Tuesday 26 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থার বিপর্যয় ও আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা

অধ্যাপক ড. এ বি এম রেজাউল করিম ফকির
১ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:১৮

পাঠ্য বিষয় হিসেবে ইংরেজির নানা রকমফের রয়েছে। যেমন— সাক্ষরতা ইংরেজি, ইংরেজি সাহিত্য ও ইংরেজি ভাষা বিজ্ঞান ইত্যাদি। সাক্ষরতা ইংরেজি হলো মূলত শ্রবণ, বাচন, পঠন ও লিখন— এই দক্ষতা চতুষ্টয়ের সমষ্টি। প্রথম শ্রেণি থেকে ত্রয়োদশ শ্রেণি পর্যন্ত বর্তমানে যে ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে, এগুলো মূলত দক্ষতা চতুষ্টয়ের সমন্বিতরূপ, যা সাক্ষরতা ইংরেজি নামে সমাধিক প্রসিদ্ধ। ইংরেজি ভাষা শিক্ষাব্যবস্থায় বর্তমানে আলোচিত এই চার ধরনের দক্ষতা এক ধরনের চিন্তার বিভেদের জন্ম দিয়েছে। সাক্ষরতা ইংরেজি (Literacy English) যা বাচ্য ইংরেজি (Spoken English) নামে বেশ পরিচিতি, তার উপজাত হিসেবে দক্ষতা চতুষ্টয়ের মাধ্যমে এই চিন্তার বিভেদের জন্ম হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রাতিষ্ঠানিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা চতুষ্টয় অর্জন সম্ভব। সে জন্য সব দেশেই বিদ্যালয় পর্যায়ে মাতৃভাষা, দেশি ভাষা ও বিদেশি ভাষায় দক্ষতা চতুষ্টয়ের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা আছে। বাংলাদেশেও শিক্ষাব্যবস্থার বিদ্যালয় স্তরে প্রথম ও দ্বিতীয় পত্রের মাধ্যমে এ প্রশিক্ষণগুলো দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু জগদ্বিখ্যাত ফলিত ভাষা বিজ্ঞানী স্টিফেন কারশেন গবেষণার মাধ্যমে দেখিয়েছেন, এই দক্ষতা চতুষ্টয়ের প্রশিক্ষণ প্রাথমিক পর্যায়ে ভাষা আয়ত্তে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। কিন্তু ভাষায় উচ্চ পর্যায়ের দক্ষতা অর্জন নির্ভর করে একজন ব্যক্তি আজীবন কী পরিমাণ ও কী ধরনের বিষয়বস্তু ইপ্সিত ভাষায় অধ্যয়ন করেন, তার ওপর। কাজেই দক্ষতা চতুষ্টয় প্রশিক্ষণ বিদ্যালয় পর্যায়ের বিষয়। এটি উচ্চ শিক্ষায় টেনে আনার কোনো মানে হয় না। তবে দক্ষতা চতুষ্টয় প্রশিক্ষণ কীভাবে প্রদান করতে হবে, সেটি অবশ্য উচ্চশিক্ষার বিষয়।

বিজ্ঞাপন

২. ইংরেজি শিক্ষা, ইংরেজি শিক্ষক ও দক্ষতা চতুষ্টয়ের দুষ্টচক্র

ইংরেজি শিক্ষায় এই দক্ষতা চতুষ্টয় এতটাই জনপ্রিয় হয়েছে যে ইংরেজি ভাষা দক্ষতা অর্জনের মূল লক্ষ্যের কথা মানুষ মোটামুটি ভুলে বসে আছে। গৃহশিক্ষক থেকে কোচিংয়ের প্রশিক্ষক এবং স্কুলের শিক্ষক থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক— সবাই এখন দক্ষতা দক্ষতা চতুষ্টয় ধারণায় ডুবে আছেন। এই হেত্বাভাস (ফ্যালাসি) ইংরেজি শিক্ষার বাজার অর্থনীতির সৃষ্টি করেছে। কারণ ভাষাকে যখন শুধু সংজ্ঞাপনের মাধ্যম হিসেবে কল্পনা করা হয়, তখন দক্ষতা চতুষ্টয় ছাড়া আর কিছু চোখে পড়ে না। প্রসঙ্গটি সম্পর্কে আলোকপাত করতে একটি প্রশ্ন করা যাক— যুক্তরাজ্যের ভূমিপুত্রদের সবার কি ইংরেজিতে দক্ষতা চতুষ্টয় আছে? বাঙলার সব মানুষের কি বাংলায় দক্ষতা চতুষ্টয় আছে? আসলে অধিকাংশ মানুষেরই পূর্ণাঙ্গ দক্ষতা চতুষ্টয় নেই, না থাকাটাই স্বাভাবিক।

দক্ষতা চতুষ্টয় বিশিষ্ট সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে চাইলে ইংরেজি শিক্ষা পাঠ্যক্রম ও শেখানোর কৌশল (Teaching methodology) ও ইংরেজি শিক্ষকের সংজ্ঞা বদলাতে হবে। এরকম ইংরেজি শিক্ষাকে গতিশীল করতে, ইংরেজি শিক্ষা পাঠক্রমের নিম্নস্তরে সাক্ষরতা ইংরেজি ও পর্যায়ক্রমে ওপরের স্তরে শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন। ওপরের স্তরের পাঠ্যক্রমে শাস্ত্রীয় বিষয়বস্তু অন্তুর্ভুক্ত করার বিষয়টি ভাষা শিখন সূত্রের সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ। এই সূত্রের অনুসরণে বর্তমানে নবম শ্রেণি থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাক্রমে প্রথম পত্রে মূলত কলা, মানবিকী ও সামাজিক বিজ্ঞানের নানা বিষয়বস্তু অন্তুর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। কাজেই সাক্ষরতা ইংরেজির চেয়ে ওপরের স্তরের ইংরেজি শেখাতে পাঠ্যক্রমে যে বিষয়বস্তু অন্তর্ভুক্ত করা হয়, তা মূলত শাস্ত্রীয় বা জ্ঞানীয় বিষয়। শাস্ত্রীয় বিষয় পড়াতে হলে কোনো না কোনো ভাষা মাধ্যমে পড়াতে হয়। সে অনুযায়ী একজন উচ্চ শিক্ষা স্তরের ইংরেজি শিক্ষকের শাস্ত্রীয় জ্ঞানও আবশ্যক। কাজেই ইংরেজি পড়াতে শিক্ষক নিয়োগের যে যোগ্যতা শর্ত যুক্ত করা প্রয়োজন তা হলো— কলা/ মানবিক/ সামাজিক বিজ্ঞান/ বিজ্ঞান/ কৃষি ইত্যাদি যেকোনো বিষয়ে ডিগ্রি; এর সঙ্গে টোফেল TOEFL মানের ইংরেজি দক্ষতা।

উল্লেখ্য, ইংরেজি শিক্ষকদের মধ্যে একটি যুক্তি প্রচলিত আছে যে ইংরেজি সাক্ষরতা কোর্স পড়াতে ভাষাবিজ্ঞান, Education, Language Acquisition process, Language Teaching Methodology ইত্যাদি যোগ্যতা প্রয়োজন। এরকম অভিমত অনেকাংশে সঠিক। তবে উল্লেখিত উক্ত যোগ্যতা চাকরিতে শর্তযুক্ত করা হলে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর (MA in English) প্রাপ্তরা মানবিকে ডিগ্রিধারী হিসেবে চাকরিপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হবেন না। আবার অন্যান্য স্নাতক ও স্নতকোত্তররাও ইংরেজিতে দক্ষতা থাকা সাপেক্ষে ইংরেজি শিক্ষক হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন না। সব আলোচনার উপসংহার টানা হলে ফলাফল যা দাঁড়ায় তা হলো— MA in English ডিগ্রিধারীরা সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে চাকরিপ্রাপ্তিতে অযোগ্য হবেন না। কিন্তু সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষকের চাকরিপ্রাপ্তিতে তাদের TOEFL মানের ইংরেজি দক্ষতা শর্তযুক্ত হবে। অন্যদিকে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর নয়, তেমন স্নাতকোত্তররাও এই চাকরিতে ভাগ বসাবেন। এখন যুক্তি দেওয়া হতে পারে, MA in English-এ স্নাতকোত্তরদের ভাষাবিজ্ঞান, শিক্ষা বিজ্ঞান, ভাষা আয়ত্তকরণ প্রক্রিয়া ও ভাষা শিক্ষাদান পদ্ধতি সম্পর্কে জ্ঞান রয়েছে, কিন্তু মানবিক/সামাজিক বিজ্ঞানে ডিগ্রিধারীদের সেই জ্ঞান নেই। এ কথা ঠিক যে সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষক হিসেবে ইংরেজি পড়াতে ওই বিদ্যাগুলো সম্পর্কে ধারণা থাকাটা জরুরি। কিন্তু এ কথাও মানতে হবে, TOEFL মানের দক্ষতা অনেকের পক্ষে আজীবনের চেষ্টায়ও অর্জন করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভাষাবিজ্ঞান, শিক্ষা বিজ্ঞান, ভাষা আয়ত্তকরণ প্রক্রিয়া ও ভাষা শিক্ষাদান— এগুলো স্বল্পমেয়াদি প্রশিক্ষণে আয়ত্ত করা সম্ভব।

এখন অন্য একটি প্রসঙ্গ এখানে টেনে আনছি— বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ থেকে স্নাতকোত্তর নিয়েও এই অনুষদের বিভিন্ন বিভাগ থেকে স্নাতকোত্তর প্রাপ্তরা সংশ্লিষ্ট পদে নিয়োগের সুযোগ পাচ্ছেন না। এখন সংশ্লিষ্ট পদগুলো বাগিয়ে নিচ্ছেন বাণিজ্য অনুষদ বহির্ভূত অন্যান্য অনুষদের স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারীরা। তারা ব্যংক, বিমা ও অন্যান্য বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পদে বহাল হয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যম, ব্যবসায় প্রশাসন ও বিপণন ইত্যাদি বিষয় আয়ত্ত করে যথারীতি বাণিজ্য অনুষদের স্নাতকোত্তরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে আছেন। কাজেই সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষক পদে বিভিন্ন অনুষদ থেকে পাস করা TOEFL মানের দক্ষতাসম্পন্ন স্নাতকোত্তরদের শিক্ষকতার সুযোগ দেওয়া হয়, তারাও ভাষাবিজ্ঞান, শিক্ষা বিজ্ঞান, ভাষা আয়্ত্তকরণ প্রক্রিয়া ও ভাষা শিক্ষাদান ইত্যাদি রপ্ত করে নিয়ে ইংরেজি সাক্ষরতা কোর্স পড়াতে MA in English-এর সমান কুশলতা দেখাতে পারবে বলে আমার বিশ্বাস। কাজেই সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে সবকিছুর আগে TOEFL শর্ত যুক্ত হওয়া প্রয়োজন।

৩. বাংলাদেশে দক্ষতা চতুষ্টয়ের কুফল

দক্ষতা চতুষ্টয় বৈশিষ্টসম্পন্ন সাক্ষরতা ইংরেজি হলো— এটি বাংলাদেশের মানুষের তেমন কোনো কাজে লাগে না। যে ইংরজি এ দেশের মানুষের কাজে লাগে, তা হলো দক্ষতা বিশ্লেষণী পঠন (Critical Reading) ও সৃজনশীল লিখন (Creative Writing); অর্থাৎ দক্ষতা দ্যোতক ইংরেজি। কারণ দেশের অনেক বেসরকারি অফিস ও করপোরেট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ইংরেজি মাধ্যমে চলছে। সেখানে দাফতরিক দলিল-দস্তাবেজ তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণে অথবা বিদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বিনিময়ে ইংরেজি ভাষা ব্যবহার হচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে যে ইংরেজি ব্যবহার হচ্ছে সেটি দক্ষতা চতুষ্টয় পর্যয়ের পরের ধাপের ইংরেজি। এসব ক্ষেত্রে কথ্য ইংরেজি যে কাজে লাগে না, তেমন নয়। কিন্তু সেই ইংরেজির দক্ষতা বিশ্লেষণী পঠন (Critical Reading) ও সৃজনশীল লিখনের (Creative Writing) ক্ষমতা অর্জনের লক্ষ্যে ইংরেজি অধ্যয়ন করলেও, স্বতঃস্ফূর্তভাবেই জন্মায়। কাজেই আমাদের দক্ষতা চতুষ্টয় বিষয়ক ফ্যালাসির মায়াজাল থেকে বেরিয়ে ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মূল লক্ষ্যের প্রতি লক্ষ্য নিবিষ্ট করতে হবে। সেক্ষেত্রে বিদেশি ভাষা শিক্ষার মূল লক্ষ্য হবে বিশ্লেষণী পঠন ও সৃজনশীল লিখন। তবে এই ক্ষমতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি বিষয় স্মরণে রাখতে হবে— সঠিক পরিকল্পনা ও অধ্যবসায় থাকলে যে কেউই দক্ষতা চতুষ্টয়ভিত্তিক বিদেশি ভাষা অর্জনে সক্ষম হবে। কিন্তু জন্মগত ভাষিক ক্ষমতা না থাকলে পরিকল্পনা ও অধ্যবসায় থাকলেও অনেকের ক্ষেত্রে বিশ্লেষণী পঠন ও সৃজনশীল লিখন ক্ষমতা অর্জন সম্ভব নয়। বাস্তবতা হলো— কোনো জনগোষ্ঠীর কেবল একটি মাত্র অংশ প্রাণপণ চেষ্টায় কোনো ভাষায় (মাতৃভাষা সমেত) বিশ্লেষণী পঠন ও সৃজনশীল লিখনের ক্ষমতা অর্জনে সফল হয়।

বাংলাদেশের ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা দক্ষতা চতুষ্টয় বিষয়ক ফ্যালাসির কবলে আবর্তিত হচ্ছে। এ কারণে দেশব্যাপী শিক্ষাব্যবস্থার মাধ্যমে সব মানুষকে দৈনন্দিন সাংজ্ঞাপনিক ইংরেজি শিক্ষাদান করা হচ্ছে। অথচ উচ্চমানের জ্ঞানীয় ও শাস্ত্রীয় কর্মকাণ্ড অংশগ্রহণে সহায়ক ইংরেজি শিক্ষা কার্যক্রমকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। এই দক্ষতা চতুষ্টয় বিষয়ক ফ্যালাসি থেকে বেরিয়ে, ইংরেজিতে জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক মানবসম্পদ গড়তে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা প্রবর্তন করা প্রয়োজন।

৪. দক্ষতা চতুষ্টয় বিষয়ক ফ্যালাসির নেতিবাচক প্রভাব বলয় থেকে বেরিয়ে আসার উপায়

ইংরেজি ভাষাকেন্দ্রিক দক্ষতা চতুষ্টয় বিষয়ক ফ্যালাসির নেতিবাচক দিক থেকে বেরিয়ে আসতে যে বিষয়গুলো বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন, তার একটি তালিকা প্রণয়ন করা হলো—

১) বিদ্যালয় পর্যায়ে সাক্ষরতা ইংরেজি (১ম ও ২য় পত্র ইংরেজিকে একত্রে সাক্ষরতা ইংরেজি নামে অভিহিত করা হয়) শিক্ষা ৩ বছর মাতৃভাষা বাংলা পাঠের পর অর্থাৎ চতুর্থ শ্রেণি থেকে শুরু করা বাঞ্ছনীয়;

২) সাক্ষরতা ইংরেজি ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম ৬-৮ বছরের বেশি সময় ধরে হওয়া অবাঞ্ছনীয়;

৩) ইংরেজি ভাষা শিক্ষায় বাধ্যতাবাধকতা আরোপ অবাঞ্ছনীয়;

৪) ৬-৮ বছর শিক্ষালাভের পর ইংরেজি ও বাংলা উভয় ভাষার গড় দক্ষতায় নিম্নোগতি থাকলে ইংরেজি শিক্ষাদান অবাঞ্ছনীয়;

৫) ৬-৮ বছর সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষা লাভের পর সাক্ষরতা ইংরেজি কোর্স ইংরেজি শিক্ষায় কোনোকিছু যোগ হয় না। তাই ইংরেজি শিক্ষাকে ত্বরান্বিত করতে হলে ৬-৮ বছর পর অর্থ্যাৎ নবম শ্রেণি থেকে এক-তৃতীয়াংশ বিষয়ের পাঠ ইংরেজি মাধ্যমে দেওয়া শ্রেয়;

৬) দেশের অর্থ অপচয় রোধ করতে যারা স্কুল পর্যায়ে বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় অদক্ষতা দেখায়, তাদের বাধ্যতামূলক ইরেজি শিক্ষা থেকে অব্যাহতি দেওয়া বাঞ্ছনীয়;

৭) এসএসসি বা এইচসি— এগুলো মূলত ইংরেজি (ও অন্যান্য বিষয়ে সার্টিফিকেট কোর্স)। কাজেই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিটে যে ইংরেজি সার্টিফিকেট কোর্স দেওয়া হয়, তা অযৌক্তিক;

৮) বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ১০০ নম্বরের ইংরেজি কোর্স অযৌক্তিক;

৯) শিক্ষাব্যবস্থার সব স্তরে শিক্ষক নিয়োগে গ্রহণযোগ্য মানদণ্ডের ইংরেজি দক্ষতা শর্তযুক্ত করা বাঞ্ছনীয়;

১০) সাক্ষরতা ইংরজি শিক্ষক নিয়োগের যোগ্যতা M.A. in English-এ সীমাবদ্ধ না রেখে, M.A./M.S.S./M.ENG. /M.Sc. + TOEFL মানের ইংরেজি দক্ষতাকে নির্ধারণ করা বাঞ্ছনীয়;

১১) ইংরেজি মাধ্যম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ ও শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে TOEFL মানের ইংরেজি দক্ষতা শর্তযুক্ত করা বাঞ্ছনীয়;

১২) বিভিন্ন বিদেশি ভাষা (আরবি, জার্মান, চীনা, স্পেনীয়, থাই ও কোরীয় ইত্যাদি ভাষা) মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা বাঞ্ছনীয়।

এই উপাদানগুলো বোধগম্যরূপে দৃশ্যমান করতে নিম্নের সারণীতে উপস্থাপন করা হলো—

উপসংহার

সাক্ষরতা ইংরেজি শিক্ষার দক্ষতা চতুষ্টয় বিষয়ক ফ্যালাসির ফলে দেশব্যাপী বাচ্য ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটেছে। কিন্তু আশানুরূপ ইংরেজি দক্ষতাবিশিষ্ট জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না। কাজেই ইংরেজি দেশের উন্নয়নের চেয়েও দেশের সমাজ-সংস্কৃতিতে নেতিবাচক প্রভাব বয়ে আনছে। এ নিবন্ধকারের তালিকায় সন্নিবেশিত প্রস্তাবনাগুলো বিবেচনায় নিয়ে ইংরেজি শিক্ষাব্যবস্থা সংস্কার করা হলে দক্ষতা চতুষ্টয়ের দুষ্টচক্র থেকে বেরিয়ে আসা সম্ভব হবে।

লেখক: পরিচালক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

সারাবাংলা/এসবিডিই/টিআর

ইংরেজি শিক্ষা শিক্ষাব্যবস্থা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর