ ব্যবহার করা হতো। এবার নিজের উপগ্রহ থাকায় বছরে ১১৬ কোটি টাকা (১৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) সাশ্রয় হবে।  এছাড়া রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ উপগ্রহগুলোর তুলনায় বেশি গতি সরবরাহ করতে পারবে। ফলে রেডিও এবং টিভির সম্প্রচারে এইচডি (হাই ডেফিনিশন ভিডিও) মান নিশ্চিতের পাশাপাশি সম্প্রচারে সুবিধা বাড়বে।

মেসবাউজ্জামান জানান, কৃত্তিম উপগ্রহ স্থাপনের ফলে দেশে ইন্টারনেটের গতি বাড়বে অনেকগুন। ফলে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলো থেকে যোগাযোগ আরও দ্রুততর হবে। কৃত্তিম উপগ্রহ ভূমি ও বাংলাদেশের নতুন জলসীমায় প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানে সহায়তা করবে।

নিজস্ব উপগ্রহ উৎক্ষেপিত হওয়ার পরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে এই স্যাটলাইটের মাধ্যমে টেলিফোন সংযোগ নেওয়া যাবে। এর পাশাপাশি টেলিমেডিসিন, ই-গবেষণা, ই-লার্নিং, ভিডিও কনফারেন্সিংসহ তথ্যপ্রযুক্তির বিভিন্ন ক্ষেত্রে অগ্রগতি ঘটবে।

প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ মেসবাহুজ্জামান আরও জানান, বাংলাদেশের এই কৃত্তিম উপগ্রহটিতে ৪০টি ট্রান্সপন্ডার থাকবে। এর মধ্যে ২০টি বাংলাদেশের ব্যবহারের জন্য রাখা হবে।  বাকিগুলো ভাড়া দিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে। মহাকাশে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট যাওয়ার পর ‘ট্রান্সপন্ডার বরাদ্দ’র মাধ্যমে বছরে আরও ২৫০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আয় সম্ভব হবে। এই প্রক্রিয়ায় সাত থেকে আট বছরের মধ্যে বিনিয়োগের পুরো অর্থ তুলে নেওয়া সম্ভব হবে।

সাফল্য উদযাপন

ড. শাহজাহান মাহমুদ জানিয়েছেন, কৃত্তিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণ উপলক্ষে দেশজুড়ে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে। মহাকাশে দেশের প্রথম পদক্ষেপের স্বপ্নপূরণে দেশের সবক’টি জেলায় উদযাপন হবে। জমকালো আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে ফ্লোরিডাতেও।

বিটিআরসি চেয়ারম্যান আরও জানান, ঢাকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুইচ টিপে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের উদ্বোধন করবেন। মন্ত্রিসভার সদস্য ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে নিয়ে দেশে থেকেই উপগ্রহ উৎক্ষেপণ অনুষ্ঠান পর্যবেক্ষণ করবেন তিনি। আর উৎক্ষেপণের উদ্বোধনের দিন ফ্লোরিডায় থাকার কথা রয়েছে, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য ও প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের। উপগ্রহ উৎক্ষেপণের অনুষ্ঠানটি বাংলাদেশ টেলিভিশনে (বিটিভি) সরাসরি সম্প্রচারের কথা রয়েছে বলেও জানান তিনি।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মোহাম্মদ মেজবাউজ্জামান জানালেন, উপগ্রহ উৎক্ষেপণের দিন সারাদেশে যেন উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে সে জন্য সেমিনার, সিম্পোজিয়ামসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

কবে নাগাদ উৎক্ষেপণ হবে এ প্রসঙ্গে বিটিআরসি চেয়ারম্যান জানান, আবহাওয়া ও পারিপার্শ্বিক কিছু কারণে উপগ্রহ উৎক্ষেপণের নির্দিষ্ট তারিখ আগে থেকে বলা সম্ভব হয় না। তবে এটুকু জানাতে পারি, ইউএসে (যুক্তরাষ্ট্রে) উপগ্রহটি আনলোড হয়ছে। এখন বাকি প্রক্রিয়ার কাজ চলছে। ১৫ থেকে ২৫ এপ্রিলের মধ্যে উপগ্রহ উৎক্ষেপণ করা হবে।

 

অর্জনের মুকুটে আরেকটি পালক

সারাবিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে প্রিয় বাংলাদেশ।  প্রযুক্তিগত দিক থেকে আস্তে আস্তে উন্নতির সোপানের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। কৃত্তিম উপগ্রহ বঙ্গবন্ধু-১ অর্জনের খেরোখাতায় আরেকটি পালকমাত্র। আজ থেকে প্রায় ১৭ বছর আগে মহাকাশে নিজেদের কৃত্রিম উপগ্রহ পাঠানোর স্বপ্ন দেখা শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দীর্ঘ পথপরিক্রমায় সেই স্বপ্ন এখন প্রায় সত্যি। উন্নতির এই অগ্রযাত্রা তো আর শেষ হবার নয়। তবে বহুল কাঙ্ক্ষিত ‘উন্নয়নের মহাসড়কে’ উড়াল নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের পরম পাওয়া।

 

লেখক: সন্দীপন বসু, সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট কলাম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মতামত সন্দীপন বসু

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর