১৫ আগস্ট, বঙ্গবন্ধু ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
১৫ আগস্ট ২০২১ ১৮:১৪
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে যাওয়ার কথা ছিল বঙ্গবন্ধুর। পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ছিল তার আগমনের প্রতীক্ষায়। ‘এক নেতা এক দেশ বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ স্লোগানে সেদিন সেজেছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় প্রতিটি দেয়াল। উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছিল টিএসসি থেকে টেকনাফ, পলাশী থেকে তেঁতুলিয়ায়—কখন আসবেন কবি? সে রাতে কেউ ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি বাঙালি জাতির জীবনে অপেক্ষার সেই ভোর আর কোনো দিন আসবে না!
বিশ্ববিদ্যালয়ের কেউ জানত না, রাতের আঁধারে ৩২ নম্বরে চক্রান্তকারীদের বুলেটে রক্তের বন্যায় কোন ভোর রচিত হচ্ছিল। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সবুজ বুক চিরে রক্তিম যে ভোর সেদিন এসেছিল, সে ভোর কেউ চায়নি!
১৪ আগস্ট রাতে আনন্দে থইথই করছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণ। দেয়াল লেখন, ব্যানার, ফেস্টুন আর স্বাগত তোরণে তোরণে ছেয়ে গিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এলাকা। টিএসসি মিলনায়তনের ভেতরে করা হয় মূল মঞ্চসজ্জা। মঞ্চে সেট করা হয়েছিল ১৬টি মাইক্রোফোন। রাত ১২টার মধ্যেই তৈরি হয়ে গেছে বঙ্গবন্ধুর হাস্যোজ্জ্বল মুখের ১২ ফুট উঁচু প্রতিকৃতি। টিএসসির ভেতরে মাঠের মাঝখানে করা হয়েছিল এই পোর্ট্রেটটি। টিএসসির সড়কদ্বীপের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা সেদিন ছিল না। এখানে জাতীয় ফুল শাপলার নকশাসহ ১৬ ফুট উঁচু একটি স্বাগত সজ্জা করা হয়েছিল। কলা ভবনের মূল সিঁড়ির দুই পাশে করা হয়েছিল বঙ্গবন্ধুর দুটি ম্যুরাল চিত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাজসজ্জার প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল আরও চার-পাঁচ দিন আগে থেকেই।
শেখ কামালের নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোগোসহ আমন্ত্রণপত্র আগেই পৌঁছে গেছে সবার কাছে। যেখানে লেখা ছিল, ‘জাতির জনক মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় চ্যান্সেলর, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাহেবের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শুভাগমন উপলক্ষে আগামী ১৫ আগস্ট ১৯৭৫, বেলা ১১টায় ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপাচার্য ও সিন্ডিকেটের সদস্যবৃন্দ আপনাকে সাদর আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন।’
এ কার্ডটি আমার দেখার সৌভাগ্য হয় ডাকসু সংগ্রহশালায়। ডাকসু সংগ্রহশালার সংগ্রাহক ও আলোকচিত্রী গোপাল দাসের মা সুমতিবালার সাধ ছিল বঙ্গবন্ধুকে একনজর দেখার। মায়ের কথা শেখ কামালের কাছে বলার সঙ্গে সঙ্গেই আমন্ত্রণপত্রটি পেয়েছিলেন গোপালদা।
সেদিন রাতে সুমতিবালা একটা সুন্দর ছাপা শাড়িও বের করে রেখেছিলেন সকালে পরে যাওয়ার জন্য। ভোরে ছেলের মুখে খবরটা শুনে কেঁদে ফেলেছিলেন সুমতিবালা। পরে কার্ডটি ডাকসু সংগ্রহশালায় দিয়ে দেন সবাইকে দেখানোর জন্য। সেদিন ভোরে রেডিও টিউনিং করতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু নেই খবরটা পেয়েছেন অনেকেই। ভোরের আলো ফুটতেই রোকেয়া হল থেকে সাদা জমিনে লাল পাড়ের শাড়ি পরে খোঁপায় বেলি ফুল গুঁজে বেরিয়েও এসেছিল মেয়েরা। অথচ ওরা তখনো জানত না, কী ঘটে গেছে রাতের আঁধারে।
লেখক: চেয়ারপার্সন, কমিউনিকেশন ডিজঅর্ডারস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
সারাবাংলা/আইই