Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চন্দ্রিমার লালসালু উপাখ্যানের রাজনীতির দিন শেষ

ড. সেলিম মাহমুদ
২৯ আগস্ট ২০২১ ১৭:১০

ঢাকার শেরে বাংলা নগরের চন্দ্রিমা উদ্যানে ঘাতকের গুলিতে সেনা শাসক জিয়াউর রহমানের লাশ দাফন না করে অন্য এক ব্যক্তির লাশ দাফন করেছিল রাজনৈতিক দল বিএনপি। সেখানে লালসালু উপাখ্যানের মতো জিয়ার মাজার স্থাপনের যে ঘটনা তৎকালীন বিএনপি ঘটিয়েছিল, চল্লিশ বছর পর আজ সেই ইতিহাস কথা বলতে শুরু করেছে। জাতির কাছে আজ উন্মোচিত হচ্ছে চন্দ্রিমার লালসালু উপাখ্যানের ইতিবৃত্ত । জাতি আজ জানতে পারছে ইতিহাস। ‘you shall know the truth, and the truth shall make you free’.

সপরিবারে জাতির পিতাকে হত্যার মধ্য দিয়ে জাতির মুক্তি সংগ্রামের আদর্শবিরোধী শক্তি শুধু হত্যা-ষড়যন্ত্রের রাজনীতিই শুরু করেনি, তারা এদেশে মিথ্যা আর অপপ্রচারের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করেছিল। মিথ্যার রাজনীতিকে তারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিলো। মিথ্যার রাজনীতি প্রতিষ্ঠা করাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল।

জাতির পিতাকে হত্যা করে তাকে তার প্রিয় বাঙালীর কাছ থেকে আড়াল করার লক্ষ্যেই পিতাকে তারা গোপনে টুঙ্গীপাড়া নিয়ে তড়িঘড়ি করে জানাজা ছাড়াই দাফন করতে চেয়েছিলো। শেষে জানাজা পড়াতে বাধ্য হয়েছিল । ষড়যন্ত্রকারী, খুনী চক্র ও সুবিধাভোগীদের ধারণা ছিল, বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা টুঙ্গিপাড়ায় জাতির পিতাকে সমাহিত করলে তারা নিশ্চিন্তে থাকতে পারবে। তাদের ভয় ছিল, জাতির পিতাকে ঢাকায় সমাহিত করা হলে তাঁর সমাধিস্থল যৌক্তিক কারণেই বাঙালীর তীর্থস্থানে পরিণত হবে। সেই জন্যই ১৫ আগস্টে নিহত সকল শহীদকে ঢাকায় সমাহিত করা হলেও শুধুমাত্র জাতির পিতাকে বাংলাদেশের প্রত্যন্ত এলাকা টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে সম্পূর্ণ অমর্যাদাকরভাবে দাফন করে ।

খুনী চক্রের ধারণা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গিপাড়ায় লুকিয়ে রাখলে তিনি বাংলাদেশের দৃশ্যপট থেকে হারিয়ে যাবেন। বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর সকল অবদান ছেলেমেয়েদের পাঠ্যপুস্তক থেকে মুছে দিলে, এই রাষ্ট্রকে একটি টেকসই রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে তাঁর গৃহীত সকল যুগান্তকারী পদক্ষেপ ও তাঁর সকল কালজয়ী কীর্তি আড়াল করা হলে এবং সরকারীভাবে তাঁর নাম নিষিদ্ধ করা হলে ষড়যন্ত্রকারীদের শাসন দীর্ঘস্থায়ী করা যাবে।

অন্যদিকে, জাতির পিতার হত্যার এদেশীয় মূল ষড়যন্ত্রকারী ও নির্দেশ দাতা জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর তার দল ক্ষমতায় থাকার কারণে তার লাশ খুঁজে পাওয়া না গেলেও চন্দ্রিমা উদ্যানে অন্য এক ব্যক্তির লাশ দাফন করে সেখানে জিয়ার মিথ্যা মাজার স্থাপনের মধ্য দিয়ে মিথ্যার রাজনীতিকেই প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো। সেই চক্রটিই কফিনে জিয়ার লাশ আছে কী নেই- সেটিকে গুরুত্ব না দিয়ে ঢাকার একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ‘জিয়ার মাজার’ নামে একটা স্থাপনা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিরোধী শক্তির একটা প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলো ।

মূলত যে উদ্দেশ্যে সপরিবারে জাতির পিতার নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর শুধুমাত্র জাতির পিতার মরদেহ টুঙ্গীপাড়ায় নিয়ে গোপনে দাফন করেছিল, সেই একই উদ্দেশ্যে কফিনে জিয়ার লাশ না থাকা সত্ত্বেও অন্য ব্যক্তির লাশ দাফন করে ঢাকার প্রাণকেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত গণভবনের পাশে লালসালু কাহিনীর মতো জিয়ার মাজার স্থাপন করা হয়েছিল।

একটা প্রশ্ন থেকে যায়- জাতির পিতার মরদেহ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে দাফন করা হলো কার নির্দেশে? জাতির পিতার পরিবারের কেউ কি এটি চেয়েছিলো? উত্তর অত্যন্ত পরিষ্কার। ৭৫ এর ১৫ আগস্টে জাতির পিতার হত্যার পর খুনিদের দলনেতা হিসেবে কার্যত জিয়া সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। তার নির্দেশেই জাতির পিতাকে টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে সবাইকে বন্দুকের ভয় দেখিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করেছিল। পিতার প্রতি ন্যূনতম মর্যাদা পর্যন্ত তারা দেখায়নি।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর পরিবারের পাশে তাঁকে সমাহিত করতে দেওয়া হয়নি।  তিনি যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, তাঁর প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রের রাজধানীতে শায়িত থাকার ন্যূনতম অধিকারটুকু পর্যন্ত দেয়া হয়নি। ইতিহাস তার আপন নিয়মেই জবাব দিয়েছে।  জাতির পিতাকে হত্যা করে মরদেহ টুঙ্গিপাড়ায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশদাতা জিয়ার নিজের কবর নিয়ে তার নিজের সরকারের লোকেরা তার সাথে নির্মম রসিকতা করেছিলো। কবর নিয়ে তার লোকেরা এক নাটক মঞ্চস্থ করেছিলো। জিয়ার প্রকৃত মরদেহ কোথায় দাফন করা হয়েছে, সেটি কেউ বলতে পারছেন না । কিংবা আদৌ দাফন করা হয়েছে কিনা সে বিষয়টিও কেউ জানেন না। অথচ মিথ্যার রাজনীতির প্রতিভূ বিএনপি চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার মিথ্যা মাজার বানিয়ে এতো বছর ধরে রাজনীতি করে যাচ্ছে। এই রাজনীতির মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রাজনীতির মাঠে একটা ‘আপার হ্যান্ড’ পাওয়া – এটিকে ক্ষমতার একটি উৎস হিসেবে ব্যবহার করা। একই উদ্দেশ্যে জিয়া পরিবার ক্যান্টনমেন্টের সামরিক বাড়ি দখল করে রেখেছিলো। বন্দুকের জোরে রাষ্ট্রপতি পদ দখল করলেও জিয়া রাষ্ট্রপতির বাড়িতে না উঠে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি দখল করে রেখেছিলো। পরবর্তীতে তার স্ত্রী খালেদা জিয়া বহু বছর ধরে ক্যান্টনমেন্টের ঐ বাড়িটি বেআইনিভাবে দখল করে রেখেছিলো। ২০১০ সালে সরকার যখন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্ট থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, তখন কেউ কেউ এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছিলেন। তারাই পরবর্তীতে এই সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল বলে জানিয়েছেন।

চন্দ্রিমা উদ্যানে জিয়ার মিথ্যা মাজার স্থাপন নিয়ে যে ঘটনা তৎকালীন বিএনপি সরকার ঘটিয়েছিল, চল্লিশ বছর পর আজ ইতিহাস কথা বলতে শুরু করেছে। জাতির কাছে আজ উন্মোচিত হয়েছে চন্দ্রিমার লালসালু উপাখ্যানের ইতিবৃত্ত। এ বিষয়ে জাতীয় স্বার্থে সরকারের যথাযথ আইনানুগ পদক্ষেপ নেয়া বাঞ্চনীয়।

লেখক: তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ

সারাবাংলা/এসবিডিই

চন্দ্রিমার লালসালু উপাখ্যানের রাজনীতির দিন শেষ ড. সেলিম মাহমুদ মত-দ্বিমত


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গণপরিবহনে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২১:০০

সম্পর্কিত খবর